উপকূলীয় জেলা খুলনায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত এবং সাত শতাধিক মাছের ঘের ও পুকুরে পানি ঢুকে মাছ ভেসে গেছে।
জানা যায়, দাকোপ উপজেলায় ১ হাজার ৭৬৫টি ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত ও ৭৪০টি মাছের ঘের ও পুকুরে পানি প্রবেশ করে মাছ ভেসে গেছে। গাছাপালা উপড়ে রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে।
দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ৩১৫টি চিংড়ি ঘের ও ৪২৫টি পুকুর ভেসে গেছে। বাড়ি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রচুর গাছপালা ভেঙে ও উপরে পড়েছে।
কয়রা উপজেলা ঘূর্ণিঝড় মনিটরিং কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাফর রানা জানান, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তবে কয়রার কোথাও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিক উদ্দিন জানান, বুলবুলের কারণে খুলনাঞ্চলের পাঁচটি জেলার চার লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। ৩২টি ফিডারের মধ্যে ১৫টি ফিডার চালু উপযোগী হয়েছে। বাকি ফিডারের কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।
পাইকগাছা কপিলমুনির হবিনগর মোড়ের সামনে টাওয়ারের পাশে বিদ্যুতের তারের উপর গাছ পড়ে তৈরি হয়েছে মৃত্যুফাঁদ। একই স্থানে নিচে আটকে আছে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পাইকগাছাগামী একটি পরিবহন। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আপাতত এ রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
উপজেলা ছাড়াও মহানগরীর সড়কের ওপর গাছপালা ও সাইনবোর্ড ভেঙে পড়ায় অনেকস্থানে যান চলাচল বন্ধ ছিল। গাছপালা কেটে সরানোর পর রবিবার বিকাল থেকে পুনরায় যান চলাচল শুরু হয়। নগরীর অধিকাংশ স্থানে বিদ্যুৎ না থাকায় বাসাবাড়িতে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে, বৃষ্টিপাতের কারণে নগরের জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টিতে মহানগরের শান্তিধাম মোড়, রয়্যাল মোড়, বাইতি পাড়া, তালতলা, লবণচরা বান্দা বাজারসহ প্রায় সব এলাকার রাস্তায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে জরিপ করবে বন বিভাগ
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে জরিপ করা হবে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
তাদের মতে, ২০০৯ সালের মতো এবারও বুক চিতিয়ে সুন্দরবন খুলনাসহ উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষা করেছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সুন্দরবনের গাছপালা উপড়ে গেলেও বন্যপ্রাণী ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুন্দরবন (পশ্চিম) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন বলেন, ‘সুন্দরবনের সামগ্রিক ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা চলছে। জরিপ না করে সুন্দরবনের বিষয়ে অনুমান করে কিছু বলা ঠিক হবে না।’
‘প্রাথমিকভাবে কোনো বন্যপ্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। কারণ ভাটার সময় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। ফলে দমকা হাওয়া বনের ভেতরের গাছপালা উপড়ে পড়ে এবং ডাল ভেঙে গেছে,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই নিরূপণ করা কঠিন। স্বচক্ষে দেখে ক্ষয়ক্ষতির একটি সুষ্ঠু ও নির্ভুল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি। সেজন্য দুই থেকে তিন দিন সময় লাগতে পারে।
বন কর্মকর্তার দেয়া তথ্য মতে, বুলবুলের আঘাতে সাতক্ষীরা রেঞ্জের পুষ্পকাঠি ফরেস্ট স্টেশনের ঘরের টিনের চালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কদমতলার এফজি ব্যারাকের টিনের চাল উড়ে গেছে ও রান্নাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাঠশ্বর অফিসের ছোট ট্রলার নদীতে ডুবে গেছে এবং রান্নাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কোবাদক স্টেশনের কাঠের ১০০ ফুট দৈর্ঘের জেটিটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ব্যারাকের চাল ও রান্নাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ছে। চুনকুড়ির সোলার প্যানেল উড়ে নদীতে ভেসে গেছে। দোবেকি টহল ফাঁড়ির ৪০ ফুট দীর্ঘ পন্টুনটি ভেঙে গেছে।
নলিয়ান রেঞ্জ অফিসে যাতায়াতের রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এই অফিস ঘিরে থাকা গাছপালা ভেঙে পড়েছে।
মংলা বন্দরে পুরোদমে কাজ শুরু
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের দুর্যোগ কেটে যাওয়ায় খুলনার মংলার পরিবেশ অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানিয়েছেন হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফকর উদ্দিন।
তিনি জানান, ঝড়ে পশুর নদীতে বিদেশি কোম্পানির ড্রেজিং কাজে ব্যবহৃত একটি স্পিড বোট এবং উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় এক হাজারের বেশি কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। রাস্তার ওপর বড় বড় শতাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে।
ফকর উদ্দিন বলেন, ‘রাতেই জাহাজ চলাচলের কাজ শুরুর পরই সোমবার সকাল থেকেই বন্দরের অপারেশনাল কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে বন্দরের পশুর চ্যানেল ও জেটিতে অবস্থান করা ১৪টি বিদেশি জাহাজে পণ্য ওঠা নামার কাজ শুরু হয়েছে।