বরগুনা ও নোয়াখালীতে ২জন করে এবং বাগেরহাট, ভোলা, লক্ষ্মীপুর ও পটুয়াখালী ও চাপাইনবাগঞ্জে একজন করে মারা গেছেন। এছাড়া ‘ফণি’র প্রভাবে প্রচণ্ড বাতাসে পাঁচ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
নোয়াখালীর উপকূলীয় সুবর্ণচর উপজেলায় চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চর আমিনুল হক গ্রামে শনিবার সকালে ঘর চাপা পড়ে দুই বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত মো. ইসমাইল ওই গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে। এছাড়া কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ জানান, সকাল ৯টার দিকে গাছের ঢাল পড়ে কাঁকড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আবু হানিফের মেয়ে নাজমুন নাহার (১২) নিহত হয়। সে একটি বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী।
উপজেলার নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্ব পালনরত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইকবাল হাসান জানান, এছাড়া চর ওয়াপদা ও চর জব্বর ইউনিয়নে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। তাদেরকে সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে ভোলায় সদর উপজেলার পরোলিয়া গ্রামে ঘর ভেঙে রাণী বেগম নামে এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, গাছপাতা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়েছে।
অপরদিকে চাঁদপুরের সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা ও হাইমচর উপজেলা ইউএনও ফেরদৌসী বেগম জানান, ‘ফণি’র প্রভাবে চাঁদপুরের হাইমচর ও সদর উপজেলায় অন্তত শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. জহিরুল ইসলাম জানান, সদর উপজেলায় গাছের ডাল ভেঙে এক নারী মারা গেছেন। নিহত শাহিনূর বেগম (৩৫) চোরামন কাজি সদর উপজেলার মোজাহারের স্ত্রী।
লক্ষ্মীপুরের রামগতির চর নেয়ামতপুর এলাকায় শনিবার সকালে ঘূর্ণিঝড় ফণির আঘাতে আনোয়ারা খাতুন (৬৫) নামে এক বৃদ্ধা ঘরচাপা পড়ে নিহত হয়েছে।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.রফিকুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ১৫ জন আহত হয়েছে। অর্ধশতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। লন্ড বন্ড হয়ে গেছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, ভোর ৫ টার সময় লক্ষ্মীপুরের উপর দিয়ে প্রবল ভেগে ঘূর্ণিঝড় ফণি বয়ে যায়।
এছাড়া পটুয়াখালীর মানসিতলা গ্রামে শনিবার সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত আবিদ মুসল্লি হারুন মুসল্লির ছেলে। কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র বলেন, মোটরসাইকেলে নিয়ে যাওয়ার পথে ঝড়ে বড় একটি গাছ উপড়ে পড়ে সেটির চাপায় ওই যুবক নিহত হয়।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের কালুপুর গ্রামে ফণীর প্রভাবে সৃষ্ট ভারী বর্ষণে বাড়ির পাশের নিচু এলাকায় জলাবদ্ধ পানিতে ডুবে শনিবার বেলা ১১টায় তিন বছরের এক শিশু মারা গেছে।
নিহত মোরসালিন কালুপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে।
এছাড়া বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাসে ঘর ভেঙে পড়ে দাদি ও নাতির মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার চরদুয়ানি ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদুয়ানি গ্রামের বাঁধঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- নূরজাহান (৬০) ও তাঁর নাতি জাহিদুর (৮)।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী ম্যইজস্ট্রেট জাকির হাসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ ভারতের উড়িষ্যায় আঘাত হানার পর দুর্বল হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শনিবার সকাল ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টি সাতক্ষীরা, যশোর ও খুলনা অঞ্চলে অবস্থান করছিল বলে অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। তবে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে এখন ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে এবং সারাদেশে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।