দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের সাথে জমা দেয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী- রেজাউল করিম চৌধুরী নিজের ও নির্ভরশীলদের মিলে বার্ষিক আয় ৮ লাখ ১৬ হাজার ৪০০ টাকা। তার মোট অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে নগদ ১ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৪০৯ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৭ লাখ ৮ হাজার ৫৩৯ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৩২ লাখ ২৭ হাজার ৯০ টাকা। পোস্টাল, সেভিংসে নিজ নামে না থাকলেও স্ত্রীর নামে ২০ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড আছে।
রেজাউল করিমের নিজ নামে রয়েছে একটি ৪ লাখ টাকা দামের মোটর গাড়ি। স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর মধ্যে বিবাহসূত্রে নিজ নামে ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের ২০ তোলা স্বর্ণ ও স্ত্রীর নামে ৬০ হাজার টাকা মূল্যমানের ৪০ তোলা স্বর্ণ রয়েছে।
বিবাহসূত্রে নিজ নামে ১০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও এক লাখ টাকার আসবাবপত্র আছে তার। অন্যান্য অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মূলধন ২ লাখ টাকা ও ফার্মের মূলধন দশ লাখ ৬ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে অন্যান্য অস্থাবর সম্পত্তি মেসার্স চৌধুরী ইলেকট্রনিক ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ফার্মের মূলধন ২ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকা ও ঋণ হিসেবে প্রদত্ত চার লাখ টাকা।
রেজাউল করিম চৌধুরী হলফনামায় জানান, নিজের বার্ষিক আয় বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান থেকে ৪ লাখ ১৪ হাজার টাকা, ব্যবসায় নিজের কোনো আয় না থাকলেও নির্ভরশীলদের আয় তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ফার্মের শেয়ার থেকে নিজের আয় দুই হাজার ১০০ টাকা ও নির্ভরশীলদের আয় ৫০ হাজার ৩০০ টাকা।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে রেজাউল করিম চৌধুরীর নিজের নামে কৃষি ও অকৃষি জমি না থাকলেও স্ত্রীর নামে রয়েছে ২ গন্ডা দুই কড়া অকৃষি জমি। দালান, আবাসিক ও বাণিজ্যিক সম্পদের মধ্যে নিজ নামে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ভূমির ওপর আবাসিক গৃহমূল্য এক লাখ টাকা ও যৌথ মালিকানার ক্ষেত্রে প্রাপ্ত চার ভাগের এক অংশ। নিজ নামে চারটি অ্যাপার্টমেন্ট যার মূল্য এক কোটি ৯ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৭ টাকা।
এ ছাড়াও রেজাউল করিম চৌধুরীর নামে কোনো ঋণ ও দেনা নেই।
চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাট এলাকার খ্যাতনামা বহদ্দার বাড়ির হারুন অর রশীদ চৌধুরী বড় সন্তান রেজাউল করিম চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বি.এ। রাজনৈতিক জীবনে কোনো মামলা-মোকদ্দমার মুখোমুখি হননি তিনি। পেশায় ব্যবসায়ী এ রাজনীতিবিদ মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী।
অপরদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের বাৎসরিক আয় ২০ লাখ ৭৪ হাজার ৬২৫ টাকা। এর মধ্যে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান বা অন্যান্য ভাড়া বাবদ থেকে আয় ৩ লাখ ৫৩ হাজার ২৫ টাকা এবং পেশাগত আয় ১৭ লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকা।
নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্রের সাথে জমা দেয়া হলফনামায় সম্পদ বিবরণীতে এসব তথ্য দিয়েছেন শাহাদাত হোসেন।
এছাড়া তার নিজ নামে অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ৪ কোটি ২৩ লাখ ৯ হাজার ২২৭ টাকা। এর মধ্যে নিজের নগদ আছে ১৫ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের নামে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৩৪ লাখ ৪৭ হাজার ২৭৭ টাকা, নিজের নামে বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার বাবদ রয়েছে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৫০ টাকা।
ডা. শাহাদাত হলফনামায় জানান, তার নিজের নামে ১১ লাখ ৮০ হাজার মূল্যমানের গাড়ি (ফিল্ডার-টয়োটা) ও ২৭ লাখ ২০ হাজার মূল্যমানের ভি-৭৩ মডেলের পুরোনো জিপ গাড়ি আছে এবং নিজের নামে ৭৫ হাজার টাকা মূল্যমানের স্বর্ণালঙ্কার আছে।
ইলেকট্রনিক সামগ্রীর মধ্যে নিজ নামে ২৫ হাজার টাকা মূল্যমানের ফ্রিজ ও ২৫ হাজার টাকা মূল্যমানের টিভি আছে। খাট, সোফা সেট, আলমারি, ওয়ারড্রোব মিলিয়ে নিজ নামে ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র আছে। অন্যান্য সম্পদের মধ্যে ট্রিটমেন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিজের ব্যবসায়িক মূলধন ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯০ হাজার ৬০০ টাকার সম্পদ রয়েছে।
ডা. শাহাদাতের নিজ নামে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ আছে। এর মধ্যে ১৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ১৮ শতক এবং ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ১ দশমিক ৫ কাঠা অনাবাদি জমি আছে। নিজ নামে ৬৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকার আটতলা বিশিষ্ট একটি দালানের এক অংশ আছে। এছাড়া ৩৫ লাখ টাকা দামের একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে শাহাদাতের।
ব্যাংক ঋণের মধ্যে শাহদাতের নিজ নামে উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে ৩ কোটি ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে ২৯ লাখ ৮১ হাজার ১৩২ টাকা ঋণ আছে।
চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া থানাধীন পশ্চিম বাকলিয়ার ডিসি রোড এলাকার আহমেদুর রহমানের ছেলে শাহাদাত হোসেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এমবিবিএস ডিগ্রিধারী এবং পেশায় চিকিৎসক। তার বিরুদ্ধে আদালত ও নগরের বিভিন্ন থানায় ৪৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের মোট ৯ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এ ছাড়াও চসিকের ৪১টি ওয়ার্ডে সাধারণ ও ১৪টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে মোট ২৭৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২২০ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৯ মার্চ সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে চসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে।