আদালত বলেছে, ‘এই মামলায় মিন্নিকে এখন অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ মুহূর্তে আমরা হস্তক্ষেপ করতে চাই না। নিম্ন আদালতেই আবেদনের সুযোগ রয়েছে। আপনারা সেখানে যান। আদালত পরিবর্তনের আবেদনও করতে পারেন। এমনকি ফৌজদারি বিধিতে হাইকোর্টের ট্রায়াল করার আবেদনের সুযোগও রয়েছে।’
বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফআর এম নাজমুল আহাসান এবং বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব কথা বলেন।
জাতীয় একটি দৈনিকে ‘মিন্নির রিমান্ড,পাশে কেউ নেই’ মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারুক হোসেন বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে আদালত এ কথা বলে।
আইনজীবী ফারুক হোসেন হাইকোর্টকে বলেন, ‘এ মামলার প্রধান সাক্ষী ছিল মিন্নি। আস্থাভাজন হওয়ায় তাকে প্রধান সাক্ষী করা হয়। মামলার এজাহারভুক্ত কয়েকজন আসামিকে এখনো গ্রেপ্তারে প্রশাসন বড় কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। প্রধান সাক্ষী মিন্নি স্বামী শোকে এ মুহূর্তে কাতর। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে টর্চারিং করে পরে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর আবার রিমান্ডে নেয়া হয়। এটা অমানবিক।’
তিনি আরও বলেন, ‘এঘটনার মূল হোতাদের আড়াল করতে মামলার প্রধান সাক্ষীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ সাক্ষী মিন্নিতো সব সময় মামলার পাশে থাকবে; তাকে পরেও গ্রেপ্তার করা যেত। আমরা মিন্নির রিমান্ড বাতিল ও মামলা সঠিক পথে পরিচালনার নির্দেশনা চাই।’
এ সময় আদালত বলে, মামলাটি তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে। এ মুহূর্তে আমরা হস্তক্ষেপ করবো না।’
মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টায় মিন্নিকে জিজ্ঞাবাদের জন্য তার বাবার বাড়ি মাইঠা গ্রাম থেকে পুলিশ লাইনে ডেকে আনা হয়। পরে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওই দিন রাত ৯টায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাকে।
বুধবার বিকাল ৩টায় মিন্নিকে বরগুনা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর হুমায়ুন কবির সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং আদালতের পরিদর্শক আব্দুল কুদ্দুসের বক্তব্য গ্রহণ শেষে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মিন্নির পক্ষে আদালতে নিজস্ব কোনো আইনজীবী না থাকায় আদালত সরাসরি তার বক্তব্য গ্রহণ করে।
এ সময় মিন্নি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতকে বলে, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। আসামিরা তাকে বিভিন্নসময়ে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। তিনি স্বামী হত্যার বিচার চান।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা সাতজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
রিফাত হত্যা মামলায় ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে সাতজন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে পুলিশ জানায়।
২ জুলাই ভোররাতে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত তিনজনসহ সাত আসামি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনায় বর্তমানে তিনজনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।