নারায়ণগঞ্জ
সেহরি নিয়ে ছিন্নমূল মানুষের মাঝে রূপগঞ্জ ইউএনও
রমজানের শুরু থেকেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাসমান, অসহায়, ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে সেহরি বিতরণ করা হচ্ছে।
রবিবার ভোর রাতে উপজেলার গোলাকান্দাইল,ন ভূলতা, বরপা, তারাবো, রূপসী, মুড়াপাড়া এলাকায় সেহরি বিতরণ করেন রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ্ নুসরাত ।
উপজেলা প্রশাসনের এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সেহরি নিয়ে এই সব মানুষের কাছে উপস্থিত হচ্ছেন তিনি।
শাহ নুসরাত জাহান বলেন, যারা সমাজে অসহায় ছিন্নমূল তাদের জন্য আমাদের এই ছোট আয়োজন। সামান্য আহারের জন্য অনেকেই রমজানের রোজা রাখতে পারে না তাই আমরা তাদের জন্য এই সামান্য ব্যবস্থা করেছি। আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
এ সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফিফা খানসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
নারায়ণগঞ্জে গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে শিশুসহ দগ্ধ ১১
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি বাড়িতে গ্যাসের চুলার পাইপ লাইন বিস্ফোরণে নারী-শিশুসহ ১১ জন দগ্ধ হয়েছেন।
শুক্রবার ভোরে সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার তল্লা এলাকায় মডেল গার্মেন্টসের দক্ষিণ পাশে স্থানীয় মফিজুল ইসলামের তিন তলা বাড়ির তৃতীয় তলায় ভাড়াটের ফ্ল্যাট বাসায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বগুড়ায় দম্পতিসহ দগ্ধ ৪
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোসহ দগ্ধদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
আরও পড়ুন: বিশ্বনাথে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
দগ্ধদের মধ্যে পাঁচ জনকে ঢাকা মেডিকেলের শেখ হাসিনা বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। অপর ছয় জনকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
আহতরা হলেন হাবিবুর রহমান (৫০), লিমন (২০), সাথী (২০), মীম (২০), মাহিরা (৩ মাস), আলেয়া (৫০), সোনাহার (৪০), শান্তি (৩২), সামিউল (২০), মনোয়ারা (২২) ও আরেকজনের নাম পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: অগ্নিদগ্ধ হয়ে কুষ্টিয়ায় প্রতিবন্ধী বৃদ্ধার মৃত্যু
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের কয়েকটি পরিবার বসবাস করেন। রাতে একটি পরিবারের লোকজন চুলার বার্ণার বন্ধ না করেই ঘুমিয়ে পড়েন। এতে চুলা থেকে গ্যাস বের হয়ে রান্নাঘরসহ অন্যান্য ঘরে ছড়িয়ে জমাট বেঁধে থাকে। ভোরে রান্নার জন্য চুলায় আগুন জ্বালালে গ্যাসের পাইপ লাইনের বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় তিন মাস বয়সের একটি শিশুসহ ছয় জন নারী ও চার জন পুরুষ আগুনে দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে শিশুটিসহ পাঁচ জনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয় এবং ছয় জনকে সদরের জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।
রূপগঞ্জে হেফাজত নেতা লোকমান হোসেন আমিনী আটক
ফেসবুকে উস্কানিমূলক পোস্ট ও হেফাজতের ডাকা হরতালে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় সহিংস ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে হেফাজত ইসলামের অন্যতম নেতা মুফতী লোকমান হোসেন আমিনীকে (৪৫) আটক করেছে পুলিশ।
তিনি স্থানীয় মর্তুজাবাদ জামে মসজিদের খতিব।
আরও পড়ুন: হেফাজতের মহাসচিব কাসেমী মারা গেছেন
রবিবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মর্তুজাবাদ এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ এম জসীম উদ্দিন জানান, হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের পক্ষাবলম্বন করে লোকমান হোসেন আমিনী রাষ্ট্রবিরোধী এবং ফেসবুকে উস্কানিমূলক স্ট্যাটাস দিয়ে আসছিলেন।
আরও পড়ুন: বগুড়ায় হেফাজতে ইসলামের মিছিল ও সমাবেশ
তাকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: হেফাজতের নতুন আমির বাবুনগরী, কাসেমী মহাসচিব
আরও পড়ুন: কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি হেফাজতের
শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: বন্দর থানায় মামলা
নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার মদনগঞ্জ কয়লাঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে বেপরোয়া গতিতে পণ্যবাহী জাহাজ চালিয়ে সাবিত আল হাসান নামে মুন্সিগঞ্জগামী একটি লঞ্চ ডুবিয়ে ৩৪ জন যাত্রীকে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিøউটিএ)।
মঙ্গলবার রাতে জেলার বন্দর থানায় মামলাটি দায়ের করেন বিআইডবিøউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের উপপরিচালক (নৌ নিট্রা) বাবু লাল বৈদ্য। মামলায় হত্যার উদ্দেশে বেপরোয়া গতিতে পণ্যবাহী জাহাজ চালিয়ে লঞ্চটি ডুবিয়ে ৩৫ জনের প্রাণহানি ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে মামলায় আসামি হিসেবে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি।
আরও পড়ুন: শীতলক্ষ্যায় ‘ত্রুটিপূর্ণ’ সেতুর কারণে আরও লঞ্চ দুর্ঘটনার আশঙ্কা নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী’র
মামলার বাদী বাবু লাল বৈদ্য জানান, পেনাল কোড ২৮০, ৩০৪, ৩৩৭, ৩৩৮, ৪২৭, ৪৩৭ ধারাসহ ইনল্যান্ড শিপিং অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬ এর ৭০ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। হত্যার উদ্দেশে এবং বেপরোয়া গতিতে নৌযান চালিয়ে ৩৫ জনকে হত্যা সংঘটিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় আসামি হিসেবে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা জানান, বিআইডবিøউটিএ’র কর্মকর্তা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলাটি দায়ের করেছেন। এতে হত্যার উদ্দেশে বেপরোয়া গতিতে জাহাজ চালিয়ে হত্যা সংঘটিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই দোষীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪
উল্লেখ্য, শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সৈয়দপুর-মদনগঞ্জের নির্মাণাধীন শীতলক্ষ্যা সেতুর নিচে কয়লাঘাট এলাকায় এসকেএল-৩ নামের একটি লাইটার জাহাজের ধাক্কায় সাবিত আল হাসান নামের নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জগামী লঞ্চটি অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়। গত মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ৩৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ঘটনার ২ দিন পেরিয়ে গেলেও আটক হয়নি ঘাতক এসকেএল-৩ নামের জাহাজটি।
সোনারগাঁয়ে মামুনুল হকসহ ৬০০ জনের বিরুদ্ধে ৩ মামলা
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পুলিশের ওপর হামলা ও রয়েল রিসোর্টে ভাঙচুরের অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ৮৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। একই সাথে মামলায় ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
বুধবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে তিনটি মামলা হয়। পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। আর সাংবাদিক বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে।
সোনারগাঁয়ের ওই রিসোর্ট থেকে তাকে ছাড়িয়ে গত ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি মসজিদে নিয়ে যান হেফাজতের নেতা-কর্মীরা।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে ‘হেফাজতের’ হামলায় আহত আ’লীগ নেতার মৃত্যু
এর আগে বিকালে রয়েল রিসোর্টে মামুনুল হককে স্থানীয় কয়েকজন অবরুদ্ধ করে রাখেন। সেদিন এ ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, মামুনুল এক নারীসহ আটক হয়েছেন। যদিও ওই নারীকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করেছেন তিনি।
এ সময় পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনও সেখানে উপস্থিত হন। এ ঘটনা ফেসবুকে লাইভ করেন কয়েকজন ব্যক্তি। ওই লাইভ দেখে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যার পর স্থানীয় লোকজন ও মাদরাসার শত শত ছাত্র ওই রিসোর্টে গিয়ে মামুনুল হককে নিয়ে আসেন। বের হয়ে এসে মামুনুল হক নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, ‘কিছু বাইরের লোক খারাপ আচরণ করেছে। আমি আমার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছিলাম। আপনারা শান্ত থাকুন।’
সূত্র মতে, ঘটনার দিন দুপুরের পর মামুনুল হক তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নাম্বার রুমে উঠেন। খবর পেয়ে সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি সোহাগ রনির নেতৃত্বে একটি গ্রুপ রিসোর্টে যায় এবং সরাসরি ৫০১ নাম্বার রুমে ঢুকে। ভিডিওতে দেখা যায় মামুনুল হককে তারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং অশ্লীলভাষায় গালমন্দ করে তার সাথে থাকা নারীর পরিচয় জানতে চায়।
এ সময় মামুনুল হক তাদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে রিসোর্টে আসেন। স্ত্রীর নাম আমেনা তৈয়ব। শরিয়ত অনুযায়ী তিনি দুই বছর আগে আমেনাকে বিয়ে করেন। এ বিষয়ে তার কাছে প্রমাণও রয়েছে। কিন্তু পরিচয় দেয়ার পরও তারা মামুনুল হককে অবরুন্ধ করে রাখে। এই খবর ছড়িয়ে পড়ছে শত শত হেফাজতের লোকজন রয়েল রিসোর্টে ছুটে আসে এবং ঘেরাও করে। এক পর্যায়ে প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে মামুনুল হক ও তার সাথে থাকা নারীকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। হেফাজতের লোকজন ভ্যাপক ভাঙচুর চালায় রিসোর্টের ভেতর।
রয়েল রিসোর্টে হেফাজতের কর্মীদের ভাঙচুরের সময় ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) টিএম মোশাররফ হোসেন, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম মোস্তফা মুন্নাসহ সরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মামুনুল হককে ছিনিয়ে নেয়ার সময় হেফাজতের উত্তেজিত কর্মী-সমর্থকরা লাঠিসোটা হাতে রিসোর্টে ভাঙচুরের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এবং মুগড়াপাড়ায় যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম নান্নু ও ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ রনির বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময় হেফাজত কর্মীরা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে সড়কে অবস্থান নেন এবং বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
আরও পড়ুন: সন্ত্রাসবাদে উস্কানিদাতাদের তালিকা তৈরি করুন: কাদের
‘উস্কানিমূলক বক্তব্য’ দেয়ার অভিযোগে নেত্রকোণায় ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল আটক
এর আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেছিলেন, হেফাজত নেতা মামুনুল হককে আটক কিংবা গ্রেপ্তার কোনোটিই করা হয়নি। স্থানীয়রা তাকে ঘিরে ফেলায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করে আনতে সক্ষম হয়। তবে পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দিয়ে রেখেছে।
এদিকে এ ঘটনায় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোশারফ হোসেন ও সোনার গাঁ থানার ওসি রফিকুল ইসলামকে বদলি করা হয়।
শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে সোমবার রাতে এবং মঙ্গলবার সকালে আরও ৫টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা ৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে।
সদর থানার ওসি শাহজামান জানান, নদীর বিভিন্ন অংশ থেকে পুলিশ লাশগুলো উদ্ধার করেছে।
পাঁচজন হলেন-মুন্সিগঞ্জ জেলার কাজী ইউসুফ (৪০), রাজধানীর মিরপুর এলাকার রাজীউদ্দিন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র তানভীর হোসেন (১৭), রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে মো. সোহাগ (২৫), মালপাড়া মুন্সিগঞ্জের রিজভী আহমেদ (২১) এবং মুন্সিগঞ্জ জেলার হারাধনের ছেলে আকাশ সাহা (১১)।
এর আগে সোমবার স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস এবং কোস্ট গার্ডের ডুবুরিরা উদ্ধারকারী জাহাজ 'প্রত্যয়'-এর সাহায্যে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয় এবং সেখান থেকে দুপুরে আরও ২১টি লাশ উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন: শীতলক্ষ্যায় নৌকা থেকে লাফিয়ে পড়ে পোশাক কর্মী নিখোঁজ
রবিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ নারায়ণগঞ্জে প্রায় ৫০ জন যাত্রী নিয়ে মুন্সিগঞ্জগামী লঞ্চ এমএল রাবিত আল হাসানকে একটি তেলবাহী ট্যাংকার ধাক্কা দেয়। সংঘর্ষের পরপরই লঞ্চটি ডুবে যায়। প্রায় ২০ জনের মতো যাত্রী সাঁতরে পারে আসতে সক্ষম হয়।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে পশুর নদীতে ট্যুরিস্ট লঞ্চডুবি
পুলিশ জানায়, লঞ্চটিকে আঘাত করার পরেও থামেনি বলে তেলবাহী ট্যাঙ্কারটি জব্দ করা যায়নি।
স্থানীয় প্রশাসন ৭ সদস্যের এবং বিআইডাব্লইউটিএ ৪ সদস্যের আলাদা দুটি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণ: নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৯
হেফাজতের হরতাল: নারায়ণগঞ্জে পুলিশ-র্যাবের ৬ মামলা
রবিবারেহেফাজতে ইসলামের র সকাল-সন্ধ্যা হরতালে নারায়ণগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নাশকতার ঘটনায় পৃথক ছয়টি মামলা হয়েছে।
সোমবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় পুলিশ পাঁচটি এবং র্যাব বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে।
প্রত্যেক মামলায় ২৫ থেকে ৩০ জন এজাহারনামীয় আসামি এবং অজ্ঞাত আরও ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সবগুলো মামলায় নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতসহ আসামি করা হয়েছে প্রায় তিন হাজারের মতো ব্যক্তিকে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জানান, র্যাব ও পুলিশের এই পাঁচটি মামলা হয়েছে নাশকতার অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে। অপর একটি মামলা হয়েছে সরকারি কাজে বাধা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা ও আহত করার অভিযোগে।
তবে এই ছয় মামলায় এখন পর্যন্ত কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করা না হলেও নাশকতা সৃষ্টিকারীদের শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে ওসি জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, রবিবার হেফাজতের ডাকা হরতালের সমর্থনে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত এলাকা ছিল দিনভর হরতাল সমর্থকদের দখলে। প্রায় ১৮টি যানবাহন আগুনে পুঁড়িয়ে দেয়াসহ বিজিবি ও পুলিশের সাথে হরতাল সমর্থনকারীদের দফায় দফায় ত্রিমুখী সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ-সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
হেফাজতের নেতা-কর্মী ও পিকেটারদের তাণ্ডবে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। হরতালের পুরো সময়জুড়ে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও ছিল পিকেটাররা। অন্তত দশজন সাংবাদিককে মারধরসহ দুটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের গাড়ি ভাঙচুর করে তারা।
নারায়ণগঞ্জে হেফাজত-পুলিশ সংঘর্ষ: গুলিবিদ্ধসহ আহত ২০
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক ও সাইনবোর্ড এলাকায় দফায় দফায় হেফাজত-পুলিশ সংঘর্ষে শাকিল (৩০) নামে একজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
রবিবার হেফাজতে ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৩০টি স্থানে টায়ার পুড়িয়ে, গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ করে হরতাল সমর্থকরা। চলতে দেয়নি কোন যানবাহন। যানবাহনহীন ফাঁকা সড়কে লাঠি হাতে নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয় হরতাল সমর্থকরা। এতে মহাসড়কে সকল প্রকার যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। চরম ভোগান্তিতে পড়ে হাজার হাজার যাত্রী সাধরণ।
সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কয়েক দফায় পুলিশ-হেফাজত সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সকাল সাড়ে ১০টা ও ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় হেফাজত ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে বিজিবির সদস্যরা। এ সময় হরতাল সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা ৪টি গাড়িতে আগুন দেয়।
পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাস ও শটগানের গুলি ছুঁড়ে। এতে পুলিশ, সাংবাদিক ও হরতাল সমর্থকদের অন্তত ২০ জন আহত হয়। সেখানে রয়েছেন র্যাব-পুলিশ-বিজিবিসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরিস্থিতি থমথমে অবস্থায় রয়েছে।
তবে দুপুর একটার দিকে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
আরও পড়ুন: হাটহাজারীর পরিস্থিতি থমথমে, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ-হেফাজত সংঘর্ষে শাকিল (৩০) নামে একজন ফার্নিচার মিস্ত্রি গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে দ্রুত স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।
এর আগে সকালে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। তারা সড়কের কয়েকটি স্থানে টায়ার, গাছের গুড়ি ফেলে ও বাঁশে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যান চলাচল। পরে পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয় ও আগুন নিভিয়ে দেয়। পরে যানবাহন চলাচল শুরু করে।
জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। যানবাহন চালু করার চেষ্টা চলছে। সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা তিনি শুনেছেন।’
হরতালকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ শহরে হেফাজতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ডিআইটির রেলওয়ে জামে মসজিদে ভোর থেকে অবস্থান নেয় কয়েকশ’ হেফাজত কর্মী-সমর্থকরা। মসজিদের বাইরেই প্রহরায় ছিল র্যাব-পুলিশ-বিজিবি সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তারা মসজিদ থেকে বেরোতে পারেনি।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা হেফাজতের সভাপতি মাওলানা আব্দুল আউয়ালের নির্দেশে তারা কোনো মিছিল বা স্লোগান না দিয়ে মসজিদ ত্যাগ করেন। তবে রেলওয়ে মসজিদ এলাকাসহ শহরের চাষাঢ়া, সাইনবোর্ড, শিমরাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মোতায়েন রয়েছে বিজিবি ও র্যাব।
হরতালের সার্বিক পরিস্থির বিষয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সকাল থেকে জেলার কিছু কিছু স্থানে অবরোধ-বিক্ষেভ প্রদর্শন করেছে হরতাল সমর্থকরা। তবে তা নিয়ন্ত্রণে এনেছে পুলিশ। সারা জেলায় ৫৮৫ জন পোশাকে এবং আরও ২০০ সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া র্যাব ও বিজিবির সদস্যরাও হরতালের ডিউটিতে রয়েছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে হরতাল সমর্থনকারীরা অবরোধ করে চলছে। বর্তমানে এই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ, হরতাল সমর্থনকারীরা রাস্তায় টায়ারসহ বিভিন্ন গাছের ডালপালা দিয়ে আগুন জালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখছে। আমরা চেষ্টা করছি যথাসাধ্য যাতে মানুষ ভোগান্তিতে না পরে। এখন পর্যন্ত কেউ নিহত হয়নি। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
আরও পড়ুন: মোদিবিরোধী বিক্ষোভ: বায়তুল মোকাররম এলাকায় পুলিশের সাথে মুসল্লিদের সংঘর্ষ
নারায়ণগঞ্জে গ্যাস লিকেজ থেকে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ ৫
নারায়ণগঞ্জে বন্দরে গ্যাসের সাহায্যে পানির পাইপ লাইন পরিষ্কার ও মেরামত করার সময় দুই মিস্ত্রীসহ গ্যাসের আগুনে পাঁচজন দগ্ধ হয়েছেন।
শনিবার সকাল ১০টায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৪ নং ওয়ার্ডের বন্দরের পূর্ব নোয়াদ্দা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এদের মধ্যে চারজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
অগ্নিদগ্ধরা হলেন মহসিন (৪০), মনির হোসেন (৫৫), সোলাইমান (৫০), নাজিমউদ্দিন (৫৫) ও মাহফুজ (১৪)।
আরও পড়ুন: মাতারবাড়ীতে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শিশুসহ নিহত ৩
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা জানান, বন্দরের পূর্ব নোয়াদ্দা এলাকার আবদুল আজিজের ছেলে সোলাইমানের বাড়ির পানি সরবরাহের পাইপ লাইনে আয়রন জমে সরু হয়ে যায়। সরু পাইপ দিয়ে পানি না আসায় সরবরাহ বাড়ানোর জন্য শনিবার মহসিন ও মনির নামে দুই মিস্ত্রীকে নিয়ে আসেন সোলাইমান। মিস্ত্রীরা পাইপের জ্যাম সারাতে হাওয়ার মেশিন ব্যবহার না করে গ্যাসের প্রেসার ব্যবহারের চেষ্টা করেন। তারা অন্য একটি পাইপের মাধ্যমে রাইজার থেকে গ্যাস সংযোগ নিয়ে পানির পাইপে চাপ প্রয়োগ করে জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করতে থাকেন।
ওসি জানান, এ সময় পাইপের লিকেজ দিয়ে নির্গত গ্যাস ঘরে জমতে থাকে। এরপর পাশের গ্যাসের চুলার আগুন ঘরে জমে থাকা গ্যাসের সংস্পর্শে আসতেই আগুনের লেলিহান শিখা ঘরের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় দুই মিস্ত্রীসহ পাঁচজন দগ্ধ হন।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে শিশুসহ দগ্ধ ৫
এলাকাবাসী দগ্ধদের উদ্ধার করে প্রথমে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে চারজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয় বলে দীপক চন্দ্র সাহা জানিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জে গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটনায় আরও একজনের মৃত্যু
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম মাসদাইর এলাকায় ছয়তলার ফ্ল্যাটে সিলিন্ডারের গ্যাস জমে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল চারজনে।