আগামী ছয় মাসের মধ্যে সরকারি ওই সেবা সংস্থাকে সুয়ারেজ লাইনগুলো সরাতে বলা হয়েছে। একইসাথে আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে এক মাসের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ওয়াসার করা এক সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রবিবার এ আদেশ দেন। আদেশের বিষয়টি জানান রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
এদিকে বুড়িগঙ্গায় ওয়াসার কোনো সুয়ারেজ লাইন পতিত হয়নি মর্মে ১৮ জুন যে অসত্য তথ্য সম্বলিত এফিডেভিট দেয়া হয়েছিল তার জন্য হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। আদালত বলেছে, সুয়ারেজ লাইন সরানোর ওপর নির্ভর করে এবিষয়ে আদেশ দেয়া হবে।
এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া বুড়িগঙ্গার দুই তীরে গড়ে ওঠা শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় পড়ছে সেইসব প্রতিষ্ঠান আগামী একমাসের মধ্যে বন্ধ করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রবিবার ওয়াসার পক্ষে সময়ের আবেদন করেন অ্যাডভোকেট উম্মে সালমা। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আমাতুল করিম।
এদিন পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুড়িগঙ্গা নদীর দক্ষিণ তীরে ৫২টি ওয়াশিং ফ্যাক্টরি পরিবেশগত ছাড়পত্র ও কোনো ধরনের ই-ফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। এগুলো বুড়িগঙ্গার পানি ও পরিবেশকে দূষিত করছে। এছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ভেতরে বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীরেও কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিবেশগত ছাড়পত্র ও ই-ফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্রান্ট ছাড়াই চলছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানও বুড়িগঙ্গার পানিকে দূষিত করছে। এ ব্যাপারে একটি তদন্ত চলমান রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন দেখে হাইকোর্ট যেসব প্রতিষ্ঠান পরিবেশগত ছাড়পত্র ও ই-ফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ছাড়াই চলছে এবং বুড়িগঙ্গার পানি ও পরিবেশকে দূষিত করছে সেগুলোকে এক মাসের মধ্যে বন্ধ করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে। একই সাথে অধিদপ্তরকে আগামী ৮ জানুয়ারির মধ্যে এ ব্যাপারে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে।
এর আগে গত ২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বলে, রাজধানী ঢাকার পাশ্ববর্তী বুড়িগঙ্গা নদীতে পতিত হওয়া ওয়াসার ৬৮টি সুয়ারেজ লাইন বন্ধের ব্যাপারে ওয়াসাকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ব্যাপারে রবিবার আদেশ দেয়া হবে। সে অনুযায়ী উপরোক্ত আদেশ হয়।
একই সাথে সেদিন ৬৮টি ছাড়া বুড়িগঙ্গার দুই পাড়ে আর কোন সুয়ারেজ লাইন থাকলে তা বন্ধে বিআইডব্লিউটিএকে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়া হয়। আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে এই আদেশ বাস্তবায়ন করে এ সময়ের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়।
এর আগে গত ১৭ নভেম্বর হাইকোর্ট বুড়িগঙ্গা নদীর চারপাশে গড়ে ওঠা ২৭ প্রতিষ্ঠানের পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকায় তা বন্ধের নির্দেশ দেয়। ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলা হয়। এছাড়া বুড়িগঙ্গা দূষণ নিয়ে ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে হলফনামা আকারে আদালতে মিথ্যা তথ্য দেয়ায় ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে শোকজ নোটিশ দেয় আদালত। একইসাথে হাইকোর্টের রায় অনুসারে বুড়িগঙ্গা দূষণরোধে ওয়াসার নিষ্ক্রিয়তায় কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে তাও জানতে চাওয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে ওয়াসার এমডি নিঃশর্ত ক্ষা চেয়ে আবেদন করেছেন।
জানা যায়, এর আগে ওয়াসা হলফনামা দিয়ে হাইকোর্টে বলেছিল, ঢাকা ওয়াসার অধিক্ষেত্রে মোট প্রায় ৯৩০ কিলোমিটার পয়োলাইন রয়েছে। উক্ত পয়োলাইনের কোনো মুখ বা আউটলেট বুড়িগঙ্গা কিংবা অন্য কোনো প্রাকৃতিক জলাধারে পতিত হয়নি, বরং ঢাকা ওয়াসার নিয়ন্ত্রণাধীন পয়োলাইনের মুখ বা আউটলেট পাগলা পয়ঃশোধনাগারে পতিত হয়েছে। পাগলা পয়ঃশোধনাগারে পতিত পয়োবর্জ্যসমূহ পরিশোধন করা হয়।
অপরদিকে বিআইডব্লিউটিএ প্রতিবেদন দিয়ে বলে, ঢাকার ৫৫টি এলাকা দিয়ে ওয়াসার স্থাপিত ৬৮টি সুয়ারেজ লাইন দিয়ে তরল শিল্প বর্জ্য, হাসপাতালের বর্জ্য, দূষিত পানি, গৃহস্থালি বর্জ্য বুড়িগঙ্গা নদীতে পড়ছে। সরকারি এই দুটি সংস্থার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে হাইকোর্ট বলে, ওয়াসা এফিডেভিট আকারে আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতকে বিভ্রান্ত করা অপরাধের শামিল।
প্রসঙ্গত, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের করা এক রিটের প্রেক্ষিতে ২০১১ সালে হাইকোর্ট এক রায়ে বুড়িগঙ্গার পানি দূষণরোধে কয়েকদফা নির্দেশনা দেয়। কিন্তু ওই নির্দেশনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় আবারও আদালতে আবেদন করে রিটকারী ওই সংগঠন।