এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে মেট্রো মেকার্স ডেভেলপার্স লিমিটেড ও কয়েকজন প্লটমালিকের করা আবেদন (রিভিউ) বৃহস্পতিবার খারিজ করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ।
এর ফলে মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্পের ভূমি আগের অবস্থায় (জলাশয়) ফিরিয়ে আনার যে নির্দেশ আপিল বিভাগ দিয়েছিলে, তাই বহাল রইল।
২০১২ সালের ৭ আগস্ট আপিল বিভাগ ওই প্রকল্প অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিল। ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মেট্রো মেকার্স ও কয়েকজন প্লটমালিক পৃথক পাঁচটি আবেদন (রিভিউ) করেন। এর শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার রিভিউ আবেদনগুলো খারিজ করে আদেশ দেয়া হয়।
আদালতে প্রকল্পটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটকারী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল, এ এম আমিন উদ্দিন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সাঈদ আহমেদ কবীর।
মেট্রো মেকার্সসহ পুনর্বিবেচনার আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামাল উল আলম, মুনসুরুল হক চৌধুরী, আবদুল মতিন খসরু প্রমুখ।
জানা যায়, রাজউকের অনুমোদন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই মেট্রো মেকার্স ডেভেলপার্স লিমিটেড আমিন বাজারের ওই বন্যা প্রবাহিত এলাকায় মধুমতি মডেল টাউন হাউজিং প্রকল্প গ্রহণ করে। এই প্রকল্পের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৪ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে বেলা।
এতে ভূমি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়, রাজউক ও মেট্রো মেকার্সকে বিবাদী করা হয়। এ রিটের চূড়ান্ত শুনানি করে ২০০৫ সালের ২৭ জুলাই হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্প অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। একই সঙ্গে প্লটগ্রহীতাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। এ ছাড়া ওই প্রকল্পে মাটিভরাট বন্ধ করার বিষয়ে রাজউকের মেট্রো মেকার্সকে দেয়া নোটিশ চ্যালেঞ্জ করে অপর রিট আবেদনটি করে মেট্রো মেকার্স। এই আবেদনও খারিজ হয়।
আদালত সূত্র জানায়, এসব রায়ের অংশবিশেষের বিরুদ্ধে পক্ষগুলো পৃথক চারটি আপিল ও রাজউক একটি আবেদন করে। এর মধ্যে বেলার রিটে ওই প্রকল্প অবৈধ ঘোষণার বিরুদ্ধে মেট্রো মেকার্স একটি এবং মাটিভরাট বিষয়ে রিট খারিজের বিরুদ্ধে অপর আপিলটি করে। আর প্লটগ্রহীতাদের স্বার্থ সংরক্ষণের নির্দেশনার বিরুদ্ধে বেলা আপিল করে। রাজউকও এ বিষয়ে একটি আবেদন করে। আর প্রকল্প অবৈধ ঘোষণার অংশবিশেষের বিরুদ্ধে প্লটগ্রহীতারাও তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য একটি আপিল করেন। এসব আপিল ও আবেদনের ওপর ২০১২ সালের ৭ আগস্ট আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করেন।
২০১৩ সালের ১১ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডকে ওই দুটি মৌজার ভূমিগুলো পূর্বের অবস্থায় (জলাভূমি) ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্যর্থ হলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের উদ্যোগ নিতে এবং এর খরচ মেট্রো মেকার্সের কাছ থেকে আদায় করতে হবে।
রায়ে আরও বলা হয়, বিবাদী (মেট্রো মেকার্স) আপিলের সারসংক্ষেপে বলেছে, ৫৫০ একর ভূমি তারা ক্রয় করেছে। রাষ্ট্রপতির আদেশ, ৯৮ অনুসারে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ১০০ বিঘার বেশি জমি রাখতে পারবে না। আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বরাবরে ১০০ বিঘার বেশি জমি রাখা যাবে না। ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুসারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে রায়ের অনুলিপি ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়।
পরে রায়টি পুনর্বিবেচনা চেয়ে মেট্রো মেকার্স ও কয়েকজন প্লটমালিক পৃথক পাঁচটি আবেদন (রিভিউ) করেন। এর শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার রিভিউ আবেদনগুলো খারিজ করে আদেশ দেয়া হয়।