পেঁয়াজ
পেঁয়াজের শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য এনবিআরকে অনুরোধ
পেঁয়াজের শুল্ক প্রত্যাহার, অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, পাম তেল ও চিনির শুল্ক হ্রাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সোমবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরিস্থিতি সস্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে আয়োজিত সভায় এ অনুরোধ জানানো হয়।
সভার শুরুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান বলেন, অত্যাবশ্যকীয় কয়েকটি পণ্যের (ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ ও মশুর ডাল) আন্তর্জাতিক মূল্যের প্রভাবে স্থানীয় বাজারে ঊর্ধ্বমূল্য পরিলক্ষিত হওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় এ সকল পণ্যের মজুদ, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরস্থিতি স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
তিনি জানান, বর্তমানে জনস্বার্থে পেঁয়াজের শুল্ক প্রত্যাহার এবং অপরিশোধিত সয়াবিন, অপরিশোধিত পাম ও অপরিশোধিত চিনির শুল্ক হ্রাসের জন্য এনবিআরকে অনুরোধ করা হয়েছে। আমদানিকৃত পেঁয়াজের কোয়ারেন্টাইন পরীক্ষা দ্রুত সম্পন্ন করে আইপি ইস্যুকরণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।
পড়ুন: হিলিতে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম
মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে নিয়মিত প্রতিদিন দুটি টিম ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ বাজার মনিটরিং করা হয়। সারাদেশে জেলা-উপজেলায় জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নেতৃত্বে এবং ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সহায়তায় বাজার মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে। বিগত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে ও সর্বোপরি পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে টিসিবি'র মাধ্যমে সেপ্টেম্বর মাসে পেঁয়াজ বিক্রয়ের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। টিসিবি সেপ্টেম্বর ২০২১ মাস হতে প্রতিদিন (মাসে ২০-২৫ দিন) সারাদেশে ৪০০ ট্রাকে ৪শ' থেকে ১ হাজার কেজি পেঁয়াজ বিক্রির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রয়োজনে ট্রাক প্রতি পেঁয়াজ বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে।
এছাড়া, পেঁয়াজের সঙ্গে অন্যান্য পণ্য (চিনি, সয়াবিন তেল ও মশুর ডাল) নিয়মিত বিক্রয় করা হচ্ছে। টিসিবি ঢাকাতে ৮০-৯৫টি ট্রাকের মাধ্যমে ট্রাকসেল নিয়মিত কার্যক্রম চালাচ্ছে। টিসিবির মাধ্যমে ভারত ও তুরস্ক হতে ১৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। যা হতে বর্তমানে বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ক্রয়কৃত আরও পেয়াজ সংগ্রহের জন্য পাইপলাইনে রয়েছে।
পড়ুন: খুলনায় প্রথম পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে সফল তড়িৎ বিশ্বাস
ফরিদপুরের পেঁয়াজের বাজারে হঠাৎ দামের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি
নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে নাকাল ভোক্তারা
আলাউদ্দিন চাকরি করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের পিয়ন হিসেবে। বিয়ে করেছেন বছর দুয়েক হলো। যা বেতন আসে মাসের খরচ বাঁচিয়ে কিছু জমা রাখতেন। কিন্তু গত বছর বাচ্চা হওয়ায় আলাউদ্দিনের খরচ সামাল দিতে টানাটানি লেগে যায়।
এমনতিই জীবন চালানোর জন্য যা দরকার তাই কিনেন সবচেয়ে সস্তা দামে। তার ওপর হঠাৎ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় কপালে ভাজ পড়েছে তের হাজার টাকার এই বেসরকারি কর্মীর। মাসের খরচ কম করে হলেও দুই হাজার টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের মতো মানুষের যে কি নিদারুণ কষ্ট কেউ বোঝে না। বেতন তো আর বছর বছর বাড়ে না। এমন জীবন সত্যি দুঃসহ।
আরও পড়ুন: বেড়েছে চালের দাম, সবজি ও তেলের দামও বাড়তি
তাইতো টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য নিতে দাঁড়িয়ে আছি যদি কিছুটা খরচ সাশ্রয় করা যায়। যতো বড় লাইন, মনে হয় না আজ পাবো। গতকাল মালিবাগের এই ট্রাকের সামনেই ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করে চলে গিয়েছিলাম।
এমন দৃশ্য শুধু আলাউদ্দিনের না, অনেক সীমিত আয়ের মানুষের যাদের দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কিছু করার নাই।
দফায় দফায় চাল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় ভিড় সামাল দিতে তাই হিমশিম খাচ্ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) পরিচালিত ট্রাকসেল কার্যক্রমও।
রাজধানী বিভিন্ন স্পটে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ট্রাকের সামনে ৫০ থেকে ৬০ জন করে ক্রেতার লাইন যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয় এই প্রতিবেদকের কাছে।
আরও পড়ুন: শেরপুরে চালের দাম বাড়ানোর দাবি চালকল মালিকদের
কোনো কোন জায়গায় ট্রাক আসার আগেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য দেখা গেছে শহরের এসব উন্মুক্ত বিক্রয় স্থলে।
বিক্রেতারা জানান, আগে ট্রাক সেলে কম দামে নিত্যপণ্য কিনতে আসতো নিম্ন আয়ের মানুষ বিশেষ করে দিনমজুর, রিকশাচালক, গাড়িচালক কিংবা গৃহকর্মী। তবে এখন সেই লাইনে পণ্য কিনতে মধ্যবিত্তরা ভিড় করছেন যা তাদের জন্য বাড়তি চাপও বটে।
টিসিবির ডিলার কামাল যিনি মেরাদিয়া এলাকায় ট্রাকসেল কার্যক্রম পরিচালনা করেন ইউএনবিকে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লো মানুষ বেশি ভিড় করে আমাদের কাছে। আমরা সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে বিক্রি করি। এখন চিত্র ভিন্ন। সাধারণ বাজার থেকে কম বলে অনেকে ভিড় করছে।
‘আগে আমাদের মালামাল বিক্রি কার্যক্রম শেষ করতে সন্ধ্যা হয়ে যেতো। এখন তো ঘন্টা দুয়েকের ভিতর সব শেষ হয়ে যায়। আমাদের বরাদ্দ কম বলে অনেকে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় অনেক কম,’ তিনি বলেন।
টিসিবির ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী হুমায়ুন কবির ইউএনবিকে বলেন, ভোক্তাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে টিসিবি এখন ১০ থেকে ১২ শতাংশ পণ্য সরবরাহ করছে যা আগে এটি ছিল মাত্র এক থেকে দুই শতাংশ। চাহিদা বাড়ায় ট্রাকসেল বাড়ানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টিসিবি ডিলারের ৬ মাসের কারাদণ্ড
হুমায়ুন কবির বলেন, টিসিবির পণ্য সারা বছরই বিক্রি হচ্ছে। গত এক বছরে প্রতি মাসেই বিক্রি হয়েছে। কোনো মাস বাদ যায়নি। পণ্য বিক্রির পরিমাণও পর্যায়ক্রমে বাড়বে।
তবে ক্রেতারা টিসিবির সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি দাবি করেছেন সরকারের কাছে। যাতে তাদের খরচ কিছুটা হলেও সাশ্রয় হয়।
টিসিবি কর্মকর্তারা জানান, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে এ উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ‘ট্রাক সেল’ বন্ধ থাকছে। ট্রাক সেলে সাশ্রয়ী মূল্যে তিনটি পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১০০ টাকা এবং মসুর ডাল ও চিনি প্রতি কেজি ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হবে।
এক একটি ট্রাকে ৫০০-৮০০ লিটার তেল, ৪০০-৬০০ কেজি চিনি এবং ৪০০-৬০০ কেজি মসুরের ডাল বরাদ্দ থাকে বলে জানান।
আর খোলা বাজারে সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, চিনি ৭৮ টাকা এবং দুই প্রকারের মসুরের ডাল ১০০ ও ৮০ টাকা করে।
আরও পড়ুন: আ’লীগ নেতার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ টিসিবির পণ্য উদ্ধার
হিলিতে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত থাকলেও কমছে না পেঁয়াজের দাম। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এখন থেকেই বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণের দাম। এই অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের বাজার এমনই থাকবে। ঈদে দাম বাড়ার কারণ দেখছেন না তারা। গত রবিবারের পর থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত বন্দরের মোকামে পাইকারীতে প্রতি কেজিতে ৬-৭ টাকা করে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩২-৩৪ টাকায়।
এদিকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে মঙ্গলবার থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভারতীয় ৫৪টি ট্রাকে প্রায় হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশে আমদানি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: খুলনায় প্রথম পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে সফল তড়িৎ বিশ্বাস
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারকরা জানান, ভারতের নাসিকসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। কোরবানির ঈদে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আগের চেয়ে বেশি আমদানি করা হচ্ছে। গত ৫-৬ দিন আগে ভারতীয় পেঁয়াজ ২৪-২৬ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু গত ৩-৪ দিন থেকে হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এবং বৃষ্টি হওয়ায় দাম একটু বাড়তির দিকে। ফলে গত বৃহস্পতিবার ও আজ শুক্রবার বন্দরের মোকামে প্রকার ভেদে পাইকারী বিক্রি হয়েছে ৩২-৩৪ টাকায়।
বন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন ও নাজমুল হোসেন জানান, দ্বিতীয় ধাপে করোনা বেড়ে যাওয়ায় সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। একারণে সময় কম হওয়ায় চাহিদা মত পেঁয়াজের ট্রাক ভারত থেকে দেশে প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে পেঁয়াজ আমদানি কিছুটা কম হওয়ার কারণে বাজারে চাহিদা বেড়ে গেছে। এই অবস্থায় দাম বেড়ে যাচ্ছে।
তারা আরও জানান, ভারতের ব্যবসায়ীরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সকালের দিকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করলে চাহিদা মত পেঁয়াজ দেশে আমদানি করা যেত। তাতে আসন্ন কোরবানির ঈদে বাজারে পর্যাপ্ত ভারতীয় পেঁয়াজের যোগান দেয়া যাবে। ভোক্তারা কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারবে। তাহলে ঈদে দাম বাড়বে না।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরের পেঁয়াজের বাজারে হঠাৎ দামের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি
বন্দরে পাইকারী পেঁয়াজ কিনতে আসা ঢাকার কারওয়ান বাজারের আব্দুল লতিফ জানান, আমরা এখান থেকে পেঁয়াজ পাইকারী দরে কিনে ঢাকার বিভিন্ন মোকামে সরবরাহ করে থাকি। ৪-৫দিন আগে ২৬-২৭ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনেছি। আজ শুক্রবার মোকামে সেই পেঁয়াজ কেজিতে ৬-৭ টাকা বেশি দরে কিনতে হচ্ছে। জানি না কোরবানির ঈদে আরও কত বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হয়?
এদিকে বন্দরের বেসরকারী অপারেটর পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন মল্লিক জানান, প্রতিদিনই হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার বন্দর দিয়ে ২৫টি ট্রাকে ৬২৬ মেট্রিক টন, গত বুধবার ১৬টি ট্রাকে ৪১৮ মেট্রিক টন এবং গতকাল বৃহস্পতিবার ১৩টি ট্রাকে ৩৭০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে।
খুলনায় প্রথম পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে সফল তড়িৎ বিশ্বাস
খুলনায় প্রথমবারের মতো পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক এই পেঁয়াজের বীজ সংরক্ষণে সফল হয়েছেন ডুমুরিয়ার তরুণ কৃষক তড়িৎ বিশ্বাস।
শুধু বীজ নয়, তিনি পেঁয়াজ ও পেঁয়াজের কালি উৎপাদন করে বিক্রি করছেন। কৃষি বিভাগের সহায়তায় মাত্র ৫০ শতক জমিতে তিনি এই পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করেন। একই সঙ্গে সংরক্ষণ করা বীজ স্বল্প মুনাফায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বিক্রি করছেন এই তরুণ। স্বল্প খরচে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে অধিক আয় করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পেঁয়াজ বাংলাদেশের একটি অর্থকরী মসলা ফসল। দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই পেঁয়াজের চাষ হয়। জলবায়ুর পরিবর্তন, বৈরী আবহাওয়া এবং বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমণ ইত্যাদির কারণে বাংলাদেশে পেঁয়াজের জাতীয় গড় ফলন বিশ্বব্যাপী গড় ফলন অপেক্ষা কম।
আরও পড়ুন: দেশে উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালা প্রণীত হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
বর্তমানে দেশে ১.৭৯ লক্ষ হেক্টর জমিতে ১৭.৩৮ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে (বিবিএস, ২০১৮)। আমাদের দেশে যে পেঁয়াজ উৎপন্ন হয় তা দিয়ে দেশের মোট চাহিদার মাত্রা ৫৭.১৪% মিটানো সম্ভব। ফলে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি রয়েছে। প্রতি বছর চাহিদা পূরণে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।
পেঁয়াজের বাল্বের ফলন বৃদ্ধির জন্য মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে আমাদের দেশে উন্নত জাত, সঠিক সময়ে ও সঠিক মাত্রায় সার, সেচ ও বালাই দমন ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে পেঁয়াজের বীজের ফলন বৃদ্ধিসহ মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। সেই আলোকে খুলনায় পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে ঝোঁক দিয়েছে কৃষি বিভাগ। এবারই প্রথম খুলনায় পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করা হয়েছে। তাতে সফলতাও এসেছে।
গত বছর পেঁয়াজের বীজের দাম বেশি ছিল। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে এ বছরও দুই হাজার টাকার পেঁয়াজের বীজ ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। কৃষক যদি নিজেরাই বীজ তৈরি করে তাহলে সিন্ডিকেট ভাঙবে এমনটা ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে শিকারীদের হাত থেকে উদ্ধার হওয়া পাখি অবমুক্ত
ডুমুরিয়ার তড়িৎ বিশ্বাস বলেন, কৃষি অফিস থেকে পেঁয়াজের বাল্ব দিয়েছিল। বর্গা নিয়ে ৫০ শতক জমিতে ১৩ মণ বাল্ব লাগিয়েছিলাম। সেখান থেকে ২৩ মণ পেঁয়াজ এবং ২৫ কেজি বীজ উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া পেঁয়াজের কালি ৩ হাজার টাকার মতো বিক্রি করেছি। বীজগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কৃষি অফিসের সহায়তায় মওসুমের সময়ে বীজগুলো বিক্রি করা হবে। কৃষি অফিস থেকে বাল্ব দেওয়া হয়েছিল। আর আমি শ্রম ও পরিচর্যা করেছি। তিন মাস পরিচর্যা করে ফসল ঘরে তুলেছি।
তরুণ এই কৃষক বলেন, আমি এবার প্রথম পেঁয়াজের চাষ করেছি। বীজও খুলনায় প্রথম। চাষ করে খুব ভালো লেগেছে। আগামী বছর বীজ দিয়ে পেঁয়াজ চাষ করার ইচ্ছা রয়েছে।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় অসহায় কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, পেঁয়াজ একটি উচ্চমূল্যের ফসল। বীজের দাম অনেক বেশি ছিল। এ বছর ৬ হাজার টাকা কেজি পর্যন্ত দাম হয়েছিল। যে কারণে দরিদ্র কৃষকদের পক্ষে বীজ ক্রয় করে পেঁয়াজ উৎপাদন করা সম্ভব ছিল না। এ কারণে আমরা কৃষক পর্যায়ে ডাল, তেল, মসলার উন্নতমানের বীজ সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তা তড়িৎ বিশ্বাসকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং পেঁয়াজের বীজ ও সার প্রদান করা হয়। প্রথমবারের মতো খুলনায় পেঁয়াজের বীজ সংরক্ষণ করা হয়েছে। ৩০ কেজির মতো বীজ হয়েছিল। কিন্তু শোকানোর কারণে কমে ২৫ কেজির মতো রয়েছে তড়িৎ বিশ্বাসের কাছে। এটি আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন। তার দেখাদেখি আগামীতে আরও কৃষক উৎসাহিত হবে। পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, এক কেজি পেঁয়াজের বীজ সংরক্ষণ করবে এবং বাকী বীজ বিক্রি করে দিবে। এক কেজি বীজে ৫০ থেকে ৫২ শতকে লাগানো যাবে। নভেম্বর মাসে পেঁয়াজ লাগানো হয় এবং এপ্রিলের শেষ পর্যায়ে উঠানো হয়। ৫০ শতক জমিতে পেঁয়াজ, কালি ও বীজ উৎপাদন এবং সংরক্ষণে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ করে এক লাখ টাকা আয় করা সম্ভব বলে তিনি জানিয়েছেন।
খুলনা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, খুলনার মাটি পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। অল্প-স্বল্প পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এবারই প্রথম পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। এক বিঘা জমিতে বারি-১ জাতের বাল্ব লাগিয়ে পেঁয়াজের বীজ উৎপান ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ফরিদপুর থেকে পেঁয়াজের বীজ এনে চাষাবাদ করা হতো। খুলনায় এবার ২৫ কেজি পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এই বীজ কৃষক তড়িৎ বিশ্বাসের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে স্থানীয় চাষিদের মাঝে।
ফরিদপুরের পেঁয়াজের বাজারে হঠাৎ দামের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি
ফরিদপু, ২২ মে (ইউএনবি)- ফরিদপুরে রমজান মাসে পেঁয়াজের বাজারদর ছিল বেশ স্থিতিশীল। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই স্থিতিশীর বাজার দর বাড়তে শুরু করেছে। ক্রেতা-ভোক্তরা বলছেন বাজার তদারকি কমে যাওয়া এবং লকডাউনের কারণেই এমনটি ঘটেছে।
ফরিদপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারে ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই আস্তে আস্তে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। বর্তমানে বাজারে খুচরা মূল্য কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫৫ টাকা দরে। তবে অধিকাংশ খুচরা দোকানদার ৫০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন।
আরও পড়ুন: টিসিবির পণ্য: সাতক্ষীরায় পঁচা পেঁয়াজ না নিলে দেয়া হচ্ছে না তেল, চিনি
খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, পাইকারিতে দাম বাড়ায় খুচরায় দাম বেড়েছে। তবে পাইকারি বাজারে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ফরিদপুরের পেঁয়াজের অন্যতম বাজার কানাইপুরে শুক্রবার কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৪ থেকে ৩৮ টাকা দরে।
ফরিদপুর চেম্বর অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মো: সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘পেঁয়াজের খুচরা বাজারে কেনো দাম বেড়েছে তা বুঝতে পারছি না। তবে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করা হবে। আমরা চাই না কোনও ক্রেতা পণ্য কিনে অসন্তুষ্ট হোক।’
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. হয়রত আলী জানান, পেঁয়াজ উৎপাদনের দিক থেকে দেশের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ফরিদপুর। সরকারি হিসাব মতে, চলতি মৌসুমে এই জেলায় ৪০ হাজার ৯৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ১৮৫ মে.টন। যা গত বছরের তুলনায় ৮৮ হাজার টন বেশি।
তিনি আরো জানান, ফরিদপুর জেলার নয় উপজেলার মধ্যে পেঁয়াজ চাষের জন্য খ্যাতি রয়েছে সালথা, নগরকান্দা, ভাঙ্গা, বোয়ালমারী, ফরিদপুর সদর, মধুখালী এবং সদরপুর উপজেলা।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ বীজ ফরিদপুরের চাষিদের কাছে ‘কালো সোনা ’
গত মৌসুমে জেলায় পেঁয়াজের আবাদ হয়ে ছিল, ৩৭ হাজার ৬৭৮ হেক্টর, এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছিল ৫ লক্ষ ৫ হাজার মেট্রিকটন। চলতি মৌসুমে ৪০ হাজার ৯৭ হেক্টোর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ১৮৫ মে.টন।
কেনো হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে পেঁয়াজের যে দাম চলছে সেটি স্থিতিশীল থাকলে কৃষক লাভবান হবে, তবে এর চেয়ে বেড়ে গেলে ক্রেতারা সমস্যায় পড়বে। এই কারণেই বাজার তদারকির ওপর জোড় দিতে হবে।’
ফরিদপুরের কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মণ প্রতি পাইকারি পেঁয়াজের দর বেড়েছে গত কয়েক সপ্তাহে তুলনায় ৩’শ থেকে ৪’শ টাকা। এতে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে খুচরা বাজারেও।
ফরিদপুর শহরের হাজী শরিয়াতুল্লা বাজারের ক্রেতারা জানালেন, রমজানে খুচরা পেঁয়াজ দাম ছিল ২৫ থেকে ২৮ টাকা কেজি, আর এখন সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫টাকা দরে। এটা কেনো হচ্ছে বিষয়টি প্রশাসনের ক্ষতিয়ে দেখার দরকার।
হাজী শরীয়াতুল্লা বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পেঁয়াজ পাইকারি মণ প্রতি কিনতে হচ্ছে ১৫ থেকে সাড়ে ১৬শ টাকায়। যা রমজানে ছিলো ১১শ টাকা মণ।
আরও পড়ুন: মাগুরায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
এইদিকে শহরতলীর কানাইপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা জানালেন, রমজানে লকডাউন কঠোর থাকায় মানুষ বের হয়েছে, তাই পেঁয়াজের চাহিদা কম থাকায় দামও কম ছিল। কিন্তু এখন মানুষ ঘর থেকে রেব হওয়া শুরু করেছে পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে। এই কারণে দাম বাড়ছে।
এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিসি) অতুল সরকার জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা দ্রুতই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলবো, প্রয়োজনে বিভিন্ন বাজারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে বাজার দর নিয়ন্ত্রণের পাশা-পাশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
পেঁয়াজ বীজ ফরিদপুরের চাষিদের কাছে ‘কালো সোনা ’
পেঁয়াজ বীজ চাষে হাসি ফুটেছে ফরিদপুরের কৃষকদের। গত কয়েক বছরে ভালো দাম পাওয়ায় এবারও স্বপ্নটাও বড়। আর তাই একে সোনার সাথে তুলনা করছেন।
ফরিদপুর কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে সাড়ে ১৭শ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষাবাদ করা হয়েছে। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় এই জেলার প্রতি বছরই পেঁয়াজ বীজের চাষ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে ১ হাজার ৫৬ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
ফরিদপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. হযরত আলী জানান, চলতি মৌসুমে ফরিদপুর অঞ্চলের ১ হাজার ৫৬ মেট্রিক টনের বেশি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদিন হবে। যার বাজার প্রায় মূল্য (গত বছরের মতো হলে) ৫শ কোটি টাকার মতো।
আরও পড়ুন: দেড় বছর পর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু
তিনি জানান, সরকারের বিএডিসির সংগৃহীত মোট পেঁয়াজ বীজের ৭০ শতাংশ ফরিদপুর জেলা থেকে করে থাকে। এ বীজ উৎপাদন করে রবি মৌসুমে চাষিরা অধিক মুনাফা করে এই কারণে এই ফসলকে ব্লাক গোল্ড বা কালো সোনা হিসেবে অভিহিত করা হয়।
সরেজমিনে ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ও ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে দেখা গেছে, সেখানকার চাষিরা বীজ সংগ্রহের কাজে ব্যস্থ রয়েছে। অনেক কৃষক-কৃষাণী চুক্তিতে (পেঁয়াজ বীজ গাছে পেঁয়াজ তাদের আর বীজ মালিকের) এই কাজে অংশ নিচ্ছে।
অম্বিকারপুর এলাকার গোবিন্দুপুর মাঠে কৃষক হারিজ মোল্লা, জুলেখা বেগম, ফাতেমা খানমের মতো অনেকেই জানান, এই মৌসুমে বীজ তোলার কাজ করে যে পেঁয়াজ পাই তাই দিয়ে সংসারের সারা বছরের পেঁয়াজের চাহিদা মিটে যায়।
মাঠে গিয়ে দেখা যায়, অনেক কৃষক রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর জেলা থেকে এসেছেন।
এদের মধ্যে রহমান মাতুব্বর, আশিক মেল্লা বলেন, পেঁয়াজ বীজ তোলা সময় আমাদের মতো অনেকেই ফরিদপুরে আসে জনবিক্রির কাজে। এই সময়টায় আমাদের ভালো আয় হয় ।
তারা জানান, করোনার সময়ে এমনিতেই কাজের অভাব, তাই ফরিদপুরের এই মৌসুমে আমাদের মতো অনেকেই চলে আসে জনদিতে।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ বীজে সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছেন মাগুরার কৃষকরা
জেলা সদর উপজেলার পেঁয়াজ বীজ চাষিরা জানান, প্রচণ্ড রোদ থাকার পরেও চলতি মৌসুমে আবহাওয়া মোটামুটি অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজ বীজের ভালো ফলন হয়েছে। বিঘা প্রতি দুই থেকে আড়াই মণ বীজ উৎপাদন হবে। গত বছরের বাজার মূল্যে ছিল প্রতি মণ দুই লাখ টাকা মতো। আর খরচ প্রতি বিঘায় ৩০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা। সেই হিসেবে বিঘা প্রতি ভালোই আয় হবে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর গ্রামের বিএডিসির তালিকাভুক্ত পেঁয়াজ বীজ চাষি মো. আকবর খান বলেন, ‘এই বছর চার বিঘা জমিতে বীজের চাষ করছি। আশা করছি ৮ মণের বেশি বীজ উৎপাদন হবে।’
একই গ্রামের পেঁয়াজ বীজের চাষ করে লাভলি- ইমতিয়াজ দম্পতি।
তারা জানান, পেঁয়াজের বীজের কালো দানা আমাদের এলাকার ‘কালো সোনা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাজারে যে দাম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে পেঁয়াজ বীজ আমাদের কাছে সোনার মত।
তারা বলেন, এই অঞ্চলের বীজ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকার বিএডিসির মাধ্যমে সরবরাহ করে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, বিএডিসি কতৃপক্ষ সব চাষিদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে না।
আমাদের দাবি, সরকারের যেহেতু বীজের দরকার, তবে কেনো সকলের কাছ থেকে নিবে না।
গোবিন্দুপুর গ্রামে আরেক পেঁয়াজ বীজ চাষি শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ব্যাংকগুলো শুধু জমির মালিকদের লোন দেয়। আমার মতো বর্গা চাষিদের লোন দেয় না। আমরা বাধ্য হয়ে এনজিও’র কাছ থেকে অধিক সুদে লোন নিয়ে পেঁয়াজ বীজ চাষ করি।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজ বিএডিসির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও এ বীজ চাষে অনেক বেকার যুবকরা তাদের কর্মস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছে। কারণ অল্প খরচে অধিক মুনাফা লাভ করার সহজ উপায় হলো বীজ চাষ।
তিনি বলেন, ফরিদপুর সদর, ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সদরপুর ও সালথা উপজেলার পেয়াজ বীজ চাষীদের এখন আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
তিনি জানান, সারা দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনের বড় অংশীদার ফরিদপুরের বীজ চাষিরা।
মাগুরায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
চলতি বছর মাগুরার চার উপজেলায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার চার উপজেলার মধ্যে শ্রীপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। ফলে জেলার কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।
কৃষি বিভাগ বলছে, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা পেঁয়াজ চাষে বেশি লাভবান হবে।
জেলায় মোট পেঁয়াজ চাষ হয়েছে দশ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে সদরে এক হাজার ১৯০ হেক্টর, শ্রীপুরে ছয় হাজার ৩৫০, শালিখায় এক হাজার ১৪০ এবং মহম্মদপুরে এবং হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এবার হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয়েছে ১৪ মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১.৪৭ টন।
জেলায় এবার বারী ১, ৪, তাহেরপুরী, লাল তীর, সুপার এবং কিং জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নের মর্কদ্দখোলা গ্রামের পেঁয়াজ চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে জমিতে পেঁয়াজ ভালো হয়েছে। আমি এবার দুই বিঘা জমিতে লাল তীর জাতের পেঁয়াজের আবাদ করেছি। পৌষ মাসের মাঝামাঝিতে জমিতে বীজ বপন করেছি। পাশাপশি সার ও সেচ দিয়েছি। পেঁয়াজের চারা বের হলে জমিতে বাড়তি যত্ন নিয়েছি। সময়মতো সেচ ও সার দেওয়ার ফলে আমার পেঁয়াজ ভালো হয়েছে। চলতি চৈত্র মাসে পেঁয়াজ জমি থেকে তুলতে শুরু করেছি। এবার বিঘায় ৮০-৯০ মণ পেঁয়াজ পাব বলে মনে করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বীজ, সারসহ সব মিলিয়ে আমার ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন প্রতি মণ পেঁয়াজ ৯৫০ টাকা থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবার পেঁয়াজের বাম্পার ফলনে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় হতে পারে।’
উপজেলার জয়নগর গ্রামের নির্মলকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমি এবার সুপার জাতের পেঁয়াজ চাষ করেছি। ভালো ফলন পেয়েছি। এ জাতের পেঁয়াজের রঙ, আকার ও গঠন খুবই ভালো। এটি দেশি জাতের পেঁয়াজের মতো। আশা করছি ভালো আয় করতে পারব।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামানিক বলেন, ‘এবার আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকার কারণে জেলায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকার কারণে পেঁয়াজ চাষিদের কোনো ক্ষতি হয়নি। পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে জেলার চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। আগামীতে এ চাষের জন্য জেলার কৃষকদের আরও উদ্বুদ্ধ করা হবে।’
দর্শনা বন্দর দিয়ে আরও পেঁয়াজ আমদানি
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আরও ১৩০০ মেট্রিকটন পেঁয়াজ বাংলাদেশে এসেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় ৪২টি রেলওয়াগনে এ পেঁয়াজ আমদানি হয়।
দর্শনা বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রায়হান ও রফিকুল ইসলাম জানান, দু’জন আমদানিকারক চাঁপাই নবাবগঞ্জের টাটা ট্রেডার্স ৫৯৯ দশমিক ৯৭০ মেট্রিক টন ও ফেনীর রূপসী বাংলা ৭১৩ দশমিক ৫৮০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করেছে। প্রতি টন পেঁয়াজের ইনভয়েস মূল্য ২৫০ ডলার।
আরও পড়ুন: দেড় বছর পর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু
তবে শতকরা ১০ ভাগ শুল্ক আরোপ করায় পেঁয়াজ আমদানিতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না বলে জানান আমদানিকারকের প্রতিনিধিরা।
দর্শনা আর্ন্তজাতিক রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট মীর লিয়াকত আলী জানান, আমদানি করা পেঁয়াজ যশোর নওয়াপাড়ায় বুকিং নিয়েছে আমদানিকারকরা।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ বীজে সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছেন মাগুরার কৃষকরা
এর আগে গত শুক্রবার ১৫০০ মেট্রিন টন পেঁয়াজ আমদানি হয় দর্শনা বন্দর দিয়ে। পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আরও বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
দেড় বছর পর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু
দেড় বছর পর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুইটি ট্রাকে সাড়ে ৪২ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। রাতে পেঁয়াজ আমদানির পর শুক্রবার সকালে বন্দর থেকে পেঁয়াজের চালান খালাশ দেয়া হয়।
পেঁয়াজ বীজে সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছেন মাগুরার কৃষকরা
মাগুরায় পেঁয়াজ বীজে সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে উচ্চফলনশীল বারি-১ জাতের পেঁয়াজ বীজের চাষ। এ বীজ সংগ্রহ ও বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন জেলার কৃষকরা।