সোমবার দুপুরে নওগাঁ শহরের কেডির মোড়ে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শেখ রেজাউল বলেন, নওগাঁ-৬ আসনের উপনির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে আত্রাই ও রাণীনগর উপজেলার বিএনপির নেতা-কর্মীদের হামলা ও নির্যাতনের এক বীভৎস চিত্র ফুটে উঠেছে। ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাণীনগর উপজেলা বিএনপির বর্ধিত সভায় বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে লাঠি মিছিল নিয়ে এসে হামলা চালায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা। ওই হামলায় বিএনপির ১০-১২ জন নেতা-কর্মী আহত হন। ২৮ সেপ্টেম্বর রাণীনগর উপজেলার ভবানীপুর- মির্জাপুর বাজারে নির্বাচনী প্রচার কাজ চালানোর সময় প্রতিপক্ষের লোকজন হামলায় চালিয়ে বিএনপি প্রার্থীর আটজন কর্মী-সমর্থককে আহত করেন। সর্বশেষ রবিবার রাণীনগর উপজেলার আবাদপুকর এলাকায় নির্বাচনী প্রচার কাজ চালানোর সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরে ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বিএনপির সাত নেতা-কর্মী আহত হন।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঠছাড়া করতে এবং ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা না চালাতে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে। নির্যাতন ও অত্যাচারে বিএনপির সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, ভোটের দিন সাধারণ ভোটাররা যেন ভোট কেন্দ্রে না যায়, সেজন্য ভোটের দিন দাঙ্গা-হাঙ্গামা হতে পারে বলে তাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই উল্লেখ করে শেখ রেজাউল ইসলাম বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ৪৫টি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেননি। গত ৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনার ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদত হোসেন চৌধুরী নওগাঁ-৬ আসনের প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় করেন। ওই সভায় এসব অভিযোগ তুলে ধরলে তিনি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির যাবতীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়নি। তাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানান তিনি।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন ও রফিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান ও শফিউল আজম ভিপি রানা, রাণীনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বলেন, বিএনপির প্রার্থী হেরে যাবে জেনেই এসব অভিযোগ করছেন। এখন পর্যন্ত নির্বাচনের সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। এই পরিবেশ নষ্ট করতে বিএনপির প্রার্থী মিথ্যাচার করছেন। তার নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও হুমকির যে অভিযোগ করা হয়েছে- এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অভিযোগ করলেই ব্যবস্থা হবে এমনটি বলা সঠিক নয়। কারণ বিএনপির প্রার্থীসহ অন্যান্য প্রার্থীরা যেসব অভিযোগ করছেন তার ভিত্তিতে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মীরা সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছেন।’
আগামী ১৭ অক্টোবর নওগাঁ-৬ আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন, বিএনপির প্রার্থী শেখ রেজাউল ইসলাম ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী ইন্তেখাব আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত ২৭ জুলাই আওয়ামী লীগের তিনবারের সাংসদ ইসরাফিল আলমের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়।