সোমবার দুপুরে আক্রান্ত ওই দুই নারীর পরিবারের সদস্য এবং সংস্পর্শে ছিলেন এমন ২০ জনের করোনা সংক্রমণের আশংকায় পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে জেলাজুড়ে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কড়াকড়ি আরোপ করেছে।
আক্রান্তদের একজন শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়া (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) হওয়ায় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও স্টুডিওসহ শ্রীবরদীতে ৩০টি বাড়ি এবং তার মেয়ের জামাইয়ের এলাকা নন্নী গ্রাম লকডাউন করা হয়েছে।
শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, অফিস-কর্মচারী সবাইকেই হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে, শেরপুর সদরের আক্রান্ত ভাতশালা ইউনিয়নের মধ্যবয়ড়া গ্রামের গৃহবধূর নিজ বাড়িসহ ওই গ্রামের ৫০ বাড়ি এবং লছনমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাবার বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এসব এলাকার অন্তত: ৫ হাজার মানুষকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে। লকডাউনে থাকা এলাকাগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছে। কাউকেই সেখানে ঢুকতে বা বের হতে দেয়া হচ্ছে না।
আক্রান্ত দুই নারীকে রবিবার রাতেই শেরপুর জেলা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করায় কর্তৃপক্ষের বাঁধা উপেক্ষা করে অন্য রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
জেলা হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. খাইরুল কবীর সুমন রোগীদের হাসপাতাল ছাড়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘করোনা রোগীদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে শোনার পর থেকেই এখানে ভর্তি থাকা অন্য রোগীদের অনেকেই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান।’
জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মো. মহসীন জানান, আইসোলেশনে থাকা দুই নারীর শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও করোনা সংক্রমণের কারণে তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে লকডাউন করা সদর উপজেলার কানাশাখোলা ও মধ্যবয়রা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন। ওই এলাকার প্রবেশ পথগুলোতে পুলিশ ও গ্রামপুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে। এলাকায় প্রবেশের বিভিন্ন রাস্তায় বাঁশ, বেড়া, গাছ ফেলে বেরিকেড সৃষ্টি করা হয়েছে। এলাকার সকল দোকানপাট, বাজার বন্ধ রয়েছে। রাস্তাঘাট জনশুন্য। এলাকায় পুলিশ এবং ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং করে লোকজনকে বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য সতর্ক করা হচ্ছে।
এদিকে, জেলায় করোনা সংক্রমনের সংবাদে শহর এবং জেলার বিভিন্ন এলাকাতেও স্থানীয়ভাবে লোকজন নিজেদের এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করে বিনা প্রয়োজনে অন্য এলাকার লোকদের সেই এলাকায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না বলে সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। প্রশাসন, পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া অবস্থানের কারণে রাস্তাঘাটগুলো ফাঁকা দেখা গেছে। করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিএনজি অটোরিক্সা, ইজিবাইক, রিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সন্ধ্যার মধ্যেই সকল ধরনের নিত্যপণ্যের দোকান ও বাজার বন্ধ ঘোষণা করার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
শেরপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফিরোজ আল মামুন বলেন, করোনা আক্রান্ত নারীর বাবার বাড়ি লছমনপুর। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর সেখানে ছিলেন। সেখান থেকে তিনি স্বামীর বাড়ি ভাতশালা ইউনিয়নের মধ্যবয়ড়া গ্রামের ছনকান্দা সরকার বাড়িতে আসেন। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা মধ্যবয়ড়া গ্রাম এবং লছমনপুর ইউনিয়নের ৪০টি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেছি।
শ্রীবরদীর ইউএনও নিলুফা আক্তার বলেন, ওই পরিচ্ছন্নতা কর্মী করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করেছে। ফলে সে সেখানকার চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারীসহ অনেকের সংস্পর্শে এসেছে। তাই আমরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং তার বাড়িসহ আশাপাশের ২০টি বাড়ি লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছি।
নালিতাবাড়ীর ইউএনও মো. আরিফুর রহমান বলেন, শ্রীবরদীর আক্রান্ত নারীর মেয়ের জামাইয়ের বাড়ি নন্নী। তিনি শ্বশুর বাড়ি থেকে এসে বাজারে রড-সিমেন্টের দোকানে বসেছেন। রবিবার মাঠে অনেক ছেলেদের নিয়ে ক্রিকেট খেলেছেন। যারা ক্রিকেট খেলেছে তাদের মধ্যে কয়েকজন স্থানীয় মসজিদে নামাজ পড়েছে। তাই আমরা নন্নী গ্রামেও লকডাউন ঘোষণা করেছি।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের করোনা ফোকাল পারসন ডা. মো. মোবারক হোসেন বলেন, করোনা আক্রান্ত ওই দুই নারীর পরিবারের সদস্য এবং সংস্পর্শে ছিলেন এমন ২০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটে পাঠানো হবে। শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লকডাউন করা হলেও হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চালু করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।