দলের ভেতরের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, আগামী ৫ ডিসেম্বর পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সারাদেশে বিশেষ করে প্রত্যেক থানা ইউনিটে একযোগে মিছিল ও বিক্ষোভে নেমে রাজপথে শক্তি প্রদর্শন করতে পারে বিএনপি নেতা-কর্মীরা।
ইউএনবির সাথে আলাপকালে বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, ৫ ডিসেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানির বিষয়ে আপিল বিভাগের আদেশের ওপর তাদের আন্দোলনের প্রকৃতি নির্ভর করছে। দলের প্রধান খালেদার জামিন আবেদন খারিজ হয়ে গেলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের একটি বড় শোডাউন ও সরকার উৎখাতের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানতে মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন জমাদানের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গত ২৮ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানির এক পর্যায়ে এই আদেশ দেন। একই বেঞ্চ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন আবেদনের শুনানিও আগামী ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেছায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, তাদের দলের সিনিয়র নেতারা সম্প্রতি বিভিন্ন জেলায় সফরকালে ডিসেম্বরের শুরু থেকেই ‘তীব্র’ আন্দোলনে নামার বিষয়ে তৃণমূল নেতাদের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের চেয়ারপার্সনকে মুক্ত করার জন্য অবিলম্বে আন্দোলন শুরু করতে আমাদের চাপ দিচ্ছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে ও সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা না দেয়ায় আমাদের তৃণমূল নেতারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা চায় যে, ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রথম বার্ষিকীতে আমাদের দল যেন তীব্র আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, তারা আশা করছেন আগামী ৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। ‘তবে যদি তার জামিন আবেদন খারিজ করা হয়, তবে আমরা মাসব্যাপী বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করব। এছাড়া মধ্যরাতের ভোটের মাধ্যমে প্রহসনমূলক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন তীব্র করার জন্য ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর রাজপথে অবস্থান নেয়ারও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।’
তবে তিনি জানান, তারা তৃণমূলসহ দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, আন্দোলনকালে যানবাহন ভাঙচুর ও জনগণের জানমালের ক্ষতি যেন না হয়।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য জানান, দলের সিনিয়র নেতাদের একটি পক্ষ এই মুহূর্তে তীব্র আন্দোলনে যাওয়ার বিরোধিতা করেছেন, কারণ তারা মনে করছেন, এতে সরকার তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে, তাতে শেষ পর্যন্ত দলের অবস্থান ও মনোবল আরও ভেঙে যেতে পারে।
তবে তিনি বলেন, সম্প্রতি হাইকোর্টের সামনে আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে বিএনপির একদল নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ দেখে দলের বেশিরভাগ নেতারা, বিশেষ করে তরুণ নেতারা খুশি হয়েছেন। তারা মনে করেন যে, এই জাতীয় কর্মসূচি মানুষকে সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলনে নামতে উত্সাহিত করবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, তারা আশা করছেন, আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করার আগেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল বোর্ড তাদের দলের চেয়ারপার্সনের স্বাস্থ্য বিষয়ে একটি প্রকৃত প্রতিবেদন জমা দেবে।
‘যদি তার (খালেদার) জামিন প্রত্যাখ্যান করা হয়, তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দলের পরবর্তী কার্যক্রমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা একটি বৈঠকে বসবেন। এছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম বার্ষিকীতে দলের কী কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিৎ সে বিষয়েও স্থায়ী কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে,’ বলেন তিনি।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তি না দিলে, সরকার উৎখাতের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই।
‘যদি আমরা দেখি ৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হয়নি, তাহলে আমরা বুঝতে পারব যে সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে আমাদের নেত্রীর (জামিনে) মুক্তি সম্ভব নয়। এরপর আমরা তীব্র আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি জানান, সরকারের পতন নিশ্চিত করতে তাদের দলের নেতা-কর্মীরা রাজপথে আন্দোলনে নামতে প্রস্তুত রয়েছে। তবে তাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘জনগণ সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ এবং তারা চায় আমাদের দল এর বিরুদ্ধে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করুক। আমরা অবশ্যই নির্ধারিত সময়ে আমাদের কর্মসূচি ঘোষণা করব। আমরা কার্যকর আন্দোলন গ্রহণ করব যাতে সরকারের বিরুদ্ধে একটি গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে এখনই জোরাল আন্দোলনে নামতে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা তাদের দলের নীতিনির্ধারকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। তাই কেন্দ্রীয় নেতারাও আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছেন। আন্দোলন সফল করতে তারা যেকোনো প্রকার ত্যাগ স্বীকার করতেও প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানান তিনি।