যুক্তরাষ্ট্র
রাশিয়ার অনুরোধে বৈঠকে বসছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ
যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় ইউক্রেন রাসয়নিক ও জীবাণু অস্ত্রের গবেষণাগার পরিচালনা করছে রাশিয়ার এমন অভিযোগের বিষয়ে আলোচনা করতে শুক্রবার বৈঠকে বসছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
পরিষদের কূটনীতিকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ইস্টার্ন স্ট্যান্ডার্ড টাইম অনুযায়ী সকাল ১০টায় এ বৈঠক হবে।
জাতিসংঘে রুশ প্রথম ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বৃহস্পতিবার বিকালে এক টুইট বার্তায় এই বৈঠকের জন্য অনুরোধ জানান।
আরও পড়ুন: কোনো অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হলো ইউক্রেন-রাশিয়া বৈঠক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন রাশিয়ার এমন দাবি প্রত্যাখ্যানের পরপরই এই বৈঠকের আহ্বান জানানো হলো।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি রাশিয়ার দাবিকে ‘ভ্রান্ত’ বলে অভিহিত করেছেন এবং সতর্ক করেছেন রাশিয়া তার প্রতিবেশী ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাসায়নিক বা জীবাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
তবে বুধবার আরেক রুশ ডেপুটি ইউএন অ্যাম্বাসেডর দিমিত্রি চুমাকভ এই অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে পশ্চিমা গণমাধ্যমকে ‘ইউক্রেনের গোপন জীবাণু (অস্ত্রের) গবেষণাগারের’ খবর প্রচারের আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের হাসপাতালে বিমান হামলায় শিশুসহ নিহত ৩
ফের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা রাশিয়ার
বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে সুযোগ দেয়ার জন্য তৃতীয় বারের মতো মানবিক করিডোর ঘোষণা করেছে রাশিয়া।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মাধ্যমের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে।
রাশিয়ার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা) থেকে এই করিডোর কার্যকর হবে।
কিয়েভ, চেরনিহিভ, সুমি, খারকিভ, মারিউপোল শহরের বাসিন্দারা নিরাপদ করিডোর ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।
এই সপ্তাহে তৃতীয়বারের মতো এ ধরনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে মস্কো।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গতকালের যুদ্ধবিরতিতে তারা সুমি শহর থেকে পাঁচ হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
তবে চেরনিহিভ শহরে রাশিয়ার গোলা হামলার কারণে এ ধরনের উদ্যোগ ভেস্তে গেছে।
পড়ুন: রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা বাইডেনের
এদিকে, রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তেল আমদানি বন্ধের ফলে মার্কিনিরাও সমস্যায় পড়বে বলে বাইডেন স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা রক্ষার জন্য মূল্য দিতে হচ্ছে আমাদের।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘পুতিন যে যুদ্ধে জড়িয়েছেন আমরা সেই যুদ্ধে ভর্তুকি দেয়ার অংশ হব না।’
পড়ুন: ২০ লাখ শরণার্থী ইউক্রেন থেকে পালিয়েছে: জাতিসংঘ
রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা বাইডেনের
রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইউক্রেনে ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রাসনের প্রতিশোধ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের এটি সর্বশেষ পদক্ষেপ।
তেল আমদানি বন্ধের ফলে মার্কিনিরাও সমস্যায় পড়বে বলে বাইডেন স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা রক্ষার জন্য মূল্য দিতে হচ্ছে আমাদের।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘পুতিন যে যুদ্ধে জড়িয়েছেন আমরা সেই যুদ্ধে ভর্তুকি দেয়ার অংশ হব না।’
নতুন পদক্ষেপকে ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান আগ্রাসনে অর্থায়নের বিরুদ্ধে একটি ‘শক্তিশালী ধাক্কা’ বলে অভিহিত করেছেন বাইডেন।
ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিন কখনই জয়ী হবে না বলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করেন।
এদিকে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীর সংখ্যা ২০ লাখে পৌঁছেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় গণঅভিবাসন শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি এক টুইটে বলেছেন, ‘আজ ইউক্রেন থেকে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীর সংখ্যা ২০ লাখে পৌঁছেছে।’
পড়ুন: ২০ লাখ শরণার্থী ইউক্রেন থেকে পালিয়েছে: জাতিসংঘ
নিরাপদ করিডোর দিয়ে ইউক্রেন ছাড়ছেন বেসামরিক নাগরিকেরা
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে চীন: ইউক্রেন যুদ্ধের আগুনে ঘি দিয়েন না
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের ‘আগুনে ঘি দেয়’ এমন যেকোনো পদক্ষেপের বিরোধিতা করে চীন। এ সময় ব্লিঙ্কেন বলেন, কোন দেশ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের নীতির পক্ষে দাঁড়িয়েছে, তা বিশ্ব দেখছে।
শনিবার চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপকালে এসব কথা হয় বলে জানিয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং তাৎক্ষণিক সঙ্কট সমাধানের জন্য আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি একটি ভারসাম্যপূর্ণ ইউরোপীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরির বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
আরও পড়ুন: পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ‘যুদ্ধ ঘোষণার’ শামিল: পুতিন
ওয়াং বলেন, ন্যাটোর পূর্ব দিকে সম্প্রসারণের ফলে রাশিয়ার নিরাপত্তার ওপর পরা নেতিবাচক প্রভাবের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মনোযোগ দেয়া উচিত।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, আলোচনাকালে ব্লিঙ্কেন জোর দিয়ে বলেন, রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ব ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে এবং মস্কোকে যে উচ্চ মূল্য দিতে হবে তা নিশ্চিত করছে।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে চীন।
চীন জানায়, সব জাতির সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করা উচিত। তবে এ নিষেধাজ্ঞাগুলো নতুন সমস্যা তৈরি করে এবং রাজনৈতিক সমঝোতার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের আকাশ সীমায় ‘নো-ফ্লাই জোন’ নিয়ে পুতিনের হুঁশিয়ারি
এবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরের নিষেধাজ্ঞা
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ বাহিনী। পতনের পর শহরটিতে আকাশ থেকে রুশ ছত্রীসেনারা নেমে আসছে বলে নিশ্চিত করেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী।
বুধবার ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, খারকিভের বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠার পরপরই আকাশ থেকে হামলা চালানো শুরু হয়।
সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, রুশ সৈন্যরা একটি স্থানীয় সামরিক হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। সংঘাত চলমান রয়েছে। এটি একটি রুশ ভাষাভাষী শহর এবং এ ঘটনা যখন ঘটছিল তখন সেখানে ভোর ৬টা বাজে।
এর আগে মঙ্গলবার শহরের একটি স্থানীয় সরকারের কার্যালয়ে মিসাইল হামলা হয়। পরের দিকেব শহরের একটি আবাসিক এলাকায় হামলা হয়।
পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেন।
মঙ্গলবার খারকিভে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়, আহত হয় অসংখ্য।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে রাশিয়ার বিমান চলাচল নিষিদ্ধ
ইউক্রেনের বেসামরিক এলাকায় হামলা জোরদার রুশ বাহিনীর
যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে রাশিয়ার বিমান চলাচল নিষিদ্ধ
রাশিয়ার কোন বিমান আমেরিকার আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কানাডা তাদের আকাসসীমা রাশিয়ার জন্য বন্ধ করে দেয়ার পর আমেরিকার কাছ থেকেও এ ধরণের পদক্ষেপ এলো।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে (স্থানীয় সময়) প্রথম স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে জো বাইডেন এসব কথা বলেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ন্যাটো এবং যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের পাশে আছে।
তিনি বলেন, ‘ইতিহাসে দেখা গেছে, আগ্রাসী আচরণের কারণে স্বৈরশাসকরা যদি মূল্য না দেয়, তাহলে তারা আরও বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে।’
বাইডেন বলেন, কোন রকম উসকানি ছাড়াই রাশিয়া পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে ইউক্রেনে হামলা করেছে।
পড়ুন: ইউক্রেন সম্পর্কে বিস্ময়কর কিছু তথ্য
ইউক্রেনের জনগনের প্রশংসা করে তিনি বলেন, তারা হচ্ছে 'শক্তিশালী প্রাচীরের' মতো, যেটা কেউ ধারণা করেনি। ছয়দিন আগে পুতিন চেয়েছিল স্বাধীন পৃথিবীর ভিত্তি নাড়িয়ে দিতে। সে ভেবেছিল তার মতো করে এটা বাঁকা করতে পারবে।
‘কিন্তু তার হিসেব ছিল পুরোপুরি ভুল,’ বলেন বাইডেন
ইউক্রেনের জনগণ যেভাবে ইস্পাত কঠিন মনোভাব নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করছে সেখান থেকে আমেরিকার জনগণকে অনুপ্রেরণা নিতে আহবান জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তিনি বলেন, পুতিন হয়তো ট্যাংক দিয়ে কিয়েভ শহর ঘিরে রাখতে পারে কিন্তু তারা কখনোই ইউক্রেনের জনগণের হৃদয় অর্জন করতে পারবে না।
পড়ুন: ইউক্রেনের বেসামরিক এলাকায় হামলা জোরদার রুশ বাহিনীর
ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে তদন্ত করবে আইসিসি
‘গুপ্তচরবৃত্তির’ অভিযোগে ১২ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করল যুক্তরাষ্ট্র
জাতিসংঘে রাশিয়ান মিশনের ১২ সদস্যকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের ‘গোয়েন্দা অপারেটিভ’ হিসেবে অভিযুক্ত করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসনের পঞ্চম দিনে বাইডেন প্রশাসন এই পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
জাতিসংঘে মার্কিন মিশন এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘তাদের জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থী গুপ্তচরবৃত্তিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগের অপব্যবহার করেছেন রুশ কূটনীতিকরা।’
আরও পড়ুন: রাশিয়ান কামানের গোলায় ৭০ ইউক্রেনীয় সেনা নিহত
মিশন আরও জানিয়েছে, বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ‘কয়েক মাস ধরে উন্নয়নশীল’ এবং ১৯৩ সদস্যের বিশ্ব সংস্থার হোস্ট হিসেবে জাতিসংঘের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি অনুসারে নেয়া হয়েছে।
রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সব সময় এটা করে। যখন তারা কাউকে অনাস্থাভাজন দূত হিসেবে ঘোষণা করে তখন তারা এ অজুহাত দেখায়। এটাই তাদের একমাত্র ব্যাখ্যা।’
মার্কিন ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর রিচার্ড মিলস বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘রাশিয়ান কূটনীতিকরা দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতা অনুসারে কূটনীতিক হিসেবে তারা এমন কার্যকলাপে নিযুক্ত ছিলেন যা তাদের উচিত নয়।’
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধারে যাচ্ছেন ৪ মন্ত্রী
ইউক্রেনের খারকিভ শহরে আহত ৪৪
বাংলাদেশকে ফাইজারের আরও এক কোটি টিকা দিলো যুক্তরাষ্ট্র
সারাদেশে টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে কোভ্যাক্সের আওতায় বাংলাদেশকে আরও এক কোটি (১০ মিলিয়ন) ডোজ ফাইজার টিকা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, সর্বশেষ এই অনুদানটি বিশ্বব্যাপী সব দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া করোনা ভ্যাকসিনের বৃহত্তম প্রাপক করে তুলেছে।
বাংলাদেশকে এই পর্যন্ত ৬১ মিলিয়ন করোনার টিকা অনুদান হিসেবে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন দূতাবাসের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভ বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া এই চালানটি টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব এবং আমেরিকান জনগণের উদারতার বিষয়টি তুলে ধরে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে ফাইজারের আরও ৬০ লাখ ডোজ টিকা দিলো যুক্তরাষ্ট্র
৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের টিকা ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে ফাইজার
গণতন্ত্রের মোহমুক্তি
কিছুক্ষণ আগে কাঠমান্ডু থেকে আমার একজন প্রিয় জুনিয়র একটা মজার টেক্সট পাঠিয়েছে। যার মর্মার্থ দাঁড়ায় রাশিয়া যখন জর্জিয়া বা ইউক্রেন দখল করে নেয় তখন তা হয় আগ্রাসন। যখন ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান অভিযান পরিচালিত হয় তখন তা হয় গণতন্ত্র ও মুক্তির জন্য যুদ্ধ। সবই যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত মিডিয়ার কারসাজি।
কিয়েভে রাশিয়ান সৈন্যরা প্রবেশ করেছে। অর্থাৎ ইউক্রেন রাশিয়ান আগ্রাসন ঠেকাতে মিত্রদের সাহায্য পায়নি যার উপরে অনেক ভরসা ছিল।
ইউক্রেন আসলে কাকে চায়? রাশিয়া কিংবা আমেরিকা? ইউক্রেন ছিল সমাজতান্ত্রিক ঘরানার দেশ। সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ। সোভিয়েত ইউনিয়নের রিপাবলিক গুলোর মাঝে ইউক্রেন ছিল ধনী ও শক্তিশালী যে রাশিয়ান বলয়ের বাইরে যায়নি। ন্যাটোতেও যোগ দেয়নি। ওরা মিলেমিশে ছিল। এতে রাশিয়ান সীমান্ত হয় নিরাপদ। এত বছর পর আমেরিকা ও মিত্ররা চাইছে ইউক্রেন রাশিয়া মুক্ত হোক। রাশিয়ান নিরাপদ সীমান্ত ভেঙে যাক। ইউক্রেনকে ন্যাটো সদস্য করলে আমেরিকার চির প্রতিদ্বন্দ্বীকে নুতন অবস্থান থেকে হেনস্তা করা সহজ হবে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে রিপাবলিকগুলো স্বাধীন হয়ে যায় এবং কিছু কিছু দেশ ন্যাটোতে যোগ দেয়। তখন আমেরিকা ইউক্রেনকে ন্যাটোতে গ্রহণ না করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে উপেক্ষিত হওয়াটা বর্তমান ক্রাইসিসের কারণ।
ধনতান্ত্রিক আর্থিক ব্যবস্থায় বাক স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুখ স্বাচ্ছন্দের প্রাচুর্যের সংবাদ সমাজতান্ত্রিক শিবিরে মাঝে মাঝেই নাড়া দিতো। ফলে কমিউনিজমের বেড়াজাল ভেঙে কবে মুক্ত হতে পারবে তা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন বাসীদের আকাঙ্ক্ষা। এক সময় সোভিয়েত সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে যায়। রিপাবলিক গুলো স্বাধীন হয়ে পড়ে। সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশগুলো প্রকৃতপক্ষে রাশিয়ান বলয়ে থেকে যায়। কট্টর কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রধানগণ খোলাখুলিভাবে রাশিয়ার সাহায্যে ক্ষমতায় রয়ে যায়। নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র চালু হয়।
রিপাবলিকগুলো স্বাধীন হলেও একের ওপর অন্যের নির্ভরতা রয়ে যায়। সোভিয়েত প্রথায় কোন রিপাবলিক এককভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। উদাহরণস্বরূপ একটা টেলিফোন সেটের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভিন্ন ভিন্ন দেশে তৈরি হয়। একক প্রয়োজনে কেউ কিছু উৎপাদন করতে পারে না। স্বাধীনতার পর এসব সমস্যা প্রকট হয়ে পড়ে।
রাশিয়ান ভাষা হয়ে পড়ে সার্বজনীন। এছাড়া ব্যক্তি যোগাযোগ হয়ে পড়ে কঠিন। জনসংখ্যাকে কোনো গোত্র, এলাকা ভিত্তিক পরিচয়ে যাতে না রাখা হয় সে জন্যে সারা ইউনিয়নে বিভিন্ন দল বা গোত্রকে জোরপূর্বক ছড়িয়ে দেয়া হয়। এ প্রক্রিয়াটা পূর্ণতা পাওয়ার আগেই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়।
এবার আসি বিলুপ্ত সোভিয়েতের গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা ও সুখ সমৃদ্ধির প্রাপ্তি কতটুকু।
পৃথিবী যখন দুই মেরুতে অবস্থান করছিল তখন আমেরিকা ও ধনবাদীরা কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নকে উচ্চ মূল্যায়ন করতো। তখন ডলার ও রুবল সমমানের ছিল। ক্ষেপণাস্ত্র, মহাকাশ গবেষণা ইত্যাদিতে উচচ মানের ছাপ রেখেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। কিন্তু জনগণের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা বার বার স্বাধীনতা ও মুক্তির পানে তাকিয়ে ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর দেখা গেল এতদিন রাশিয়াকে উচ্চ মূল্যায়ন করা হয়েছিল।
ধনবাদীদের ব্যবসা বাণিজ্যের দরজা খুলে গেল। গ্রামে গঞ্জে, পাহাড় জঙ্গলে চুইং গাম, পেপসি, কোকাকোলা পৌঁছে গেল। বিখ্যাত রাশিয়ান ভদকার পরিবর্তে ডেনিশ, ফিনিশ, আইরিশ আরো অনেক ব্র্যান্ডের ভদকা বাজার দখল করে নিল। নব্য গণতন্ত্রে জনগণ দিশাহারা। চারিদিকে অস্ত্রের ঝনঝননি। মাফিয়া চক্রের সন্ত্রাস। অর্থনৈতিক দুরবস্থা। দেশ সমাজ কোন নিয়মে চলবে সবাই দ্বিধান্বিত। গণতন্ত্র কোথায়? অনেকেই ফিরছেন নিজ রিপাবলিকে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতই খারাপ যে তারা আদৌ পৌঁছাতে পারবে কি না অনিশ্চিত।
রাশিয়ান আর্মি বিভিন্ন দেশে মোতায়েন রয়েছে। সদস্যগণ ও ভিন্ন ভিন্ন জাতির।
কমিউনিস্ট দেশগুলো এক শহর থেকে অন্য শহরে যেতে অনুমতি লাগে। সবার পাসপোর্ট আছে। কিন্তু পাবলিকের বিড়ম্বনা। হারিয়ে যাওয়া বা গুম হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার।
একটা সিস্টেমের ভেতর দিয়ে আসা একটা জাতি হঠাৎ করে নুতন নিয়ম মেনে চলতে পারে না। তাই জনগণের মনে প্রশ্ন, গণতন্ত্র কোথায়? মুক্তি কোথায়? সমৃদ্ধি কোথায়? তাহলে পশ্চিমারা কি ধোঁকা দিয়েছে? কায়দা করে প্রতিদ্বন্দ্বী সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভেঙে দেয়া হয়েছে?
সাবেক সোভিয়েত ব্লকের কিছু কিছু দেশ ন্যাটো তে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে ন্যাটো স্ট্যান্ডার্ড নয় বলে যথাযথ মূল্য দেয়া হয়নি। ইচ্ছা থাকলেও কূটনৈতিক কারণে সেসব দেশ এখন ন্যাটো থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। সাধারণ জনগণের ও গণতন্ত্রের মোহ মুক্তি ঘটেছে। সাবেক কমিউনিস্ট ব্যবস্থায় ফিরে না গেলেও নুতন কোনো ব্যবস্থায় তারা রাশিয়ান নৈকট্যে স্বতঃস্ফূর্ত কিংবা শক্তি প্রয়োগে যোগ দিতে পারে। এ কারণেই পুতিন বাহুতে শক্তি খুঁজে পাচ্ছেন। কৌশলগত কারণে চীন রাশিয়ানদের পক্ষ নেয়ায় ন্যাটো জোটের নুতন করে হোম ওয়ার্ক করতে হচ্ছে।
লেখক: কলামিস্ট কর্নেল (অব.) মো. শাহ জাহান মোল্লা
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
আরও পড়ুন: সমস্যা কি শুধুই ইউক্রেনের?
পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে উচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ পুতিনের, বাড়ছে উত্তেজনা
বেলারুশ সীমান্তে হবে ইউক্রেন ও রাশিয়ার বৈঠক
সুইফট নেটওয়ার্ক থেকে রাশিয়াকে নিষিদ্ধের ঘোষণা
বিশ্বের অন্যতম প্রধান আর্থিক লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান সুইফট পেমেন্ট নেটওয়ার্ক থেকে রাশিয়াকে বাদ দিতে একমত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলো।
শনিবার পশ্চিমা নেতার এক যৌথ বিবৃতিতে এই ঘোষণা দেন।
এতে বলা হয়, ‘রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করা এবং সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করা যে এই যুদ্ধটি পুতিনের জন্য একটি কৌশলগত ব্যর্থতা।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন বলেছেন, ‘ইউক্রেনকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে পুতিন একটি পথে যাত্রা করেছেন, কিন্তু তিনি যা করছেন তা আসলে তার নিজের দেশের ভবিষ্যতকে ধ্বংস করছেন।’
গত সপ্তাহের শেষের দিকে ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য মিত্ররা দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা ক্রমাগতভাবে বাড়িয়েছে।
মার্কিন এবং ইউরোপীয় কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, তারা কীভাবে সর্বশেষ ব্যবস্থাগুলো বাস্তবায়ন করবেন সে বিষয়ে কাজ করছেন।
এই নিষেধাজ্ঞাগুলো বাস্তবায়ন হলে রাশিয়ান অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং পণ্য আমদানি ও রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে।
পড়ুন: ইউক্রেন সঙ্কট: রাজধানী কিয়েভে কারফিউ অব্যাহত
রুশ হামলায় ১৯৮ জন নিহত, আহত সহস্রাধিক: ইউক্রেনের মন্ত্রী