লকডাউন
সীমিত আকারে কাল থেকে খুলছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান
ঈদ ও সাপ্তাহিক ছুটি শেষে রবিবার থেকে খুলছে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো । ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণ এড়াতে শুক্রবার থেকে সরকার ঘোষিত ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনের কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেন হবে সীমিত আকারে। গ্রাহকদের জন্য প্রতিদিন মাত্র সাড়ে তিন ঘন্টার জন্য ব্যাংক খোলা রাখা হবে।
আরও পড়ুনঃ সাঈদ খোকন ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, সমস্ত ব্যাংক ২৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে করোনা-সুরক্ষা প্রোটোকল বজায় রেখে এবং সীমিত কর্মী দিয়ে সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪টার পরিবর্তে সীমিত পরিসরে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
আরও পড়ুনঃ পুনরায় লকডাউনে রাজধানীর সড়কগুলোতে শুনশান নীরবতা
তবে ব্যাংকগুলো এই সময়ের বাইরে তাদের নিজস্ব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিকেল ৩ টা পর্যন্ত খোলা রাখতে পারবে। তাদের অন্যান্য নিয়মিত কার্যক্রম সরকারি নির্দেশিকা মেনে পরিচালিত হবে।
এই সময়কালে, ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয় এবং অনুমোদিত ডিলার-মনোনীত শাখাগুলো খোলা থাকবে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলো জেলা পর্যায়ে একটি এবং উপজেলা পর্যায়ে একটি শাখা খোলা রাখবে।
আরও পড়ুনঃ চাঁদপুরে আল আরাফাহ ব্যাংকের ৫ লক্ষাধিক টাকা চুরি
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী বেসরকারি ব্যাংকগুলো জেলা পর্যায়ে একটি শাখা এবং সীমিত কর্মী নিয়ে জেলার বাইরে সর্বাধিক দুটি শাখা খোলা রাখতে পারবে।
তবে ইন্টারনেট ব্যাংকিং পরিষেবা ২৪ ঘণ্টা চলবে।
লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেও দৌলতদিয়া ঘাটে রাজধানীমুখী মানুষের ঢল
কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন শনিবার ভোর থেকেই রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
ঘাটে আসা ফেরিগুলো যানবাহন ও বিপাকে পড়ে আসা যাত্রীদের নিয়েই ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে।
শনিবার সকালে ঘাটে দেখা গেছে, ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অনেকটাই ফাঁকা। একেবারে বিপাকে পড়া মানুষজন বাইরে বের হয়েছে। কেউ পায়ে হেঁটে আবার কেউ রিকশায় করে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে নামছেন। অনেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা বা মাহেন্দ্র রিজার্ভ করে ঘাটে নামছে। তারা কোন বাধার সম্মুখীন না হয়েই সরাসরি ফেরিতে উঠছেন। ফেরিতে ব্যক্তিগত কিছু গাড়ি, মোটরসাইকেল আর আগত যাত্রীদের নিয়েই মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ছেড়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: গাড়ি ও মানুষের চাপ কমে দৌলতদিয়া ঘাট ফাঁকা
ফরিদপুরের সদরপুর থেকে আসা ঢাকাগামী যাত্রী রোকমান প্রামানিক জানান, তিনি ঢাকার মালিবাগ এলাকার একটি বেসরকাররি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। রবিবার থেকে অফিস খোলা, তাই কঠোর লকডাউনের মধ্যে ঢাকা উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
রাজবাড়ীর বসন্তপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী আব্দুর রব জানান, জরুরি ব্যবসায়ীক কাজে ঢাকা যেতে হচ্ছে। তাই খুব সকালেই একটি মোটরসাইকেলে ৩০০ টাকা ভাড়া দিয়ে বৃষ্টির মধ্যে দুই জন রওনা করেছি। এখন নদী পাড়ি দিবেন।
তিনি বলেন, ‘আজ ঢাকায় না পৌঁছালে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন: প্রায় ফাঁকা ঢাকার রাস্তাঘাট, মানুষের চলাচলও কম
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন বলেন, উভয় ঘাটে ছোট-বড় মিলেই মোট ১৫টি ফেরি রয়েছে। যখন যে ঘাট থেকে যানবাহন নিয়ে ছাড়া প্রয়োজন সেভাবেই ছেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া একটি মাঝারি আকারের ভিআইপি ফেরি রাখা হয়েছে। যে কোন মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আসলে তাদেরকে পারাপার করা হবে। তবে কঠোর বিধিনিষিধের কারণে ঘাটে আসা যানবাহন সরাসরি ফেরিতে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে।
খুলনায় কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে লকডাউন
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে শুরু হওয়া লকডাউনের দ্বিতীয় দিন খুলনায় বেশ কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে। গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে।
সর্বাত্মকভাবে লকডাউন পালনের জন্য জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশ ব্যাপক তৎপর রয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনা: কুমিল্লায় আরও ১০ মৃত্যু, শনাক্ত ২০৯
শহর ঘুরে সরেজমিনে দেখা যায়, লকডাউন সর্বাত্মকভাবে পালনে বাধ্য করতে পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক ও মোড়ে মোড়ে পুলিশ টহল দিচ্ছে। রাস্তায় পুলিশের টহল গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহৃত সীমিত সংখ্যক যানবাহন ছাড়া তেমন যানবাহন চোখে পড়ছে না। পথে পথে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। জরুরি কাজে কেউ বের হলেও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেবাশীষ বসাক জানান, লকডাউনের নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। যাদের সাথে রয়েছে বিজিবি ও এপিবিএন।
আরও পড়ুন: রামেকে করোনা কেড়ে নিলো আরও ২২ প্রাণ
খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহবুব হাসান বলেন, জেলাব্যাপী লকডাউন কার্যকর করতে জেলা পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করছি। আমাদের সাথে সব সময় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণ রয়েছেন। লকডাউন সফল করতে জেলার ৯ থানায় ২৯টি চেক পোস্ট বসানো রয়েছে। ৪১টি টহল গাড়ির টিম সমগ্র জেলায় কাজ করছে।
তিনি জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে শুরু হওয়া দুই সপ্তাহব্যাপী লকডাউনের শেষ পর্যন্ত কঠোর অবস্থানে থাকবে খুলনা জেলা পুলিশ।
বিধিনিষেধ অমান্য করায় সিলেটে ৯২ যানবাহন জব্দ
সিলেটে কঠোর লকডাউনের প্রথমদিনে বিধিনিষেধ অমান্য করায় শুক্রবার ৯২টি যানবাহন জব্দসহ ৪৬ যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এছাড়া ১৫ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
পুলিশ জানায়, করোনাভাইরাসের ব্যাপক ও ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর করতে পুলিশ কাজ করছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বিপুল পরিমাণ ক্ষতিকারক যৌন উত্তেজক ওষুধ জব্দ
নগরবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ৪৬টি চেকপোস্ট এবং সকল থানা-ফাঁড়ি-তদন্ত কেন্দ্র এলাকাধীন ৯৭টি টহল বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় লকডাউনের প্রধম দিনে বিধিনিষেধ অমান্য করায় সিলেট মহানগর পুলিশের অভিযানে ২৮ সিএনজি, ৯ মোটরসাইকেল, সাত প্রাইভেট কার ও অন্যান্য দুই মামলাসহ সর্বমোট ৪৬টি মামলা এবং ৩৫ সিএনজি, ১৪ মোটরসাইকেল, পাঁচ প্রাইভেট কার, অন্যান্য ৩৮ সহ মোট ৯২টি যানবাহন জব্দ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ২০২০ সালে ৭৩৮ কোটি টাকার চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য জব্দ: বিজিবি
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্ল্যাহ তাহের জানান, পুলিশি ডিউটির পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবির যৌথ অভিযান চলছে। এসকল অভিযানে পাঁচ ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক লকডাউন বিধিনিষেধ ভঙ্গ করায় নগরের বিভিন্ন স্থানে সর্বমোট ১৫ হাজার ৪০০ টাকা অর্থদণ্ড জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
মসজিদে নামাজ আদায়ে যেসব নির্দেশনা ফের দিল ধর্ম মন্ত্রণালয়
কঠোর লকডাউনের সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে নামাজ পড়তে ফের নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। শুক্রবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
গত ১ জুলাই দেশব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউনের আগে এই একই নির্দেশনা দিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: দেশে করোনায় মৃত্যু ১৬৬, শনাক্ত ৯,৬৩২
প্রজ্ঞাপনে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাগুলো হলো, মসজিদে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, প্রতিটি মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত সাবান, পানি ও স্যানিটাইজার রাখতে হবে, মুসল্লিদের নিজ নিজ বাসা থেকে ওযু করে এবং সু্ন্নত নামাজ ঘরে আদায় করে মসজিদে আসতে হবে। মসজিদের মেঝেতে কার্পেট বিছানো যাবেনা। মুসল্লিদের তাদের ব্যক্তিগত জায়নামাজ নিয়ে মসজিদে যেতে হবে।
এছাড়াও প্রজ্ঞাপনে বৃদ্ধ, শিশুদের পাশাপাশি অসুস্থদের মসজিদে যাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে ধর্ম মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, যারা এই নির্দেশাবলী লঙ্ঘন করবেন তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন শিথিলের পর সরকার দেশব্যাপী শুক্রবার, ২৩ জুলাই থেকে আবারও ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন দিয়েছে ।
আরও পড়ুন: ১৮ হলেই টিকা নেয়া যাবে, শিগগিরই বাস্তবায়ন
করোনা: কুষ্টিয়ায় আরও ১৭ মৃত্যু
খুলনায় শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার ভোর থেকে খুলনায়ও শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন। খুলনা মহানগরীর মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে পুলিশি চেকপোস্ট। তৎপর রয়েছে প্রশাসনের সদস্যরা। অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কোন যাত্রীবাহী পরিবহন খুলনা থেকে ছেড়ে যায়নি। তবে রাতে যে সকল বাস ঢাকা থেকে খুলনার উদ্যেশে ছেড়েছে তার দু’একটা দেখা গেছে।
আরও পড়ুনঃ লকডাউনেও আন্তর্জাতিক যাত্রীদের জন্য চলবে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট
ঈদের ছুটির পর শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অনেকেই বাড়ি থেকে বের হয়নি। নগরীর প্রাণকেন্দ্র ডাকবাংলা মোড়ে কয়েকটি ফলের দোকান ছাড়া অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। দু’একজন চলাচল করলেও পুলিশের চেকপোস্টের কাছে এসে তাদের জবাবদিহি করতে হচ্ছে। অকারণে মোটরসাইকেলে ঘোরাঘুরির কারণে কয়েকজনকে পুলিশের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আটক করা হয়েছে অনেকের গাড়ি। দূরপাল্লার বাসের কয়েকজন যাত্রীকে মালামাল নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে গাড়ির জন্য। সকাল থেকে নগরীর কোথাও কোন গণপরিবহন চলতে দেখা যায়নি।
আরও পড়ুনঃ পুনরায় লকডাউনে রাজধানীর সড়কগুলোতে শুনশান নীরবতা
মূল সড়ক ফাঁকা থাকলেও নগরীর অলিগলিতে রয়েছে জনসমাগম। খোলা রয়েছে চা ও কিছু মুদি দোকান। অর্ধেক শাটার নামিয়ে সেখানে চলছে সব বয়সী মানুষের আড্ডা। পুলিশের গাড়ি দেখা মাত্র দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যাচ্ছে।
খুলনার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুস্মিতা সাহা জানান, ‘সরকারি প্রজ্ঞাপনে যে নির্দেশগুলো দেওয়া আছে সেগুলো জনগণ মানছে কী না আমরা সেটা দেখবো। যৌক্তিক কারণ ছাড়া যারা ঘর থেকে বাইরে বের হবে বা আড্ডা দিবে সেখানে আমরা অভিযান চালিয়ে তাদের বাড়ি পাঠানোর চেষ্টা করবো, এরপরও তারা না শুনলে মামলা দিবো। দু’টি টিম নগরীতে কাজ করছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে এপিবিএনের সদস্যরা। প্রয়োজনে অন্য বাহিনীর সদস্যরাও অভিযানে যোগ হবে।‘
পুনরায় লকডাউনে রাজধানীর সড়কগুলোতে শুনশান নীরবতা
সরকারের পূর্বঘোষিত ১৪ দিনের লকডাউন কার্যকর হওয়ায় রাজধানীর সড়কগুলোতে আগের চেয়ে নিস্তব্ধতা বেড়েছে।
করোনার সাম্প্রতিক ছোবল থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতেই গত বৃহস্পতিবার টানা দুই সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করে সরকার।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা, আহত ২০
ঈদ উপলক্ষে প্রায় আট দিন লকডাউন শিথিল থাকার পর আবারও শুক্রবার থেকে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত পুনরায় সারাদেশে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। তাই শুক্রবার রাজধানীর সড়কগুলো গত সপ্তাহের তুলনায় তেমন একটা যান চলাচল করতে দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনায় মোট আক্রান্ত প্রায় ১৯ কোটি ২৫ লাখ
যান চলাচল বন্ধ থাকায়, শুক্রবার সকালে ঈদ শেষে ঢাকামুখী মানুষদের পায়ে হেঁটে রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেখা যায়।
সরকারের সাম্প্রতিক লকডাউনের বিধিনিষেধে সকল পেশার মানুষই নিজ কর্মস্থল এলাকায় অবস্থান করতে বলা হয়েছে। কেননা, বর্তমান লকডাউনে সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কোর্ট, কারখানাসহ সকল প্রকার রপ্তানি সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: লকডাউনেও আন্তর্জাতিক যাত্রীদের জন্য চলবে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট
লকডাউন কার্যকর করতে পুলিশের পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে র্যাব ও সেনাবাহিনীর তল্লাশির মুখে পড়তে হচ্ছে রাস্তায় বের হওয়া মানুষ ও যানবাহনের চালকদের।
তবে সকাল ১০টা পর্যন্ত রাজধানীতে যাত্রীবাহী যানবাহন প্রবেশের অনুমতি দেয় প্রশাসন।
এ প্রসঙ্গে ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা আখতার হোসেন জানান, রাস্তায় আটকা পড়া যানবাহনগুলোকেই উত্তরা এবং আব্দুল্লাহপুর দিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে। তবে সকাল ১০টার পর যৌক্তিক কারণ ছাড়া কোনও গাড়ি প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: রামেকে করোনা কেড়ে নিলো আরও ২২ প্রাণ
এক প্রশ্নের জবাবে এই ট্রাফিক কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারের নির্দেশ মোতাবেক আমরা কঠোরভাবে এই লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছি। শুধুমাত্র জরুরি সেবার গাড়িগুলোই লকডাউনে চলাচল করতে পারবে।’
তবে শুক্রবার সকালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলার মানুষদের রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশমুখ যেমন, টঙ্গী ব্রিজ, আমিনবাজার ব্রিজ, বাবুবাজার ব্রিজ এবং পোস্তগলা ব্রিজ দিয়ে পায়ে হেঁটে প্রবেশ করতে দেখা যায়। ঢাকায় প্রবেশের মুখে বাসযাত্রী এসব মানুষদের বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটেই রাজধানীতে প্রবেশ করতে হয়।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় করোনা জটিলতায় আরও ১৭ মৃত্যু
এসময় মানুষদের মাস্ক পড়া ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ইউএনবিকে বলেন, ‘গতবারের চেয়ে কঠিন হবে এই লকডাউন। বিধিনিষেধ নিশ্চিত করতে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে।’
লকডাউনেও আন্তর্জাতিক যাত্রীদের জন্য চলবে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট
সরকার ঘোষিত ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনের মধ্যেও আন্তর্জাতিক যাত্রীদের জন্য দেশের মধ্যে পরিচালিত অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলবে।
শুক্রবার থেকে সারাদেশে শুরু হওয়া লকডাউনে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকেট থাকা যাত্রীদের জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (ক্যাব) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটি শেষে ফের কঠোর বিধিনিষেধ, বন্ধ থাকবে সব কারখানা
বৃহস্পতিবার ক্যাব জানায়, বাংলাদেশ বিমান, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এবং নভোএয়ার অভ্যন্তরীণ রুটে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকেট থাকা যাত্রীদের কাঙ্খিত ফ্লাইট নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত এবং যাত্রীদের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের টিকেট যাচাই করতে হবে।
আরও পড়ুন: দেশে করোনায় মৃত্যু ১৮৭, শনাক্ত ৩,৬৯৭
শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে এই আদেশ কার্যকর হবে।
বাংলাদেশে করোনায় একদিনে নতুন মৃত্যুর রেকর্ড ২৩১
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ১২৫ জনে।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ হাজার ৩২১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ১৭ হাজার ৩১০ জনে।
এর আগে গত ১১ জুলাই করোনায় সর্বোচ্চ ২৩০ জনের মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়।
আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনা আক্রান্ত ১৯ কোটি ছাড়াল
এর আগে রবিবার অধিদপ্তর জানায়, আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২২৫ জনের মৃত্যু এবং ১১ হাজার ৫৭৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৫ হাজার ১২টি। শনাক্তের হার ২৯.৫৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১.৬২ শতাংশ।
এদিকে, একদিনে আরও ৯ হাজার ৩৩৫ জন সুস্থ হয়েছেন। এনিয়ে দেশে মোট সুস্থ হয়েছে ৯ লাখ ৪১ হাজার ৩৪৩ জন, সুস্থতার হার ৮৪.২৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন: করোনা মহামারির মধ্যেই হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা শুরু
বিশ্ব পরিস্থিতি
মহামারি করোনাভাইরাসের নতুন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ফলে পুরো বিশ্বজুড়ে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগী ও আক্রান্তদের মৃত্যু সংখ্যা। যুক্তরাষ্ট্রের জনস্ হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার ৩৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া একই সময়ে মৃতের সংখ্যা ৪০ লাখ ৮৮ হাজার ৩২৮ জনে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে নিবন্ধন ছাড়াই পোশাক শ্রমিকদের টিকা দেয়া শুরু
এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট ৩৬১ কোটি ৯৯ লাখ ৪৪ হাজার ১৩৫ ডোজ করোনার টিকা প্রদান করা হয়েছে।করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ আমেরিকায় এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা ৩ কোটি ৪০ লাখ ৭৯ হাজার ৩৩৬ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৬ লাখ ৯ হাজার ১৮ জন।
আরও পড়ুন: ফরিদপুর মেডিকেলে ১৯ দিনে করোনায় ১৯৭ মৃত্যু (unb.com.bd)
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৪২ হাজার ২১৪ জনে। দেশটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫৭৪ জন। মৃত্যুর দিক দিয়ে দেশটির অবস্থান দ্বিতীয়।এদিকে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি ১১ লাখ ৬ হাজার ৬৫ জন। একই সময়ে মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ১৩ হাজার ৬০৯ জনে।
রাজধানীতে যানজট, যাত্রীদের ভোগান্তি
আসন্ন ঈদুল আজহায় মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সরকার এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন শিথিল করার পর আজ বৃহস্পতিবার গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে। রাজধানীর কিছু সড়কে যানজট দেখা গেছে। এ কারণে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, খুব সকালে বেশ কিছু বাস টার্মিনাল ছেড়ে গেলেও রাজধানীর মিরপুর রোড, উত্তরা, বনানী, নিউ মার্কেট এবং মহাখালী এলাকা পার হতে অনেক সময় লেগেছে।
আরও পড়ুন: টিকা নেয়ার বয়স ১৮ বছর করার চিন্তা করছে সরকার: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
রাজধানীসহ বিভিন্ন আন্তঃজেলা রুটের বাসগুলোতে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে সকালে নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকার সড়কে যানজট দেখা যায়। এতে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক উত্তর) আবু রায়হান মোহাম্মদ সালেহ বলেন, কঠোর লকডাউনের কারণে এতদিন অনেকেই বাড়ি থেকে বেরোতে পারেনি। লকডাউন শিথিল হওয়ার সাথে সাথেই মানুষ বাইরে বেরিয়ে পড়েছে। তবে, সব ধরনের কোভিড-সুরক্ষা প্রোটোকলগুলো কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিতে পুলিশ এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সড়কে কঠোর নজরদারি রাখছে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা গ্রহণ শুরু
ট্রাফিক পরিদর্শক আক্তার হোসেন বলেন, সকাল থেকে সব যানবাহন চলাচল শুরু করায় সড়কে যানবাহনের বিশাল চাপ দেখা গেছে।
এছাড়া ট্রেন ও লঞ্চ পরিষেবাগুলো ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে ৫০ শতাংশ আসন খালি রেখে সারাদেশে আবার চলাচল শুরু করেছে।
মঙ্গলবার বিকেল থেকে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ১২ জুলাই রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ট্রেনের টিকিট শুধুমাত্র অনলাইনে পাওয়া যাবে। কাউন্টারে কোন টিকেট দেয়া হবে না।
আরও পড়ুন: কোরবানির পশুর চামড়ার দাম বাড়ালো সরকার
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার সারাদেশে যাত্রীবাহী ট্রেনসহ সকল প্রকার গণপরিবহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে লকডাউন দিয়েছিল। দুই দফায় লকডাউন বাড়ানোর পর ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন শিথিল করে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। আগামী ২৩ জুলাই থেকে ফের কঠোর লকডাউন দেয়ার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে।