রবিবার সন্ধ্যায় মাহফুজ উল্লাহর মেয়ে নুসরাত হুমায়রা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে।
নুসরাত মোবাইলে ইউএনবিকে বলেন, ‘আমার বাবা এখনো বেঁচে আছেন। তবে তার অবস্থা সংকটাপন্ন। গতরাতে তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয় এবং চিকিৎসকরা তাকে ওষুধ দেয়া বন্ধ করেন।’
তিনি বলেন, মাহফুজ উল্লাহর মৃত্যু নিয়ে গণমাধ্যমে যে খবর প্রকাশ হয়েছে তা সঠিক নয়। ‘আমি তার পাশেই রয়েছি। আমরা তার শান্তিপূর্ণ প্রস্থানের অপেক্ষায় রয়েছি।’
এর আগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক মহাসচিব এজেডএম জাহিদ পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে জানান, ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাহফুজ উল্লাহ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যেই শোক জানিয়েছে।
মাহফুজ উল্লাহ হৃদরোগ, কিডনি ও উচ্চ রক্তচাপজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন।
গত ২ এপ্রিল বুকের ব্যথা নিয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন মাহফুজ উল্লাহ। পরে ১০ এপ্রিল উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ব্যাংককে নেয়া হয়।
১৯৫০ সালে নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করা মাহফুজ উল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যা ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী হিসেবে ঊনসত্তরের ১১ দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্র রাজনীতির কারণে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে তাকে ঢাকা কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ছাত্রাবস্থাতেই মাহফুজ উল্লাহ সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বাংলাদেশের একসময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাপ্তাহিক বিচিত্রার জন্মলগ্ন থেকেই তিনি এ পত্রিকার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মাঝে চীন গণপ্রজাতন্ত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে, কোলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপদূতাবাসে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে কাজ করেছেন তিনি। রেডিও ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেছেন।
মাহফুজ উল্লাহ আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একজন সক্রিয় পরিবেশবিদ এবং বাংলাদেশে তিনিই প্রথম পরিবেশ সাংবাদিকতা শুরু করেন।
বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লেখা তার বইয়ের সংখ্যা ৫০-এর অধিক এবং এসবের অধিকাংশই পৃথিবীর বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীতে সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে সংগৃহিত আছে।
তার লেখা বইগুলোর মধ্যে President Zia of Bangladesh : A political Biography, অভ্যুত্থানের ঊনসত্তর, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন : গৌরবের দিনলিপি (১৯৫২-৭১), ULFA & THE INSURGENCY IN আশশাম, Begum Khaleda Zia : Her Life, Her Story ও স্বাধীনতার প্রথম দশকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য।