চিন্তাশীল চলচ্চিত্র রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি করে। আর এ ধরনের চলচ্চিত্র বিকাশে নতুন একটি চলচ্চিত্র আন্দোলনের প্রয়োজন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদ।
এছাড়া এ জন্য সরকারি আগ্রহ প্রয়োজন বলেও জানান তিনি। বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র আয়োজিত ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে চিন্তাশীলতা ও রাজনৈতিক সচেতনতা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
অধ্যাপক জুনাইদ বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ চিন্তাশীল চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে কতখানি সফল তা বিশ্লেষণ করা জরুরি।
তিনি বলেন, চলচ্চিত্র তখনই চিন্তাশীল হয়ে ওঠে যখন একজন নির্মাতা নান্দনিকভাবে আকর্ষণীয় এবং নতুন নির্মাণশৈলী বা চলচ্চিত্র ভাষার মাধ্যমে ভাবনার গভীরতা আছে এমন একটি কাহিনী উপস্থাপন করেন। এ ধরনের চলচ্চিত্রে বিষয়বস্তু এবং নির্মাণশৈলী দুই দিকেই চিন্তার গভীরতা ও সৃজনশীলতার প্রয়োজন। গতানুগতিক কাঠামো ও পদ্ধতির ওপর নির্ভরতা রেখে এমন ছবি নির্মাণ করা যায় না। চিন্তাশীল চলচ্চিত্র তাই বাণিজ্যিক লাভ অর্জনের লক্ষ্যকে প্রাধান্য দেয়া হয় না।
তিনি বলেন, ‘এমনকি সত্যজিৎ রায়কে শুনতে হয়েছিল ৮০ বছরের বৃদ্ধা মহিলাকে ছবিতে দেখার জন্য কে আসবে- এমন নানা কথা। কয়েকবার অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল “পথের পাঁচালী” নির্মাণের কাজ। কিন্তু সত্যজিৎ রায় উঁচু শৈল্পিক মান অর্জনের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেননি।’
বাংলাদেশে বর্তমানে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা যেমন রাজনৈতিক দুর্নীতি, সংখ্যালঘুর ওপর নির্যাতন, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও অসহিষ্ণুতা, ইতিহাস জানার প্রতি অনাগ্রহ, নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য ক্ষমতাধরদের লেজুড়বৃত্তি এসব বিষয় নিয়ে কোনো সিনেমা হচ্ছে বা রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে কি না এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
আলমগীর কবিরের ধীরে বহে মেঘনা (১৯৭৩), সূর্যকন্যা (১৯৭৬), রূপালি সৈকতে (১৯৭৯) চলচ্চিত্রের কথা উল্লেখ করে ড. জুনাইদ বলেন, এ চলচ্চিত্রগুলোতে সে সময়ের দেশে বিদ্যমান দ্বিধা ও হতাশা, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর দুর্বল অবস্থান, সামরিক শাসনের অধীনে নাগরিকদের মত প্রকাশের সুযোগ না থাকা, রাজনৈতিক প্রতিবাদ প্রভৃতি পরিস্থিতি তুলে ধরে রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়েছে।
এ সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও উচ্চতর সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. জিয়া রহমান। এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভুইয়া।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অগভীর স্ক্রিপ্ট থেকে সিনেমা নির্মাণ করে অর্থ উপার্জনের চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে রাজনৈতিক সিনেমা নির্মাণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জের ফুয়াদের স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত!
অনন্য মামুনের পরিচালনায় নিরব-মিথিলার চলচ্চিত্র ‘অমানুষ’-এর শুভমুক্তি ডিসেম্বরে