রোহিঙ্গা
প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান: তথ্যমন্ত্রী
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবিলম্বে প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সঠিক সমাধান।
শনিবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেট ভবন মিলনায়তনে 'গণহত্যা ও বিচার: রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের অবস্থান' শীর্ষ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
ঢাবির সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এ সেমিনার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এবং এবং তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তন ছাড়া আমরা আর কোনো উপায় দেখছি না।
রোহিঙ্গা সংকটের ষষ্ঠ বছর উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সেমিনারে হাছান মাহমুদ বলেন, কিছু শরণার্থীকে অন্য দেশে স্থানান্তরিত করা এটি সমাধান নয়, বরং এটি সমস্যা বাড়ানো।
আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশন চালুকে অভিনন্দন জানাতে ব্যর্থ বিএনপি: তথ্যমন্ত্রী
সেমিনারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগ এবং সঠিক সমাধানে পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের চলমান প্রচেষ্টার ওপর আলোকপাত করা হয়।
হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ একটি অতিরিক্ত জনসংখ্যার দেশ। আমাদের প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্টসহ অনেক গুরুতর সমস্যা রয়েছে। যার সমাধান করার জন্য আমাদের শরণার্থী সমস্যা রয়েছে।
তিনি বলেন, যখন সামরিক জান্তা তাদের হত্যা করেছিল তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসতে এবং থাকার অনুমতি দিয়েছিলেন। এটি মানবিক আহ্বানের দুর্দান্ত সাড়া ছিল।
তিনি আরও বলেন, যাইহোক এখন আমাদের ২ মিলিয়নেরও বেশি শরণার্থী রয়েছে। তারা যখন প্রথম এসেছিল তখন আমাদের শুরুতে ধর্মান্ধতার মতো কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। কিন্তু আমাদের প্রশাসন খুব সফলতার সঙ্গে সেই সমস্যাগুলো পরিচালনা করেছে।
তিনি বলেন, আমরা যখন রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে আসি তখন এনজিওর পক্ষ থেকে শুরুতে অনেক আপত্তি ছিল। কারণ ভাসান চর প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় তারা কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। তবে তারা কিছু দিন পরে আমাদের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না। তাদের এই সমস্যা সমাধানের জন্য আরও অনেক কিছু করার আছে। কিছু শরণার্থী স্থানান্তর একটি সমাধান নয়। প্রত্যাবাসনই এই সমস্যার একমাত্র সমাধান।
মন্ত্রী বলেন, সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে ভারত ও চীন যদি হাত মেলায় তাহলে কোনো কিছুই তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে বাধা দেবে না।
ঢাবি ভিসি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তাসহ তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশংসার দাবি রাখে। বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলোও রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্য পাঠাচ্ছে যা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে এটা চূড়ান্ত সমাধান নয়। আমরা এর সম্পূর্ণ সমাধান চাই। আমরা তাদের নিজেদের দেশে ফিরে দেখতে চাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) পরিচালক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি জোহানেস ভ্যান ডের ক্লাউ, মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডিসপ্লেসমেন্ট স্পেশালিস্ট আসিফ মুনির, প্রফেসর ড. জিয়া রহমান, ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ।
আরও পড়ুন: বিএনপিকে লাল পতাকা দেখিয়েছে জনগণ: তথ্যমন্ত্রী
বিএনপি থাকলে রাজনীতির মাঠ কলুষমুক্ত হবে না: তথ্যমন্ত্রী
আইসিজেতে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাম্বিয়ার সঙ্গে তথ্য বিনিময় করেছে
রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত নৃশংসতার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) জেনোসাইড কনভেনশনের অধীনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে, সে বিষয়ে গাম্বিয়াকে তথ্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বলেছেন, আমরা নৃশংসতার দীর্ঘ ইতিহাস মোকাবিলার জন্য একটি সামগ্রিক অন্তর্বর্তীকালীন ন্যায়বিচার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করতে প্রস্তুত রয়েছি। এই বিচার প্রক্রিয়া সত্য, ক্ষতিপূরণ, ন্যায়বিচারের দাবিতে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে তার জন্য ভুক্তভোগী এবং বেঁচে থাকা মানুষের দাবিকে সম্মান জানানোর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
রবিবার (২৬ আগস্ট) বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক ইউএস আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া এসব কথা বলেন।
গণহত্যার কথা স্বীকার করাই একমাত্র কাজ নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সহিংসতার অবসান ঘটাতে এবং নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে সবাইকে একসঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ গণহত্যা শুরুর ছয় বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেয়া এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে যোগদানকারী রোহিঙ্গা প্রবাসী সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘চলমান নিপীড়নের মুখে আমি আপনাদের সহনশীলতার প্রশংসা করি।’
২০১৬-২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের উপর নৃশংস হামলা চালায়।
আরও পড়ুন: সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করুন: বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আজরা জেয়ার বার্তা
নির্যাতন, যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাসহ পদ্ধতিগত সহিংসতা ও গণহত্যার ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হন এবং হাজার হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটিকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল। তারা ৭ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে। এসব আক্রমণের ভয়াবহ প্রভাব আজ ছয় বছর পরেও অব্যাহত।
বাংলাদেশ এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরও অনেকে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
জেয়া বলেন, ‘জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফরের সময় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তারা মিয়ানমারে তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের উপর ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সহিংসতার বর্ণনা দেন। একই সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে গেলে আবারও নিপীড়নের শিকার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।’
মিয়ানমার সরকার জাতিগত ও ধর্মীয় পার্থক্যের ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। ২০১৬-২০১৭ পর্যন্ত অধিকার, নাগরিকত্ব, বাড়িঘর এবং এমনকি তাদের জীবন হারানোর ঘটনায় এ বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যায়। রোহিঙ্গারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ এই সত্যকে চাপা দেওয়া চেষ্টা করেছে দেশটির সরকার।
জেয়া বলেন, ‘আমরা দায়ীদের জবাবদিহি করা, বেঁচে থাকা ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আমাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে অটল।’
রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে একক দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রথমে।
তারা ২০১৭ সাল থেকে মিয়ানমার, বাংলাদেশ এবং এই অঞ্চলের এ সংক্রান্ত সংকটে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ২ দশমিক ১ বিলিয়নেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা নিরাপদে মিয়ানমারে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরতে পারবে না- তা স্বীকার করে তিনি বলেন, পুনর্বাসন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, সেখানে আমরা অবদান রেখেছি।
২০০৯ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ এই অঞ্চল থেকে প্রায় ১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছে।
জেয়া বলেন, ‘আমাদের কাজ শুধু মানবিক নয়, আমাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।’
আরও পড়ুন: সফর শেষ করেছেন আজরা জেয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের জন্য জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়াকেও সহায়তা করে। দেশটির একটি ম্যান্ডেট হলো ২০১১ সাল থেকে মিয়ানমারে সংঘটিত সবচেয়ে গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ সংগ্রহ, একত্রীকরণ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা।
ওপেন সোর্স তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতা জোরদার করতে এবং প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের রক্ষা করার জন্য মার্কিন সহায়তার মধ্যে ২ মিলিয়ন ডলার তহবিল দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।
জেয়া বলেন, ‘আমরা জবাবদিহি চাওয়ার ক্ষেত্রে একা নই। বুধবার, আমরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি যৌথ বিবৃতিতে সামরিক সরকারের করা নিরবচ্ছিন্ন সহিংসতা অবসানের আহ্বান জানিয়ে আরও ১২টি দেশের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছি।’
এই বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের অর্থনীতির জেট ফুয়েল সেক্টর পরিচালনাকারী কোনো বিদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপর তাদের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়গুলো আরও প্রসারিত করেছে এবং এই তালিকায় দুই ব্যক্তি ও তিনটি সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচারও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর্জেন্টিনার আদালতে তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার জন্য সাহসিকতার সঙ্গে বিচার চেয়েছে রোহিঙ্গারা। তাদের সমর্থন করার জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদার ও এনজিওগুলোর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও রযেছে।’
জেয়া বলেছেন, তারা সক্রিয়ভাবে সুশীল সমাজ এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতা এবং অন্যান্য নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত করার জন্য কাজ করছে।
জেয়া বলেন, মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেন। ২০২২ সালের মার্চে দেওয়া এই স্বীকৃতি ছিল একটি যুগান্তকারী ঘটনা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আটবার এধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।
জেয়া বলেন, ‘শরণার্থীদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ এবং স্থায়ী প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি করাসহ বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের প্রয়োজনগুলো বিবেচনায় নিতে হবে আমাদের। আমাদের অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সেনাবাহিনীর অব্যাহত দায়মুক্তির বিষয়টি মোকাবিলা করতে হবে। পাশাপাশি যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ন্যায়বিচারের জন্য অবশ্যই তাদের লড়াইকে সমর্থন করতে হবে।’
এই মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘কীভাবে আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক মিয়ানমার নিশ্চিত করতে পারি, তা নির্ধারণে এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে। যে ব্যবস্থা সবার মানবাধিকারকে সম্মান করে।’
আরও পড়ুন: সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার ‘দৃঢ় অঙ্গীকার’ করেছে: আজরা জেয়া
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আরও বিলম্ব পুরো অঞ্চলকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে: বাংলাদেশ সরকার
বাংলাদেশ সরকার বলেছে, নির্যাতিত এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তার তীব্র হ্রাস প্রতি বছর শিবিরের অভ্যন্তরে প্রায় ৩০ হাজার নবজাতকের জন্য সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে।
শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করতে আরও বিলম্ব এবং মানবিক সহায়তার ঘাটতি পুরো অঞ্চলকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
তাদের টেকসই প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদান চালিয়ে যেতে হবে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কোনো সমাধান ছাড়াই সপ্তম বছরে পা দিয়েছে রোহিঙ্গা সংকট।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে এত দীর্ঘ সময় আশ্রয় দেওয়ার আর্থ-সামাজিক, জনসংখ্যাগত এবং পরিবেশগত ব্যয় বাংলাদেশকে শেষ সীমার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষদের নিরাপদ এবং টেকসই পদ্ধতিতে তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা এবং অধিকার রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘তাদের জন্মস্থান মিয়ানমারে এই সংকটের একটি টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত দায়িত্ব।’
রোহিঙ্গারা তাদের বহনযোগ্য দক্ষতা অর্জন করছে, স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে এবং তাদের শিশুরা বাংলাদেশের ক্যাম্পে মিয়ানমারের পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে মিয়ানমার ভাষা শেখার সুবিধায় যোগ দিচ্ছে যাতে তারা তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় ধরে রাখতে পারে এবং রাখাইনে ফিরে আসার পর সমাজে সুচারুভাবে মিশে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ৬ বছর: প্রত্যাবাসন চায় বাংলাদেশ, একীভূতকরণে চাপ দিচ্ছে কিছু দেশ
বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা নিরাপদে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরতে পারবে না বলে স্বীকার করে, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস বলেছে, পুনর্বাসন হলো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, যেখানে তারা দায়িত্ব ভাগাভাগি করে কাজ করবে এবং রোহিঙ্গাদের দুর্দশার জন্য সার্বিক সমাধানে অবদান রাখে।
মার্কিন দূতাবাস বলেছে, ‘আমরা অন্যান্য দেশের উদারতার প্রশংসা করি যারা এই আন্তর্জাতিক পুনর্বাসন প্রচেষ্টায় যোগ দিচ্ছে। আমরা আশা করি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যগত পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার বাইরে থাকা দেশগুলো এই গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টায় যোগ দেবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ সহ এই অঞ্চল থেকে প্রায় ১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে ‘সাদরে গ্রহণ করেছে’।
মার্কিন দূতাবাস বলেছে, ‘যেহেতু এই সংকট সপ্তম বছরে পদার্পণ করছে, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা সমগ্র অঞ্চল জুড়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে বা শেষ করতে সম্ভাব্য সব বিকল্পের অন্বেষণে অবিচল থাকি।’
২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতা, ধর্ষণ এবং হত্যার নৃশংস অভিযানের ছয় বছর পূর্তি হয়েছে।
সরকারের গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডের ফলে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা তাদের বহনযোগ্য কিছু জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল।
মার্কিন দূতাবাস বলেছে, ‘বাংলাদেশের জনগণ তাদের উন্মুক্ত হস্তে, সহানুভূতি এবং মানবতার বোধ দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে। প্রায় ১০ লাখ উদ্বাস্তুকে আতিথেয়তা অব্যাহত রাখায় আমরা বাংলাদেশের জনগণকে তাদের উদারতা এবং আতিথেয়তার জন্য প্রশংসা করি।’
এর প্রতিক্রিয়ায়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে তার প্রচেষ্টায় সমর্থনে সমাবেশ করেছে।
আমেরিকান জনগণ ২০১৭ সাল থেকে এই অঞ্চল জুড়ে উদ্ভূত মানবিক সঙ্কটের প্রতিক্রিয়া হিসাবে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি সহায়তা করেছে। এর মধ্যে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোকে সহায়তা করার জন্য যারা তাদের এত উদারভাবে আতিথ্য করে। এবং আমরা আমাদের সহযোগিতা প্রদানে অবিচল রয়েছি।
দীর্ঘকাল থেকে ভুগতে থাকা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসনে বাধা দেওয়া উচিত নয়: শাহরিয়ার
মার্কিন সরকার বলেছে, তারা নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার, তাদের পরিবারকে শান্তিতে লালন-পালন করার এবং অর্থবহ ও উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবনযাপন করার সুযোগ পাওয়ার যোগ্য।
সে কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে,তারা নির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা, আন্তর্জাতিক চাপ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে এই নৃশংসতার জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই সঙ্কটের সমাধান,নির্যাতনের শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার এবং অপরাধীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মার্কিন সরকার বলেছে, ‘মিয়ানমারের অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটিকে মানবিক সহায়তা প্রদান চালিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ‘আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশ সরকার এবং রোহিঙ্গাদের আতিথেয়তাকারী বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও বলেছে, বিশ্বজুড়ে অন্যান্য সংকট যেমন সীমিত সম্পদ দিয়ে মোকাবিলা করে, তেমনি রোহিঙ্গারা কীভাবে তাদের স্বাগতিক সম্প্রদায় এবং তাদের নিজস্ব পরিবারের অর্থনৈতিক কল্যাণে অবদান রাখতে পারে তা চিহ্নিত করাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা গণহত্যার ৬ বছর: সহিংসতায় জড়িতদের জবাবদিহি দাবি জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞের
‘মিয়ানমারে আমাদের নিজের ঘরে ফিরতে সাহায্য করুন’
কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে বিশাল জনসমাগমের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাঈদা নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘আমরা আমাদের ভাষায় দাবি জানিয়ে আসছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্ণপাত করছে না। আমরা ইংরেজিতেও আমাদের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি। তবুও তারা মনোযোগ দিচ্ছে না। আমরা হতাশ। আমরা শুধু ভুক্তভোগী নই, আমরা বেঁচে আছি এবং তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বলছি।’
তিনি বলেন, তিনি ২৫ আগস্টের দিনটি কখনোই ভুলতে পারবেন না এবং গত ৬ বছরে তারা তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে যেতে পারেননি।
অশ্রুসিক্ত সাঈদা বলেন, ‘ন্যায়বিচার বিলম্বিত হয়েছে, ন্যায়বিচার অস্বীকার করা হয়েছে। আমরা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।’
তাদের সম্মিলিত দাবি- রোহিঙ্গাদের অবশ্যই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে শক্তিশালী সমর্থন চায় বাংলাদেশ
অন্যান্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আগামী গ্রীষ্মের মধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও মর্যাদার নিশ্চয়তা, মিয়ানমারের অন্যান্য ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর মতো পূর্ণ অধিকারসহ নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধার।
বর্তমানে ১০ বছর বয়সী বনি আমিন ৬ বছর আগে মিয়ানমার থেকে দেশটির সামরিক জান্তার আক্রমণের সময় পরিবারের ৮ সদস্যের সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছিল। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউএনবিকে এই শিশু বলেছে, ‘আমার মনে আছে কীভাবে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং সামরিক বাহিনী আমাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছিল। আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চাই।’
আজকের (শুক্রবার) সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, তারা মিয়ানমার সরকারের কাছে আবেদন করতে চান যেন তারা আগের মতোই মিয়ানমারে ফিরে যেতে ও সেখানে বসবাস করতে এবং নাগরিক হিসেবে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে পারেন।
তারা বলেন, মিয়ানমারের অর্থনীতি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
রোহিঙ্গারা তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা পর্যালোচনা করছে ঢাকা ও বেইজিং
রোহিঙ্গা যুবক মুসা বলেন, ‘আমাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে সাহায্য করুন, ওটাই আমাদের দেশ। আমরা আর বাংলাদেশে থাকতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা এই দিনটিকে কেবল আমাদের অভিন্ন ট্র্যাজেডি মনে করিয়ে দেওয়ার নয়, বরং পদক্ষেপ নেওয়ার দিন হিসেবেও পালন করি। আসুন আমরা বেদনার ঊর্ধ্বে গিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচারের দাবি জানাই।’
মুসা আরও বলেন, ‘আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এমন একটি পথ সৃষ্টি করবে যে বিশ্বে এই ধরনের নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি হবে না। এর ফলে এখানে শান্তিপূর্ণ স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করে সব সম্প্রদায় সম্প্রীতি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।’
পরিবারের সদস্যদের হারানো নূর জাহান ইউএনবিকে বলেন, তারা ন্যায়বিচার চান এবং মিয়ানমারে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে তারা তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চান।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর তারিখ এখনো ঠিক হয়নি: সেহেলী সাবরীন
তিনি বলেন, তারা মিয়ানমারে পূর্ণ নাগরিকত্বের অধিকার চান, যাতে তারা নিরাপদ বোধ করেন।
‘রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবস’ উপলক্ষে রোহিঙ্গারা একত্রিত হয়েছেন। তারা বলেন, এই ট্র্যাজেডিতে তাদের হৃদয় ভারাক্রান্ত, যা তাদের কষ্ট দিয়েই চলেছে।
প্রায় ২৫ হাজার রোহিঙ্গা কয়েক ডজন সমাবেশে যোগ দেন, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমাবেশটি কুতুপালং ক্যাম্পে ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যেই প্রায় ১০ হাজার শরণার্থীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়।
তারা এই দুঃসময়ে হাত বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের দাবি জানিয়েছেন, যাতে তারা তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ৬ বছর পরেও সরকার তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দিকে মনোনিবেশ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, যদিও কিছু দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের বাংলাদেশে একীভূত করার জন্য চাপ দিচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পর মিয়ানমারকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘তারা (রোহিঙ্গারা) তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাবে, এটাই আমাদের অগ্রাধিকার। মিয়ানমারও তাদের ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছুক।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা করবে যুক্তরাজ্য ও বেলজিয়াম
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংস অভিযান শুরু করে, যা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গুরুতর অপরাধ। পুরো গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সরকার দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে এবং অন্যান্য দেশ থেকে আরও প্রচুর সংখ্যক জনসংখ্যার প্রয়োজন নেই।
মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা ১৯৭০, ৮০’ ও ৯০’ এর দশকে বাংলাদেশে এসেছিল। কিন্তু প্রতিবারই তারা ফিরে গিয়েছিল, এমনকি অতীতে সামরিক শাসনের সময়ও।
পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসন বড় আকারের প্রত্যাবাসনের আগে সমস্যাগুলো বুঝতে সহায়তা করবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে কারো বাধা সৃষ্টি করা উচিত হবে না।
তিনি বলেন, ‘বড় পরিসরে প্রত্যাবাসনের আগে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতেই এই পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসন। নিয়মিত প্রত্যাবাসনের উদ্যোগকে চিহ্নিত সমস্যাগুলোর সমাধান আরও ভালোভাবে বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা বলেননি যে তারা ফিরে যেতে চান না। বরং যখনই কোনো বিদেশি গণ্যমান্য ব্যক্তি ক্যাম্পে তাদের সঙ্গে দেখা করেন তখনই তারা দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, নিশ্চিতভাবেই চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অস্ত্র ও মাদক পাচারের ঘটনা ক্যাম্পে বেড়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষ সদস্যও নিহত ও আহত হয়েছেন।
তিনি বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে ক্ষুণ্ন না করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে ক্ষুণ্ন করার জন্য কীভাবে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ভাসানচরকে ‘একটি ভাসমান দ্বীপ’ বলে বর্ণনা করেছিল তা স্মরণ করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। যতদিন তারা বাংলাদেশে থাকবে ততদিন আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার সমাধান খুঁজতে মানবিক সাড়া ও রাজনৈতিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তার জন্য নতুন করে অঙ্গীকারের আহ্বান জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন তরান্বিত করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ‘অবিচলভাবে মধ্যস্থতা করছে’ চীন: রাষ্ট্রদূত ইয়াও
ইউএনএইচসিআর বলেছে, মিয়ানমারে মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তন এই সংকটের প্রাথমিক সমাধান। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আমাদের বারবার বলেছে, স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন নিরাপদ হলেই কেবল তারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়।
সংস্থাটি আরও বলেছে, সম্মিলিত লক্ষ্য হওয়া উচিৎ রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা। যেন, তারা তাদের জন্মস্থান বা পছন্দের জায়গায় অবাধে চলাফেরা করতে পারে এবং তাদের জীবন পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি, নাগরিকত্বের জন্য ব্যবস্থা, পরিষেবা এবং আয়ের সুযোগ পায়।
রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের সব মানুষের ন্যায়বিচার চায় যুক্তরাষ্ট্র: ব্লিঙ্কেন
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে. ব্লিঙ্কেন বলেছেন, মিয়ানমারের সব মানুষের জন্য ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে 'গণহত্যার' ৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের জনগণের 'গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ' ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষায় তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ অব্যাহত রাখবে।
২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার ৬ষ্ঠ বার্ষিকীতে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা ভুক্তভোগী ও বেঁচে যাওয়া দের পাশে রয়েছে।
ব্লিঙ্কেন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতার জন্য ন্যায়বিচার ও জবাবদিহির জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ, পাশাপাশি এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিচ্ছে।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা গণহত্যার ৬ বছর: সহিংসতায় জড়িতদের জবাবদিহি দাবি জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞের
যুক্তরাষ্ট্র ২০১৭ সাল থেকে মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলের অন্যত্র সংকটে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সহায়তা প্রদান করেছে। এটিই সহিংসতায় যাদের জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তার শীর্ষস্থানীয় একক বৃহত্তম সহায়তা।
দেশজুড়ে সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে, বিশেষ করে রোহিঙ্গাসহ জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর অনুসারে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্র চলমান সহিংসতার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ব্যক্তি ও সত্ত্বার ওপর নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসনে বাধা দেওয়া উচিত নয়: শাহরিয়ার
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ৬ বছর: প্রত্যাবাসন চায় বাংলাদেশ, একীভূতকরণে চাপ দিচ্ছে কিছু দেশ
রোহিঙ্গাদের পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসনে বাধা দেওয়া উচিত নয়: শাহরিয়ার
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসনে কারও বাধা সৃষ্টি করা উচিত নয়। এই ধরনের পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসন বড় আকারে প্রত্যাবাসনের আগে সমস্যাগুলো বুঝতে সহায়তা করবে।
বুধবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বড় ধরনের প্রত্যাবাসনের আগে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার জন্যই এই পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসন। নিয়মিত প্রত্যাবাসনের আগে আরও ভালোভাবে পরিকল্পনার করার জন্য এবং সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে।এতে কারো বাধার সৃষ্টি করা উচিত হবে না।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা বলেনি তারা ফিরতে চায় না; বরং যখনই কোনো বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তি ক্যাম্পে তাদের সঙ্গে দেখা করতেন তারা সবসময়ই তাদের দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করে।
তিনি অবশ্য বলেছেন, সরকার সর্বদা একটি ‘মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছায়’ প্রত্যাবর্তনের জন্য তার প্রতিশ্রুতি বজায় রাখবে যদিও এটি পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসন হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, অবশ্যই ঝুঁকি আছে এবং ক্যাম্পে বন্দুক হামলা ও মাদক পাচারের ঘটনা বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিহত ও আহত হয়েছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: মিয়ানমারকে চাপ দিতে জার্মানিকে আহ্বান
তিনি বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে ক্ষুণ্ণ না করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কীভাবে ভাসানচরে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে ক্ষুণ্ন করার জন্য সেটিকে একটি ভাসমান দ্বীপ বলে বর্ণনা করেছিল তা উল্লেখ করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। যতদিন তারা বাংলাদেশে থাকবে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকব।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিংসাত্মক অভিযান শুরু করে। যার ফলে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গুরুতর অপরাধ হয়। পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আগমনের ৬ বছর পর সরকার তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের উপর গুরুত্ব দিয়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। যদিও কিছু দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশে তাদের একীভূত হওয়ার করার জন্য জোর দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সাথে আলোচনায় চীনা প্রেসিডেন্ট
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট ব্যাপক নৃশংস অভিযান শুরু করার ছয় বছর পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম রয়েছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের জেনারেলদের জবাবদিহি করতে ব্যর্থ হয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাদের জন্য সমাধান খুঁজতে মানবিক সহায়তা ও রাজনৈতিক সমর্থন বজায় রাখতে আর্থিক সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে নতুন করে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ইউএনএইচসিআর বলেছে, মিয়ানমারে একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তন এই সংকটের প্রাথমিক সমাধান হিসেবে রয়ে গেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়, যদি সেটি তাদের জন্য নিরাপদ হয়।’
আরও পড়ুন:রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায় বাংলাদেশ
উখিয়ায় রোহিঙ্গা যুবককে গুলি করে হত্যা
কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৮ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের কুতুপালং-৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে।
রোহিঙ্গা যুবক মোহাম্মদ ইউনুস ওই ক্যাম্পের মো. হামিদ হোসেনের ছেলে।
আরও পড়ুন: ভারতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে একই পরিবারের ৬ জনকে গুলি করে হত্যা
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলি জানান, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ আরএসও সোর্স সন্দেহে আরসার সন্ত্রাসীরা ওই যুবককে গুলি করে করে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, খবর পেয়ে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা গেছেন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা
উখিয়ায় রোহিঙ্গা মাঝিকে গুলি করে হত্যা
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ৬ বছর: প্রত্যাবাসন চায় বাংলাদেশ, একীভূতকরণে চাপ দিচ্ছে কিছু দেশ
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আগমনের ছয় বছর পরও সরকার তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, যদিও কিছু দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশে তাদের একীভূত করার জন্য জোর দিচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের তাদের নিজভূমিতে ফিরে যাওয়ার পর তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে মিয়ানমারকে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন,‘আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে তারা (রোহিঙ্গারা) নিজ দেশে ফিরে যাবে। মিয়ানমারও তাদের ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছুক।’
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক অভিযান শুরু করে পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়, লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। যা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সরকার দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আলোচনা চলছে। আমরা সবসময় আশাবাদী।’ কিছু দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশ সরকারকে রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নে এবং তাদের এখানে রাখার সুপারিশ করেছে।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই বিপুল জনসংখ্যা রয়েছে এবং অন্যান্য দেশের বিপুল সংখ্যক লোকের প্রয়োজন নেই।
মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা ১৯৭০, ৮০ এবং ৯০-এর দশকে বাংলাদেশে এসেছিল কিন্তু তারা সব সময়ই এসেছে, এমনকি অতীতে সামরিক শাসনের আমলেও।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাদের জন্য সমাধান খুঁজতে মানবিক প্রতিক্রিয়া এবং রাজনৈতিক সমর্থন বজায় রাখতে আর্থিক সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে নতুন করে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এই সপ্তাহে মিয়ানমার থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশু বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ছয় বছর পূর্ণ হচ্ছে।
তারা দেশে আগে আশ্রয় নেওয়া আরও কয়েক হাজার রোহিঙ্গার সঙ্গে যোগ দেয়।
বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী বন্দোবস্তের মানবিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় এই দীর্ঘায়িত সংকটকে ঘিরে চ্যালেঞ্জগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইউএনএইচসিআর বলেছে, তহবিলের তীব্র হ্রাস মানবিক সহায়তায় ভূমিকা পালনকারীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জীবন রক্ষাকারী প্রয়োজনের দিকে মনোনিবেশ করতে বাধ্য করছে।
এটি প্রথমবারের মতো উদ্বাস্তুদের খাদ্য সহায়তা হ্রাসের দিকে পরিচালিত করেছে এবং নাটকীয় পরিণতির বিষয়ে উদ্বেগ জাগিয়েছে। এরমধ্যে ক্রমবর্ধমান অপুষ্টি, স্কুল ড্রপআউট, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতাও রয়েছে।
তাদের শক্তি এবং স্থিতিশীলতার সঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা গত ছয় বছরে মানবিক প্রতিক্রিয়ার মেরুদণ্ড তৈরি করেছে এবং তাদের আতিথেয়তাকারী সম্প্রদায়গুলোকে সমর্থন করেছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করতে ওআইসির প্রতি আহ্বান বাংলাদেশের
ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য ধরনের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উপকৃত করতে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছে।
এটি শুধুমাত্র শরণার্থীদের তাদের শেষ প্রত্যাবর্তনের জন্য সজ্জিত করবে না বরং বাংলাদেশে তাদের মর্যাদা, নিরাপত্তা এবং উৎপাদনশীলতাও নিশ্চিত করবে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা মঙ্গলবার বলেছে, শরণার্থীরা মানবিক সহায়তা হ্রাসের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হতে চায় না বলে এটি তাদের নিজস্ব কিছু প্রয়োজন মোকাবিলা করার ক্ষমতা দিতে পারে।
ইউএনএইচসিআর বলেছে, মিয়ানমারে একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তন এই সংকটের প্রাথমিক সমাধান হিসাবে রয়ে গেছে। ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আমাদের নিয়মিত বলে আসছে যে তারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় যখন তাদের পক্ষে স্বেচ্ছায় তা করা নিরাপদ।’
জাতিসংঘের সংস্থাটি বলেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এটি সম্ভব করার জন্য তাদের প্রচেষ্টা নবায়ন করতে হবে। ‘যেহেতু জাতিসংঘ টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য উপযোগী পরিস্থিতি তৈরি করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে প্রস্তুত রয়েছে। তাই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে ইউএনএইচসিআর এবং এর অংশীদারদের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন নিরবচ্ছিন্ন, অর্থবহ এবং অনুমানযোগ্য প্রবেশাধিকার প্রদান করা হয়, যার মধ্যে সহায়তা ও নিরীক্ষণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
ইউএনএইচসিআর বলেছে, রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা সম্মিলিত লক্ষ্য হওয়া উচিত। তাদের আদি বা পছন্দের জায়গায়, অবাধে চলাফেরা করতে এবং তাদের জীবন পুনর্গঠনের জন্য নথিপত্র, নাগরিকত্বের পথ, পরিষেবা এবং আয়-উন্নতির সুযোগগুলো অ্যাক্সেস করতে সক্ষম করতে হবে।
যতক্ষণ না তারা ফিরে আসতে পারে, তারা বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত শরণার্থী শিবিরে থাকছে। যেগুলো ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ভূমিধস, আগুনের প্রাদুর্ভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
এই ঘনবসতিপূর্ণ শিবিরের উপর একটি বিধ্বংসী প্রভাব রয়েছে। তাদের ফ্রিকোয়েন্সি পরবর্তী দুর্যোগের আগে বাঁশ এবং টারপলিন দিয়ে তৈরি আশ্রয়কেন্দ্র পুনর্নির্মাণে সময় দেয় না।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থনের জন্য ওআইসি-ইউএনএইচসিআরের প্রতি আহ্বান বাংলাদেশের
রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে গ্রহণ করতে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের পরামর্শকে না বলেছে বাংলাদেশ: মোমেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, দুই মার্কিন কংগ্রেসম্যান এড কেস ও রিচার্ড ম্যাককরমিক সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে রোহিঙ্গাদের দক্ষতা বাড়িয়ে এবং শিক্ষার ব্যবস্থা করে তাদের স্থায়ীভাবে গ্রহণ করতে বাংলাদেশকে পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা (তাদের) না বলেছিলাম। আমরা বলেছি বাংলাদেশ সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। আমাদের অন্য দেশের নাগরিকদের প্রয়োজন নেই।’
মোমেন বলেন, উন্নত জীবনের জন্য রোহিঙ্গাদের নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে হবে। ‘আপনানা (মার্কিন) কিছু রোহিঙ্গাকে নিতে পারেন।’
বুধবার (১৬ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান মোমেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল তারা রোহিঙ্গাদের নেবে কিন্তু তারা নেয়নি।
মোমেন বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর ধারণা হচ্ছে রোহিঙ্গারা যেহেতু এখানে বসবাস করছে বাংলাদেশ তাদের গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যাবাসন অগ্রাধিকার। আপনারা (মার্কিন) মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য চেষ্টা করুন।’ মিয়ানমার বাংলাদেশের শত্রু নয়, তবে তাদের কিছু সমস্যা রয়েছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করতে ওআইসির প্রতি আহ্বান বাংলাদেশের
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিতে ইচ্ছুক কিন্তু কিছু বিদেশি সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এই মুহূর্তে তাদের প্রত্যাবাসনে সমর্থন করছে না।
এর আগে ২ আগস্ট মোমেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ তারা (আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়) মনে করে যে সেখানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থনের জন্য ওআইসি-ইউএনএইচসিআরের প্রতি আহ্বান বাংলাদেশের
মোমেন বলেন, প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুতে কাজ করছে এমন সব স্টেকহোল্ডারের কাছ থেকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন রয়েছে বলে তারা মনে করেন।
মোমেন বলেন, ‘বিদেশি সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পরামর্শ দেয়, আমরা যেন প্রত্যাবাসনের চেষ্টা না করি।‘
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা ফিরতে ইচ্ছুক এবং মিয়ানমার সরকারও তাদের ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছুক।
আরও পড়ুন: মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করতে ওআইসির প্রতি আহ্বান বাংলাদেশের
রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে স্থায়ীভাবে প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয় করতে ওআইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সফররত ওআইসি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ এ অনুরোধ জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ওআইসির মানবিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকবিষয়ক সহকারী মহাসচিব রাষ্ট্রদূত তারিগ আলী বাখেত প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনসহ অন্যরা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: কোরআন অবমাননার ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে ওআইসির পক্ষে গভীর নিন্দা জানালেন রাষ্ট্রদূত
৪৫ মিনিটের বৈঠকে বাংলাদেশ ওআইসি প্রতিনিধিদলকে আন্তর্জাতিক ফোরামে রোহিঙ্গাদের ইস্যুকে আলোচনায় রাখতে অনুরোধ করে এবং জিসিসি ও ওআইসিকে রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল গঠনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার আহ্বান জানায়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে।
মিয়ানমারে ওআইসির বিশেষ দূত রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম খায়রাত, ওআইসি সহকারী মানবিকবিষয়ক পরিচালক, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওআইসি আইসিএইচএডি ফোকাল পয়েন্ট মোহাম্মদ আলী এলখামলিচি, কাতার ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট, আফ্রিকা ও এশিয়া প্রকল্প বিভাগের প্রধান দানা আল মিসনাদ, ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক, কুয়েত জাকাত হাউস, ডা. মজিদ সুলেমান আল-আজমি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ, কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট তালাল আল বাকার এবং হাইকোর্টের সিনিয়র উপদেষ্টা, জিসিসি দেশগুলোর জন্য ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি খালেদ খলিফা, বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি জোহানেস ভ্যান ডার ক্লাউ এবং সহকারী নির্বাহী ইউএনএইচসিআর,বাংলাদেশের জেসিকা ওয়াটস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: পবিত্র কোরআন ও নবীর অবমাননা ঠেকাতে সম্মিলিত পদক্ষেপ চায় ওআইসি
ওআইসি মহাসচিবের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন