পাট
পানি সংকটে ক্ষেতেই শুকাচ্ছে পাট, বিপাকে চাষিরা
খুলনাঞ্চলে চাষিদের চোখে-মুখে হতাশার ছাপ, হাসি নেই মুখে। পানি সংকটের কারণে পাটের জাঁক নিয়ে চরম হতাশায় পড়েছেন তারা। উত্তপ্ত রোদে চাষিরা ক্ষেতেই শুকাচ্ছে কেটে রাখা সোনালী আঁশ পাট। এ অবস্থায় কৃত্রিমভাবে সেচের মাধ্যমে পুকুর জলাশয়, খাল-বিলে পানি ভর্তি করে পাট জাঁক দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তারা।
একাধিক চাষি বলছেন, পাটের কাঙ্ক্ষিত চাষাবাদের মাধ্যমে উৎপাদন সন্তোষজনক হলেও মিলছেনা সুফল। খাল-বিল, হাওর-বাওর, পুকুর-ডোবা, জলাশয়, নর্দমাতে পরিপূর্ণ পানি না থাকায় চাষের জমিতেই শুকাচ্ছে আমাদের স্বপ্ন ও হাড়ভাঙা পরিশ্রম। যে কারণে লাভ দূরের কথা এখন আসল নিয়ে টানাটানি ওই সকল চাষিদের।
পাট চাষ করতে গিয়ে চাষিদের মুখে হাত, কারণ নেই বৃষ্টি। বিকল্প পথ হিসাবে পাটের জাঁক দেয়া জন্য কৃত্রিমভাবে সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুকুর, ডোবা, খাল-বিলে পানির ব্যবস্থা করেছেন।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, সাধারণত ষড়ঋতুতে আষাঢ়-শ্রাবন মাসকে বর্ষা হিসাবে বলা হয়ে থাকে। তবে আবহাওয়া অফিসের ভাষায় জুন হতে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল। অন্য বছরের তুলনায় এবার বৃষ্টিপাত কম। কারণ খুলনা অঞ্চলে এবার মৌসুমী বায়ু বেশি সক্রিয় হয়নি। যদি মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হতো তবে বৃষ্টিপাত বেশি হতো। এছাড়া এ অঞ্চলে এবার নিম্নচাপ ও লঘুচাপের প্রভাব কম। নিম্নচাপ বা লঘুচাপ হলেও বৃষ্টিপাত বেশি হতো।
আরও পড়ুন: পাটের দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চল সূত্রে জানা যায়, খুলনা অঞ্চল অধিভুক্ত রয়েছে চারটি জেলা নিয়ে। যার মধ্যে রয়েছে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল জেলা। জেলাগুলোর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে উপজেলাও। চারটি জেলার সর্বমোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৫ লক্ষ ২০ হাজার ৬৩৩ হেক্টর। যার মধ্যে খুলনায় জেলার মেট্রোসহ বাকি উপজেলা সমূহে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৯৮১ হেক্টর, বাগেরহাটের জেলার উপজেলা সমূহে ১ লাখ ২২ হাজার ২৩১ হেক্টর জমি, সাতক্ষীরা জেলার উপজেলা সমূহে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৭২ হেক্টর ও নড়াইল জেলার উপজেলা সমূহে ৭৮ হাজার ৫৪৯ হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে।
চলতি অর্থ বছর (২০২২-২৩) খুলনাঞ্চলের ৪ জেলার মধ্যে খুলনায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা খুলনায় ১৬১৩ হেক্টর, বাগেরহাটে ১৮২৭ হেক্টর, সাতক্ষীরায় ১১৫৮৮ হেক্টর ও নড়াইলে ২২৩৩৫ হেক্টর, সর্বমোট জেলা সমূহে পাটে চাষ হয়েছে ৩৭৩৬৩ হেক্টর। বিপরীতে ওই জেলা সমূহে পাট আবাদের অগ্রগতি খুলনাতে ১৩১৬ হেক্টর, বাগেরহাটে ১৯৫২, সাতক্ষীরায় ১১৫৭৯ হেক্টর ও নড়াইলে ২৩৩৪০ হেক্টর জমির। ৪ জেলায় পাট আবাদের অগ্রগতি সর্বমোট ৩৮১৮৭ হেক্টর জমি, অর্জন ১০২ শতাংশ।
অপরদিকে, পাটের আবাদকৃত জমি খুলনায় ১৩১৬ হেক্টর, বাগেরহাটে ১৯৫২ হেক্টর, সাতক্ষীরায় ১১৫৭৯ হেক্টর ও নড়াইলে ২৩৩৪০ হেক্টর জমি। খুলনায় ৪ অঞ্চলের সর্বমোট পাট আবাদকৃত জমির ৩৮১৮৭ হেক্টর জমি। পক্ষান্তরে, ওই সকল জেলায় পাট কাটার (কর্তনের) অগ্রগতি খুলনা ৫২০ হেক্টর, বাগেরহাট ১০৯৩ হেক্টর, সাতক্ষীরা ৪৫৫৫ হেক্টর ও নড়াইলে ১৭০০০ হেক্টর। ৪ জেলায় সর্বমোট ২৩১৬৮ হেক্টর, কর্তনের অগ্রগতির অর্জন ৬১%।
খুলনার স্থানীয় অঞ্চলসহ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানি না থাকায় বেশির ভাগ জমিতে পাট কর্তন অবস্থান টানা উত্তপ্ত রোদে পড়ে আছে। নেই পানি, পানির জন্য চাষি হাহাকার করছে। বৃষ্টি না হওয়া চাষিদের ঘাম ঝরানো ফসল এখন অনিশ্চয়তার দিকে। পাটের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন বা ফলন সন্তোষজনক হলেও মিলছেনা সুফল। খাল-বিল, হাওয়-বাওর, পুকুর-ডোবা, জলাশয়, নর্দমাতে পরিপূর্ণ পানি থাকা না থাকায় চাষের জমিতেই শুকাচ্ছে পাট। এমন দৃশ্য উঠে এসেছে। তবে বড় ক্ষতি বা লোকসান হতে পরিত্রাণ পেতে চাষিরা কৃত্রিম উপায়ে পানি সরবরাহ করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চল খুলনার অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুল হক জানান, বৃষ্টি না হওয়ায় এবার পাট উৎপাদনকারী চাষিরা পাট জাঁক দেয়া নিয়ে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়েছেন, তবে কৃত্রিমভাবে সেচের মাধ্যমে পুকুর জলাশয়, খাল-বিলে পানি ভর্তি করে পাট জাক দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে অনেক কৃষকই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এখনো যথেষ্ট সময় রয়েছে বর্ষার, হতাশার কিছু নেই।
আরও পড়ুন: অল্প বৃষ্টিতে উদ্বিগ্ন ঠাকুরগাঁওয়ের পাট ও আমন চাষিরা
নারায়ণগঞ্জে পাটের গুদামে আগুন
পাটের দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
পাটের রাজধানী ফদিরপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে সোনালী আশ খ্যাত পাট। সংসারের দৈনন্দিন খরচ মেটাতে উৎপাদিত এই পণ্য বাজারে এনে কাঙ্খিত দাম না পেয়ে হতাশ চাষিরা।
জেলার সালথা, নগরকান্দা, বোয়ালমারীসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রতিটি হাটেই পাট উঠতে শুরু করেছে। তবে এবার সময় মতো পাট জাগের পানি না পাওয়ায় অধিক মূল্য দিয়ে ডিজেল চালিত সেলো মেশিন দিয়ে ভূগর্ভস্থল থেকে পানি তুলে জাগ দিতে হয়েছে। এতে চাষিদের খরচ বেড়েছে। অথচ পাটের এই ভরা মৌসুমে উৎপাদন খরচই তুলতে পারছে না তারা।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে সাড়ে ১০ লাখ বেল পাট উৎপাদন, দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
এদিকে, পাটের বাজার হিসেবে জেলায় প্রসিদ্ধ হাট কানাইপুর। সপ্তাহে শুক্র ও মঙ্গলবার এখানে বাজার বসে। তাই প্রান্তিক চাষিরা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে তাদের উৎপাদিত পাট নিয়ে আসে এখানে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এই বাজারে পাট উৎপাদন মৌসুমে প্রতি হাটে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার মণ পাট কেনা বেচা হয়। বর্তমানে কানাইপুর হাটে পাটের দর রয়েছে ২২শ থেকে ২৮শ টাকা। তবে দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা।
অল্প বৃষ্টিতে উদ্বিগ্ন ঠাকুরগাঁওয়ের পাট ও আমন চাষিরা
ঠাকুরগাঁওয়ে বৃষ্টির অভাবে খরার মতো পরিস্থিতির কারণে সময়মতো পাট কাটা ও আমন চাষ ব্যাহত হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন জেলার আমন ও পাট চাষিরা।
উর্বর মাটির কারণে এ জেলায় ধান, পাট, ভুট্টা, গম ও আখের প্রচুর চাষ হয়। কিন্তু এ বছর বর্ষাকালেও বৃষ্টি না হওয়ায় প্রাকৃতিক আঁশ পচানো ও প্রক্রিয়াজাত করতে সমস্যায় পড়েছেন পাট চাষিরা।
পর্যাপ্ত পানি না থাকায় জাগ দিতে না পারায় পাট চাষিরা তাদের পাট কাটাচ্ছেন না। প্রতি বছর এই মৌসুমে তারা পাট কাটান এবং পচানোর জন্য পানির নিচে রাখেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
তারা জানান, এখন পাট না কাটা হলে আমন চাষিরা একই জমিতে সময় মতো আমন ধান চাষ করতে পারবে না। এতে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন: ঈদুল আজহা: হাটের জন্য প্রস্তুত ঠাকুরগাঁওয়ের ‘বারাকাত’
জেলার আমন চাষিরা অনেকাংশেই বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভরশীল। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ৫০ শতাংশ আমনের জমিতে সেচের ব্যবস্থা নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, এ বছর মোট ১ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে যা গত বছর ছিল ১ হাজার ২২২ হেক্টর।
সাধারণত কৃষকরা ১ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই আমন ধান চাষ করলেও এ বছর জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেও আমনের বীজতলা তৈরি করতে পারেননি।
সদর উপজেলার কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘জুন মাসে বৃষ্টি হয়েছে। আমন চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করেছি কিন্তু এখন বৃষ্টির কোনো লক্ষণ নেই।’
রহমত নামে এক পাট চাষি বলেন, সব খাল-বিল শুকিয়ে গেছে এবং পাট পচানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় পাট কাটাতে ব্যর্থ হয়েছি।
পণ্য রপ্তানি শুরুর মাধ্যমে পাটখাত পুনরুজ্জীবিত হয়েছে: বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী
বিদেশে পণ্য রপ্তানি শুরুর মাধ্যমে পাটখাত পুনরুজ্জীবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। তিনি বলেছেন, চট্টগ্রামের কেএফডি জুট মিলস্ লিমিটেডের উৎপাদিত পাটপণ্য বিদেশে রপ্তানি শুরুর মাধ্যমে পাটখাত আবার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) মিলসমূহ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হওয়া এসব মিলে নতুন করে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের কেএফডি জুট মিলস্ লিমিটেডের উৎপাদন কার্যক্রম পরিদর্শনকালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, কেএফডি জুট মিলে বর্তমানে ৬০০ শ্রমিকের মাধ্যমে দৈনিক গড়ে ১০ টন পাটপণ্য উৎপাদন করছে। ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেডের এ পর্যন্ত ১৩০ টন পাটজাতপণ্য ভিয়েতনাম, তিউনিশিয়া ও চীনে রপ্তানি করছে। এছাড়াও প্রায় ৬০০ টন পাটপণ্যের অর্ডার শিপমেন্টের অপেক্ষায় আছে। ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড আরও দুটি উৎপাদন ইউনিট আধুনিকায়নের মাধ্যমে চালু করতে যাচ্ছে। ফলে প্রচলিত ও বহুমুখী পাটপণ্য মিলে দৈনিক গড়ে ১০০ টন পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে। আশা করছি, এখানে ৩৫০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
আরও পড়ুন: পাটের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে: পাটমন্ত্রী
তিনি বলেন, নরসিংদীর বাংলাদেশ জুট মিলস্ লিমিটেডের ভাড়াভিত্তিক ইজারা দেয়া হয়েছে। মিলটিতে ইতোমধ্যে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়াও খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলস্ ও চট্টগ্রামের হাফিজ জুট মিলসে লিজ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও ১৩টি জুটমিলের জন্য ২য় ইওআই (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ১৮টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৫৩টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। আশা করছি, এ পর্যায়ে আরও কয়েকটি মিল ভাড়াভিত্তিক লিজ দেয়া সম্ভব হবে। ফলে একদিকে যেমন পাটপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে এসব পণ্য রপ্তানি করে আয় বৃদ্ধি পাবে।
উল্লেখ্য, সরকারি সিদ্ধান্তে পাটকলসমূহের বিরাজমান পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান ও পাটখাত পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে ০১ জুলাই থেকে বিজেএমসি’র নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি জুট মিলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৫টি জুট মিলের সকল স্থায়ী শ্রমিকের গ্রাচ্যুইটি, পিএফ, ছুটি নগদায়নসহ সমুদয় পাওনা গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার মাধ্যমে প্রায় তিন হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আজীবন কাজ করে যাব: পাটমন্ত্রী
এছাড়াও, যাচাইকৃত বদলি শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, মামলা নিষ্পত্তি/প্রত্যাহারজনিত স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা, অবসরপ্রাপ্ত ও অবসানকৃত স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা এবং মিল চলাকালীন সময়ের ৬৪ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি বাবদ ৯২ দশমিক ৩৭ কোটি টাকা এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পাওনা, কাঁচা পাট ব্যবসায়ীদের বকেয়া পাওনা এবং স্টোর সরবরাহকারী/সংশ্লিষ্ট ক্যারিং সরবরাহকারীদের পাওনাসহ মোট ৫৭৪.১৪ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
বস্ত্র দিবসে সম্মাননা পাচ্ছে ৭ সংগঠন
করোনা বিপর্যয়ের মধ্যে বস্ত্র খাত রক্ষায় অবদানের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সাত সংগঠনকে আগামী ৪ ডিসেম্বর (শনিবার) জাতীয় বস্ত্র দিবসে সম্মাননা দেবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক) সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
আরও পড়ুন: বস্ত্র অধিদপ্তরের সেবা সপ্তাহ শুরু ৬ ডিসেম্বর
যে সাতটি সংগঠন সম্মননা পাবে সেগুলো হলো- বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়ার ম্যানুফ্যাকচার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বাংলাদেশ গার্মেন্টম বায়িং হাউজ অ্যাসোসায়েশন (বিজিবিএ), বাংলাদেম স্পেশালাইজড টেক্সটাইল মিলস্ অ্যান্ড পাওয়ার লুম ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএসটিএমপিআইএ), বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিলেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিটিএলএমইএ) বাংলাদেশ জাতীয় তাঁতী সমিতি।
পাট থেকে স্যানিটারি প্যাড বানিয়ে পুরস্কার জিতলেন বিজ্ঞানী ফারহানা
নারী ও মেয়েদের মাসিক ব্যবস্থাপনাকে পরিবেশবান্ধব করার ক্ষেত্রে পাট থেকে প্রাপ্ত সেলুলোজ দিয়ে স্যানিটারি প্যাড তৈরির মেশিন বানিয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানী ফারহানা সুলতানা একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছেন।
আইসিডিডিআরবি তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট করা এক বিবৃতি জানিয়েছে, আইসিডিডিআরবি’র সহকারী বিজ্ঞানী ফারহানা সুলতানা আমেরিকান সোসাইটি ফর ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন (এএসটিএমএইচ) আয়োজিত ‘মহামারি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্বাস্থ্য সম্মত বিশ্ব সম্প্রদায়’ শীর্ষক চতুর্থ ইনোভেশন পিস প্রতিযোগিতায় গ্র্যান্ড পুরস্কার জিতেছেন।
আরও পড়ুন: প্রথম ইউনেস্কো-বঙ্গবন্ধু পুরস্কার প্রদান করলেন প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ড. মোবারক আহমেদ খানের সঙ্গে সমন্বয় করে ফারহানা সুলতানা পাটের সেলুলোজভিত্তিক ডিসপোজেবল প্যাড তৈরি করে এর পরীক্ষা চালিয়েছেন।
এই প্যাডটি বাংলাদেশের নারী ও মেয়েদের মাসিকের স্বাস্থ্য এবং পরিচ্ছন্নতার জন্য একটি বিকল্প সমাধান। পাটের সেলুলোজ একটি নতুন উপাদান এবং দেশে বর্তমানে এমন প্যাড বানানোর কোন ধরনের মেশিন নেই, যা দিয়ে প্যাড উৎপাদন করা করবে।
এএসটিএমএইচের এই প্রতিযোগিতার পুরস্কার হিসেবে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার পাবেন ফারহানা। ২০২২ সালে এই প্রতিযোগিতার পরবর্তী আসরে বিচারকের ভূমিকা পালন করবেন তিনি।
আইসিডিডিআরবি তাদের ফেসবুক পেজে আরও জানায়, বিজ্ঞানী ফারহানা পুরস্কারের টাকা দিয়ে আরও বেশিসংখ্যক প্যাড উৎপাদনের জন্য পরীক্ষা চালাবেন। একইসাথে বাণিজ্যিকভাবে এটি উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েও কাজ করবেন। পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করবেন তিনি।
পড়ুন: ভারতের ‘পদ্ম পুরস্কার’ পেলেন ৪ বাংলাদেশি
ঢাকা ডকল্যাবে কসমস ফাউন্ডেশন পুরস্কার
বকেয়া বেতনের দাবিতে সিরাজগঞ্জে পাট শ্রমিকদের প্রতিবাদ
সিরাজগঞ্জে বন্ধ হওয়া জাতীয় জুট মিল পুনরায় চালু ও মজুরি কমিশনের এরিয়াসহ বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করেছে শ্রমিক ও কর্মচারীরা।
সিরাজগঞ্জ পৌর মুক্তমঞ্চ চত্বরে শুক্রবার বিকালে শ্রমিক-কর্মচারী এ প্রতিবাদ সভা মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন: পাট শ্রমিকদের ঘরে ঈদের খুশি
প্রতিবাদ সভায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, শ্রমিক-কর্মচারী নেতাদের সাথে আলোচনা চলা অবস্থায় হঠাৎ করেই চলতি বছরের ২ জুলাই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে জাতীয় জুট মিলসহ দেশের ২৫টি জুট মিল। এসব কারখানা বন্ধ করে দেয়া হলেও শ্রমিকদের প্রাপ্য বকেয়া এখনো পরিশোধ না করায় সিরাজগঞ্জ জাতীয় জুটমিলের শ্রমিক-কর্মচারী এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আরও পড়ুন: খুলনায় ৬ দফা দাবিতে পাটকল শ্রমিকদের মানববন্ধন
এ সময় বক্তারা কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থে জাতীয় জুট মিলসহ বন্ধ করে দেয়া সব জুট মিল বন্ধের সিদ্ধান্ত অবিলেম্বে প্রত্যাহার করে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় রেখে লাভজনকভাবে মিল পরিচালনার সব ব্যবস্থা গ্রহণ ও শ্রমিক-কর্মচারীদের কয়েক বছরের বকেয়া বেতন ও বোনাস পরিশোধের দাবি জানান তারা।
ফরিদপুরে সাড়ে ১০ লাখ বেল পাট উৎপাদন, দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
পাটের রাজধানীখ্যাত ফরিদপুরে এবার পাটের ফলন ভালো হয়েছে। তবে দাম নিয়ে কিছুটা হতাশ পাট চাষিরা। চলতি মৌসুমে জেলায় পাটের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিলো সাড়ে ১০ লাখ বেল ( ১৮০ কেজিতে এক বেল)।
আর চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে ফরিদপুরে পাটের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করেছে ১০ লাখ ৫২ হাজার বেল। গত দশ মৌসুমে পাটের আবাদ বেড়েছে ৯ হাজার ১০৯ হেক্টর জমিতে।
আরও পড়ুন: দক্ষিণাঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষ
জেলার পাট উৎপাদনে প্রসিদ্ধ নগরকান্দা, সালথা, বোয়ালমারী উপজেলার পাট চাষিরা জানান, চলতি পাট উৎপাদন মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে মৌসুমের শুরুতে পাট আবাদে একাধিক সেচ দিয়ে পাট বপণ করায় শুরুতেই চাষিদের বাড়তি খরচ হয়েছে।
আবার পাট কাটায় ও পাট নেয়া-ধোয়ায় ও শুকাতে অন্যান্য বছরের চেয়ে শ্রমিকের মূল্য বেশি হওয়ায় পাটের উৎপাদন খরচ বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি।
বর্তমানে জেলার পাটের বাজার কানাইপুর, সাতৈর, কৃষ্টপুর, নগরকান্দা, সালথা গিয়ে দেখা গেছে, চলতি সপ্তাহে মণ প্রতি পাটের দর কৃষক পাচ্ছে প্রকার ভেদে ২৬০০ থেকে ৩১০০ টাকা।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর বাজারের পাট ব্যবসায়ী রথিন্দ্র নাথ সিকদার নিপু জানান, উৎপাদন মৌসুম শুরুতে পাটের দর মণ প্রতি ৪ হাজার পর্যন্ত গিয়ে ছিল। বর্তমানে (চলতি সপ্তাহে) এই বাজারের সব থেকে ভালো পাটের দর মণ প্রতি ৩১০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। আর একটু নিম্নমানে পাটের দর ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মৌসুম শেষ হলেও প্রণোদনা পায়নি ফরিদপুরে পাট চাষিরা
ভরা মৌসুমে বাজারে পাটের আমদানি কম হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বচ্ছল চাষিরা বাড়তি লাভের আশায় পাট বাজারে কম তুলছেন।
বোয়ালমারীর ঘোষপুর এলাকার পাট চাষি আশুতোষ মালো জানান, খেতে পাটের উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবে চাষিদের খরচ ও যে কোনও বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে।
সালথার চাষি নাছির উদ্দিন জানান, সরকার যেভাবে প্রতিবছর ধান, গমের দাম নির্ধারণ করে দেয় সেভাবে পাটেরও দর নির্ধারণ করা থাকলে চাষিরা ন্যায্য মূল্য পেতো।
এদিকে পাটের দর প্রসঙ্গে ফরিদপুর গোল্ডেন জুট মিলের পরিচালক মহাসিনুল ইসলাম গুড্ডু বলেন, ‘আমরা যারা পাট কলের সাথে যুক্ত তাদের দাবি হলো মিলের উৎপাদিত পাট পণ্য বিক্রয় মূল্যের সাথে যদি পাট ক্রয় মূল্যের পার্থক্য বেশি থাকে তাহলে মিল মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে কারণে পণ্য উৎপাদন মূল্যের সাথে হিসাব মিলিয়ে কাঁচা পাটের দর নির্ধারণ করা দরকার। এতে সকলের লাভ হবে।’
আরও পড়ুন: শ্রমিক সংকট ও পোকার বিড়ম্বনায় ফরিদপুরের পাট চাষিরা
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. হযরত আলী জানান, সোনালী আঁশ খ্যাত ফরিদপুরের উৎপাদিক পাটের চাহিদা বিশ্ব জুড়ে। চলতি মৌসুমে পাটের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১০ লাখ ৫২ হাজার বেল। তবে এবার বেশি উৎপাদন হয়েছে।
পাটের দরের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমান বাজারের যে দরে পাট বিক্রয় হচ্ছে তাতে কৃষকের লাভের পরিমাণ একটু কম হচ্ছে। কারণ মৌসুমের শুরুতে তাদের আবাদ করতে খরচ হয়েছে বেশি।
তিনি বলেন, মণ প্রতি ৩ হাজার থেকে ৩৫০০ টাকা দর কৃষক পেলে তাদের ভালো লাভ পেতো।
কৃষিখাতের উৎকর্ষ সাধনে ডাচ অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর আহ্বান
বাংলাদেশ কৃষিখাতে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও পণ্যের বহুমুখীকরণে ডাচ উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত অ্যানে ভেন লিওভেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার অত্যন্ত বৃহৎ ও সম্ভাবনাময়। স্থানীয় জনগণের চাহিদা মেটাতে বিশেষ করে কৃষিখাতের আধুনিকায়ন খুবই জরুরি। সারা পৃথিবীতে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে নেদারল্যান্ডসের অবস্থান দ্বিতীয়। তাই বাংলাদেশ কৃষিখাতে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও পণ্যের বহুমুখীকরণে ডাচ উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিতে পারে।
আরও পড়ুন: কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগের আহবান কৃষিমন্ত্রীর
বুধবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর অফিসে ডিসিসিআই’র সভাপতি রিজওয়ান রাহমানের সাথে সাক্ষাৎ করে রাষ্ট্রদূত এই আহ্বান করেন। এসময় উভয়েই দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য কার্যক্রম বৃদ্ধিরও আহ্বান জানান।
ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১.২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৩৮ মিলিয়ন এবং ১.০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ মূলত তৈরি পোশাক, হিমায়িত মাছ এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য নেদারল্যান্ডসে রপ্তানি করে এবং বাংলাদেশে থেকে আরও বেশি হারে তৈরি পোশাক ও পরিবেশবান্ধব পাট ও পাটজাত প্রভৃতি পণ্য বেশি হারে আমদানির আহ্বান জানান। এছাড়াও বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি, নদী ব্যবস্থাপনা ও নদী শাসন, ডিজিটাল শিল্পখাত এবং সমুদ্র অর্থনীতি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হিসেবে উল্লেখ করে, এখাতগুলোতে বিনিয়াগের জন্য নেদারল্যান্ডসের উদ্যোক্তাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি।
আরও পড়ুন: মেধা বিকাশে ১৫ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে হুয়াওয়ে
বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে উল্লেখ করে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, এ খাতের সুফল ভোগ করতে নেদারল্যান্ডস এর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।
রিজওয়ান রাহমান আরও বলেন, ডিসিসিআই এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর থেকে সপ্তাহব্যাপী ‘বাংলাদেশ ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্মেলন’ আয়োজন করবে এবং এ সম্মেলনের বিটুবি সেশনগুলোতে ডাচ বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত অ্যানে ভেন লিওভেন বলেন, বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বেশ সন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছে, তবে সেটাকে আরও উন্নীত করতে হলে দুই দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যকার যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি করতে হবে এবং বাংলাদেশ সরকার গৃহীত‘ডেল্টা প্ল্যান’-এর কার্যকর বাস্তবায়নে ভবিষ্যতে বৃহৎ বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন: ফিনল্যান্ডকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
এছাড়াও বিশেষ করে বাংলাদেশে নদীপথের টেকসই উন্নয়ন, নদীশাসন, নদীখনন ও সর্বোপরি জলজ অবকাঠামো নির্মাণে ডাচ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এন কে এ মবিন, এফসিএস, এফসিএ এবং সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
কাঙ্খিত উৎপাদনের আশায় ফরিদপুরের‘সোনালী আঁশ’ চাষিরা
পাটের জেলা ফরিদপুর, তাইতো সরকারিভাবে এই জেলার স্লোগান ‘সোনালী আঁশে ভরপুর, ভালবাসি ফরিদপুর’। চলতি মৌসুমে জেলার অধিকাংশ কৃষক-কৃষাণীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে।
ফরিদপুর জেলা জুড়ে এখন চলছে ‘সোনালী আঁশ খ্যাত’ পাট ঘরে তোলা প্রক্রিয়ার কাজ। কেউ ক্ষেত থেকে কাটছে, কেউ আবার আটি বেধে জাগ দেয়ার জন্য ছুটছে নদ-নদী কিংবা জলাশয়ের ধারে। কেউ আবার পানি থেকে তুলে পাটের আঁশ বাছাই করে ধুয়ে রোদে শুকানোর কাজে সময় পার করছে। আর যারা আগেভাগেই এই প্রক্রিয়া শেষ করেছে তারা বাজারের নিয়ে বিক্রয় করার কাজে ব্যস্ত।
আরও পড়ুনঃ পাটের বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে: পাট মন্ত্রী
ফরিদপুর জেলার নয় উপজেলায় চলছে এমন চিত্র। প্রতি বছর পাট চাষের মৌসুমে জেলার আবাদি জমির অধিকাংশতেই পাটের চাষ করে চাষিরা। এই জেলায় পাট চাষের উপযোগী মাটির স্বাস্থ্য, অনুকূল আবহাওয়ায় কারণে গুণগত ও মানসম্পন্ন পাট উৎপাদন হয়। যা সারা পৃথিবী জুড়ে সমাদৃত। চলতি মৌসুমে জেলার দেড় লক্ষাধিক চাষি তাদের জমিতে পাটের চাষ করেছে।
ফরিদপুর পাট গবেষণা অফিস সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরে দুই জাতের (তোসা জিআরও ৫২৪-ভারতীয় এবং মাস্তে ও-৯৮৯৭ দেশী জাত) পাট আবাদ হয়। এর মধ্যে ভারতীয় জাতের পাটের বীজ ৯০ শতাংশ চাষ হয়ে থাকে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত ২০১০-১১ সালে ৭৫ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করে চাষিরা, এর বিপরীতে আট লাখ ৭৩ হাজার ৫৩ বেল পাট উৎপাদন হয়।
আরও পড়ুনঃ দেশের পাটের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে ভারত পাকিস্তানে
চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে ফরিদপুরে পাটের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করেছে ১০ লাখ ৫২ হাজার বেল (১৮০ কেজিতে ১ বেল)। গত দশ মৌসুমে পাটের আবাদ বেড়েছে নয় হাজার ১০৯ হেক্টর জমিতে।
ফরিদপুর পাট গবেষনা ইনস্টিটিউট (পিএসও) ড. রনজিৎ কুমার ঘোষ জানান, ফরিদপুরে আষাঢ়-শ্রাবন মাসে জমি থেকে পাট কর্তন করা হয়। এই মৌসুমে খরা ও বৃষ্টি প্রবণ হওয়ায় এই অঞ্চলে পাটের আবাদ ভালো হয়।
তিনি আরও বলেন, জেলায় দেড় লক্ষাধিক চাষি পাট চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, এছাড়াও প্রতিবছরই নতুন নতুন চাষি যুক্ত হয় পাটের সঙ্গে।
আরও পড়ুনঃ পাটের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে: পাটমন্ত্রী
জেলার সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের পাট চাষি হাবিব মোল্লা ও আকমল খান জানান, যদি পাটের দাম প্রতিমণ ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার থাকে তাহলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে।
বোয়ালমারীর বিভিন্ন মাঠের পাটচাষী দাবি করেন, বিগত বছরগুলোর অধিকাংশ সময়ই পাটের ন্যায্যমূল্য পায়নি, তবে গত দুই বছর যাবত তুলনামূলকভাবে ভালো দর পাচ্ছেন।
একই উপজেলার ঘোষপুরের পাট চাষি মজিবুর রহমান বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় দুই হেক্টর বেশি জমিতে পাটের আবাদ করেছি। ক্ষেতে পাটের ফলনও বেশ হয়েছে। আশা করছি উৎপাদন ভালো হবে।’
জেলার পাট চাষের অন্যতম নগরকান্দার পাট চাষি আবজাল হোসেন বলেন, গত বছরের তুলনায় পাটের আবাদ বেশি করেছি। আশা করছি ভালো দামও পাব। তবে বপনের সময় প্রচণ্ড রোদের কারণে কিছুটা চিন্তায় ছিলাম। এখন ভালো বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষেতের পাট ভালো হয়েছে।’
আরও পড়ুনঃ পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সরকার সচেষ্ট: পাট মন্ত্রী
ফরিদপুর কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হযরত আলী জানান, আবহাওয়াগতভাবে ফরিদপুর অঞ্চল পাট আবাদের জন্যে উপযোগী, এ জেলার মাটির স্বাস্থ্য পাট চাষে শ্রেষ্ঠ, যে কারণে এর আঁশ গুনগত মানসম্পন্ন।
তিনি বলেন, এবারের বপন মৌসুমে প্রচণ্ড খড়া থাকায় চাষিদের দুই থেকে তিন বার সেচ দিতে হয়েছে, এতে চাষিদের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে।
হযরত আলী বলেন, জেলার চাষিরা এই মৌসুমে ১০ লাখ ৫২ হাজার বেল পাট উৎপাদন করবে আশা করছি।