ঘূর্ণিঝড়
ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়: গুজরাটে ২ জন নিহত
পশ্চিম ভারতের গুজরাট উপকূলে বৃহস্পতিবার আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের তাণ্ডবে দুজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার প্রবল বাতাস ও বৃষ্টি নিয়ে পাকিস্তানে আঘাত হানে ঝড়টি।
ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতাস্বরূপ দুই দেশের উপকূলবর্তী ১ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পশ্চিম গুজরাটের উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৮৫ কিলোমিটার (৫৩ মাইল প্রতি ঘণ্টা) এবং এসময় ১০৫ কিলোমিটার (৬৫ মাইল) পর্যন্ত ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়।
পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা উপকূলবর্তী ৮২ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে এবং সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রাখা হয়েছে।
পশ্চিম ভারতে ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুজনের মৃত্যু ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দ্বারকা জেলায় তিনজন আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখায় ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারে বাংলাদেশের পাঠানো ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পশ্চিম ভারতে প্রায় ১ লাখ মানুষকে সাময়িকভাবে ত্রাণ শিবিরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ঝড়ে এ অঞ্চলের গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওয়াসহ স্থলভাগের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উপকূলীয় শহর মান্ডভির কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারী বাতাসে ভারতের অন্যতম বৃহত্তম বন্দর মুন্দ্রা বন্দরের কিছু শিপিং কন্টেইনার সমুদ্রে ভেসে গেছে।
শুক্রবারের পরে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে দক্ষিণ পাকিস্তানে আঘাত হানার পর প্রতিবেশি ভারতীয় রাজ্য রাজস্থানের দিকে অগ্রসর হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পাকিস্তান এখনও গত বছরের মারাত্মক বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
দেশটির অনেক মানুষ দাতব্য সংস্থা, সাহায্য সংস্থা এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দান করা খাবার গ্রহণের জন্য লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছে।
পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি বন্যা কবলিত সিন্ধু প্রদেশের বন্দর কেটি বন্দরের ১২৫ কিলোমিটার (৭৫ মাইল) দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে।
তারা জানিয়েছে, ‘ঝড়টি প্রথমে একটি ঘূর্ণিঝড়ে এবং তারপরে শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে একটি নিম্নচাপে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখা: কক্সবাজারে ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় আরব সাগরে ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে দীর্ঘতম আয়ুষ্কালের রেকর্ড তৈরি করেছে। ২০১৯ সালে ‘ঘূর্ণিঝড় কিয়ার’ ৯ দিনের জীবন নিয়ে এই রেকর্ড ধরে রেখেছিল।
গুজরাট সরকার বলেছে, তারা প্রায় ৭০০টি এশিয়াটিক সিংহের আবাসস্থল গির ন্যাশনাল পার্কে বন্যপ্রাণী উদ্ধার এবং ভেড়ে পড়া গাছগুলো সরানোর জন্য ১৮৪টি ইমার্জেন্সি অ্যাকশন স্কোয়াড মোতায়েন করেছে।
শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের জন্য পাকিস্তানের দক্ষিণ উপকূলীয় শহরগুলোতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি দক্ষিণ পাকিস্তানে আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হয়েছিল।
পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ গত গ্রীষ্মে দেশটির সবচেয়ে মারাত্মক বন্যা হয়েছিল, যাতে কমপক্ষে ১ হাজার ৭৩৯ জন নিহত এবং ৩৩ মিলিয়ন বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বৃহস্পতিবার বলেছে যে তারা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবিলায় পাকিস্তানের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে। পাকিস্তানের সরকার এবং স্থানীয় সাহায্য গোষ্ঠীগুলো বাস্তুচ্যুত লোকদের বিনামূল্যে খাবার এবং পানীয় জল সরবরাহ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেছেন, তার সরকার ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের রক্ষায় কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার ইউনিসেফ সতর্ক করেছে যে পাকিস্তান ও ভারতে ৬ লাখ ২৫ হাজারেরও বেশি শিশু ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে।
ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক নোয়ালা স্কিনার বলেছেন, ‘পাকিস্তানে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় সিন্ধুর শিশু এবং পরিবারগুলোর জন্য একটি নতুন সংকট সৃষ্টি করেছে। এমনিতেই এই প্রদেশটি গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।’
২০২১ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের ফ্রিকোয়েন্সি, সময়কাল ও তীব্রতা ১৯৮২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতি আরও জরুরি।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখা: রাঙ্গামাটিতে জরুরি সতর্কতা জারি, কাপ্তাই হ্রদে নৌ চলাচল বন্ধ
তীব্র ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’: মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান
আশঙ্কা করা হচ্ছে এই সপ্তাহের শেষের দিকে ভারত ও পাকিস্তানের উপকূলে আঘাত হানবে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়। এটি এ অঞ্চলের জন্য এই বছরের প্রথম তীব্র ঘূর্ণিঝড়। তাই কর্তৃপক্ষ সব ধরনের মাছ ধরার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে এবং উদ্ধারকর্মী মোতায়েন করেছে।
আরব সাগরে উদ্ভূত ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ এবং ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের উপকূলরেখা বরাবর ধেয়ে আসছে।
আগামী বৃহস্পতিবার এটি স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে এবং পাকিস্তানের আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যানুসারে বাতাসের গতিবেগ সর্বোচ্চ ২০০ কিলোমিটার (১২৪ মাইল) পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।
ঝড়ের গতিপথে থাকা ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল এবং শহরগুলোতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টি সম্ভবত পাকিস্তানের করাচির পাশাপাশি গুজরাট রাজ্যের ভারতের দুটি বৃহত্তম বন্দর মুন্দ্রা ও কাণ্ডলাকে প্রভাবিত করবে।
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ভারতের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও উপকূলরক্ষীরাও প্রস্তুতিতে সহায়তা করছে।
প্যাটেল বলেন, প্রয়োজনে নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুর্যোগের প্রস্তুতি পর্যালোচনা করতে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখায় ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারে বাংলাদেশের পাঠানো ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর
পাকিস্তানে জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত সমন্বয় মন্ত্রী শেরি রেহমান বলেছেন, সিন্ধু ও বেলুচিস্তান প্রদেশের সমস্ত সংশ্লিষ্ট বিভাগকে উচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে।
এছাড়া পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দর কর্মকর্তাদের অবিলম্বে বিমান ও পণ্যসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে বলেছে।
গত বছর ভয়াবহ বন্যায় ১ হাজার ৭৩৯ জন মারা যাওয়ার এবং ৩০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হওয়ার পর থেকে বিপর্যয়ই প্রথম মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় যা পাকিস্তানে আঘাত হানার শঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আরব সাগর অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়টি আরও জরুরি হয়ে পড়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের আর্থ সিস্টেম সায়েন্টিস্ট রঘু মুর্তুগুড্ডে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্র ইতোমধ্যেই উষ্ণ হয়ে উঠেছে।’
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে আরব সাগরের তাপমাত্রা প্রায় ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২ দশমিক ২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেড়েছে। এই বছরের মার্চ থেকেই তীব্র ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের ফ্রিকোয়েন্সি, সময়কাল ও তীব্রতা ১৯৮২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাতিসংঘের জলবায়ু প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে উষ্ণ জলবায়ুতে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়বে।
২০১৯ সালে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেলের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে ১৯৫০ সাল থেকে ভারত মহাসাগরে সমুদ্র পৃষ্ঠের উষ্ণতা সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তন কাউন্সিলের সদস্য এবং ইসলামাবাদভিত্তিক সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট পলিসি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আবিদ কাইয়ুম সুলেরি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেবল বাড়বে এবং এড়ানো যাবে না। বিশেষ করে করাচি, মুম্বাই, ঢাকা ও কলম্বোর মতো দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ উপকূলীয় শহরগুলোর জন্য আরও ভাল প্রস্তুতি এবং উন্নত নীতিমালা এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে; যা জীবন ও মৃতের সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে।’
২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় তাকতাই ছিল সর্বশেষ মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়, যা একই অঞ্চলের স্থলভাগে আছড়ে পড়েছিল। সেই ঘূর্ণিঝড়ে ১৭৪ জনের প্রাণহানি ঘটে এবং ১ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখা: রাঙ্গামাটিতে জরুরি সতর্কতা জারি, কাপ্তাই হ্রদে নৌ চলাচল বন্ধ
ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে উপকূলের ৬ জেলায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
মিয়ানমার উপকূলে ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে ৩ জন নিহত
মিয়ানমার উপকূলে আছড়ে পড়া শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বাড়ির ছাদ ধসে পড়ে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। এসময় কয়েক হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মঠ, প্যাগোডা ও স্কুলে আশ্রয় নিচ্ছে।
মিয়ানমারের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্রটি রবিবার বিকালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সিত্তওয়ে শহরের কাছে ২০৯ কেপিএম (১৩০ মাইল প্রতিঘণ্টায়) গতিতে আছড়ে পড়েছে।
মিয়ানমারের সামরিক তথ্য অফিস জানিয়েছে, ঝড়ের কারণে সিত্তওয়ে, কিয়াউকপিউ ও গওয়া শহরে ঘরবাড়ি, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, সেলফোন টাওয়ার, নৌকা ও ল্যাম্পপোস্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তারা জানায়, ঘূর্ণিঝড়টিতে দেশের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন থেকে প্রায় ৪২৫ কিলোমিটার (২৬৪ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমের কোকো দ্বীপপুঞ্জের ক্রীড়া ভবনগুলোর ছাদও ধসে পড়েছে।
সিত্তওয়ে আশ্রয়কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবী টিন নিন ওও বলেছেন, সিত্তওয়ের তিন লাখ বাসিন্দার মধ্যে চার হাজারেরও বেশি মানুষকে অন্য শহরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ শহরের উচ্চভূমিতে অবস্থিত মঠ, প্যাগোডা ও স্কুলের মতো মজবুত ভবনগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, স্থানীয় অনেক মানুষ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন মিটারেরও বেশি উঁচু এলাকায় বাস করে, সেখানকার বাসিন্দারা মনে করছেন তাদের এলাকা পর্যন্ত ঝড়ের জলোচ্ছ্বাস পৌঁছাতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘ঝড় এখনও আঘাত হানেনি, তাই আমাদের খুব একটা অসুবিধা নেই। তবে, আশ্রয়কেন্দ্রে অনেক মানুষ এবং পর্যাপ্ত টয়লেট নেই।’
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখা: সেন্টমার্টিন দ্বীপে বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস এখনও শুরু হয়নি
স্থানীয় একটি দাতব্য ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লিন লিন বলেছেন, প্রত্যাশার চেয়ে বেশি লোক আসায় সিত্তওয়ের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত খাবার নেই।
মিয়ানমারে ইউএন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের প্রতিনিধি টিটন মিত্র এই টুইটে জানিয়েছেন, ‘মোখা আঘাত হেনেছে। দুই মিলিয়ন মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসলীলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমরা প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত এবং ক্ষতিগ্রস্ত সকল মানুষের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন সহযোগিতা প্রয়োজন।’
রবিবার সকালে মিয়ানমারে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির কারণে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শান রাজ্যের একটি উদ্ধারকারী দল তাদের ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে জানিয়েছে, তারা এক দম্পতির লাশ উদ্ধার করেছে। টাচিলেক শহরে ভারি বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট ভূমিধসে নিজ বাড়িতে চাপা পড়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, মধ্য মান্দালয় অঞ্চলের পাইন ও লুইন শহরে একটি বটগাছ উপড়ে পড়ে পিষ্ট হয়ে একজন ব্যক্তি মারা গেছেন।
স্থানীয় গণমাধ্যম আরও জানিয়েছে, সিত্তওয়েতে প্রবল বাতাসে একটি সেলফোন টাওয়ার উপড়ে পড়েছে এবং অন্যান্য ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
২০০৮ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় নার্গিস মিয়ানমারে আঘাত হানে, সেসময় ইরাবতি নদীর ডেল্টার আশেপাশের জনবহুল এলাকাগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। এতে কমপক্ষে এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যায় এবং কয়েক হাজার বাড়ি এবং অন্যান্য স্থাপনা পানিতে ভেসে যায়।
পুনে শহরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজির জলবায়ু বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথিউ কোল বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বঙ্গোপসাগরে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে।
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় এখন অনেক দিন তাদের শক্তি ধরে রাখতে পারে। ২০২০ সালে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আম্ফান পূর্ব ভারতে আঘাত হানে এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
কোল বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত মহাসাগর উষ্ণ থাকে এবং বাতাস অনুকূল থাকে, ততক্ষণ ঘূর্ণিঝড়গুলো দীর্ঘ সময়ের জন্য তাদের তীব্রতা ধরে রাখে।’
ঘূর্ণিঝড় বিশ্বের সবচেয়ে বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে একটি, বিশেষ করে যেগুলো দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আঘাত হানে।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় মোখার কোনো প্রভাব নেই
ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা নেই: প্রতিমন্ত্রী
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের কোনো সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন, ‘সকালে ভাটা শুরু হয়েছিল এবং মোখা এখন ৬৫ কিলোমিটার গতিতে অগ্রসর হচ্ছে এবং ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে বাতাসের সর্বোচ্চ গতি প্রায় ২২০ কিলোমিটার। তাই জলোচ্ছ্বাসের কোনো সম্ভাবনা নেই।’
রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবার যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছে জানিয়ে এনামুর বলেন, ইতোমধ্যে সাত লাখ মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখা: সেন্টমার্টিন দ্বীপে বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস এখনও শুরু হয়নি
সরকার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং ইতোমধ্যেই শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ খাবার পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং নগদ অর্থ আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে, যখন মহাবিপদ সংকেত ঘোষণার পর সৈকত এলাকা খালি করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে মহাবিপদ সংকেত ১০ ঘোষণা করা সত্ত্বেও অনেককে সেলফি তুলতে দেখা গেছে।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোনে আমাকে সমুদ্র সৈকতে মানুষ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।’
সমুদ্র সৈকতে কৌতূহলী মানুষের উপস্থিতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে এবং সমস্ত পর্যটন কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় মোখার কোনো প্রভাব নেই
ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বেগে কক্সবাজার অতিক্রম করতে শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় মোখা: আবহাওয়া অধিদপ্তর
রবিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমারের উপকূল অতিক্রম করতে পারে
পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় আরও ঘনীভূত হয়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর শনিবার জানিয়েছে, এটি আরও ঘণীভূত হতে পারে, উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং রবিবার (১৪ মে) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমারের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
এতে বলা হয়েছে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এটি শনিবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ৭০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা বন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা বন্দর থেকে ৬৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে কেন্দ্রীভূত ছিল বলে আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে।
বুলেটিনে বলা হয়েছে, শনিবার রাত নাগাদ চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের প্রারম্ভিক প্রভাব পড়বে।
অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার, দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ায় তা বেড়ে ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল থাকবে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় প্রস্তুত ডিজিএইচএস
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিকের থেকে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
অতি ভারী বর্ষণের কারণে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখা: কন্ট্রোল রুম খুলেছে বিটিআরসি
ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে উপকূলের ৬ জেলায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
ঘূর্ণিঝড় মোখা: কন্ট্রোল রুম খুলেছে বিটিআরসি
ঘূর্ণিঝড় মোখা সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায় একটি কন্ট্রোল রুম খুলেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। শনিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে +৮৮০১৫৫২-২০২৮৫৪ ও +৮৮০১৫৫২-২০২৮৮৬ নম্বরে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় উপকূলীয় জেলাগুলোর স্থানীয় প্রশাসন সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইন্সটিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইইবি) ৬০তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা এগিয়ে আসছে। আমরা ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রেখেছি এবং এটি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।’
আরও পড়ুন: মোবাইল অপারেটরদের তাদের বকেয়া পরিশোধ করতে হবে: বিটিআরসি চেয়ারম্যান
শেখ হাসিনা বলেন, জীবন বাঁচাতে ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হবে।
এদিকে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা’র কারণে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা ১৪ মে (রবিবার) সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-মিয়ানমারের উত্তর উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
আরও পড়ুন: অক্টোবর থেকে কলড্রপে টকটাইম ফেরত: বিটিআরসি
এক এনআইডিতে ১৫টির বেশি সিমকার্ড বন্ধ করছে বিটিআরসি
ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে: শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সরকার প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা ধেয়ে আসছে। আমরা ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রেখেছি এবং এটি মোকাবিলায় সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছি।’
শনিবার রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইইবি) প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠানটির ৬০তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
এসময় শেখ হাসিনা বলেন, জীবন বাঁচাতে ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হবে।
তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ (গ্যাস ও বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ) সাময়িক ভোগান্তির কারণ হলেও এটি মানুষের জীবন রক্ষা করবে।
তিনি আরও বলন, ‘আমরা এই ধরনের ব্যবস্থা ও নিচ্ছি ও নেবো।’
পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৮ নম্বর মহা বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে এবং মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা ১৪ মে (রবিবার) সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-মিয়ানমারের উত্তর উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
কক্সবাজার ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় আজ সন্ধ্যার মধ্যে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রারম্ভিক প্রভাব পড়বে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা: এখনো শান্ত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
সাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় মোখায় রূপ নিয়েছে। এটি আরও শক্তিশালী হতে পারে।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, এর প্রভাবে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নং দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সহ কক্সবাজারের এলাকাগুলোকে ঘূর্ণিঝড় মোখার কোনো প্রভাব পড়েনি।
সমুদ্র শান্ত আছে এখনও। পাড়ে আছড়ে পড়ছেনা বড় বড় ঢেউ, কিংবা এখনও পানির উচ্চতাও বাড়েনি। সকালে থেকেই কক্সবাজারে ঘুরতে আসা পর্যটকদের সমুদ্রে নেমে গোসল করতে দেখা গেছে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তার কাজ করা সি সেইফ লাইফ কর্মী মোহাম্মদ ইউনুস জানিয়েছেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বর্তমানে গোসলের জন্য নিরাপদ। জেলা প্রশাসন বা সি সেইফ থেকে কোনো নির্দেশনা আসলে সে অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: খুলনায় ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় ৪০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত
এদিকে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের ৫৭৬ টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখ হয়েছে যেখানে ৫ লাখ ৫ হাজার ৯৯০ জন মানুষের ধারণক্ষমতা রয়েছে।
এছাড়া সম্ভাব্য দুর্যোগ পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য জেলার রিজার্ভে ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ৪৯০ মেট্রিক টন চাল, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন মজুদ রয়েছে।
সেইসঙ্গে নতুন করে কক্সবাজার জেলার জন্যে ১০ লাখ নগদ টাকা, ৫০ মেট্রিক টন চাল, ৭ মেট্রিক টন শুকনো খাবার বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জরুরি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান বলেন, ঘূর্ণিঝড় শুরু হওয়ার আগেই সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক নির্ধারণ, খুব ঝুঁকিপূর্ণ-ঝুঁকিপূর্ণ-কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিতকরণ, পর্যাপ্ত শুকনা খাবার মজুদ রাখা, ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা, গবাদী পশু সংরক্ষণ ইত্যাদি দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং ইস্যু।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত সকল কর্মকর্তা/ কর্মচারী যাতে দুর্যোগ মুহুর্তে সরকারি ছুটির দিনে কর্মস্থল ত্যাগ না করেন, সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখা: বাগেরহাটের উপকূলীয় এলাকায় আতঙ্ক, ৪৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত
ঘূর্ণিঝড় মোখা: সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত
১৪ মে ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশে আছড়ে পড়তে পারে
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা আরও ঘনীভূত হয়ে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে। তবে আবহাওয়াবিদরা ভবিষ্যদ্বাণী করছেন যে সময় এটি ভূমিতে আঘাত হানবে, এটি সম্ভবত একটি গুরুতর ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেবে।
ঘূর্ণিঝড়টি রবিবার (১৪ মে) নাগাদ কক্সবাজার উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে বলে জানান তিনি।
বুধবার বিকালে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোকার সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে কৃষকদের আগাম ধান ও অন্যান্য ফসল কাটার নির্দেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের
এর আগে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা পূর্বাভাস দিয়েছি যে এটি একটি সুপার সাইক্লোনে পরিণত হবে। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২২০-২৩২ কিলোমিটার হতে পারে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ বৃহস্পতিবারের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি ১৩ মে সন্ধ্যা থেকে ১৪ মে সকালের মধ্যে স্থলভাগে আছড়ে পড়তে পারে।’
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দেশের পূর্বাভাস সংস্থার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি এখন উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এটি এখনও বাংলাদেশের উপকূল থেকে গড়ে দেড় হাজার কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এটি ১২ মে এর মধ্যে উত্তর-পূর্ব দিকে মোড় নেবে।’
প্রকৃতপক্ষে, ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, সিস্টেমটি বুধবার ভোরে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত, এটি পোর্ট ব্লেয়ার (আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী শহর) থেকে প্রায় ৫৪০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং সিত্তওয়ে (মিয়ানমার) এর এক হাজার ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে কেন্দ্রীভূত ছিল।
আরও পড়ুন: ‘মানদৌস’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলেও বাংলাদেশে আঘাত হানবে না: আবহাওয়া অধিদপ্তর
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ(আইএমডি) বলেছে যে গভীর নিম্নচাপটি আজ সন্ধ্যার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। একটি সিস্টেমকে ঘূর্ণিঝড় হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় যখন এর ৩ মিনিটের গড় সর্বোচ্চ স্থায়ী বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৬৩-৮৮ কিলোমিটার হয়।
ঘূর্ণিঝড় মোখা তারপর উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে দক্ষিণ-পূর্ব এবং সংলগ্ন মধ্য বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হবে এবং বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ ধীরে ধীরে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় (বাতাসের গতিবেগ ৮৯-১১৭ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা) এবং তারপরে একটি খুব প্রবল ঘূর্ণিঝড় শুক্রবার সকালে (১১৮-১৬৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা) হবে।
তারপরে, এটি ধীরে ধীরে ফিরে আসবে এবং বাংলাদেশের উপকূলের উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে।
যদিও আইএমডি অনুসারে এটি শনিবার (১৩ মে) দুর্বল হতে শুরু করবে।
রবিবার (১৪ মে) বিকালে, এটি দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ এবং উত্তর মিয়ানমার উপকূলে — বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং কিয়াউকপিউ (মিয়ানমার)-এর মধ্যে-একটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসাবে, সর্বোচ্চ ১১০-১২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগসহ প্রতি ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে স্থলভাগে আছড়ে পড়বে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে সারাদেশে ২৬ জনের মৃত্যু
নিউজিল্যান্ডে ঘূর্ণিঝড় গ্যাব্রিয়েলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯
নিউজিল্যান্ডে ঘূর্ণিঝড় গ্যাব্রিয়েলে মৃতের সংখ্যা ৯জনে পৌঁছেছে। শনিবার দেশটির কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট রজার বল একটি মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেছেন, গ্যাব্রিয়েলে ৯জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং জরুরি পরিষেবাগুলো মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করছে।
ডেপুটি পুলিশ কমিশনার গ্লেন ডানবিয়ার বলেছেন, সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা বর্তমানে ৯জনে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে পূর্ব জেলায় সাতজন এবং অকল্যান্ডে দুইজন রয়েছে।
তিনি বলেন, অনেক মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছে।
আরও পড়ুন: নিউজিল্যান্ডে তিমির সঙ্গে ধাক্কা লেগে নৌকাডুবে নিহত ২, নিখোঁজ ৩
স্থানীয় পুলিশকে সহায়তা করার জন্য সারাদেশ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ কর্মী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পাঠানো হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় গ্যাব্রিয়েলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে যোগাযোগ এখনও স্থবির হয়ে আছে, তবে ধীরে ধীরে আবার চালু হচ্ছে।
নিউজিল্যান্ড পুলিশ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের নিরাপদ থাকার জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করার আহ্বান জানাচ্ছে।
দুপুর ২টা পর্যন্ত স্থানীয় সময় শনিবার ৫ হাজার ৬০৮জন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন মানুষের নিবন্ধন করা হয়েছে এবং এক হাজার ১৯৬টি রিপোর্ট করা হয়েছে যে তারা নিরাপদ আছেন।
ঘূর্ণিঝড় গ্যাব্রিয়েল নিউজিল্যান্ডের উত্তর দ্বীপে আঘাত হানলে মঙ্গলবার নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন: নিউজিল্যান্ডে ঝড়ে মাছ ধরার নৌকাডুবে নিহত ৩, নিখোঁজ ২
ফিলিপাইনে বন্যায় ৫১ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ ১৯