এছাড়া ময়না আক্তারকে দুই লাখ টাকা এবং মনির হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রবিবার সকালে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম আসামিদের উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন।
ময়না আক্তার কুলিয়ারচর উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের বিলপাড়ার দুবাই প্রবাসী নজরুল ইসলামের স্ত্রী।
অন্যদিকে নিহত ইমাম হাফেজ মো. মিজানুর রহমান খোকন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের পূর্ব ভরাটি গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, তিন ভাই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় মিজানুর রহমান খোকন ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার বীরঘোষপালা এলাকার মাদরাসা থেকে হাফেজ হন। ২০১০ সালে তিনি কুলিয়ারচরের উছমানপুর ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের বিলপাড়া পাঞ্জেগানা মসজিদের ইমামতি শুরু করেন। ইমামতির পাশাপাশি সেখানকার মক্তব্যেও শিশুদের পড়াতেন তিনি।
২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাত ৩টার দিকে কোনাপাড়া এলাকায় এক ব্যক্তিকে ভারী একটি বস্তা নিয়ে যাওয়ার সময় বিষয়টি এলাকার কয়েকজনের নজরে এলে তারা চোর ভেবে চিৎকার শুরু করলে ওই ব্যক্তি বস্তাটি ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা আরেক ব্যক্তিও মোটরসাইকেল ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
পরে জানা যায়, বস্তার ভেতরে একটি লাশ রয়েছে এবং সেটি স্থানীয় মসজিদের ইমাম মিজানুর রহমান খোকনের।
সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তার বস্তাবন্দি লাশ এবং নাম্বারবিহীন একটি ওয়ালটন মোটরসাইকেল উদ্ধার করে। ওইদিন দুপুরে ইমাম হত্যায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ প্রথমে ময়না আক্তারকে ও পরে তার ভাই মনির হোসেনকে আটক করে।
এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট রাতে নিহতের বড় ভাই মো. নূরুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে কুলিয়ারচর থানায় মামলা করেন।
পুলিশ এই মামলায় ময়না আক্তার ও তার ভাই মনির হোসেনকে গ্রেপ্তার দেখানোর পর ১৬ আগস্ট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ময়না আক্তার। ইজ্জত বাঁচাতে ইমামকে ময়না আক্তার খুন করেন বলে তিনি তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান।
তিনি জানান, ঘটনার রাতে (২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট) ময়না আক্তারের ঘরে গিয়ে মিজানুর রহমান খোকন ওই নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি মিজানকে বাধা দেন। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ময়না আক্তার খাটে মশারি টানানোর রশি দিয়ে মিজানের গলা পেঁচিয়ে সজোরে টানতে থাকেন। এতে মিজানের মৃত্যু হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুলিয়ারচর থানার এসআই মো. কোহিনূর মিয়া ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল ময়না আক্তার ও তার ভাই মনির হোসেন এই দুজনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এপিপি অ্যাডভোকেট যজ্ঞেশ্বর রায় চৌধুরী এবং আসামিপক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আব্দুল কুদ্দুস।