এতে যেমন খুলনার খাদ্য নিরাপত্তার সুরক্ষা সম্ভব তেমনি সরকারি ব্যবস্থাপনায় ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। সেইসাথে কৃষিতে চলমান শ্রমিক সংকট নিরসনে শিগগিরই পদক্ষেপ নেয়ার দাবি সংশ্লিষ্ট কৃষকদের।
খুলনার শস্যভাণ্ডারখ্যাত ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোদাচ্ছের হোসেন বলেন, ‘এবার শুধুমাত্র ডুমুরিয়া উপজেলায় বোরো আবাদ হয়েছে ২১ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন।’
এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে সামনে শিলাবৃষ্টি বা ঝড় হলে ফসলের ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া করোনার কারণে শ্রমিক সংকট দেখা দিতে পারে বলেও শঙ্কার কথা জানান তিনি।
এদিকে ওই এলাকার কৃষকরা বলছেন, গত দু’বছর ধরে ধান বিক্রি করে তারা উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেন না। এদের মধ্যে অনেকেই শেষবারের মতো এবার বোরো ধানের আবাদ করেছেন। এবারও ধানের ন্যায্যমূল্য না পেলে আর ধান না লাগানোর পরিকল্পনাও করছেন অনেকে।
তবে, বাজারে চালের দাম থাকেলেও ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ কৃষকরা বর্তমানে শ্রমিক সংকটে রয়েছেন জানিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনা সরাসরি ন্যায্যমূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা জরুরি বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যত্থায় আবারও কৃষকরা লোকসানে পড়বেন বলে আশঙ্কা তাদের।
বোরো ধানের চাহিদা অনুযায়ী মূল্য না পাওয়ায় এ বছর কৃষকরা বোরোর আবাদ কম করেছেন জানিয়ে খুলনা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পংকজ কান্তি মজুমদার বলেন, এবার ৫৭ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। দুই লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গত বছর ৫৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো উৎপাদন হয়েছিল। তবে এবছর বাম্পার ফলন দেখা যাচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে খুলনাঞ্চলে ধান কাটা শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখায় শ্রমিক সংকট ও পরিবহন সংকটের মধ্যে পড়ছেন কৃষকরা। এসব বিষয় নিয়ে গত সোমবার জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি; তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’
খুলনাঞ্চলের কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য দিয়ে সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পারলে খাদ্য ঘাটতি হবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ তানভীর রহমান বলেন, সোমবার পর্যন্ত খুলনায় ৫৭ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন চাল ও ৪৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন গম মজুত রয়েছে। খুলনার যেসব স্থানে খাদ্য সরবরাহ করতে হয়; এ মজুত দিয়ে তা ৩ থেকে ৪ মাস চলানো সম্ভব। গেল বছরের তুলনায় এ বছরও খুলনাতে খাদ্য মজুতও সন্তোষজনক।
খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে প্রায় এক যুগ ধরে কাজ করা খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ খুলনার সাধারণ সম্পাদক কাজী জাবেদ খালিদ জয় বলেন, এ ধরনের দুর্যোগে ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে ব্যাপক খাদ্য নিরাপত্তার বিশয়টি জরুরি হিসেবে দেখা দেয়। সে জন্যে কৃষি জমি সুরক্ষা দরকার। বর্তমান অবস্থায় কৃষকের ধান সরাসরি কিনে সরকারি খাদ্যগুদামে নিতে হবে। কঠোর নজরদারিতে মাড়াই করে প্রয়োজন মতো সেই চাল স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে বাজারে ছাড়তে হবে।
এভাবে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার এ পরিস্থিতি সাময়িক সামাল দেয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।