শেরপুরে স্ত্রী হত্যা মামলায় এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এমদাদুল হক লালু (৪৫) সদর উপজেলার চরমুচারিয়া ইউনিয়নের মুকসুদপুর এলাকার মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বুলু জানান, সাক্ষ্যপ্রমাণে বিচারক নিশ্চিত হন যৌতুকের জন্য স্ত্রী রোকসানাকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করেছে স্বামী এমদাদুল হক লালু। তাই নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের দন্ডবিধি (১১ক) ধারায় লালুকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন বিচারক।
মামলার নথির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, গত ২০১০ সালে সদর উপজেলার ছয়ঘড়িপাড়া এলাকার আব্দুর রশিদের মেয়ে রোখসানা খাতুনের বিয়ে হয় চরমুচারিয়া ইউনিয়নের মুকসুদপুর এলাকার বেসরকারি চাকরিজীবী এমদাদুল হক লালুর সাথে। বিয়ের পর রোখসানার বাবা আসবাবপত্র, নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার দিয়েছিলেন। বিয়ের প্রায় ৫ বছর পর রোখসানার স্বামী এমদাদুল হক চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে আসেন এবং আরও যৌতুক এনে দেয়ার জন্য স্ত্রীর উপর নির্যাতন শুরু করেন। ওই টাকা না পেয়ে ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্ত্রীকে পিটিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করেন লালু। মাথায় আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারালে স্ত্রীর মুখে বিষ ঢেলে স্বামী লালু প্রচার করেন রোকসানা বিষ খেয়েছে। পরে তাকে শেরপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে পালিয়ে যান। পরদিন ৭ সেপ্টেম্বর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রোকসানা।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সদর থানায় এমদাদুলের ভাই ও ভাবিসহ ৯ জনের নামোল্লেখ সহ এবং আরও ২-৩ জন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে সুরতহাল প্রতিবেদন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও ভিসেরা প্রতিবেদনে নিশ্চিত হয় বিষক্রিয়ায় মারা যাননি গৃহবধূ রোকসানা। মাথা ও শরীরে গুরুতর আঘাতেই তিনি মারা গেছেন এবং তার মুখে বিষ ঢেলে দেয়া হলেও তা মুখেই ছিল পেটে যায়নি।
তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি শেরপুর সদর থানার তৎকালীণ ওসি (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বামী এমদাদুল হক লালুকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। বিচারিক পর্যায়ে বাদী, চিকিৎসক ও তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (ক) ধারায় আনিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামি এমদাদুল হককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।