ভোলায় ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
মঙ্গলবার ভোলা সিভিল সার্জন দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ভোলা জেলায় ৩২৫ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এনিয়ে গত এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৪০ জন।
আরও পড়ুন: ফেনীতে জ্বর, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টে একদিনেই ৪ জনের মৃত্যু
সিভিল সার্জন দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী আরও জানা যায়, গত এক মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় ৪ হাজার ২৫৪ জন এবং ৪ মাসে ৮ হাজার ৯০ জন। এখনকার পরিস্থিতি এমন যে রোগীর চাপ এতো বেশি যে রোগীরা হাসপাতালে গিয়েও সিট পাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে হাসপাতালের বারান্দা ও মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে করে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের।
ভোলা সিভিল সার্জন বলছেন, এখন পর্যন্ত ডায়রিয়াতে ওষুধের সংকট হয়নি। এ রকম যদি চলতে থাকে তা হলে সংকট হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, প্রচণ্ড গরমে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন গড়ে প্রায় এক থেকে দেড় শত রোগী। এক সাথে এতো রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নার্স ও ডাক্তারদের। সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ১০টি শয্যার বিপরীতে এত রোগী ভর্তি হওয়ায় হাসপাতালের ফ্লোরে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বেশীরভাগ রোগীরা।
আরও পড়ুন: শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় সাতক্ষীরায় যুবক ও কৃষকের মৃত্যু
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে থেকে শুরু করে পুরুষ সার্জারী ওয়ার্ড ও পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের বারান্দার ফ্লোরে দুই সারিতে শুয়ে আছেন ডায়রিয়া রোগী। রোগীর চাপে হাসপাতালের বারন্দায়ও হাটার কোনো জায়গা নেই। মাত্র দুজন নার্স এ সব রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। এক সাথে এত রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তারা। তারপরও থেমে নেই তারা।
রোগীদের ওষুধ, স্যালাইন ও ইনজেকশন পুশ করতে ছুটাছুটি করছেন তারা। থেমে নেই ওয়ার্ড বয় ও ঝাড়ুদাররাও। ডাক্তার ও নার্সদের পাশাপাশি তারাও সাধ্যমতো রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
ভোলা সিভিল সার্জন দপ্তরের ডায়রিয়ার প্রতিবেদনে জানা গেছে, মঙ্গলবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১২ জন। এছাড়া দৌলতখানে ৩৩ জন, বোরহানউদ্দিনে ৬১ জন, লালমোহনে ৩০ জন, চরফ্যাসনে ৫৭ জন, তজুমদ্দিনে ১৭ জন ও মনপুরা উপজেলায় ১৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তদের স্ব স্ব উপজেলার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়িতে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে, দুই সপ্তাহে ৩ শিশুর মৃত্যু
৭৬টি মেডিকেল টিম আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. সিরাজউদ্দিন জানান, ভোলা হাসপাতালে এখন স্যালাইনের সংকট নেই। এক মাস তারা চলতে পারবে। তবে ভবিষ্যতে সংকট হতে পারে। তারা ওষুধ, স্যালাইন ক্রয়ের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্ধ চেয়েছেন।
ভোলার সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম জানান, অন্যন্য সময়ের চাইতে এ বছর ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি। এখন পর্যন্ত ডায়রিয়াতে ওষুধের সংকট হয়নি। এ রকম যদি চলতে থাকে তা হলে সংকট হতে পারে। আগামী ১০-১৫ দিন পর্যন্ত ভোলা জেলায় রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ওষুধ-স্যালাইন সরবরাহ রয়েছে। তবে এরপর যাতে স্যালাইনের সংকট না হয় তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।