মিয়ানমার
আইসিজে’র রায়ে মিয়ানমারের আবেদন খারিজ, গতি পাবে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ: ওআইসি
আন্তর্জাতিক ইসলামিক সংস্থা (ওআইসি) বলেছে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত কর্তৃক মিয়ানমারের আপত্তিকে খারিজ করে দেয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হবে।
মুসলিম বিশ্বের সমন্বিত স্বরের সংগঠনটি বলছে, আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের এই রায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ক্রমাগত কষ্ট লাঘবের সমাধানে আরো বেশি অবদান রাখবে। ওআইসির মহাসচিব রোহিঙ্গাদের দুর্দিনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
সংগঠনটির মহাসচিব হোসেইন ইব্রাহিম ত্বহা শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
এক কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন শনিবার ওআইসি মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং রাজধানীর একটি হোটেলে তার সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশটির উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বর্বর অভিযান চালায়। এসময় তারা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে লাখ লাখ মানুষকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করে।
ওআইসি বলছে, পাঁচ বছর পরও রাখাইনের রোহিঙ্গারা স্বাধীনভাবে চলাফেরা, মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুযোগের ঘাটতি রয়েছে।
আরও বলা হয়, ‘এই বর্ষপূর্তি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য জবাবদিহিতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’
বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে বিগত পাঁচ বছর ধরে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রয়োজনীয় খাদ্য, নিরাপত্তা, আতিথেয়তা ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার প্রচেষ্টার জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানায় ওআইসি।
পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ওআইসি মহাসচিবের
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থন ও ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকা প্রশংসাযোগ্য।
ওআইসির মহাসচিব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি সহযোগিতার দৃঢ় আশ্বাস পুর্নব্যক্ত করেন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে দুর্দশাগ্রস্থতের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার প্রচেষ্ঠাকে দ্বিগুণ করার আহ্বান জানান। এর মধ্যে- তাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব প্রদান, তাদের পক্ষে নিরাপত্তার শর্ত নিশ্চিত, ত্রাণকার্যক্রম, সম্মান, স্থায়ীভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এবং আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের তাদের নিজভূমিতে ফেরত নেয়া।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে ওআইসির অব্যাহত সমর্থন চায় ঢাকা
রোহিঙ্গা সঙ্কট: আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ওআইসি
সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোর আহ্বান জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানের
মিয়ানমারের জনগণের বিরুদ্ধে সহিংস অভিযান বন্ধ করতে সেনাবাহিনীর ওপর চাপ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট।
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে বেসামরিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতার জন্য জোর দেয়ার আহ্বান জানান।
বৃহস্পতিবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাচেলেট বলেন, ‘আমরা সেখানে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন নথিভুক্ত করছি, যার মধ্যে রয়েছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন এবং বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে আক্রমণ যা মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের সমান হতে পারে।’
মিয়ানমার সেনাবাহিনী ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট দেশটির রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক আক্রমণ পরিচালনা করে। এরপর প্রায় সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা নারী, শিশু এবং পুরুষ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) বাংলাদেশে আসার পাঁচ বছর পূর্তি পালিত হয়েছে।
মিশেল ব্যাচেলেট বলেন, গ্রাম ও আবাসিক এলাকায় বিমান হামলা ও কামানের ব্যবহার তীব্র হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান বলেন, ‘সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার বৃদ্ধি ইঙ্গিত করে যে, দেশের শেষ মোটামুটি স্থিতিশীল এলাকায় সশস্ত্র সংঘাত চলছে।’
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী প্রায়ই তাতমাদও এবং আরাকান আর্মির যোদ্ধাদের মধ্যে ধরা পড়েছে বা সরাসরি অভিযানে তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
পড়ুন: যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা: মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের সমর্থনে আইনি পদক্ষেপ
রোহিঙ্গা সংকট: তৃতীয় দেশে পুনর্বাসন বিবেচনা করছে জাপান
রোহিঙ্গা সংকট: তৃতীয় দেশে পুনর্বাসন বিবেচনা করছে জাপান
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য ‘তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের বিষয়টি বিবেচনা করা দরকার’।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের মাধ্যমে উদ্বাস্তুদের গ্রহণ করা একটি স্থায়ী সমাধান। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে শরণার্থী সংকটের বোঝা ভাগ করে নেয়ার একটি উপায়।’
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে জাপান এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে তৃতীয়-দেশে পুনর্বাসনের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে শরণার্থীদের গ্রহণ করার জন্য একটি পাইলট কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাসহ ৫৪টি পরিবার ও ২০০ জনকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, তারা ইউএনএইচসিআর-এর নির্দেশনায় জাপানে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের আরও সম্ভাবনা বিবেচনা করতে পারে।
নাওকি বলেন, জাপান, বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে একসঙ্গে মিয়ানমারে নিরাপদ, স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য পরিবেশ তৈরি করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।
জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, তার দেশ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাহিদার প্রতি গভীর মনোযোগ দিয়ে সক্রিয়ভাবে মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ইস্যু আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকারে থাকবে: ইইউ
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সংকট: প্রত্যাবাসনের পথ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত নোয়েলিন হাইজার, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, ঢাকার ইউএস দূতাবাসের আঞ্চলিক উদ্বাস্তু সমন্বয়কারী ম্যাকেঞ্জি রো এবং ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বক্তব্য দেন।
রাষ্ট্রদূত নাওকি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের মৌলিক সমাধান হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা।
তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে জাপান বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত থাকবে। আমরা দ্বিপাক্ষিক সংলাপের মাধ্যমে দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করি। আমি দ্রুত প্রত্যাবাসনের জরুরি প্রয়োজন দেখছি।
মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয় যে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ গত পাঁচ বছরে মানবিক অবস্থান দেখিয়েছে এবং উদারভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে।
তিনি বলেন, জাপান অব্যাহতভাবে বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করবে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে বিভিন্ন দেশের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন: ব্রিটিশ হাইকমিশনার
রোহিঙ্গাদের স্বদেশে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে বিভিন্ন দেশের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন: ব্রিটিশ হাইকমিশনার
রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে মিয়ানমার সরকারের ওপর বিভিন্ন দেশের চাপ প্রয়োগ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদপুর পৌরসভায় শহুরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ডিকসন বলেন, ‘আজ রোহিঙ্গা ট্রাজেডির পঞ্চম বর্ষপূর্তি। রোহিঙ্গারা অনেক ভাগ্যবান, যখন লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছিল, তখন এদেশের সরকারের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সহযোগিতা পেয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: স্বাভাবিক জীবনের অপেক্ষায় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা
তিনি বলেন, ‘এটি খুব সহজ নয় যে এত তাড়াতাড়ি বিষয়টি সমাধান হবে। এজন্য আমাদের সঙ্গে অন্যান্য দেশের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। রোহিঙ্গারা যদি চায়, তাদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে দিতে চাই। এছাড়া আমরা যখনই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবো, তখনই তাদের দেশে ফিরে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা যদি এদেশেই থাকতে চায় তাহলে স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে ক্যাম্পে অবশ্যই তাদের স্বাভাবিক জীবনমান, রোহিঙ্গা শিশুদের লেখাপড়া ও সার্বিক বিষয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’
এর আগে তিনি দুই দিনের সফরে চাঁদপুরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প এর বাস্তবায়কৃত কাজ মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করেন।
এসময় চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল, ইউএনডিপির ডেপুটি আবাসিক প্রতিনিধি বেন গুয়েন, এলজিডির যুগ্ম সচিব মো. মাসুম পাটওয়ারীসহ চাঁদপুর পৌরসভার কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের স্বদেশে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি প্রতিমন্ত্রীর আহ্বান
রোহিঙ্গা ইস্যু আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকারে থাকবে: ইইউ
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থাকা অবশিষ্ট কয়েক লাখ রোহিঙ্গার সংকট এবং নির্যাতনের শিকার হওয়ার কারণগুলোর সমাধান আন্তর্জাতিকভাবে অবশ্যই সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে।
রোহিঙ্গা সংকটের পঞ্চম বর্ষপূর্তিতে ইইউ কমিশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট বোরেল, কমিশনার লেনারসিক এবং কমিশনার উরপিলাইনেন বলেন, ‘ইইউ আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারিক কার্যক্রমকে পূর্ণ সমর্থন করে।’
ইইউ শরণার্থী রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে নিরাপদে, স্থায়ীভাবে ও মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরিয়ে আনার পক্ষে কাজ চালিয়ে যাবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইউরোপীয় কমিশন রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত অপরাধের সম্পূর্ণ দায় মিয়ানমারের নিশ্চিত করতে স্বাধীন তদন্ত কৌশলের কার্যক্রমে সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী নির্যাতন করে রাখাইন রাজ্য থেকে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করে দেশ ত্যাগ হতে বাধ্য করে, যার প্রত্যক্ষদর্শী হয় বিশ্ববাসী।
যারা সেখান থেকে বিতারিত হয়েছিল তাদের বিপুল সংখ্যক মানুষ বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় অস্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পাঁচ বছর পরও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা ও তাদেরকে নিজভূমিতে ফেরার শর্ত তৈরি করতে মিয়ানমারকে আহ্বান জানানো হলেও রোহিঙ্গাদের ভাগ্য এখনও অনিশ্চিত রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের কয়েক দশক ধরে আশ্রয় দিয়ে আসছে। যা ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থীর নিরাপত্তা এবং মৌলিক মানবিক চাহিদা সরবরাহ
নিশ্চিত করার হার বৃদ্ধি পেয়ে দশ লাখে দাঁড়িয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইইউ আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে মানবিক ও সংকটকালীন সহযোগিতা করতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে। পাঁচ বছর পর এককভাবে মানবিক সহযোগিতা করার সীমাবদ্ধতায় এসে পৌঁছেছে।’
এতে বলা হয়, তাদের প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত এই সংকটের মাত্রাগুলিকে চিহ্নিত করা, মানবিক, উন্নয়ন এবং শান্তির জন্য আরও টেকসই অন্তবর্তীকালীন সমাধানগুলো চিহ্নিত করা ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
এই প্রক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন শান্তি ও পুণর্মিলনের আন্তর্জাতিক সংলাপে সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
মিয়ানমার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধসহ ভয়ঙ্কর সব অপরাধ করেছে।
পড়ুন: স্বাভাবিক জীবনের অপেক্ষায় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এসব অপরাধের জবাবদিহি প্রয়োজন। আজকের সামরিক নেতৃত্বাধীন
মিয়ানমারের জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত।’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন করার তীব্র নিন্দা পুর্নব্যক্ত করেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীসহ মিয়ানমারের সকল মানুষ, অন্যান্য সংখ্যালুঘু এবং তাদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খার প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন জ্ঞাপন করে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে: জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানকে শেখ হাসিনা
রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও সহায়তা চায় ইউএনএইচসিআর
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্ক রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যাতে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে জীবনামানের উন্নয়ন ঘটাতে পারে তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আরও বেশি বিনিয়োগ আহ্বান করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের এই সংস্থাটি বলেছে, এর মাধ্যমে শরণার্থীরা বাংলাদেশে মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে এবং স্বেচ্ছায় ও নিরাপদে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পর তাদের সম্প্রদায়কে সমর্থন করতে এবং সর্বোপরি তাদের জীবন পুনর্গঠনের জন্য প্রস্তুত করতে সহায়তা করবে।
ইউএনএইচসিআর বলেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন রক্ষাকারী সুরক্ষা ও সহায়তা প্রদানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে গুরুত্বপূর্ণ এই তহবিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
২০২০ এর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং পাঁচ লাখের বেশি বাংলাদেশি জনগণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ৮৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি সহায়তা চাওয়া হয়। এখন পর্যন্ত যার মাত্র ৪৯ শতাংশ তথা ৪২৬.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আদায় করা সম্ভব হয়েছে।
একইসঙ্গে ইউএনএইচসিআর বলেছে, রোহিঙ্গারা যাতে বাস্তুচ্যুত হয়ে না থাকে। এবং স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের পরিস্থিতি তৈরি করতে রাজনৈতিক সংলাপ ও কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য দ্বিগুণ প্রচেষ্টা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও বেশি কিছু করতে হবে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি: মন্ত্রী ওয়াং
রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবেন না, সহযোগিতা বাড়ান: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ব্যাচেলেট
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে: জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানকে শেখ হাসিনা
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি: মন্ত্রী ওয়াং
রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান খুঁজতে চীন আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে সফররত দেশটির স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
কৃষিমন্ত্রী মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মিয়ানমার একটি কঠিন দেশ, আমরা সঙ্কট সমাধানে আন্তরিকভাবে কাজ করছি এবং ভবিষ্যতেও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।‘
এর আগে শনিবার বিকাল ৫টা ১৮ মিনিটের দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে কৃষিমন্ত্রী মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
রাজ্জাক ওয়াংকে জানান, দেশে সম্পদ সীমিত থাকায় বাংলাদেশ এত বড় বোঝা বহন করতে পারছে না।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা থাকার কারণে দেশের সামাজিক নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব পড়ছে।
তিনি বলেন, এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘নতুন স্তরে’ উন্নীত করার আশা নিয়ে আজ (রবিবার) বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।
বিমানবন্দর থেকে মন্ত্রী ওয়াং ধানমন্ডি ৩২-এ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যান এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখানে তিনি দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনয়িং বলেছেন, ‘আমরা আশা করি এই সফরটি দুই দেশের নেতাদের মধ্যে সাধারণ বোঝাপড়াকে আরও কার্যকর করার, পারস্পরিক উপকারী সহযোগিতাকে আরও গভীর করার এবং সম্পর্ককে একটি নতুন স্তরে উন্নীত করার সুযোগ দেবে।’
তিনি বলেন, তার দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে ‘অত্যন্ত মূল্যবান’ বলে মনে করেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের আমন্ত্রণে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করছেন।
পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর প্রতি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভিয়েতনামের সহযোগিতার আহ্বান ঢাকার
মিয়ানমারের ওপর বন্ধুত্বপূর্ণ প্রভাব প্রয়োগ করে তাদের নাগরিকদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে ভিয়েতনামের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
৪ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে ভিয়েতনামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুই থান সোনের সাথে বৈঠকে এ আহ্বান জানান।
বৈঠকে ড. মোমেন বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে ভিয়েতনামকে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানান। বিশেষ করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল, কৃষি ও আইসিটির মতো অগ্রাধিকার খাতে ভিয়েতনামকে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য নিয়মিতভাবে প্রযুক্তিগত দক্ষতা বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ড. মোমেন আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার (এসডিপি) হিসেবে বাংলাদেশের প্রার্থীতার পক্ষে ভিয়েতনামের সমর্থনও প্রত্যাশা করেন।
উল্লেখ্য, ড. মোমেন ২৯তম আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের (এআরএফ) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে বর্তমানে কম্বোডিয়া সফরে রয়েছেন।
পড়ুন: চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দরের সুবিধা নিতে পারে নেপাল: প্রধানমন্ত্রী
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে বাংলাদেশ-তুর্কিয়ে বিজনেস ফোরাম গঠিত
মিয়ানমারে রাজনৈতিক বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড়
জান্তা সরকার চারজন রাজনৈতিক বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় মঙ্গলবার মিয়ানমারে তীব্র প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারও এর নিন্দা জানাচ্ছে। সেইসঙ্গে আশংকা করা হচ্ছে, সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিকে যে সহিংসতা ও অস্থিরতা ঘিরে রেখেছে তা অবসানের প্রাথমিক প্রচেষ্টা বিফলে যাবে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত নেত্রী অং সাং সুচির কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার পর থেকে মিয়ানমারের সামরিক সরকারে বিরুদ্ধে হাজার হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। কিন্ত সোমবারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বিগত এক দশকে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় ফরমানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত নোয়েলিন হেজারের সঙ্গে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফু্দ্দিন আব্দুল্লাহ কুয়ালামপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা মনে করি, এটি মানবতা বিরোধী অপরাধ।’
তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহে কম্বোডিয়ায় শুরু হতে যাওয়া অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) ভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এই মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের ওপর আলোকপাত করা হবে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে ৪ গণতন্ত্রপন্থীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
মিয়ানমার প্রভাবশালী গ্রুপ আশিয়ানের সদস্য। যে গ্রুপ গত বছর সকল পক্ষের সঙ্গে সংলাপে মিয়ানমারের ব্যাপারে পাঁচটি বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছেছে। এগুলো হলো- মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা করা, দ্রুত সহিংসতা বন্ধ এবং একজন বিশেষ দূতকে সকল পক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো।
এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কথা উল্লেখ করে সাইফু্দ্দিন আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা দেখছি, এই পাঁচটি বিষয়কে সামনে রেখে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জান্তা সরকার সেগুলোর সঙ্গে তামাশা করছে।’
হেজার বলেন, ‘জাতিসংঘ এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকে একজন ব্যক্তির বেঁচে থাকার অধিকার, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাকে ক্ষুন্ন করেছে।’
ব্যাংককে মিয়ানমারের দূতাবাসের সামনে প্রবল বর্ষণের মধ্যে শত শত গণতন্ত্রপন্থী পতাকা উড়িয়ে শ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করছে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমার বিষয়ক আসিয়ানের বিশেষ দূতকে সু চির সঙ্গে দেখা করার আহ্বান
জনাকীর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে এক তরুণ একটি নীল মাইকে চিৎকার করে বলছে, জান্তা তার নৃশংস ক্ষমতা ব্যবহার করছে, বিক্ষোভকারীদের অনেকে অং সান সুচি ও মৃত্যুদণ্ড দেয়া চারজনের ছবি প্রদর্শন করছেন।’
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ফিয়ো জেয়া থো(৪১) সুচির দলের সাবেক একজন আইন প্রণেতা, কিয়ে মিন ইউ(৫৩)প্রবীণ গণতন্ত্রীপন্থী কর্মী যিনি কো জিমি নামে বেশ পরিচিত। তাদেরকে অভিযুক্ত করতে ও মৃত্যুদণ্ড দিতে সামরিক আদালত সব চেষ্টাই করেছে, এমনকি আপিলের কোনো সুযোগও রাখেনি।
মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে রায় কার্যকর করা হয়েছে, যা তাদের পরিবারের সদস্যদেরকেও বিস্মিত করেছে।
ফিয়ো জেয়া থো-এর মা কিন উইন মে সংবাদ সংস্থা এপিকে বলেন, তিনি শুক্রবার তার সন্তানের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন এবং তিনি পড়ার জন্য চশমা, বই ও খরচের জন্য কিছু টাকা দিতে বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি খুবই মর্মাহত হই যখন দণ্ড কার্যকরের খবর শুনতে পেয়েছিলাম, আমি মনে করেছিলাম আরও কিছু সময় পাবো।’
কিন উইন বলেন, তিনি আশা করছেন তার সন্তান ও অন্যদের মৃত্যুকে বীরত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি তাদের জন্য গর্বিত, তারা দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।’
এই চার রাজনৈতিক নেতার দণ্ড কার্যকর তাৎক্ষণিকভাবে সারাবিশ্বে ভবিষ্যৎ মৃত্যুদণ্ড বন্ধের দাবি ওঠে এবং রাজনৈতিকভাবে বড় পরিসরে এর নিন্দা জানানো হয়।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো প্রয়োজন: জাতিসংঘ
রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা: আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের আপত্তি খারিজ
মিয়ানমারের মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো নিয়ে দেশটির শাসকদের অভিযুক্ত করে দায়ের করা মামলা অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে শুক্রবার নেপিডোর প্রাথমিক আপত্তি খারিজ করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে)।
রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতাকে অধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘের এক তদন্ত প্রতিবেদনে ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘনের সমতুল্য বলা হয়েছে। মার্চে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংস দমন-পীড়ন গণহত্যার সমান।
বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন ইউকে-এর সভাপতি তুন খিন এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘ছয় লাখ রোহিঙ্গা এখনও গণহত্যার সম্মুখীন। বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে, তারা ন্যায়বিচারের আশায় অপেক্ষা করছে।’
রোহিঙ্গাদের বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষোভের মধ্যে মিয়ানমার গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘন করছে বলে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে গাম্বিয়া। গাম্বিয়া ও মিয়ানমার উভয়ই কনভেনশনের পক্ষ এবং সব স্বাক্ষরকারীর এটি কার্যকর নিশ্চিত করার দায়িত্ব রয়েছে বলে যুক্তি দেখায় দেশটি।
মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবীরা ফেব্রুয়ারিতে যুক্তি দেন, বিশ্ব আদালত কেবল রাষ্ট্রের মধ্যে মামলার শুনানি করে এবং ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার পক্ষ থেকে গাম্বিয়া রোহিঙ্গাদের অভিযোগ আনায় মামলাটি বাতিল করা উচিত।
তারা আরও দাবি করে, গাম্বিয়া মামলাটি আদালতে আনতে পারে না কারণ এটি মিয়ানমারের ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত না এবং মামলা দায়েরের আগে দুই দেশের মধ্যে আইনি বিরোধ ছিল না।
গাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচারমন্ত্রী দাউদা জালো ফেব্রুয়ারিতে বলেন, মামলাটি অগ্রসর হওয়া উচিত এবং এটি ওআইসি নয়, তার দেশই এনেছে।
জ্যালো আদালতকে বলেন, ‘আমরা কারও প্রক্সি নই।’
এ বিষয়ে নেদারল্যান্ডস ও কানাডা গাম্বিয়াকে সমর্থন করছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হামলার পর ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে একটি ক্লিয়ারেন্স অভিযান শুরু করে। এতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে এবং মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, হত্যা ও হাজার হাজার বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে।
তবে গত বছর মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে আইসিজের মামলাটি জটিল হয়ে পড়ে। ফেব্রুয়ারির শুনানিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির সামরিক বাহিনীর গঠিত সরকারকে দেশটির প্রতিনিধিত্ব করার অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়।
পড়ুন: রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার এখতিয়ার নিয়ে রায় দেবেন জাতিসংঘের আদালত
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে থাই রাষ্ট্রদূত