গম
বঙ্গোপসাগরে সাড়ে ৬ কোটি টাকা মূল্যের গম নিয়ে ডুবে যাচ্ছে লাইটার জাহাজ
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার কাঁচপুর যাওয়ার পথে বঙ্গোপসাগরে তলা ফেটে ডুবতে বসেছে আমদানিকৃত গমসহ একটি লাইটারেজ জাহাজ। জাহাজটিতে কানাডা থেকে আমদানি করা প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা মূল্যের গম রয়েছে।বুধবার ভাসানচরের কাছে এমভি তামিম নামের জাহাজটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। জাহাজটিতে প্রায় সাত কোটি টাকার গম রয়েছে।বুধবার বিকেলে কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আশফাক বিন ইদ্রিস বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।কোস্টগার্ড সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরের বহির্নোঙরে অবস্থান করা কানাডা থেকে গম নিয়ে আসা এমভি প্রোপেল গ্রেস থেকে ১৬শ’ টন গম নিয়ে ঢাকার মেসার্স নবী অটো ফ্লাওয়ার মিলের উদ্দ্যেশে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর যাচ্ছিল এমভি তামিম। বুধবার দুপুরের দিকে ভাসানচরের কাছাকাছি এলাকায় জাহাজটির তলা ফুটো হয়ে যায়। এতে জাহাজের একটি হেজে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। ১২ জন নাবিক ও শ্রমিক জাহাজটিতে অবস্থান করছিলেন।
আরও পড়ুন: সন্দ্বীপ চ্যানেলে সিমেন্টবাহী লাইটার জাহাজ ডুবি
এমভি তামিম নামের লাইটার জাহাজটি চট্টগ্রামের সমতা শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিকের অধীন পরিচালিত হতো। তবে জাহাজটিকে টেনে তীরের দিকে আনার জন্য আরেকটি জাহাজ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আশফাক বিন ইদ্রিস বলেন, বঙ্গোপসাগরে কোনো জাহাজডুবি ঘটেনি। তবে এমভি তামিম নামের লাইটারেজ জাহাজের তলা ফেটে পানি ঢোকার খবর পেয়ে আমরা জাহাজটি পরিদর্শন করে এসেছি। শ্রমিকরা জাহাজটিতেই অবস্থান করছেন। জাহাজটির অপারেশনাল দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা তাদের আরেকটি জাহাজ ঘটনাস্থলে পাঠাচ্ছে। জাহাজটি এমভি তামিমকে টেনে তীরের দিকে নিয়ে যাবে।প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, সাগরে ডুবে থাকা অদৃশ্য কোনো বস্তুর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে এমভি তামিম জাহাজের সামনের হেজ ফেটে যায়। এতে পানি ঢুকে ভারসাম্য হারিয়ে জাহাজটি ডুবতে শুরু করে।সমতা শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিকস কর্মকর্তা জামাল হোসেন জানান, চলার পথে পানির নিচে অদৃশ্য বস্তুর সঙ্গে লেগে জাহাজের সামনের হেজ ফেটে যায়। এ সময় হেজে পানি ঢুকে যায়।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে ডুবে গেছে পণ্যবাহী লাইটার জাহাজ
মোংলা বন্দরে লাইটার জাহাজ ডুবি, নিখোঁজ ৩
ভারতের গম রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়: বাণিজ্যমন্ত্রী
ভারত গম রপ্তানি বন্ধ করলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
তিনি আরও বলেন, দেশে এ মুহূর্তে গমের যে মজুদ আছে, তাতে আশঙ্কা করার কারণ নেই। জিটিজি পদ্ধতিতে ভারত থেকে গম আনা যাবে। তাছাড়া দেশে গমের প্রচুর মজুদ আছে।
বুধবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাষ্কফোর্স কমিটির দ্বিতীয় সভার শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: জুন মাসে আরও এক কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে: বাণিজ্যমন্ত্রী
বিকল্প ৫ উৎস থেকে গম আমদানির প্রচেষ্টা চলছে: টিপু মুনশি
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ভারত গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করার পর সরকার ইউক্রেনসহ পাঁচটি বিকল্প উৎস থেকে গম আমদানির চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের মধ্যে ভারত গম রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
সোমবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত এক সংলাপে এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘তবে আশার কথা হলো প্রতিবেশী দেশের ক্ষেত্রে ভারত এটা বিবেচনা করবে। আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’
মন্ত্রী বলেন, সরকার নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ নয়, স্থিতিশীল রাখতে চায়।
আরও পড়ুন: বাজার নিয়ন্ত্রণ নয়, স্থিতিশীল রাখতে চায় সরকার: বাণিজ্যমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত না। আমরা ব্যবসায়ীবান্ধব। আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের দাম অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে দেই। সে অনুযায়ী বাজারে দামটা থাকলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে। আমরা নিয়ন্ত্রণ করা নয়, বাজার স্থিতিশীল রাখতে চাই।
তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে অভ্যন্তরীণ বাজারও স্থিতিশীল থাকে।
ভোজ্যতেল, চিনি ও মসুর ডালের দাম নিয়ে সামান্য সমস্যা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভোজ্যতেলের ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশে দাম বাড়ে।’
তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ খাদ্যপণ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তাই সামনে কিছু সংকট থাকায় সবাইকে সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী।
টিপু মুনশি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশের এমন অবস্থা হতে পারে। কিন্তু সে রকম কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রকৃতপক্ষে আমরা শ্রীলঙ্কাকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি।’
পেঁয়াজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে পেঁয়াজের দাম একটু বেশি হলেও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে।
আরও পড়ুন: জুন মাসে আরও এক কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে: বাণিজ্যমন্ত্রী
তিনি বলেন, কৃষকরা যাতে দাম পায় এবং ভোক্তারাও যাতে কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারে সেটি আমরা দেখছি।
ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, প্রচুর ব্যবসায়ীকে আমরা ধরছি। সেখানে অনেকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে এবং জেলেও পাঠানো হয়েছে। তবে এমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাই না যাতে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা জানে ঈদের পর দাম বাড়বে। তারা সেই সুযোগ নিয়েছে। আমাদের ভুল হয়েছে টানা দুই মাস তেলের দামটা নির্ধারণ করিনি। যদি করতাম তাহলে তারা সুযোগটা নিতে পারত না।
বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হকের উপস্থাপনায় সংলাপ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি তপন বিশ্বাস।
আগস্টের আগে গম আমদানি করতে হবে না: খাদ্য সচিব
গম রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের আমদানির জন্য ইতোমধ্যে চুক্তিবদ্ধ তিন লাখ মেট্রিক টন গম কোনো প্রভাব ফেলবে না।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মাৎ নাজমানারা খানুম বলেন, এক লাখ মেট্রিক টনের এক তৃতীয়াংশ ইতোমধ্যে বাংলাদেশের জন্য একটি জাহাজবোঝাই করা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বল্পমেয়াদে ভারতের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত গম ইতোমধ্যেই আমদানি করা হয়েছে বা পাইপলাইনে রয়েছে।
খাদ্য সচিব বলেন, এই মুহূর্তে দেশের গমের মজুদ আগস্ট মাস পর্যন্ত টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট এবং এর আগে কোনও গম আমদানির প্রয়োজন হবে না।
নাজমানারা খানুম আরও বলেন, ভারতীয় গম রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত তথ্যমতে, সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে ভারত থেকে গম আমদানি করার সুযোগ এখনও থাকবে।
তবে বাংলাদেশ গম আমদানির জন্য বুলগেরিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে এবং অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউক্রেন ও রাশিয়াসহ অন্যান্য রপ্তানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বাংলাদেশের বার্ষিক গমের চাহিদা প্রায় সাত দশমিক পাঁচ মিলিয়ন মেট্রিক টন। যার মধ্যে বছরে গড়ে মাত্র এক মিলিয়ন মেট্রিক টন গমের উৎপাদন হয়।
চাহিদার অবশিষ্টাংশ ভারত, রাশিয়া, ইউক্রেন, কানাডা, আর্জেন্টিনা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি করে মেটানো হয়। যার সিংহভাগই বেসরকারি খাতে আমদানি করা হয়।
সচিব বলেন, সরকার মাত্র পাঁচ লাখ টন গম আমদানি করে। বাকি ছয় মিলিয়ন মেট্রিক টন বেসরকারি খাতে আমদানি করা হয়।
কম ব্যয়বহুল এবং সহজ পরিবহনের কারণে ২০২০-২১ সালে আমদানিকৃত পরিমাণের প্রায় ৬০ শতাংশ ভারত থেকে এসেছে।
আরও পড়ুন: ভোজ্যতেলের ওপর আমদানি নির্ভরতা কমাতে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ কৃষিমন্ত্রীর
২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে গম রপ্তানি করে শীর্ষ ৫ দেশ হলো- ইউক্রেন, রাশিয়া, কানাডা, আর্জেন্টিনা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
২০২০-২১ অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশের প্রধান গম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে উঠে এসে ইউক্রেনকে তৃতীয় অবস্থানে নামিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে কানাডার গম রপ্তানির পরিমাণও ২০১৯-২০ সালে প্রায় এক মিলিয়ন টন থেকে গত অর্থবছরে এক দশমিক চার মিলিয়ন টনে বেড়েছে।
ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে এবং বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশের চাহিদা মেটাতে শনিবার গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত।
এক বিবৃতিতে ভারতীয় ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘গমের রপ্তানি নীতি ... অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা হয়েছে...।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে স্বাক্ষরিত বাণিজ্য চুক্তির চালান রপ্তানি করা যেতে পারে, তবে শনিবার থেকে গম রপ্তানির বিষয়ে নতুন কোনো আন্তর্জাতিক আদেশ নেয়া হবে না।
ডিজিএফটি’র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এছাড়াও যদি কোনো দেশ বিশেষভাবে ভারত সরকারকে গম পাঠাতে অনুরোধ করে, সেক্ষেত্রে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা মওকুফ করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ডিজেল, জেট ফুয়েল, এলএনজি ও সার আমদানির অনুমোদন
নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানির পাশাপাশি আমদানির প্রস্তাব বাংলাদেশের
সরকার চলতি অর্থবছরে সাড়ে ৯ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করবে
সরকার চলতি অর্থবছরে সারাদেশে কৃষকদের কাছ থেকে মোট সাড়ে ৯ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করবে। কর্মসূচির আওতায় তিন লাখ মেট্রিক টন ধান, পাঁচ লাখ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল এবং দেড় লাখ মেট্রিক টন গম সংগ্রহ করা হবে।
রবিবার খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের এক ভার্চুয়াল সভায় এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এ বছর আমন ধান, চাল ও গমের সরকারি সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। সভায় আমন ধানের সরকারি ক্রয় মূল্য প্রতি কেজি ২৭ টাকা, চালের মূল্য প্রতি কেজি ৪০ টাকা এবং গমের মূল্য প্রতি কেজি ২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। চলতি অর্থ বছরে (২০২১-২২) উল্লিখিত মূল্যে আগামী ৭ নভেম্বর থেকে আমন ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে। এসময়ে তিন লাখ মেট্রিক টন আমন ধান, পাঁচ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ক্রয় করা হবে। এছাড়া আগামী ১ এপ্রিল থেকে দেড় লাখ মেট্রিক টন গম ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় সভায়।
উল্লেখ্য, গত বছর আমন ধান ও চালের দাম ছিল যথাক্রমে ২৬ ও ৩৬ টাকা।
সভায় অন্যদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
সভাপতির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, কৃষকের জন্য নায্য মূল্য নিশ্চিত করতে চায় সরকার। পাশাপাশি খাদ্যের নিরাপত্তা মজুতও বৃদ্ধি করতে চায়। বেরো ধান সংগ্রহে সফল হয়েছে সরকার। সে ধারাবাহিকতায় আমন সংগ্রহেও সফলতা অর্জন সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আরও পড়ুন: প্রান্তিক কৃষকের কাছে প্রণোদনার সুফল পৌঁছে দিতে হবে: খাদ্যমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী ডা. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষি প্রকৃতি ও অঞ্চল নির্ভর। দেশে ধানের পাশাপাশি পেয়াজ, রসুনসহ আরও বেশ কিছু কৃষি পণ্য দেশে উৎপাদিত হলেও সংরক্ষণের অভাবে কৃষক নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। দেশে কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাওয়া, শিল্পকারখানা বৃদ্ধি পাওয়া এবং সর্বোপরি নন হিউম্যান কনজামশন বেড়ে যাওয়ার পরও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধানের আবাদ শুরু হয়েছে। ধানের উৎপাদন টেকসই করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ খাদ্য পণ্যসহ আরও বেশ কিছু পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে থাকে। মান সম্পন্ন পণ্য উৎপাদন হলে রপ্তানি সম্ভাবনা আরও বাড়বে।
সভায় অর্থ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং দূর্যোগ ব্যবন্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সিনিয়র সচিব ও সচিবগণ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মতামত তুলে ধরেন এবং খাদ্যের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন: খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে আগামী ৬ মাসের মধ্যে স্মার্ট কার্ড: খাদ্যমন্ত্রী
চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.১৩ শতাংশে উন্নীত হবে: অর্থমন্ত্রী
মাগুরায় গমের বাম্পার ফলন, দাম নিয়ে শঙ্কায় কৃষকেরা
চলতি মৌসুমে মাগুরায় গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে এ অঞ্চলের কৃষকরা বেশ খুশি। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বেশি জমিতে গমের আবাদ হলেও চাষিরা ন্যায্য দাম নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে।
জেলার কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মাগুরা জেলায় মোট আবাদী জমির পরিমাণ ছিল ৪৬৯০ হেক্টর এবং উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়, তার থেকে বেশি ফলন হয়েছিল। গড় ফলন হয় হেক্টর প্রতি ৩.৩২ মেট্রিকটন এবং মোট উৎপাদন হয়েছে ১৫ হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন। এ বছর গত বারের তুলনায় বেশি জমিতে গমের আবাদ হলেও এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। কারণ হিসেবে কৃষি বিভাগ বলছে, অনেক কৃষক এখন ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়েছে। বিঘা প্রতি ভুট্টার ফলন ৪০ মণ পর্যন্ত পাওয়া যায়। দাম মণ প্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করা যায়। ফলন বেশি তাই বেশির ভাগ কৃষক ভুট্টার আবাদ শুরু করছে। গত বছরের তুলনায় এবার বেশি জমিতে গমের আবাদ হলেও চাষিরা ন্যায্য দাম নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে।
মাগুরা সদরের চাঁদপুর গ্রামের কৃষক ইকলাস আলী বলেন, ‘গম চাষে এক থেকে দুইটা সেচ দিলেই হয়। সারের পরিমাণও খুব কম লাগে, ফলনও ভালো পাওয়া যায়।’
বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মোতাহার মোল্যা বলেন, ‘এ চাষে লাভ বেশি খরচ কম।’
গম চাষি বাবলু বিশ্বাস বলেন, মাঠেই অটো মেশিন দিয়ে মাড়াই করে গম বাড়ি নিয়ে যেতে পারি। গম কাটতেই খরচ; বাড়তি আর খরচ লাগে না। মেশিনে গম মাড়াই শতক প্রতি ২৭ টাকা করে দেয়া লাগে।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর মাগুরার চার উপজেলায় ৪৬৯৫ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে মাগুরা সদর ১৫২০ হেক্টর, শ্রীপুর উপজেলায় ১৬৯০ হেক্টর, শালিখা উপজেলায় ১২০০ হেক্টর এবং মহম্মদপুর উপজেলায় ২৮৫ হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়েছে।
কৃষিবিদ সুশান্ত কুমার প্রামাণিক বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হয়েছে। গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিশেষ করে বারি গম-৩৩ এবার বিঘাতে প্রায় ১৬ মণ পর্যন্ত হয়েছে। চাষিদের নানাভাবে প্রশিক্ষণ ও কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। চাষিরা এখন একটু দাম কম পাচ্ছে। মণ প্রতি তারা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে গম বিক্রি করতে পারছে। ফলন ভালো হয়েছে,কৃষকরা খুশি।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সুশান্ত কুমার প্রামাণিক বলেন, এ বছর জেলায় মোট ৪৬৯৫ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে মাগুরায় গমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ৩.৫৬ মেট্রিকটন এবং আবাদী জমি ৪৭৫০ হেক্টর। গড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৬ হাজার ৯১০ মেট্রিক টন।
তিনি বলেন, ‘কিছু এলাকায় গম কাটতে এখনো বাকি আছে। আশা করা যায়, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।’
গমের বাম্পার ফলনে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চাষিদের মুখে হাসি
চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি মৌসুমে গমের ফলন ও দর ভালো। বিঘা প্রতি ফলন গড়ে ১৪ মন, আর বাজার দর প্রতি মন গম ১ হাজার ৫০ টাকা। ফলন ও দর দুটোই ভালো পেয়ে খুশি গম চাষিরা।
সদর উপজেলার কয়েকটি ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে গম কাটা প্রায় শেষের দিকে। চাষিরা ব্যস্ত ক্ষেত থেকে ফসল ঘরে তুলতে।
চাষিরা জানায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর গমের ফলন ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি ১২ থেকে ১৬ মন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাচ্ছে। গমের বাজার দর বর্তমানে প্রতি মন ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা।
চাষিরা বলছেন, সার বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের দাম কমালে তাদের জন্য ভালো হতো।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় শত্রুতা করে বোরো ধানের ৬ বিঘা বীজতলা নষ্টের অভিযোগ
সদর উপজেলার যাদুপুর এলাকার গম চাষি সুমন আলী বলেন, আমি প্রতি বছর গম চাষ করি। গতবারের থেকে এবারে গমের ফলন ভালো হয়েছে। কারণ গতবার বৃষ্টি বাদলের কারণে তেমন যত্ন নিতে পারিনি। এবার আবহাওয়া ভালো ছিল, ফলনও ভালো পেয়েছি।
তিনি বলেন, ‘গতবার ফলন হয়েছিল প্রতি বিঘায় ১২ থেকে ১৩ মন। এবার আমি ১২ মন, ১৪ মন, ১৬ মন পর্যন্ত গমের ফলন পেয়েছি। বিঘায় খরচ হয়েছে ৪ হাজার টাকা। গতবার ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা মন করে বিক্রি করেছি। এবার জমিতেই বিক্রি করেছি ১ হাজার, ১ হাজার ৫০ টাকা মন। ফলন দাম দুটোই ভালো থাকায় এবার গম চাষ লাভজনক হয়েছে।’
আরও পড়ুন: হাওরে ৯৯ ও সারা দেশে ৩৯ শতাংশ বোরো ধান কাটা শেষ
আরেক চাষি বলেন, বর্তমানে দামটা মন্দ না, কিন্তু সার, বীজ, কীটনাশক, হালচাষ, পানি এতে উৎপাদন খরচটা বেশি হচ্ছে। উৎপাদন খরচ কম হলে আরও ভালো হতো।
নাচোল উপজেলার নেজামপুর এলাকার গম চাষি নেজাম উদ্দিন বলেন, এবার আমি ৬ বিঘা জমিতে গমের আবাদ করেছি। এরই মধ্যে গম কাটা হয়ে গেছে। এ বছর আবহাওয়া মোটামুটি ভালো থাকায় বিঘাতে ১৫ মন করে ফলন হয়েছে। গমের দর পেয়েছি এক হাজার টাকা মন।
আরও পড়ুন: জলবায়ু-সহিষ্ণু উন্নয়ন করেছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, এবার জেলার পাঁচ উপজেলায় ৩০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। যা গত বছর থেকে ৪১০ হেক্টর বেশি। গম চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রণোদনা হিসেবে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে গম বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। চাষিরা বারি গম-৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৩ জাতের গমের আবাদ করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের তুলোনায় চাষিরা এবার ফলন ভালো পেয়েছেন। গড়ে ১৩, ১৪ মন ফলন পাওয়া গেছে। বর্তমানে গম কাটাই মাড়াই শেষের পথে। গমের বাজার মূল্য বর্তমানে ১ হাজার ৫০ টাকা মন।
লক্ষ্মীপুরে ১১৫ টন চাল-গম জব্দ, ২ গুদাম সিলগালা
লক্ষ্মীপুরে ব্যক্তি মালিকানাধীন গুদামে মজুদ রাখা বিপুল পরিমাণ সরকারি চাল ও গম জব্দ করা হয়েছে।
সাড়ে ১৯ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান, চাল কিনবে সরকার
চলতি বোরো মৌসুমে ২৬ টাকা কেজি দরে ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল কেনা হবে।
বোরো মৌসুমে সাড়ে ১১ লাখ টন চাল ও ৬ লাখ টন ধান কিনবে সরকার
চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন ধান, সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টন আতপ ও সিদ্ধ চাল এবং ৭৫ হাজার মেট্রিক টন গম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।