আগামী দিনের খাদ্য সঙ্কট রোধে ধান বাড়িতে তোলার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন লাখ লাখ কৃষক।
একই সাথে, এবার বোরো মৌসুমে যশোরে এক লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা ধান ঘরে তোলার জন্য সহায়তা করতে নানাভাবে চেষ্টা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগের দাবি, বোরোতে বাম্পার ফলন হবে যশোরে। জেলার বিভিন্ন জায়গায় কমবেশি ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে ধানকাটা চলবে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। বিভিন্ন জায়গার কৃষকের বক্তব্যও তাই।
তবে, অন্যান্য বছর ধানকাটা শ্রমিক নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা না থাকলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। করোনাভাইরাসের কারণে দেশব্যাপী গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। দেশের অন্য স্থান থেকে শ্রমিকেরা আসতে পারছে না। যদিও সরকারের তরফ থেকে ধানকাটা শ্রমিকদের সহযোগিতা করতে প্রশাসনকে ইতোমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
খাজুরার কয়েরপাড়া গ্রামের জিন্নাত আলী নামে একজন কৃষক জানিয়েছেন, এক বিঘা জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে কমপক্ষে ৯ জন শ্রমিক লাগে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাও জানান, যশোরের ১২ লাখ বিঘা জমির বোরো ধান কাটতে ১ কোটি ৮ লাখ শ্রমিকের প্রয়োজন। তবে, কৃষকরা জানিয়েছেন, কৃষক পরিবার থেকে আনুমানিক ১৫ লাখ ১২ হাজার মানুষ সরাসরি বোরো ধান তোলার কাজে নিয়োজিত থাকেন। বিভিন্নভাবে বাকি ৯২ লাখ ৮৮ হাজার শ্রমিক সংগ্রহ করতে হয় পাঁচ লক্ষাধিক কৃষককে। একজন শ্রমিক যেহেতু বেশ কয়েকদিন ধরে কাজ করেন সে কারণে এ সংখ্যা বেশ খানিকটা কমে যায়।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, দেশের উত্তরবঙ্গ থেকে বেশিরভাগ ধানকাটা শ্রমিক যশোরে আসেন। এর বাইরে সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, পাবনা, ফরিদপুর থেকেও শ্রমিকরা আসেন। তবে, এইবার সেই সুযোগ অনেকটা সীমিত।
করোনা মহামারির হাত থেকে রক্ষা পেতে সামনের দিনগুলোতে যাতে কোনোরকম খাদ্য সঙ্কট তৈরি না হয় সেজন্যে খাদ্য শস্য মজুতের উপর জোর দিয়েছে সরকার। এ কারণে বোরো ধান নির্বিঘ্নভাবে ঘরে তুলতে জোর দেয়া হচ্ছে। সেইসাথে নড়েচড়ে বসেছে কৃষি বিভাগও।
কৃষক ধান ঘরে তুলতে যাতে কোনো রকম শ্রমিক সঙ্কটে না পড়েন সেজন্যে যশোর কৃষি বিভাগ হারভেস্টার মেশিন সরবরাহ করছে ভর্তুকি মূল্যে। ইতোমধ্যে ২৪ জনকে দেয়ার একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আরও ১২টি হারভেস্টিং মেশিনের চাহিদা পাঠিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ে।
এর আগে, গত পাঁচ বছরে জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষককে ৩৮টি মেশিন দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। একটি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনে দিনে ৪০ থেকে ৫০ বিঘা জমির ধান কেটে বস্তাবন্দি করা যায় বলে দাবি কৃষি কর্মকর্তাদের।
তবে, হতাশার বিষয়টি অন্য জায়গায়। কৃষি বিভাগ যেসব কৃষককে হারভেস্টার মেশিন দিবেন বলে তালিকা করেছেন তাদের বেশিরভাগ আর্থিক সংকটের কারণে ওই মেশিন নিতে পারছেন না। কৃষি বিভাগের তালিকায় থাকা যশোর সদর ও ঝিকরগাছা উপজেলার চারজন কৃষকের সাথে আলাপ করে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
সদর উপজেলার উবাইদুল ইসলাম ও জিন্নাত আলী নামে দুজন কৃষক জানিয়েছেন, তারা টাকা জোগাড় করতে পারছেন না। এ কারণে মেশিন নেয়ার সম্ভাবনা কম।
ঝিকরগাছা উপজেলার ছিদ্দিক মিয়া জানান, তিনি টাকা জোগাড় করতে পারেননি। সামনে পারার সম্ভাবনাও নেই। এ কারণে তিনি হারভেস্টার মেশিন নিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন।
এক বিঘা জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে শ্রমিকের পেছনে খরচ হয় সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। সেখানে হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ২০০০ থেকে ২২০০ টাকায় ঘরে তুলতে পারা যাবে বলে জানান জিন্নাত আলী।
যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খালিদ সাইফুল্লাহ জানিয়েছেন, বোরো ধান কাটতে যাতে কোনো রকম অসুবিধা না হয় এ কারণে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন স্থান থেকে যেসব শ্রমিক আসতে চায় তাদের বিশেষ ব্যবস্থায় আনা হবে। এর বাইরে যশোরের যেসব মানুষ ইতোমধ্যে বিভিন্ন কাজ করতেন বর্তমানে কর্মহীন তাদেরকে ধান কাটার কাজে লাগানোর চেষ্টা চলছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বলেন, কেশবপুরে ব্যাপক মানুষ বর্তমানে কর্মহীন। তারা ধান কাটতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তাদেরকে কাজে লাগানো হবে। এর বাইরে সাতক্ষীরা থেকে শ্রমিক আসবে।
পাশাপাশি হারভেস্টার মেশিনগুলো যদি কাজে লাগানো যায় তাহলে শ্রমিক সঙ্কট হবে না বলে জানান তিনি।