বিধিনিষেধ
গোপালগঞ্জের চার এলাকায় সাত দিনের বিধিনিষেধ
করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে গোপালগঞ্জের দুটি পৌরসভা ও দুটি ইউনিয়নে বিধিনিষেধ জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার বেলা ৫ টায় গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা এ বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন। গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত এলাকাগুলো হলো, জেলার গোপালগঞ্জ পৌরসভা ও সদর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়ন, মুকসুদপুর পৌরসভা ও কাশিয়ানী উপজেলার কাশিয়ানী ইউনিয়ন।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় তৃতীয় দফায় লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ল
জেলা প্রশাসনের ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৮ জুন ভোর ৬ টা থেকে ২৪ জুন রাত ১২ পর্যন্ত গোপালগঞ্জ জেলার দুটি পৌর এলাকায় ও সদর উপজেলার লতিফপুর এবং কাশিয়ানী উপজেলার কাশিয়ানী ইউনিয়নে এ বিধিনিষেধ বহাল থাকবে। এসব এলাকার মধ্যে সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, দোকান, শপিং মল সকাল ৭ টা থেকে বেলা ৩ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রেস্তোরাঁ রাত ১০ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে রেস্তোরাঁয় বসে খেতে পারবে না ক্রেতারা। কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান সকাল ৭টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখা যাবে। তবে ফুটপাতে কোন ধরনের দোকান বসাতে পারবে না।
জেলা প্রশাসনের ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বিধিনিষেধ চলাকালে ওইসব এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এ ছাড়া এ সময় সব ধরনের পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
আরও পড়ুন: রাজশাহী সিটিতে আরেক দফা বাড়লো বিশেষ লকডাউন
গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, ২ জুন থেকে ১০ জুন জেলায় ৫১৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয় এর মধ্যে ৯৫ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ছিল ১৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। কিন্তুএই সপ্তাহে এই পর্যন্ত ৪৮৬ নমুনা সংগ্রহ করা হয় এর মধ্যে ১৮০ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৩৭ দশমিক ০৩ শতাংশ। শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসনের কাছে ঝুকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বিধিনিষেধ আরোপ করার জন্য অনুরোধ করলে জেলা প্রশাসন ১৮ জুন থেকে এসব এলাকায় বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
সিভিল সার্জন জানান, করোনা ভাইরাস শনাক্তের দিক দিয়ে মুকসুদপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি। সেখানে শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এরপর গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ২৭ শতাংশ এবং কাশিয়ানী উপজেলায় ২৬ শতাংশ ।
লকডাউন বাড়ছে: প্রতিমন্ত্রী
সরকার আগামী ৫ মে পর্যন্ত আরও এক সপ্তাহ লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আবারও কঠোর লকডাউন আসতে পারে: কাদের
এই বিষয়ে মঙ্গলবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
এর আগে গত ১৪ এপ্রিল লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ওই লকডাউনের মেয়াদ শেষ হয় ২১ এপ্রিল। পরে ২২ এপ্রিল থেকে ফের সপ্তহব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
এদিকে চলমান লকডাউনের মধ্যেই গত ২৩ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ এক প্রজ্ঞাপনে শপিংমল ও দোকান খোলার সিদ্ধান্তের কথা জানায়। যা রবিবার থেকে কার্যকর হয়েছে।
লকডাউন ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি, প্রজ্ঞাপন জারি
করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯)-এর বিস্তার রোধে সার্বিক কার্যাবলি ও চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপের সময়সীমা আগামী ২২-২৮ এপ্রিল পর্যন্ত আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে।
মঙ্গলবার মন্ত্রীপরিষদের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
আরও পড়ুন: ঈদে শিথিল হতে পারে লকডাউন: কাদের
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আন্তর্জাতিক বিশেষ ফ্লাইট চলাচল, ব্যাংকিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ পূর্বের সকল বিধি-নিষেধ বহাল থাকবে।
এর আগে, সোমবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ইউএনবিকে লকডাউন বর্ধিতকরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আগের সপ্তাহে লকডাউনে যে নির্দশনা ছিল এবারও তাই থাকছে। আগের মতই কঠোর লকডাউন হবে।’
উল্লেখ্য, চলমান লকডাউন ২১ এপ্রিল শেষ হবে।
আরও পড়ুন: লকডাউনে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তার দাবি অটোরিকশা, হালকা যানবাহনের কর্মীদের
দেশে করোনা পরিস্থিতি
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে সোমবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১১২ জন। যা এ পর্যন্ত দেশে একদিনে মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে টানা চারদিন শতাধিক মৃত্যু দেখলো দেশ।
এনিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৪৯৭ জনে।
সোমবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুনভাবে ৪ হাজার ২৭১ জন নতুন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৭ লাখ ২৩ হাজার ২২১ জনে।
আরও পড়ুন: করোনায় দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর নতুন রেকর্ড
নতুন সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৩৬৪ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ২১ হাজার ৩০০ জন।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৪ হাজার ১৫২টি। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১৭.৬৮ এবং এ পর্যন্ত ১৩.৯২ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১.৪৫ শতাংশ। সুস্থতার হার ৮৫.৯১ শতাংশ।
জনসমাগমে বিধিনিষেধসহ কোভিডের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ১৮-দফা নির্দেশনা
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) বাংলাদেশে করোনা রোধের লক্ষ্যে আগামী দুই সপ্তাহের জন্য ১৮ দফা নির্দেশ জারি করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত আগামী দুই সপ্তাহ এসব নির্দেশনা কার্যকর থাকবে।
নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও এজেন্সিগুলিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মানুষের বেপরোয়া চলাফেরার কারণে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
এই নির্দেশননাবলী জনসমাগমের উপর নিষেধাজ্ঞা, মাস্ক ব্যবহার, ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন, কোভিড -১৯ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা সম্পর্কিত।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে করোনার ‘নতুন ধরনের’ ১০ রোগী শনাক্ত, জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
নির্দেশনাগুলো হলো:
১) সকল ধরনের জনসমাবেশ (সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং অন্যান্য) সীমিত রাখতে হবে। অত্যন্ত সংক্রমণের হারযুক্ত অঞ্চলে সকল ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ। বিবাহ ও জন্মদিনসহ যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনসমাবেশকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
২)এটি নিশ্চিত করতে হবে যে মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে বজায় রাখা।
৩) পর্যটন/ বিনোদন কেন্দ্র সিনেমা হল/ থিয়েটার হলে জনসমাগম সীমিত করতে হবে এবং সব ধরনের মেলা আয়োজন নিরুৎসাহিত করতে হবে।
৪) গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং কোনো গাড়িতে ধারণ ক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।
৫) কোভিড -১৯ সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতে আন্তজেলা যান চলাচল সীমিত করতে হবে; প্রয়োজনে বন্ধ রাখতে হবে।
৬) বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক (হোটেলে নিজ খরচে) কোয়ারেন্টাইন থাকতে হবে।
৭) নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনপূর্বক ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে; ওষুধের দোকানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
৮)স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় মাস্ক পরিধানসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পালন নিশ্চিত করতে হবে।
৯)শপিং মলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
১০) সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাদরাসা, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।
১১) অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা, লোক সমাগম বন্ধ করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ১০টার পর বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
১২) প্রয়োজনে বাইরে গেলে মাস্ক পরিধানসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি পালন নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক পরিধান না করলে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৩) করোনায় আক্রান্ত/ করোনার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যান্যদেরও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে।
১৪) জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস/প্রতিষ্ঠান শিল্প কারখানাগুলো ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করতে হবে। গর্ভবতী/ অসুস্থ/ বয়স ৫৫-ঊর্ধ্ব কর্মকর্তা/ কর্মচারীর বাড়িতে অবস্থান করে কাজ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৫) সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৬) সশরীরে উপস্থিত হতে হয় এমন যেকোনো ধরনের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পালন নিশ্চিত করতে হবে।
১৭) হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে ধারণ ক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি মানুষের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
১৮) কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন সর্বদা বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পালন নিশ্চিত করতে হবে।
করোনার বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে রাস্তায় ঢাকার বাসিন্দারা
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকলেও বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে নগরবাসীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
কিছু ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিল করা সঠিক হয়েছে: কাদের
মানুষের জীবনের পাশাপাশি জীবিকার চাকা সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ ছুটিকালীন বিধিনিষেধ কিছু ক্ষেত্রে শিথিল করে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।