বিদেশ
বড়দিনে ব্রাজিলে গোলাগুলিতে নিহত ৫
ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর ফোর্তালেজায় শনিবার ভোরে একটি ফুটবল মাঠে বড়দিন উদযাপনের সময় গোলাগুলিতে পাঁচ জন নিহত ও ছয় জন আহত হয়েছেন। সিয়েরা রাজ্যের পাবলিক সিকিউরিটি সেক্রেটারিয়েট এ তথ্য জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: জেরুজালেমে অস্থিরতায় গাজা-ইসরায়েল ব্যাপক গোলাগুলি
সংস্থাটির প্রেস অফিস থেকে জানানো হয়, এই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, সন্ত্রাসী দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে মার্কেটে গোলাগুলিতে নিহত ১০
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে দু’জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের একজনের বয়স ২১, অপরজনের ২৬। তাদের বিরদ্ধে অপরাধ সংঘটন, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, চুরি ও শান্তি ভঙ্গের মতো অভিযোগে পুলিশের কাছে মামলার রেকর্ড ছিল।
শনিবারের মধ্যে খালেদাকে বিদেশ যেতে না দিলে আন্দোলন: বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা
আগামী শনিবারের মধ্যে সরকার খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না দিলে আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মঙ্গলবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের (বিজেএএফ) আয়োজিত এক সমাবেশে বিজেএএফ-এর সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, আমরা সরকারকে চার দিন সময় দিচ্ছি- বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার (আমাদের দাবি পূরণের জন্য)। অন্যথায় আমরা আইনজীবীরা রবিবার সারা দেশে অনশন করব।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দাবি মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করতে তারা ধীরে ধীরে আন্দোলন জোরদার করবে।
ফজলুর রহমান বলেন, এমন সময় আসবে যখন দেশের মানুষ মিছিল নিয়ে রাজপথে নামবে। সেই দিন বেশি দূরে নয়। আসুন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার আন্দোলন শুরু করি।
খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর আইনি বিকল্প খুঁজে বের করতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ফজলুর রহমান বলেন, আইন মানুষের জীবনের চেয়ে বড় নয়।
আরও পড়ুন: এবার মুরাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি বিএনপির
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ৪০১ ধারায় বিএনপি চেয়ারপার্সনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।
ফখরুল বলেন, আইন নয়, দখলদার সরকার এখানে বাধা।
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে বিএনপির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করায় আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সমাবেশ আমাদের আশার সঞ্চার করেছে। আমরা এই দাবিতে রাস্তায় নেমেছি। সারাদেশের আইনজীবীরা আজ (মঙ্গলবার) আন্দোলন করার ঘোষণা দিয়ে আমাদের অনুপ্রাণিত করেছেন। আমরা নিশ্চয়ই সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিয়ে এক প্রবল গণআন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে বিদেশে পাঠাতে পারব।
খালেদা জিয়ার শারিরীক অবস্থা সম্পর্কে ফখরুল বলেন, তিনি এত অসুস্থ যে আমি বলে বোঝাতে পারব না। তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। অবিলম্বে বিদেশের যেকোনো উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে তার চিকিৎসা করা দরকার।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে না দিলে কোটি মানুষ রাজপথে নামবে: ফখরুল
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না দিলে কোটি কোটি মানুষ রাজপথে নামবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপি।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না করলে কোটি কোটি মানুষ রাজপথে নামবে। তাই, নিজেদের স্বার্থেই দেরি না করে তাকে (খালেদাকে) বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা নিন।’
রবিবার বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত এক কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
সমাবেশে তিনি অভিযোগ করেন, সরকার বিনা চিকিৎসায় খালেদা জিয়াকে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে বাংলাদেশের অস্তিত্বকে ঝুঁকিতে ফেলার ‘ষড়যন্ত্র’ করছে।
এসময় ফখরুল বলেন,‘আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করুন, যাতে তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারেন এবং সুস্থ হয়ে দেশে ফিরতে পারেন। অন্যথায়, আপনারা পালানোর পথও খুঁজে পাবেন না এবং আপনাদের অবশ্যই জনগণের আদালতে দাঁড়াতে হবে।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি স্যাঁতসেঁতে, পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ ভবনে দুই বছরের বেশি সময় ধরে রাখা হয়েছিল, যার কারণে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’
তিনি বলেন,‘এই অসুস্থতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এভারকেয়ার হাসপাতালের ডাক্তার এবং অন্যান্য চিকিৎসকরা বলছেন তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে না নিয়ে গেলে তার জীবন বাঁচানো কঠিন হবে।’
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সিলেটে কাফনের কাপড় পড়ে ছাত্রদলের মিছিল
ছাত্রদের লাল কার্ড দেখানো
সড়ক বিশৃঙ্খলা রোধে সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন,‘আমি পত্রিকায় দেখেছি, তারা (ছাত্ররা) সরকারকে লাল কার্ড দেখিয়েছে। শিক্ষার্থীরা কেন রাস্তায় নামছে? তার কারণ আপনারা কথা রাখেন নি!’
তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখার আশ্বাস দিয়েছিল সরকার বলে ফখরুল বলেন, আপনারা সঠিকভাবে সড়ক নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, এটা আপনাদের ব্যর্থতা।’
বিএনপির এই নেতা বলেন,‘জনগণ সরকারের ওপর চরম ক্ষুব্ধ, কারণ কোনো কিছুর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই।’
আওয়ামী লীগ এখন বিএনপির ভূতে ভীত
ফখরুল বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের বিএনপির ভূত ছাড়া আর কিছু দেখেন না। তিনি সব সময় বিএনপির কথা বলেন। তিনি বিএনপিকে নিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন,‘ওবায়দুল কাদের বিএনপির অস্তিত্ব দেখতে না পেলেও দলের ভয়ে সব সময় বিএনপিকে নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করেন।’
তিনি শ্রমিকদলের নেতাকর্মীদের আরও সক্রিয় হয়ে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার হতে সহকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়াকে ‘হত্যার’ ষড়যন্ত্র করছে সরকার: ফখরুল
নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন
ফখরুল বলেন, ‘সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করায় সাম্প্রতিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় বহু মানুষ মারা গেছে।
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন না হওয়ায় মানুষ ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছে না।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা আরও বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনারকে অপসারণ করাই যথেষ্ট নয় কারণ সরকারকেও সরাতে হবে। জনগণের ভোটে সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে।
সরকার উন্নয়নের কথা বললেও সাধারণ মানুষের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি বলে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন,‘বরং দারিদ্রের সংখ্যা দুই কোটি থেকে ছয় কোটি হয়েছে। এ কারণেই আমরা, দেশের মানুষ, ক্ষমতার পরিবর্তন চাই। আর তাই এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।’
প্রসঙ্গত, ৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ১৩ নভেম্বর থেকে বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গত ২৮ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসনের মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা জানান, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে অবিলম্বে বিদেশে নিয়ে যেতে হবে।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার খারাপ কিছু হলে সব দায় সরকারকে নিতে হবে: বিএনপি
খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর দাবি স্বাস্থ্যগত নয়, রাজনৈতিক: তথ্যমন্ত্রী
খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর দাবি স্বাস্থ্যগত নয়, রাজনৈতিক বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাসান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘তারা বেগম জিয়াকে বিদেশ পাঠিয়ে দিতে চান। তারা বিশেষত বেগম জিয়াকে পাঠাতে চান লন্ডনে, যেখানে তারেক জিয়া আছে। দন্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়েও বেগম জিয়া যাতে সেখান থেকে আবার রাজনীতি করতে পারেন। তারেক রহমানও দন্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়ে সেখান থেকে রাজনীতি করছেন। বেগম জিয়াকে পাঠিয়ে দিয়ে তারা সে কাজটি করতে চান।’
বুধবার সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চট্টগ্রাম জার্নালিস্ট ফোরামের নবনির্বাচিত পরিষদের সাথে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জীবন সংকটাপন্ন-এটি কে বলেছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রিজভীসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। কোন ডাক্তার এখনও বলেননি বেগম খালেদা জিয়ার জীবন সংকটাপন্ন। এখন বিএনপির নেতারা কি চিকিৎসক হয়ে গেছেন, এটি আমার প্রশ্ন। এখন বিএনপি নেতাদের প্রেসক্রিপশনে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে কিনা, সেটিও এখন প্রশ্ন।’
আরও পড়ুন: বেগম জিয়াকে বিদেশে নেয়ার দাবি উদ্দেশ্য প্রণোদিত: তথ্যমন্ত্রীমন্ত্রী বলেন, ‘অতীতেও আমরা দেখেছি, বেগম জিয়া যখন অসুস্থ হয়েছেন তখনও সব সময় তারা দাবি তুলেছে, বেগম জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে হবে। হাঁটু ও গায়ের তাপমাত্রা বেড়ে গেলেও তাকে বিদেশ পাঠাতে হবে, কিছু হলেই বিদেশ পাঠাতে হবে- এই জিকির তোলার কারণ কী? কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’তিনি বলেন, ‘ডাক্তার বা এভারকেয়ার হাসপাতাল এ দাবি দিচ্ছে না, এ দাবি দিচ্ছে বিএনপির নেতারা।’
আরও পড়ুন: আইন-আদালত মানে না বলেই বিএনপি দায়িত্বহীন কথা বলে: তথ্যমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী যে মহানুভবতা দেখিয়েছেন, খালেদা জিয়া কি তা পারতেন: তথ্যমন্ত্রী
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য ৫ দলের আবেদন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক
বিএনপির চেয়ারপারর্সন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা আবেদন দিয়েছে ২০-দলীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত পাঁচ দল।
রবিবার দুপুর ১২টার দিকে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরের মন্ত্রীর সাথে বৈঠকের সময় পাঁচ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা এই আবেদন তুলে দেন।
নেতারা হলেন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ক্বারী মোহাম্মদ আবু তাহের, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির মহাসচিব শাহদাৎ হোসেন সেলিম।পরে সাংবাদিকদের সাথেও কথা বলেন জোট নেতারা।
২০ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, আবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদারতার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
তিনি বলেন, ‘আমরা পাঁচটি রাজনৈতিক দলের প্রধানরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাতের জন্য এসেছিলাম। আমাদের আসার উদ্দেশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা একটি বিষয়ে, বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা। তাকে বিদেশে পাঠানো। এটির জন্যই আমরা এসেছি। লিখিত আবেদন জমা দিয়েছি। মুখে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করেছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে কথা শুনেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাবেন এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।’
আরও পড়ুন: অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়া উচিত: রেজা কিবরিয়া
ইব্রাহিম বলেন, ‘আমাদের আবেদনের সারমর্ম, বেগম খালেদা জিয়া এতটাই গুরুতর অসুস্থ্য যে দেশে চিকিৎসার মাধ্যমে তার সুস্থ্য হওয়ার সম্ভাবনা কম। রাজনীতির সব মত পার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে, অতীতের ভুল ভ্রান্তিকে ভুলে গিয়ে একান্তভাবে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্বরুপ সহমর্মীতা প্রদর্শন করে সরকার যেন বেগম জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যক্তিগত আবেদন।’
‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অনুমতি দিলে হয় সরকার বন্দোবস্ত করে পাঠাবে অথবা পরিবার বা দল বন্দোবস্ত করে পাঠাবে। এই কাজটি যদি করা হয় বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে এটা সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিকতার, উদারতার সৌজন্যবোধের দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে, ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে’, এমন মন্তব্য করেন ইব্রাহিম।
বঙ্গবন্ধুর উদারতার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বাক্ষী যেহেতু আমি একজন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধুর আমলে আমি সেনাবাহিনীতে ছিলাম, তার আমলেই বীরপ্রতিক খেতাব পেয়েছি। তিনি কত উদার ও মহৎ ছিলেন, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের ভুলভ্রান্তিকে কিভাবে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন। তাই আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি, প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা আপনি তার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে এই মহানুভবতা প্রদর্শন করুন।’
অতীতে এমন কোনো উদাহরণ আছে কিনা জানতে চাইলে ইব্রাহিম বলেন, ‘আমরা বলেছি অতীতের কোনো রেফারেন্স কোনো আইন দৃষ্টান্তের প্রয়োজন নেই। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) এককভাবে এ সিদ্ধান্ত নিন।’
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছি: ফখরুল
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য -
২০ দলের পাঁচ নেতা খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর আবেদন করলেও আইনে এই ধরনের কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। পাঁচ দলের নেতাদের সাথে কথা শেষে তাদের দেয়া আবেদনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘এরা পাঁচ দলের পাঁচ প্রতিনিধি, যারা বিএনপির ২০ দলের জোটের সদস্য তারা এসেছিলেন। তাদের আবেদন ছিল, খালেদা জিয়া অসুস্থ্য তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন, তিনি একদম জীবনের শেষ প্রান্তে এসেছেন। সুতরাং তাকে আরও উন্নত চিকিৎসা দেয়ার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া যায় কিনা, প্রধানমন্ত্রীর কাছে সে আবেদন নিয়ে এসেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি, এর আগেও খালেদা জিয়ার ছোট ভাই একটি আবেদন করেছিলেন সেটিও আমি আইন মন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য পাঠিয়েছিলাম। আইনমন্ত্রী যথাযথভাবে পার্লামেন্টে প্রশ্ন উত্তরের সময় বিস্তারিত বলেছেন। আমি এটা বলার পরেও তারা বলছেন, এটা মানবিক কারণে দেয়া যায় কিনা সে পত্র দিয়েছেন। এটা আমি যথাযথভাবে আবার যেখানে প্রয়োজন পাঠিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেবো।’
‘বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনা যাবে বলে আইনমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন সে বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন তো যে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এখানে আসতে পারেন। আমাদের হাসপাতালগুলো ওয়েল ইকুইপড। কাজেই বিদেশি ডাক্তার আসলে যে চিকিৎসা বিদেশে করা যায় সেটা এখানেও করতে পারেন’, বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘জেনারেল ইব্রাহিম আমাকে বলেছেন এটা কোনো উদাহরণ বা আইন নয় এটা প্রধানমন্ত্রী যেভাবে ছুটে গিয়েছিলেন কোকোর ইন্তেকালের পর আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। সে সময় কিন্তু খালেদা জিয়ার বাসভবনের গেটটিও খোলা হয় নি। এগুলো সবই তারা জানেন। তারপরও তারা এটা বলছেন। ওনারা বলেছেন অতীতে যা ঘটেছে সেগুলোকে ভুলে গিয়ে তিনি যেন উদাহরণ তৈরি করেন সেটা বলেছেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটার আইন অনুযায়ী কোনো স্কোপ নেই। প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে করতে পারেন এটা ওনারা বলে গেছেন। কিন্তু আইনের ভাষায় বলতে গেলে এটার কোনো স্কোপ নেই।’
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে সোমবার বিএনপির সমাবেশ
ফের খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর অনুমতি চেয়েছে পরিবার
দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে আবারও সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার।
বৃহস্পতিবার পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জমা দেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা জানান।
খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতা বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদার) ছোট ভাই, শামীম ইস্কান্দার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন।’
আবেদনে শামীম ইস্কান্দার খালেদা জিয়াকে আদালতের মাধ্যমে জামিন দিয়ে বা অনুমতি দিয়ে বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের সদস্য ডা. আ জ ম জাহিদ হোসেনও বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য পঞ্চমবারের মতো সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছে তার পরিবার।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দেশব্যাপী দোয়া মাহফিল
গত বছরের আগস্টে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার পরিবার সরকারের কাছে আবেদন করেছিল, কিন্তু সরকার এই বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল যে একজন দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির এই সুযোগ পাওয়ার সুযোগ নেই।
বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া।
শনিবার, তাকে ফলো-আপ চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে পুনরায় ভর্তি করা হয়েছে।
এ বছর তৃতীয়বারের মতো স্বাস্থ্য জটিলতায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৬ বছর বয়সী বিএনপি চেয়ারপারর্সন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, চক্ষু ও দাঁতের জটিলতায় ভুগছেন।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দেশব্যাপী দোয়া মাহফিল
তার মেডিকেল টিমের একজন চিকিৎসক বলেছেন, খালেদা জিয়া বর্তমানে হৃদযন্ত্রের জটিল সমস্যায় ভুগছেন। তার রক্তে শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং তার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেছে।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে, সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ছয় মাসের জন্য কারাগার থেকে মুক্তি দেয়।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর সরকার চতুর্থবারের মতো তার কারাবাসের মেয়াদ স্থগিত করে শর্ত দিয়েছিল যে তিনি দেশ ত্যাগ করবেন না এবং তার গুলশানের বাড়িতে থাকবেন।
আরও পড়ুন: সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে খালেদা জিয়াকে
খালেদা জিয়ার বায়োপসি প্রতিবেদন বিদেশে পাঠানো হয়েছে: ডা. জাহিদ
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বায়োপসি প্রতিবেদন পর্যালোচনার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।
সোমবার ডা. জাহিদ ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের (খালেদা) বায়োপসি প্রতিবেদন পেয়েছি এবং পর্যালোচনার জন্য তা বিদেশ পাঠানো হয়েছে।’
বায়োপসি প্রতিবেদন অনুযায়ী খালেদার চিকিৎসা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তবে প্রতিবেদন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান জাহিদ। তিনি বলেন, ‘পর্যালোচা প্রতিবেদন ছাড়া ফলাফল সম্পর্কে আমরা কোনো মন্তব্য করতে পারবো না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক জ্যৈষ্ঠ নেতা বলেন, ফলাফল নিয়ে কিছু দ্বিধা দূর করতে খালেদার বায়োপসি প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়েছে।
২৫ অক্টোবর খালেদা জিয়ার শরীরের একটি অংশে ছোট লাম্প থাকায় বায়োপসি করানো হয়।
১২ অক্টোবর খালেদা জিয়া জ্বর এবং অন্যান্য কিছু স্বাস্থ্য জটিলতায় দ্বিতীয়বারের জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়া ভালো আছেন: ফখরুল
এর আগে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সন। তার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি বাত, ডায়াবেটিস, চক্ষু ও দাঁতের জটিলতায় ভুগছেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে তার পরিবার এই বছরের মে এবং আগস্ট মাসে দুইবার সরকারের কাছে আবেদন করেছিল। কিন্তু সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছিল যে একজন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির এই সুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই।
গত ২৭ এপ্রিল খালেদা জিয়া করোনা আক্রান্ত হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনা-পরবর্তী জটিলতা এবং অন্যান্য কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য তিনি ১৯ জুন পর্যন্ত সেখানে চিকিৎসা নেন।
পড়ুন: খালেদা জিয়া বিপদমুক্ত: মির্জা ফখরুল
ঢাকা এখন বিষাক্ত গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে: বিএনপি
বিদেশ যেতে ব্যর্থ যুবকের ‘আত্মহনন’
প্রবাসে যেতে ব্যর্থ হয়ে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার এক যুবক আত্মহত্যা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার সকালে খবর পেয়ে পুলিশ ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করে।
উপজেলার গন্ধব্যপুর ইউনিয়নের আহম্মদপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত ইমাম হোসেন ওই গ্রামের মোহাম্মদ উল্যাহর ছেলে।
আরও পড়ুন: পরকীয়ার জেরে স্বামীকে হত্যা, আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ায় মামলা
স্থানীয় ইউপি সদস্য ফিরোজ আহমেদ হীরা বলেন, বিদেশ যাওয়ার টাকা জোগান দিতে দেরি করায় বাবার ওপর অভিমান করেন ইমাম হোসেন। ভোর রাতে নিজ ঘরে সকলের অগোচরে ফাঁস দেন তিনি। পরে পুলিশে খবর দিলে তারা লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: ফরিদগঞ্জে দুই নারীর ‘আত্মহত্যা’
হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) মো. হারুন অর রশিদ বলেন, যুবকের অভিমানে আত্মহত্যার খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনও কোন অভিযোগ দেয়নি কেউ।
খালেদা জিয়া: বিদেশ নেবার অনুমতি দেয়নি সরকার
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেবার জন্য অনুমতি দেয়নি সরকার।
রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারবেন না।
সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের মন্ত্রী এ কথা জানান।
আরও পড়ুন: খালেদার বিদেশ যাত্রা: আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের নথি স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ে
আসাদুজ্জামান বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই একটা আবেদন নিয়ে আসছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। আপনারা জানেন যে তিনি (খালেদা জিয়া) আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে প্রিজনে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে মানবতার তাগিদে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১-এর (১) ধারা অনুযায়ী তার দণ্ডাদেশ স্থগিত করে সুবিধামতো চিকিৎসা গ্রহণ করার জন্য সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এবং বাসায়ই অবস্থান করছিলেন।
আরও পড়ুন: মৃদু জ্বরে ভুগছেন খালেদা, অবস্থা এখনও স্থিতিশীল: ডাক্তার
মন্ত্রী বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) হঠাৎ কোভিডে আক্রান্ত হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। এর মধ্যে তার ছোট ভাই আবার আসছিলেন এবং আবেদন করেছিলেন, তিনি বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন আমাদের। আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য সেখানে পাঠিয়েছিলাম। সেটাও আপনারা জানেন।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়া করোনা নেগেটিভ
তিনি বলেন, ‘আইন মন্ত্রণালয় থেকে যে মত আসছে, তারা স্পষ্টত জানিয়ে দিয়েছেন, ৪০১ ধারায় সাজা স্থগিত করে যে সুবিধাটি দেয়া হয়েছে, এটা দ্বিতীয় বার তার সাজা মওকুফ করে তাকে বিদেশে পাঠানোর কোন অবকাশ এই ৪০১-এ দ্বিতীয়বার নেই। এটা তারা জানিয়ে দিয়েছেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শর্ত সাপেক্ষে সেই সাজাটা স্থগিত হয়েছিল যে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না বা বাসা থেকেই চিকিৎসা নেবেন। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত অনুযায়ী, আমরা তাদের আবেদনটা মঞ্জুর করতে পারছি না। এখন তাদের আমরা এটাই জানিয়ে দিব।’
বিএনপির অভিযোগ করছে সরকারের কারণে বেগম জিয়ার যথাযথ চিকিৎসা করা যাচ্ছে না, এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বিএনপি কি অভিযোগ করল সেটা প্রশ্ন আসে না। আমাদের আইন অনুযায়ী যেটুকু করণীয় আমরা সেটুকু করছি। যেখানে মানবতার প্রশ্ন এসেছে সেটাও আমরা করেছি। বিএনপি আবেদন করতেই পারে। আইনের বাইরে তো আমরা কিছু করতে পারি না।
উল্লেখ্য, দুটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া কারাবন্দী ছিলেন। নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত রয়েছে। বিদেশে যাওয়া যাবে না এবং বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিতে হবে-এই দুটি শর্তে তার দণ্ড স্থগিত করা হয়।
খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেয়ার প্রয়োজন আছে কি না, প্রশ্ন তথ্যমন্ত্রীর
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে আদৌ বিদেশ নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন আছে কি না সেটিই এখন বড় প্রশ্ন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি কেন যে তাকে বিদেশ নিয়ে যেতে চায় সেটি বোধগম্য নয়। কারণ দেশেই তো বেগম খালেদা জিয়া সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন।'
শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস-২০২১ উপলক্ষে সংস্থাটির চট্টগ্রাম জেলা ও সিটি ইউনিটের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সভা ও রক্তদান কর্মসূচির অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
'দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ বেগম খালেদা জিয়া আমার কাছে একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব' উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, তিনি এখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি দ্রুত আরোগ্য লাভ করুন এটিই মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, এটিই আমাদের কাম্য। বেগম খালেদা জিয়া যাতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা পান সেটির জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমস্ত নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধা এখন বাংলাদেশে পাচ্ছেন।'
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করবে আ’ লীগ: তথ্যমন্ত্রী
তথ্যমন্ত্রী বলেন,'কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাকে বিদেশ নিয়ে যাবার জন্য এখন বিএনপি ও পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার তাকে যে সব দেশে নিয়ে যাবার কথা বলা হচ্ছে, বিশেষ করে ইংল্যান্ডে, সেখানে করোনা মহামারিতে হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে।’
ড. হাছান বলেন, 'ইদানিং দেখতে পাচ্ছি বিএনপি সমগ্র দেশের মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে মেটেও উদ্বিগ্ন নয়, এনিয়ে তাদের কোন চিন্তা নাই। তাদের সব চিন্তা এখন কেন্দ্রীভূত বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে। বেগম খালেদা জিয়ার তাপমাত্রা আছে কি নাই, এটি কত ডিগ্রি আছে, হাঁটুর ব্যথা আছে কি নাই এটার মধ্যেই বিএনপির রাজনীতিটা এখন সীমাবদ্ধ।'
তিনি বলেন, 'বিএনপিকে অনুরোধ জানাব, আপনাদের চিন্তাটা শুধুমাত্র বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের মধ্যে নিমগ্ন না রেখে জনগণের পাশে দাঁড়ান। যেভাবে মানুষের দোড়গোড়ায় আওয়ামী লীগ খাদ্য সহায়তাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী দিচ্ছে, সেভাবে আপনারাও মাঠে এসে জনগণের কাছে বিতরণ করুন। তারপর আমাদের ভুলত্রুটি যদি থাকে, সেটার সমালোচনা করার অধিকার আপনাদের তৈরি হবে।'
'বিএনপি ও তাদের মিত্ররা যারা শুধু সরকারের সমালোচনা করে এবং যারা রাত বারোটার পর টেলিভিশনের পর্দা গরম করে, তাদের দূরবীন দিয়েও দেশের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না' উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'তারা কেউ ত্রাণ বিতরণের মধ্যে নেই, শুধু সমালোচনার মধ্যে আছে। আমরা কি কাজ করছি সেটির সমালোচনা করা ছাড়া তাদের কোন কাজ নেই।'
'প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতা ও সময়োপযোগী পদক্ষেপে গত ১৪ মাসে করোনার মধ্যে কেউ অনাহারে মৃত্যুবরণ করেনি উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, 'আজকের পরিস্থিতি হচ্ছে, দেশে করোনার চিকিৎসার জন্য যে ১২ হাজারেরও বেশি বেড রয়েছে তার ৭০ ভাগ বেড খালি আছে, অনেক আইসিইউ বেডও খালি আছে। করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত সফলভাবে কাজ করেছে। কিন্তু সমালোচকদের সমালোচনা থেমে নেই।'
'আর্ত-মানবতার পাশে দাঁড়িয়ে রেড ক্রিসেন্টের সদস্যদের কাজকে সমাজের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে তিনি বলেন, আমাদের এই দেশ দুর্যোগ-দুর্বিপাকের দেশ। সমস্ত দুর্যোগ-দুর্বিপাকে রেড ক্রিসেন্টর অকুতোভয় সদস্যরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা দিয়েছেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর গত ৫০ বছরের পথচলায় কোটি কোটি মানুষ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কর্তৃক উপকৃত হয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যে ত্রাণ বিতরণসহ টিকাদানের ক্ষেত্রে রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, সেটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।'
রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. শেখ শফিউল আজমের সভাপতিত্বে ও যুব রেড ক্রিসেন্টের যুব প্রধান গাজী ইফতেখার হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নবনিযুক্ত ট্রেজারার এম এ ছালাম, জেলা ইউনিটের সেক্রেটারি মো. আসলাম খাঁন, সিটি ইউনিটের সেক্রেটারি আবদুল জব্বার প্রমুখ বক্তব্য দেন।