রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু স্বাক্ষরিত বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়া বলেন, সারাদেশে প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়লেও রংপুর বিভাগে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দারিদ্র্য। তাই এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া রংপুর অঞ্চলের দারিদ্র্য নিরসন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে রংপুর বিভাগের জন্য পোশাক ও কৃষিভিত্তিক শিল্প জোন গড়ে তোলার পাশাপাশি উন্নয়ন বৈষম্য দূরীকরণে এই বিভাগের আট জেলার উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ রাখা প্রত্যাশিত ছিল।
তিনি বলেন, রংপুর বিভাগের শিল্পায়নে আলাদা ঋণ, কর ও ভ্যাট নীতি প্রণয়ন, বোরো মৌসুমে ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়া কৃষকদের স্বস্তি দিতে বিশেষ প্রণোদনা, রংপুরে প্রস্তাবিত স্পেশাল ইকোনমিক জোন ও আইটি পার্ক স্থাপন, উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নের স্বার্থে ‘‘নর্থ বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রি’’ গঠনের মতো বিষয়গুলো অর্ন্তভূক্ত থাকা উচিত ছিল বলে রংপুর চেম্বার মনে করে।
‘কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, বাজেটে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া রংপুর বিভাগের ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নের জন্য তেমন কোন সুযোগ-সুবিধা ও অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব না থাকায় রংপুর চেম্বার হতাশ’, বলেন রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু।
তিনি বলেন, রংপুর অঞ্চলের দারিদ্র্য নিরসন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে রংপুর চেম্বারের প্রস্তাবগুলো সংশোধিত বাজেটে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য আমার প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
তবে প্রস্তাবিত বাজেটে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়ে অর্থ পাচার রোধ ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে শিল্পে বিনিয়োগ করলেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ ভৌত অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি এবং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) বিশেষ গুরুত্ব, দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারি-বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, কৃষকের শস্য বীমা চালু, অর্থপাচার রোধে কঠোর নজরদারি, প্রবাসী আয় ও রফতানিতে প্রণোদনা, শেয়ারবাজার চাঙ্গায় প্রণোদনা, জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ফি কমিয়ে আবাসন খাতকে চাঙ্গা করার চেষ্টা, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে ভ্যাট অব্যাহতি, অনুন্নত এলাকা, চরাঞ্চল এবং প্রান্তিক এলাকার মানুষের উন্নয়নের জন্য বিশেষ বরাদ্দ, দেশের কৃষি ও কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণে কৃষি খাতে অধিক হারে ভর্তুকি ও প্রণোদনা বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্যের বিদ্যমান শুল্কমুক্ত সুবিধাকে স্বাগত জানায় রংপুর চেম্বার।
এছাড়া শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পের মুলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা, দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় বেশ কিছু পণ্যের কাঁচামালের শুল্কহার হ্রাস, রপ্তানি পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টি, বিলাস ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বহাল রাখা, হাতে তৈরি বিস্কুট, কেক, রুটি, স্বল্প মূল্যের জুতা এবং দেশীয়ভাবে মোটরসাইকেল ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ বৃদ্ধিতে দেশীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাত বিকশিত হবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে রংপুর চেম্বার মনে করে।
তবে, বাজেটে নতুন ভ্যাট আইনে ২, ৫, সাড়ে ৭, ১০ এবং ১৫ শতাংশ- এই পাঁচটি রেট নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে বাজেটে একদিকে ভ্যাটের পরিধি ব্যাপক হারে বিস্তৃত করা হচ্ছে, তেমনি নিত্যব্যবহার্য কিছু পণ্যের ভ্যাটহার বাড়ানো হচ্ছে। এতে বাড়তে পারে ওইসব পণ্যের দাম। যা ভোক্তাকে ভোগাবে বলে রংপুর চেম্বার মনে করে।