বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ‘এসো বিজয় আনন্দে, বইমেলা প্রাঙ্গনে’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে শহরের স্বাধীনতা উদ্যানে গত ২২ ডিসেম্বর (রবিবার) বিজয় উৎসব ও বইমেলার উদ্বোধন করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে এই মেলা। পৌষ মাসের হাড়কাপানো শীত উপেক্ষা করে সব বয়সের মানুষের পদচারণায় বইমেলা এক মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মেলায় ঢাকার নামী-দামী ২৭টি প্রকাশনা স্টল দিয়েছে। স্টলগুলোতে বিভিন্ন লেখকের নানা ধরনের বই পাওয়া যাচ্ছে। পাঠকরা পছন্দের লেখকের বই কিনতে পেরে অনেক খুঁশি। সেই সাথে স্টলগুলোতে বইয়ের বিক্রি ভালো হওয়ায় প্রকাশকরাও বেশ খুঁশি।
বইমেলার শেষ দিনে প্রণোদনা পুরস্কার দেয়া হবে। শ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক দল, শ্রেষ্ঠ স্টল এবং সর্বোচ্চ বই ক্রেতা ও প্রতিষ্ঠান এই পুরস্কার পাবেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
মেলায় আসা চিতলমারী উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আলী আকবর জানান, বর্তমান ডিজিটাল যুগে মানুষ ফেসবুক এবং ইন্টারনেট নিয়ে ঘাটাঘাটি করে। বই পড়তে চায় না। আসলে বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। হাতে বই নিয়ে পড়ার মজাই আলাদা। এ জন্য আমি নিয়মিত বই পড়ার চেষ্টা করি। আর নতুন নতুন বই পড়ার জন্য বিভিন্ন সময় বইমেলায় ছুটে যাই। মেলায় ঘুরে পছন্দের লেখকদের বেশ কয়েকটি বই কিনেছেন বলে জানান তিনি।
দেলোয়ার হোসেন, অদিতিসহ বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, এই বই মেলায় এসে তাদের অনেক ভালো লেগেছে। বড় বড় প্রকাশনার পছন্দের বিভিন্ন লেখকদের বই কিনেছে। বইয়ের প্রতি ভালবাসা এবং বই পড়তে পছন্দ করার কারণে তাদের এই বই কেনা। বই পড়তে আগ্রহী করার জন্য দেশের সর্বত্র এ ধরনের বইমেলা আয়োজনের দাবি জানান তারা।
মেলায় আসা ৭ম শ্রেণির ছাত্র মেহেদী নেওয়াজ এবং চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী বৃষ্টিসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর জানায়, মেলায় এসে পছন্দ মতো তারা বেশ কয়েকটি বই কিনেছে।
ঢাকার অনিন্দ্য প্রকাশনীর মার্কেটিং কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া জানান, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে সে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বইমেলায় অংশ গ্রহণ করে। বাগেরহাটে বিজয় উৎসব ও বইমেলায় তারা প্রথম এসেছে। বইমেলায় এসে তাদের অনেক ভাল লেগেছে। প্রায় ৫০০ লেখকের বিভিন্ন ধরনের দেড় হাজার বই রয়েছে তাদের স্টলে। দর্শনার্থী আর ক্রেতাদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বইমেলা। স্টলগুলোতে বইয়ের বিক্রিও ভাল হচ্ছে। ক্রেতাদের আগ্রহী করতে সব বইয়ের উপর শতকরা ২৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে।
ভাষাচিত্র প্রকাশনার আফরাজ জান্নাত অনন্য জানান, বইমেলায় বিভিন্ন বয়সের ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকরা আসছেন। তারা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন বই পড়ছেন এবং ক্রয় করছেন। তাদের আশার চেয়েও অনেক বেশি সাড়া পেয়েছেন।
আলেয়া বুক ডিপো, পুথিনিল প্রকাশনা, কথামেলা প্রকাশনা ও জনতা প্রকাশনার বিক্রেতারা জানায়, বাগেরহাটে মেলায় ক্রেতাদের বই কেনার প্রতি অনেক বেশি আগ্রহ দেখা গেছে। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত সব বয়সের দর্শনার্থীদের দেখা মেলে মেলায়। এ ধরণের বইমেলা সারা দেশে আয়োজনের কথা জানালেন তারা।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ জানান, সমৃদ্ধ স্বদেশ বিনির্মাণে আলোকিত চেতনার বিকল্প নেই। বই পড়া, বই পড়ার অভ্যাস করা এবং সৃনজনশীলতা চর্চা করার জন্য বিজয় উৎসব ও বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের বই পড়ার প্রতি বিশেষভাবে আগ্রহী করে গড়ে তুলতে এই বইমেলা। বই পড়ার মাধ্যমেই তাদের চেতনা শানিত হবে। মেধা মননের সত্যকারের চর্চা তারা করতে পারবে এবং প্রকৃতি মানুষ হিসেবে ক্রমান্বয়ে তারা বিকাশিত হবে। প্রতিটি মা-বাবাকে তাদের সন্তানদের নিয়ে এই বইমেলায় আসার আহ্বান জানান তিনি।