খুলনায় ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া মহানগর গোয়েন্দা শাখার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলমকে (৪৪) সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) পক্ষ থেকে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. শাহজাহান শেখ বলেন, ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিত হওয়ায় বৃহস্পতিবার ডিবির এসআই জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিভাগীয় মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ওই ঘটনায় কেএমপির খালিশপুর অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) হুমায়ুন কবিরকে ঘটনার তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে আসামি কারাগারে রয়েছেন। অপরদিকে ভুক্তভোগী নারীর প্রয়োজনীয় ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে পরিবারের হেফাজতে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
খুলনা থানার ওসি হাসান আল মামুন জানান, বৃহস্পতিবার সকালে তারা হোটেল সুন্দরবন পরিদর্শন এবং হোটেলের মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এছাড়া ধর্ষণের শিকার নারীর সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে এস আই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: খুলনায় ধর্ষণের অভিযোগে ডিবির এসআই হাজতে
তিনি জানান, প্রত্যক্ষদর্শী ওই নারীর মেয়েকে বৃহস্পতিবার সকালে মহানগর হাকিম আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও সহকারী কমিশনার হুমায়ুন কবীর জানান, তিনি ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছেন। ২/১ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়কারী ডা. অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী জানান, সকালে ধর্ষণের শিকার নারীকে ওসিসিতে ভর্তির পর প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এরপর তাকে মানসিক কাউন্সিলিং করা হয়। তার শরীর ও পোষাক থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহসহ ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে।
খুলনা থানার ওসি হাসান আল মামুন জানান, আদালতের অনুমতি নিয়ে এস আই জাহাঙ্গীরকে খুমেক হাসপাতালে নেয়া হবে। সেখানে তার শরীরের বিভিন্ন আলামত ও ডিএনএ নেয়া হবে।
হোটেল সুন্দরবনের কর্মচারী গোলাম মোস্তফা জানান, এস আই জাহাঙ্গীর মাঝেমধ্যে এই হোটেলে আসতেন। মঙ্গলবার রাতে তিনি তাকে সঙ্গে নিয়ে মা-মেয়ে যে কক্ষে ছিলেন ওই কক্ষের দরজায় গিয়ে নক করেন। তারা দরজা খুলে দেওয়ার পর তাকে (হোটেল কর্মচারীকে) মারধর করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর কক্ষের ভেতরে কী ঘটেছে তা তিনি দেখেননি। তবে ওই নারীর চিৎকারে হোটেলের লোকজন হোটেলের নিচতলার মেইন গেটে তালা লাগিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন: হবিগঞ্জে চাচাতো বোনকে ধর্ষণের দায়ে যুবকের যাবজ্জীবন
হোটেলের আরেক কর্মচারী সাজ্জাদ হোসেন সজল জানান, তিনি রাতে বাসায় ছিলেন। রাত ২টার দিকে মোবাইলে ঘটনা শুনে হোটেলে আসেন। এসে দেখেন এস আই জাহাঙ্গীরকে হোটেলের রিসিভশনে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে বাগেরহাটের মোংলা থেকে ১১ বছর বয়সী শিশু কন্যা ও এক ভাগ্নেকে নিয়ে ডাক্তার দেখানোর জন্য খুলনায় আসেন এক নারী (২৮)। তবে ডাক্তারের সিরিয়াল না পাওয়ায় রাতে থাকার জন্য সুন্দরবন আবাসিক হোটেলে তৃতীয় তলার ৩১৩ নম্বর রুমে মেয়েকে নিয়ে ওই নারী থাকেন। আর ভাগ্নে আরেক রুমে থাকে। রাত সোয়া ২টার দিকে হোটেল বয়কে নিয়ে পুলিশ পরিচয়ে রুমে প্রবেশ করে মো. জাহাঙ্গীর আলম ওই নারীর সঙ্গে থাকা মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। তিনি নিজের মেয়ে পরিচয় দিলে জাহাঙ্গীর বিশ্বাস করতে চায়নি। এরপর হুমকি-ধামকি দিয়ে হোটেল বয়কে রুম থেকে তাড়িয়ে দেন। রাত ২টা ৩০ মিনিটের দিকে ভয়-ভীতি দিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় ওই নারী ও তার মেয়ের চিৎকারে হোটেল বয় ও অন্যরা এগিয়ে এলে জাহাঙ্গীর পালিয়ে যায়। পরে ভাগ্নে সবকিছু শুনে হোটেল মালিক মিশারুল ইসলাম মনিরকে বিষয়টি জানালে তিনি এসে হোটেলের মেইন গেট তালাবদ্ধ করে রাখে এবং পুলিশকে সংবাদ দেয়। পুলিশ এসে ওই নারীকে উদ্ধার করে এবং আসামিকে আটক করে।
আরও পড়ুন: তানিয়া ধর্ষণ-হত্যা: ২ জনের ফাঁসির আদেশ