রোহিঙ্গা
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে মধ্যস্থতা করতে পারে জাপান: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাপান মধ্যস্থতা করতে পারে এবং রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে সহায়তা করতে পারে।
জাপানের সর্ববৃহৎ ইংরেজি দৈনিক দ্য জাপান টাইমস-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি বলেন, ‘এখন তারা (রোহিঙ্গারা) বাংলাদেশ ও পুরো অঞ্চলের জন্য নিরাপত্তা হুমকি হয়ে উঠছে। জাপান মধ্যস্থতা করতে পারে এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে সহায়তা করতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার দিনের জাপান সফরকালে গত ২৫ এপ্রিল 'জাপান হোল্ডস আ স্পেশাল প্লেস ইন আওয়ার হার্টস' শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে জাপান টাইমস।
শেখ হাসিনা বলেন, গণহত্যার মুখে থাকা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত ছয় বছরে বাংলাদেশ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের প্রায় ১১ লাখ নাগরিকের যত্ন নিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৪ দিনের জাপান সফর শেষে শুক্রবার ওয়াশিংটন যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘তাদের প্রাপ্য উপস্থিতি স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবন ও জীবিকাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।’
তার সফর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার দেশ, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে আমি আবার টোকিওতে এসেছি, যখন আমাদের দেশগুলো কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫১তম বার্ষিকী উদযাপন করছে। আমি সম্রাট নারুহিতো ও সম্রাজ্ঞী মাসাকোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এবং আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি বাংলাদেশের মহান বন্ধু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকেও শ্রদ্ধা জানাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতা অর্জনের দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানকারী কয়েকটি দেশের মধ্যে জাপান অন্যতম। এমনকি ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও জাপান প্রয়োজনীয় সমর্থন ও সহায়তা প্রদান করেছিল, যা আমরা কখনও ভুলিনি এবং কখনও ভুলব না।’
তিনি বলেন, সবচেয়ে অবিস্মরণীয় ছিল জাপানি স্কুল শিক্ষার্থীদের দাতব্য উদ্যোগ, যারা তাদের টিফিনের অর্থ সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড় ও আমাদের দেশকে ধ্বংস করে দেওয়া যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা করার জন্য দান করেছিল। তারপর থেকে জাপান আমাদের সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু হয়ে আছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু জাপান: প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাপান আমার হৃদয়ের খুব কাছের একটি দেশ, ঠিক যেমন এটি আমার পরিবার ও আমাদের জনগণের জন্য। আমার বোন শেখ রেহানা ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে আমাদের বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আমাদের কনিষ্ঠ ভাই শেখ রাসেলের সঙ্গে জাপানে তাদের প্রথম সফরে গিয়েছিলেন। আমার বাবা জাপানের উন্নয়নে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং দেশটিকে একটি মডেল হিসেবে অনুসরণ করতে চেয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, জাপানি পতাকার নকশায় বঙ্গবন্ধুও অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। উভয় পতাকাই আয়তক্ষেত্রাকার ও মাঝখানে লাল বৃত্ত, এর চারিদিকে বাংলাদেশের পতাকায় রয়েছে সবুজ ও জাপানের পতাকায় সাদা রঙ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান আমাদের বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশ এর উন্নয়নের জন্য অবিচল সমর্থন পেয়েছে এবং আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে জাপানের কাছ থেকে সর্বাধিক সরকারি উন্নয়ন সহায়তা পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ওডিএ ঋণ প্যাকেজে জাপান বাংলাদেশকে দুই দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার সফট লোন দিয়েছে, যা অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি। আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো চার বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
আরও পড়ুন: জাপানের ‘মিরাইকান’ জাদুঘর পরিদর্শন করলেন প্রধানমন্ত্রী
টেকনাফে ৫ রোহিঙ্গা শিশু ‘অপহরণ’, ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি
কক্সবাজারের টেকনাফের জাদিমুড়া এলাকা থেকে অপহৃত রোহিঙ্গা পাঁচ শিশুর পরিবারের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিকাল ৪টায় নয়াপাড়ার রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান মো. একরাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, সোমবার দুপুরে জাদিমুড়ার ন্যাচার পার্ক থেকে মুখোশধারী ৭ থেকে ৮ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী পাঁচ শিশুকে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে গেছে। এরপর অপহৃতদের পরিবারের কাছে ফোনে মুক্তিপণ দাবি করেছে। অপহৃত পাঁচ শিশুর মধ্যে তার বাড়ির কাছে একই ব্লকের তিনজন রয়েছে।
অপহৃতরা হলো- টেকনাফের নয়াপাড়ার রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের সি ব্লকের হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. বেলাল (১৩), মোহাম্মদ ইলিয়াসের ছেলে নূর কামাল (১২), উবায়দুল্লাহর ছেলে নূর আরাফাত (১২), বি ব্লকের মো. রফিকের ছেলে ওসমান (১৪) এবং ডি ব্লকের মাহাত আমিনের ছেলে নূর কামাল (১৫)।
আরও পড়ুন: উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে যুবককে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৬-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) পুলিশ সুপার মো. জামাল পাশা বলেন, ওই শিশুরা ঈদ উপলক্ষে বাইরে ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে ছিল। এ সময় ন্যাচার পার্ক এলাকা থেকে তারা অপহৃত হয়। তাদের উদ্ধারে অভিযান চলছে।
তিনি আরও বলেন, তবে মুক্তিপণের বিষয়ে তাদের এখনও পরিবারগুলো কিছুই জানায়নি। তবে, তাদের উদ্ধারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হালিম জানান, অপহরণের কথা তিনি শুনেছেন। তবে এখন পর্যন্ত কারও কাছ থেকে কোন ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এরপরও পুলিশ অপহৃতদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে বিড়ালের ছানা দেয়ার কথা বলে স্কুলছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগ
টেকনাফে ফের কলেজছাত্রসহ ৭ জন অপহরণ
টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন
কক্সবাজারের টেকনাফের একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লেগেছে। ঘটনার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। সোমবার (২৪ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে টেকনাফ পালখালী ইউনিয়নের চাকমারখুল ২১ নং ক্যাম্পে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ইতোমধ্যে ৩০টির বেশি ঘর পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।
২১ নং ক্যাম্পের বাসিন্দা কুদ্দুস জানান, ‘হঠাৎ দেখতে পাই একটি ঘরের ভিতর থেকে আগুন বের হচ্ছে। মূহুর্তের আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।’
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হোয়াইক্যং ফাঁড়ি উপপরিদর্শক (এসআই) রোকনুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ফায়ার সার্ভিসও কাজ করছে। আগুনের তীব্রতা বেশি। এই মূহুর্তে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট কাজ করছে। ইতোমধ্যে অনেক ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আপাতত কিছু বলা যাচ্ছে না।’
অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামসুদৌজ্জা জানিয়েছেন, আগুনের উত্তাপ বেড়েই চলেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কক্সবাজার ও রামু থেকে ফায়ার সার্ভিসের আরও ৪ টি ইউনিট রওয়ানা
দিয়েছে।
আরও পড়ুন: উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন: পুড়ে গেছে ২ হাজার ঘর
উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৫ শতাধিক বসতঘরে আগুন
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নেদারল্যান্ডসের বৃহত্তর সমর্থন চায় ঢাকা
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন এবং মিয়ানমারে সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতা চেয়েছেন।
শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার (৩১ মার্চ) ডাচ প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা জিওফ্রে ভ্যান লিউয়েনের সঙ্গে সাক্ষাত করার সময় তিনি এই অনুরোধ করেছিলেন।
পানি খাতের বাইরেও বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা আরও গভীর করার জন্য ডাচ সরকারের অভিপ্রায়েরও প্রশংসা করেন তিনি।
এসময় মুখ্য সচিব নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ ও ডাচ প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে বহুত্ববাদী ও উদার সমাজ গঠনে বাংলাদেশের যাত্রা, নারীদের অগ্রগতি এবং বাংলাদেশে কার্যকরী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার সম্পর্কে অবহিত করেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্য ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা চায় বাংলাদেশ
লিউয়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের অব্যাহত যাত্রার প্রশংসা করেন।
তিনি নেদারল্যান্ডস সফরের জন্য হাসিনাকে ডাচ প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণও পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি নেদারল্যান্ডের সঙ্গে একটি পাবলিক-প্রাইভেট ডায়ালগ মেকানিজম প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছিলেন, যা ডাচ পক্ষ স্বাগত জানায়।
মুখ্য সচিব বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির এবং মহাসচিব ফারুক আহমেদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ-মিয়ানমার পাইলট প্রকল্পের আলোচনায় ‘সম্পৃক্ত নয়’ ইউএনএইচসিআর
রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে ওআইসি সদস্যদের দায়িত্ব নিতে হবে: মোমেন
আপনি বিশ্বের জন্য সহানুভূতি ও উদারতার দৃষ্টান্ত: শেখ হাসিনার উদ্দেশে বাইডেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তার দেশ রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজে বের করতে এবং নৃশংসতার অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা এক চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘আপনি বিশ্বের জন্য সহানুভূতি ও উদারতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস রবিবার চিঠিটি প্রকাশ করেছে, যা মূলত গত ২১ মার্চ পাঠানো হয়েছিল।
চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশ তার সীমান্ত খুলে দিয়েছে এবং প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে স্বাগত জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া এই বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাইডেন তাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বাইডেন চিঠিতে লিখেছেন, বাংলাদেশিরা মুক্তি ও স্বাধীনতার মূল্য গভীরভাবে বোঝে, কারণ তারা ১৯৭১ সালে তাদের নিজের ভাষায় কথা বলার জন্য সাহসের সঙ্গে লড়াই করেছিল।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী, ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব চান রাজা চার্লস
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি মনে করিয়ে দিতে চান যে দুই জাতির জন্যই ‘গণতন্ত্র, সমতা, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন’ ‘গভীর মূল্য’ রাখে।
তিনি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সবচেয়ে বড় অবদানকারী হিসেবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের রক্ষায় বাংলাদেশের প্রদর্শিত অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন।
বাইডেন বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান মন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ আয়োজনের জন্য যা বৈশ্বিক মহামারি শেষ করার রাজনৈতিক অঙ্গীকারকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নীত করেছে।
বাইডেন বলেন, ৫০ বছরেরও বেশি কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ একসঙ্গে অনেক কিছু অর্জন করেছে। যেমন-অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রগতি, জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ও জলবায়ু সমস্যা মোকাবিলা করা, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক প্রতিক্রিয়ায় অংশীদার করা এবং একটি সমৃদ্ধ, নিরাপদ, গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরি করা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের অসাধারণ সাফল্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত: শি জিনপিং
'দ্রুত আঞ্চলিক নেতা হয়ে উঠছে' বাংলাদেশ: ব্লিংকেন
রোহিঙ্গা সংকটের বাস্তবসম্মত সমাধানে নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই ভাবতে হবে: বিআইপিএসএস সভাপতি
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (বিআইপিএসএস) সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) মুনিরুজ্জামান বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা অর্থনৈতিক বোঝা বাড়ায়, তাই নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই চিন্তাভাবনা করতে হবে এবং বাস্তবসম্মত সমাধান তৈরি করতে হবে।
বিআইপিএসএস সভাপতি রোহিঙ্গা শরণার্থী আগমনের ঐতিহাসিক সময়সীমা নিয়ে আলোচনা করেন এবং উল্লেখ করেন যে এর কোনো শেষ নেই।
আরও পড়ুন: কসমস-বিআইপিএসএস গোলটেবিল: ইউক্রেন সংঘাতের বিরূপ প্রভাব কাটাতে বাংলাদেশকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে
তিনি বলেন, ‘তার কথায়, প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট: ভবিষ্যৎ পুনর্নির্মাণ’ শীর্ষক লেকচার ক্লাবের আয়োজন করে বিআইপিএসএস।
বিআইপিএসএস-এর সভাপতিরি বক্তব্য দিয়ে শুরু হয় এবং পরে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস-এর নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার মনজুর হাসান ওবিই পরিচালনা করেন।
ব্যারিস্টার মনজুর হাসান বিশ্বব্যাপী অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে তার বক্তব্য শুরু করেন।
তিনি শরণার্থী শিবির থেকে নারী ও মেয়েদের পাচার হওয়া, শরণার্থীদের জন্য তহবিল হ্রাস এবং সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের পরিবর্তিত বাস্তবতার মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন।
তিনি আসিয়ান এবং জাতিসংঘের (ইউএন) মতো আন্তঃসরকারি সংস্থাগুলোর সমালোচনা করেছিলেন।
মনজুর হাসানের কথায়, কফি আনান রিপোর্টেই এর সমাধান রয়েছে।
তার কথা ও চিন্তার মধ্যে রয়েছে আলোচনার মাধ্যমে শাসন, আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গি, রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রহীন কর্তাব্যক্তিদের সমন্বিত ভূমিকা এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্ক।
রাখাইনের কর্তাব্যক্তিরা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সমস্যাটি সেই অঞ্চল থেকেই উদ্ভূত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিদেশি ও অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক, অবসরপ্রাপ্ত বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: আইএমএফের কাছে ঋণ চাইলেও অর্থনীতির অবস্থা খারাপ নয়: অর্থমন্ত্রী
বেইল আউটের জন্য নয়, সতর্কতা হিসেবে আইএমএফের ঋণ নিচ্ছে ঢাকা: কায়কাউস
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ময়নারঘোনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে পালিয়ে গেলে হাসপাতালে নেয়ার পরে তার মৃত্যু হয়।
নিহত হাফেজ মাহবুব (২৭) উখিয়ার ময়নারঘোনা ১৯ নম্বর রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের ডি-৯ ব্লকের বাসিন্দা সৈয়দ আমিনের ছেলে।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে রোহিঙ্গা মাঝিকে গুলি করে হত্যা
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. আলী জানান, দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করার পর দ্রুত ক্যাম্পের এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে পরে উখিয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জি-৭ ব্লকের কাছে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে। এছাড়া পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
আরও পড়ুন: উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হেড মাঝিকে গুলি করে হত্যা
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবককে গুলি করে হত্যা
রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আওয়াজ তোলার আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বৃটিশ-বাংলাদেশি প্রবাসীসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়া জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য তাদের আওয়াজ তুলতে আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকালে যুক্তরাজ্যের ক্যামডেনের মেয়র নাসিম আলী ওবিই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সময় তিনি এ আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি সম্পর্কে মেয়রকে অবহিত করেন।
যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রবাসীদের প্রশংসা করে উভয়েই ব্রিটিশ সমাজ ও অর্থনীতিতে এবং গত পাঁচ দশকে এই দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের সেতু হওয়ার জন্য তাদের অবদানের কথা স্মরণ করেন।
ক্যামডেনের মেয়র ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রবাসীদের, বিশেষ করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য একটি অনুষ্ঠানের পরামর্শ দেন।
তারা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে জি২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক: পার্শ্ব বৈঠক করবেন মোমেন
দূতাবাস চালু ও সম্পর্ক গভীর করতে আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায়
ঢাকায় মোমেনের সঙ্গে আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক সোমবার
রোহিঙ্গা ও স্বাগতিকদের জন্য আরও ২৬ মিলিয়ন ডলার সহায়তা ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
মিয়ানমারের সহিংসতায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী, এই অঞ্চলে চলমান সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং উদ্বাস্তুদের আতিথেয়তাকারী দেশীয় সম্প্রদায়ের জন্য আরও প্রায় দুই কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার অতিরিক্ত মানবিক সহায়তা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তররের মুখপাত্র নেড প্রাইস নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘২০১৭ সালে যখন সাত লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজারে নিরাপত্তার জন্য পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল, সেই বছরের আগস্ট থেকে এই নতুন অর্থায়নের মাধ্যমে রাখাইন রাজ্য এবং রোহিঙ্গা সংকটে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আমাদের মোট সহায়তা প্রায় দুই দশমিক এক বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।’
তিনি বলেন, এই নতুন তহবিলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক অংশীদারদের মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের উভয় দিকে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের জীবন রক্ষাকারী সহায়তা প্রদান চালাবে। যার মধ্যে প্রায় ৯ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর আতিথ্য করছে বাংলাদেশ। গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, জাতিগত নির্মূল এবং রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সংঘটিত অন্যান্য ভয়ঙ্কর নৃশংসতা ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে প্রায় সাত লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ২০১৭ সালের আগস্টের পরের মাসগুলোতে তাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার সহায়তার আহ্বান জানাল ইউএনএইচসিআর
এই তহবিল বাংলাদেশি স্বাগতিক সম্প্রদায়ের প্রায় পাঁচ লাখ ৪০ হাজার সদস্য এবং মিয়ানমারে চলমান সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদের সহায়তা প্রদান করবে।
তিনি আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকার এবং অন্যান্য দেশের উদারতা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আতিথেয়তার প্রশংসা করেছে। বিশেষ করে এখন যে ‘আমরা এই দীর্ঘ সঙ্কটের ষষ্ঠ বছরে আছি।’
নেড প্রাইস বলেছেন, ‘আমরা সঙ্কটের টেকসই সমাধানের জন্য কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই মানবিক সংকটের জন্য একটি সমন্বিত এবং সহযোগিতামূলক প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে আমরা বাংলাদেশ সরকার, রোহিঙ্গা সম্প্রদায়, স্বাগতিক সম্প্রদায় এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জনগণের সঙ্গে অংশীদারিত্ব চালিয়ে যাব।’
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সংকটের প্রতিক্রিয়া সহ বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের দুর্দশা লাঘবের প্রতিশ্রুতিতে অবিচল থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের ৬ সংস্থার তহবিল বরাদ্দ বাস্তবায়ন
রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার সহায়তার আহ্বান জানাল ইউএনএইচসিআর
অনিশ্চয়তার ধোঁয়াশায় থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী বাংলাদেশের স্থানীয় জনগণের জন্য ইউএনএইচসিআর ও সহযোগী সংস্থাসমূহের জন্য ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধি ইয়োহানেস ভন ডার ক্লাও।
মঙ্গলবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার প্রতিনিধি এই আহ্বান জানান ।
রোহিঙ্গা সংকট এর ষষ্ঠ বছরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী বাংলাদেশি স্থানীয় জনগণের জন্য টেকসই অর্থনৈতিক সহায়তা ও সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও সহযোগী সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পুনরায় আহ্বান জানাচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মানবিক কর্মকান্ডের যৌথ পরিকল্পনা বা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান বাস্তবায়নে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশি মিলিয়ে মোট ১৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষের জন্য মোট ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। এই কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকবে মোট ১১৬টি সংস্থা। এর প্রায় অর্ধেকই হচ্ছে বাংলাদেশি।
আরও পড়ুন: উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন: পুড়ে গেছে ২ হাজার ঘর
আজকের প্রস্তাবিত এই পরিকল্পনাটির লক্ষ্য হচ্ছে কক্সবাজারে ও ভাসান চরে আশ্রিত ৯ লাখ ৭৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের আশ্রয় প্রদানকারী চার লাখ ৯৫ হাজার বাংলাদেশি জনগণকে খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, সুপেয় পানি, সুরক্ষা, শিক্ষা, জীবিকার সুযোগ ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা।
মিয়ানমারের সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষদের প্রতিটি দিন কাটে অনিশ্চয়তার ধোঁয়াশায়। তারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে উদগ্রীব, কিন্তু সে ক্ষমতা তাদের নেই। অগত্যা তাদের বাস করতে হচ্ছে অতিরিক্ত ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবিরে; যেখানকার পরিবেশ কখনও কখনও বিপজ্জনক, আর বেঁচে থাকার জন্য তারা প্রায় সম্পূর্ণ মানবিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল।
সংকটটি বর্তমানে দীর্ঘায়িত হয়ে পড়লেও শরণার্থীদের চাহিদাগুলো পূরণ করা এখনও অতি জরুরি। এই শরণার্থীদের ৭৫ ভাগেরও বেশি নারী ও শিশু; যারা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও শোষণের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিতে রয়েছে। ক্যাম্পে অর্ধেকেরও বেশি শরণার্থীর বয়স ১৮ -এর নিচে, আর তাদের ভবিষ্যৎ আজ স্থবির।
২০১৭ সালে এই মানবিক সংকটের শুরু থেকেই বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় জনগণ ও মানবিক সংস্থাগুলো পৃথিবীর বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে থাকা এই মানুষগুলোর সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। তথাপি, বৈশ্বিক বাস্তুচ্যুতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগণের কথা ভুলে যাওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।
তহবিল সংকটের কারণে পর্যাপ্ত পুষ্টি, বাসস্থানের উপকরণ, পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা ও জীবিকার সুযোগ কমার মত অনেক চ্যালেঞ্জ এখন প্রতিদিনই এই শরণার্থীদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
অপর্যাপ্ত তহবিলের কারণে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ইতোমধ্যেই ক্যাম্পে সকল রোহিঙ্গার জীবন রক্ষাকারী খাদ্য সহায়তা কমাতে বাধ্য হয়েছে। মানবিক সংস্থাগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টার পরও ৪৫ শতাংশ রোহিঙ্গা পরিবার সুষম খাবার খেতে পারছে না, আর অপুষ্টির হারও ব্যাপক। খাদ্যের বরাদ্দ কমানোর ফলস্বরুপ খুব স্বাভাবিকভাবেই সামনে দেখা যেতে পারে আরও অপুষ্টি, স্বাস্থ্য সমস্যা, পড়ালেখা থেকে শিশুদের ঝরে পড়া, বাল্য বিবাহের নতুন নতুন ঘটনা, শিশুশ্রম ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের ৬ সংস্থার তহবিল বরাদ্দ বাস্তবায়ন
এ কারণে জীবন রক্ষাকারী ও জীবন ধারণকারী সহায়তাগুলো চালু রাখতে আর্থিক সহায়তা জারি রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে প্রয়োজন শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ ও জীবিকার সুযোগ; যেন শরণার্থীরা তাদের কিছু মৌলিক প্রয়োজন নিজেরাই মেটাতে পারে। ভাসান চরে স্থানান্তরিত প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গার জীবিকামূলক কাজ শুরুর জন্য প্রয়োজন উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ, যা চরের এই প্রকল্পকে টেকসই করার একটি পূর্বশর্ত।
দীর্ঘ শরণার্থী জীবন ও ক্যাম্পের পরিস্থিতির অবনতির কারণে রোহিঙ্গারা একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায় ক্রমবর্ধমান হারে বিপদজনক উপায়ে সাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করছে। শুধু গত বছরেই সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেছে, এবং তাদের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে কিংবা হারিয়ে গেছে।
রোহিঙ্গা সংকটের চূড়ান্ত সমাধান মিয়ানমারেই নিহিত। অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থীর কাছে আমরা শুনি প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিজ দেশে ফিরতে চাওয়ার আকূলতা। কিন্তু নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা নিকট ভবিষ্যতে দেখা যাচ্ছে না। সে জন্যেই প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত মিয়ানমারকে দ্রুত সাহায্য করা, এবং রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরার অধিকার সমুন্নত রাখতে কাজ করে যাওয়া। ঠিক একই সঙ্গে রোহিঙ্গারা অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত ক্যাম্পে তাদের কার্যকরী সুরক্ষা ও জীবন রক্ষাকারী সহায়তা প্রদানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য প্রয়োজন।
ভৌগলিক অবস্থানের কারণে ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশেপাশের স্থানীয় জনগণ প্রতি বছর ভারী মৌসুমী বৃষ্টি ও সাইক্লোনের উল্লেখযোগ্য ঝুঁকিতে থাকে। এই জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবিলা ও এর ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী করা, এবং পুনঃবনায়ন, পুনঃব্যবহার্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির উত্তরোত্তর প্রচারণার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা। শরণার্থীদের রান্নার জন্য গ্যাস- যা স্থানীয় পরিবেশের উপর চাপ কমিয়েছে দারুণভাবে চালু রাখতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরণের কারণ খতিয়ে দেখছে সরকার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী