বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাই কমিশনার রাজেশ কুমার রায়না বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাংলাদেশের নায়ক এবং জাতির পিতাই নন, তিনি ভারতেরও নায়ক। কারণ ১৯৭১ সালে আমি দেখেছি ভারতে প্রচুর মানুষ বঙ্গবন্ধুকে হৃদয় দিয়ে সমর্থন করেন, ভালোবাসেন।
বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি পরিদর্শনে গিয়ে শুক্রবার রাতে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজেশ কুমার রায়না বলেন, `বাংলাদেশ ও ভারতে বিভিন্ন সময় সরকার পরিবর্তন হয়েছে। তার সাথে পরিবর্তন ঘটেছে অর্থনীতি, সমাজ ও জীবন ব্যবস্থার। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষের মনের অমিল কখনোই ঘটেনি। তারা মিলেমিশে আছে। বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে ভারতের অনেক রাজ্যের সংস্কৃতির মিল আছে। এদের মাঝে কে বাংলাদেশি কে ভারতীয় বিভক্ত করা কঠিন।
আরও পড়ুন: আমরা কোনো সীমান্তেই প্রাণহানি চাই না: ভারতীয় হাইকমিশনার
ভারতের সহকারী হাই কমিশনার বলেন, ‘আমাদের ভূখণ্ড, ধর্ম এসবে অমিল থাকলেও সংস্কৃতিতে অমিল নেই। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বৃীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ ভাষার জন্য যুদ্ধ করেছে। স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে। ভাষার জন্য বাঙালিরা ছাড়া কোন জাতি পৃথিবীতে যুদ্ধ করেনি। ভাষা এবং সংস্কৃতি একটি জাতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এগুলোই আমাদের অতীত তুলে ধরে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি শিশু তার সংস্কৃতি ধারণ করে বেড়ে ওঠে। আর এই সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে একটি দেশ তাদের ফুটিয়ে তোলে। আমি যদি বাংলার দিকে তাকাই আমি দেখি সুন্দরভাবে তারা দুর্গাপূজা উদযাপন করছে। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মাবলম্বিরা আনন্দের সাথে সহাবস্থানে থেকে যার যার ধর্ম পালন করছেন।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে রাজেশ কুমার রায়না বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় একটি কথা বলেন ধর্ম যার যার উৎসব সবার। তার এই বক্তব্য প্রমাণ করে বাংলাদেশ সবার দেশ। আর সেটাই আমরা সবাই অনুসরণ করছি। যখন আমরা একে অপরকে ধর্মীয় উৎসব পালনে সহায়তা করব তখনই এটা একটি মহা উৎসবে পরিণত হবে। এর মাধ্যমেই মনবতা প্রকাশ পাবে; প্রকাশ পাবে মানুষের জন্য মানুষ। এভাবে না হলে স্বার্থান্বেষী মহল সব সময় আমাদের মাঝে এসে সুবিধা নিবে। কারণ পৃথিবীতে স্বার্থবাদী মানুষ সব সময় সুযোগ খুঁজে বেড়ায়।’
তিনি বাংলাদেশের অতিথীপরায়নতার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘অতিথীপরায়নে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্য সকল দেশের চেয়ে সেরা। আমার কূটনৈতিক চাকরির জীবনে আমেরিকা, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছি। এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশ ঘুরে দেখেছি। আমার মনে হয়েছে, তারা বাংলাদেশের মতো অতিথীপরায়ন নয়।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ দ্রুত ও জরুরিভাবে টিকা পাবে: ভারতীয় হাইকমিশনার
রায়না বলেন, ‘এখানে অনেক দেশের চেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ বসবাস করে। কিন্তু সকলে সুখে আছেন। কারণ সংস্কৃতি তাদের সুখে রেখেছে। এখানে একসাথে সবাই সকলের উৎসব উদযাপন করে। আমরা যখন দেখি সবাই খুশি তখনই আমরা কেবল নিজেদের সুখি মনে করি। রাজনীতি পরিবর্তনের ফলে আমাদের অর্থনীতির পরিবর্তন ঘটেছে, সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তন হচ্ছে কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি পরিবর্তন হয়নি বলে আমরা এখনও সুখি।’