২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত ১ বছর ৩ মাসে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার মহাসড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জন, আহত হয়েছেন শতাধিক। এর মধ্যে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও ছাত্র রয়েছে। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় অনেক স্বপ্নের মৃত্যু হয়ে ট্র্যাজেডির জন্ম হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ১১
ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি সময় পর্যন্ত ১৫টি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। এতে মারা গেছে ৩০ জন, আহত হয়েছেন কমপক্ষে অর্ধশতাধিক।
রবিবার (২১ মার্চ) ফরিদপুরের মধুখালীতে ট্রাক-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের ছয় সদস্যসহ নিহত হয়েছেন ৯ জন। সকাল ৯টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মাঝকান্দি নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে দুইজন ঘটনাস্থলে এবং চারজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। বাকি তিনজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
নিহতরা হলেন ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঢাকার আশুলিয়াতে প্রতিপক্ষের ধরিয়ে দেয়া আগুনে নিহত তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য (হিজরা) মেহের ওরফে কাজলীর মা মিয়াজান বিবি (৬৮), বোন আমেনা বেগম (৪৮), স্ত্রী কুটি বিবি (৪২), মেয়ে মরিয়ম (২৫), জামাতা জুয়েল রানা (৩২) এবং মরিয়ম-জুয়েলের চার মাসের শিশু মুজাহিদ।
নিহত অপর তিনজন হলেন আইনজীবী আব্বাসউদ্দিন (৪৮), গ্রামের মাতুব্বর নজরুল ইসলাম (৬০) ও গাড়ি চালক আল আমিন (৩০)। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন কুদ্দুছ (৩০), নূরুন্নাহার (৩৫), আলামিন (২৫), রাশিদা (৩৫) ও আবদুল্লাহ (৪)। নিহতদের সকলের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার মহেষপুর উপজেলার কাজীর বেরিয়া ইউনিয়নের সামন্তখোলা গ্রামে।
ঝিনাইদহের মহেষপুর উপজেলার কাজীর বেড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বি এন সেলিম রেজা বলেন, আমার ইউনিয়নের জন্য এটি একটি বিপর্যয়কর ঘটনা। স্মরণকালের ইতিহাসে আমাদের ইউনিয়ন এতগুলো লাশ একসাথে দেখেনি।
আরও পড়ুন: যশোরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২, আহত ৫
তিনি বলেন, নিহত জুয়েল রানার এক আত্মীয় গত বছর মারা যান। ঢাকার একটি ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্ট ছিল। ওই অ্যাকাউন্টের টাকা উত্তোলনের জন্যই পরিবারের সকলকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন জুয়েল। পথিমধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ঘটে আরেকটি বড় দুর্ঘটনা। ফরিদপুর সদর উপজেলার মল্লিকপুর নামক স্থানে যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের চারজনসহ নিহত হন ছয়জন। ওইদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হন আরও কয়েকজন।
ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারি যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে একাধিক চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। তারপরেও সুযোগ পেলেই অধিক গতিতে গাড়িগুলো চলাচল করে, আর এতেই বিপর্যয় নেমে আসে।
ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার রুমি জানান, গাড়ির চালক ও মালিকদের পাশাপাশি যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে। তবেই রোধ করা সম্ভব হবে অধিক গতি। সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে এন সেভেন সড়কে বিভিন্ন স্থানে ডিসপ্লে দেয়া হয়েছে।
সড়কের মৃত্যুর মিছিল সম্পর্কে ফরিদপুর সনাকের সভাপতি অ্যাডভোকেট শীপ গোস্বামী বলেন, এই মৃত্যুর মিছিল রোধ করতে শুধু ডিসপ্লে আর চেকপোস্ট বসিয়ে কাজ হবে না। আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার। যারা অধিক গতিতে যানবাহন চালান, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
আরও পড়ুন: কক্সবাজার ও নীলফামারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩, আহত ২০
এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, আমরা আর সড়কে মৃত্যুর মিছিল দেখতে চাই না, কেউ প্রত্যাশা করে না তার আপনজন হারিয়ে যাক। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কঠোর হতে হবে, পাশাপাশি সড়কে চলাচলকারীদের হতে হবে আরও সচেতন এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।