জো বাইডেন
বাইডেন রাজত্বের ১৫০ দিনে ৩০ কোটি টিকার মাইলফলক
বৈশ্বিক মহামরি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ক্ষমতা গ্রহণের ১৫০ দিনের মধ্যে ৩০ কোটি ডোজ করোনার টিকা প্রদানের মাইলফলক ছুতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।শুক্রবার হোয়াইট হাউজে এই মাইলফলক পূরণের কথা জানান আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। এসময় তিনি গবেষক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, মার্কিন নাগরিক এবং তার পুরো প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, এই সাফল্যের কৃতিত্ত্ব সম্পূর্ণ তাদের।
আরও পড়ুন: ফলাফলহীন বাইডেন-পুতিনের ‘কার্যকরী’ বৈঠক
এবছর মানুষ স্বাভাবিক গ্রীষ্মকাল পার করবে আশা করে জো বাইডেন বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় আমরা ভিন্ন এক গ্রীষ্মকাল উপভোগ করতে চলেছি। আশা করি, এই গ্রীষ্মকাল আমেরিকানদের জন্য আনন্দপূর্ণ হতে চলেছে।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাইডেন প্রশাসনকে নেতৃত্ব দেয়ার আহ্বান ঢাকার
কিন্তু একটি মাইলফলক ছুতে পারলেও, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৪ জুলাইয়ের মধ্যে দেশটির ৭০ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্কদের অন্তত করোনা টিকার একটি ডোজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হতে চলেছেন বাইডেন।
আরও পড়ুন: ভ্যাকসিন বাণিজ্যে স্বচ্ছতার আহ্বান বাংলাদেশের
এখন পর্যন্ত দেশটির ৬৫.১ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্কদের অন্তত প্রথম ডোজের টিকা প্রদান সম্পন্ন করতে পেরেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ফলাফলহীন বাইডেন-পুতিনের ‘কার্যকরী’ বৈঠক
দুই ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়ক যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন এবং রাশিয়ার পুতিনের মধ্যকার বহুল প্রতিক্ষীত জেনেভা বৈঠক অনেকটা ফলাফলহীন ভাবেই শেষ হয়েছে।
বুধবার জেনেভায় অনুষ্ঠিত এই রাষ্ট্রপ্রধানদের বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার বৈরিতা প্রশমন হবার আশা করা হলেও, বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে বৈঠককে কার্যকরী বলে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন: তিন নভোচারী নিয়ে চীনের প্রথম মহাকাশ যাত্রা
বৈঠকে মানবাধিকার, সাইবার আক্রমণ, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হস্তক্ষেপসহ দুই দেশের মধ্যকার বিভিন্ন নেতিবাচক দিকগুলোই উঠে এসেছে।
তবে এই দুই রাষ্ট্র প্রধান তাদের দেশের রাষ্ট্রদূত প্রেরণে সম্মত হয়েছেন। এর আগে পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি ঘটলে দুই দেশই নিজেদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়।
আরও পড়ুন: ভিড়ের মাঝে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ম্যাক্রোঁকে চড়
এছাড়া দেশ দু’টি তাদের মধ্যকার শেষ চুক্তি হিসেবে রয়ে যাওয়া পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।
কিন্তু সবদিক বিবেচনায় জেনেভার এই বৈঠক তাদেরকে নিজেদের পূর্বের অবস্থান থেকে খুব একটা টলাতে পারেনি।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলে নতুন সরকার: অবশেষে নেতানিয়াহু যুগের অবসান
সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেন, ‘আমি নিশ্চিত না যে, তিনি (পুতিন) তার আচরণ পরিবর্তন করবেন কিনা। তার প্রতি পৃথিবীর মানুষের প্রতিক্রিয়াই তাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে পারে। আর এর মাধ্যমে তারা তাদের অবস্থান হারাতেও পারে। আমি এসব ব্যাপারে নিশ্চিত নই।’
পুতিনের সাথে বৈঠকে প্রস্তুত বাইডেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেবার পর নিজের প্রথম বিদেশ সফরে ইউরোপকে বেছে নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আর এই সফরের মূল আকর্ষণ হলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠক।ইউরোপীয় মিত্রদের সাথে বৈঠকের পর মঙ্গলবার জেনেভায় পৌঁছে নিজেকে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত বলে ঘোষণা করেন বাইডেন। সেখানে এক সাংবাদিক বাইডেনের দিকে পুতিনের সাথে বৈঠকের প্রস্তুতির ব্যাপারে প্রশ্ন ছুড়ে দিলে তিনি বলেন, ‘আমি সবসময়ই প্রস্তুত।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক সুগভীর করতে চান বাইডেন
বুধবার যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার এই বৈঠকে প্রথমবারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুতিনের মুখোমুখী হতে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নয়া রাষ্ট্রপতি বাইডেন। আজকের এই আলোচনা যথেষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ এবং ফলপ্রসূ হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে বিশ্বের দুই শক্তিশালী দেশের প্রধানদের এই বৈঠকের দিকেই তাকিয়ে আছে বিশ্ব।
আরও পড়ুন: বাইডেন-পুতিনের প্রথম ফোনালাপ: কী কথা হলো তাদের মধ্যে?
দীর্ঘ এক সপ্তাহের ইউরোপ সফরের পর এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে, জো বাইডেন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির অংশ হিসেবেই ইউরোপীয় বন্ধু দেশগুলোর সাথে নিবিড় সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছেন। এর পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া ও চীনের সাথে লড়াইয়ে এগিয়ে যাবার চেষ্টাও করছেন।
আরও পড়ুন: করোনা মহামারি ইস্যুতে শি জিনপিং-পুতিন ফোনালাপ
এর আগে গ্রুপ অব সেভেন (জি-৭), ন্যাটো এবং মার্কিন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সামিটে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: মোমেন
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে. আব্দুল বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের একটা বড় অংশকে নিজেদের অভিবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নিতে পারে। ২০২১-২২ সালে অভিবাসন প্রত্যাশী শরণার্থীদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের সুযোগ দেয়ার ব্যাপারে একথা উঠে আসে।
বৃহস্পতিবার (৬ মে) মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলারের সাথে নিজ কার্যালয়ে আলাপকালে এসব বিষয়ে আলোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
২০২১ সালে সাড়ে ৬২ হাজার এবং ২০২২ সালে ১ লাখ ২৫ হাজার শরণার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রদান করা হবে। জো বাইডেন প্রশাসনের নতুন এই সিদ্ধান্তের বেশ প্রশংসা করেন মন্ত্রী।
মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত এবং বাংলাদেশে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য সবচেয়ে বেশি সহায়তা দেয়া দেশ যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতেও তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলেও এ সময় আশা ব্যক্ত করেন ড. মোমেন।
আলোচনায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানান, ১৮ মে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বার্ষিক সমন্বিত কর্মপরিকল্পনায় রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য আমেরিকা আবারও সকলের কাছে সাহায্যের বিষয়টি তুলে ধরবে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী জানান, বাইডেন প্রশাসন কর্তৃক মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হওয়া যুদ্ধপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে।
আরও পড়ুন: অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা পেতে তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জরুরি ৪০ লাখ ভ্যাকসিন চায় বাংলাদেশ
রোহিঙ্গা ইস্যুর পাশাপাশি ড. মোমেন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভিসা জটিলতার বিষয়টি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ঢাকার মার্কিন দূতাবাস পূর্বের সকল ভিসা ইন্টারভিউ বাতিল করায় এবং নতুন ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট বন্ধ রাখায় অনেক শিক্ষার্থীই তাদের ফান্ডিং এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ হারানোসহ নানা আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
এর জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদশে চলমান লকডাউনে কারণে বেশ কয়েকটি ইন্টার্ভিউ স্লট বাতিল করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, লকডাউন শেষ হলেই ঢাকার মার্কিন দূতাবাস সকল শিক্ষার্থীদের ভিসা ইন্টারভিউয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।
তবে বৃহস্পতিবারের আলোচনার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বাংলাদেশের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সংগ্রহের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা ও করণীয় বের করা।
আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশকে ৪০ লাখ ডোজ করোনা টিকা দেয়ার আহ্বান জানান। এর পাশাপাশি আমেরিকার কাছ থেকে আরও ২ কোটি ডোজ অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের চাহিদার কথা জানান তিনি।
ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে মিলার আশ্বস্ত করে বলেন, মার্কিন সরকার বাংলাদেশের প্রস্তাবের ব্যাপারে কাজ করছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া কিছুটা সময় সাপেক্ষ বলেও জানান তিনি।
এ সময় মিলার বলেন, ‘আমেরিকা এখনও ভারতকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দেয়নি। আশা করছি ভারত ও বাংলাদেশকে একই সময়ে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে।’
কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে জোর দেন।
এদিকে বুধবার (৫ মে) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের করোনা টিকার মেধাস্বত্ব প্রত্যাহারের দাবির প্রতি সমর্থন জানানোকে সমর্থন জানিয়েছেন ড. মোমেন।
তিনি মনে করেন, এর ফলে উন্নয়শীল ও দরিদ্র দেশগুলো নিজেরা ভ্যাকসিন তৈরি করে সহজেই করোনা মোকাবিলা করতে পারবে।
এ সকল বিষয় ছাড়াও বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিলার।
জলবায়ু অভিযোজন: ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিলের ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ
জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক অর্থ সহায়তা পাওয়ার ব্যাপারে আশা ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।
শুক্রবার মন্ত্রী এমন আশাব্যক্ত করে বলেন, ‘অর্থ কোনো সমস্যা না, বরং রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি রক্ষা করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের আয়োজনে জলবায়ু শীর্ষক বিশ্ব নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন চলমান ‘লিডার্স সামিটি’র প্রথমদিন শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সবসময়ই খুব আশাবাদী। রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আর উপস্থিতি এই সম্মেলনে দেখতে পাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: লিডার্স সামিট: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ৪ পরামর্শ
ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সম্মেলনে তার বক্তব্যে জলবায়ু সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য উন্নতদেশগুলোর পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল নিশ্চিত করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু সমস্যা নিরসনের ক্ষেত্রে এই জলবায়ু সম্মেলন একটি যুগান্তকারী অধ্যায়।
এই সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের প্রতিশ্রুতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিলের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তহবিলে অর্থ ব্যবস্থাপনায় অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ৫০:৫০ ভারসাম্য বজায় রাখার কথাও বলেছে। কারণ প্রশমন ছাড়া অভিযোজন কখনোই সুফল আনতে পারে না।
আরও পড়ুন: বাইডেনের জলবায়ু সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে থাকছে বাংলাদেশের দাবিদাওয়া: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আহ্বানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগা, রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি মুন জে-ইন এবং তুরেস্কের রাষ্ট্রপতি রেসেপ তায়েপ এরদোগান অন্যান্য আমন্ত্রিতদের মধ্যে জলবায়ু সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাতে জন কেরি ঢাকায়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি শুক্রবার সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতিশ্রুতিকে এগিয়ে নিতে তিনি ঢাকা এসেছেন।
বেলা সাড়ে ১১ টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন ও তার স্ত্রী সেলিনা মোমেন কেরিকে গ্রহণ করেন। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ২২-২৩ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে ক্লাইমেট ইস্যুতে একটি সম্মেলনের দাওয়াত দিতে ঢাকায় এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি জো বাইডেনের পক্ষ থেকে এই সম্মেলনে অংশ নেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন।
আরও পড়ুন: জলবায়ু-সহিষ্ণু উন্নয়ন করেছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
ভারত সফর শেষে কেরি টুইট করে বলেন, ‘প্যারিস চুক্তি জলবায়ু সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের আরও ক্ষমতায়নের বিশ্বব্যাপী প্রয়োজনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ‘তাই ভারতবর্ষে জলবায়ু পদক্ষেপ এবং শক্তি পরিবর্তনের জন্য চালিত নারী নেত্রীদের সাথে সাক্ষাতে আমি আনন্দিত।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ইউএনবিকে জানান, ঢাকায় কেরি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি এবং মূল উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে সাক্ষাত করবেন।
বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বৈঠকের আগে কেরি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এবং অন্যদের সাথে সাক্ষাত করবেন।
আরও পড়ুন: জলবায়ুর কারণে বিশ্বে ২ কোটি মানুষ অভিবাসী হওয়ার আশঙ্কা
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জ্বালানি ও পরিবেশের মার্কিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মার্সিয়া বার্নিকাট বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের নেতৃত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বকে একটি দুর্দান্ত অংশীদার হিসেবে প্রস্তাব করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪০ জন বিশ্বনেতাকে জলবায়ু সম্মেলনে আমন্ত্রণ করেছেন।
অনলাইনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই শীর্ষ সম্মেলন সর্বজনীন দেখার জন্য লাইভ স্ট্রিম হবে।
জলবায়ু শীর্ষক সম্মেলনটি শক্তিশালী জলবায়ুর তাৎপর্য এবং অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো নির্দেশ করবে। এই নভেম্বরে গ্লাসগোতে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (সিওপি২৬) হওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি মূল মাইলফলক হবে।
ড. মোমেন ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা আমাদের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো জানাতে পেরে খুশি হব। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাও আমরা তাদেরকে জানাব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে অভিযোজন যথেষ্ট নয় এবং এটিকে প্রশমন করতে হবে এবং তাদের প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাংলাদেশের সমর্থন প্রয়োজন। এটি কেরির বিশেষ লক্ষ্য হওয়া উচিত।’
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল: মন্ত্রী
ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ সমস্যা সৃষ্টি করেনি এবং নদীভাঙ্গন থেকে মানুষকে পুনর্বাসিত ও রক্ষার জন্য দায়িত্বশীল দেশগুলোর উচিত দায়িত্ব ভাগ করে নেয়া।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জকে জোর দিয়ে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্ব গভীর জলবায়ু সংকটের মুখোমুখি এবং আমাদের বৈদেশিক নীতি, কূটনীতি এবং জাতীয় সুরক্ষার কেন্দ্রবিন্দু জলবায়ু পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে হওয়া উচিৎ।’
প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য অফিসের প্রথম দিনেই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
পরের দিন ২৭ জানুয়ারি, তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় প্রধান অর্থনীতিবিদদের প্রচেষ্টার উদ্যোগের জন্য তিনি শিগগরই নেতাদের একটি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করবেন।
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা মূল বিষয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে
বাইডেন শাসনামলে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার সম্পর্ক আরও গভীর এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। একই সাথে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বিষয়টি দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও গুরুত্পূর্ণ হয়ে উঠবে বলে তারা জানিয়েছেন।
মিয়ানমারের ঘটনাবলী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখার দরকার আছে বলে তারা মনে করেন।
শনিবার রাতে কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক অনলাইন অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।
ঢাকা-ওয়াশিংটনের বর্তমান সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যাবতীয় চ্যালেঞ্জসমূহ এবং সুবিধার জায়গাগুলো চিহ্নিত করার উদ্দেশে কসমস ফাউন্ডেশন এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলার্সের এশিয়া কর্মসূচির উপপরিচালক ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট কুগেলম্যান।
কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতউল্লাহ খান কসমস ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে সম্প্রচার করা অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন।
কূটনীতিক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
সিম্পোজিয়ামটি ছিল কসমস ফাউন্ডেশনের ফ্ল্যাগশিপ ‘ডায়ালগ’ সিরিজের সর্বশেষ সংস্করণ।
সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক করিম, ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ, বাংলাদেশি-আমেরিকান বিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদ ড. নীনা আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত সেরাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
কুগেলম্যান তার বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্ক, বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা এবং বাইডেন যুগে কী প্রত্যাশা তা নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, বাইডেনের শাসনামলে বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আরও বেশি সহযোগিতা করার সুযোগ এবং মার্কিন ইন্দো প্যাসিফিক নীতিতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
কুগেলম্যান বলেন, অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ঢাকা এবং ওয়াশিংটনের মধ্যকার সম্পর্ক সামগ্রিকভাবে সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং স্থিতিশীল হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ওয়াশিংটন জানে যে চীন-ভারত দুই দেশই বাংলাদেশের মূল প্রতিযোগী।
তিনি বলেন, বর্তমানে যে কেউ বিতর্ক করতে পারে যে, দিল্লির সাথে ঢাকার সম্পর্ক বেইজিংয়ের তুলনায় উষ্ণ এবং আরও বহুমুখী, তবে স্পষ্টতই এখানে একটি প্রতিযোগিতা চলছে।’
রাষ্ট্রদূত তারিক করিম বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ভারতের সাথে বৈদেশিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে, অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবাইকে একটি মূল বার্তা পাঠাতে চাইছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশেষত দুটি প্রধান শক্তি ভারত ও চীনের মধ্যে রয়েছে। এটি কৌশলগতভাবে স্থাপন করা হয়েছে।’
সাবেক কূটনীতিক বলেন, ভারত এবং চীন যারা একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে তাদের সাথে বাংলাদেশ সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। ‘আমরা ইন্দো প্যাসিফিক এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভেরও অংশ।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নত করছে যা স্বাভাবিক, যেখানে চীন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ছাড়াও অর্থনৈতিক প্রকল্পে সম্পৃক্ত রয়েছে।
তারিক করিম বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই তাদের বৈদেশিক নীতিতে সাবধানতার সাথে বিবেচনা করতে হবে কারণ বাংলাদেশ এখন আর গুরুত্বহীন দেশ নয়।
এনায়েতউল্লাহ খান বলেন, তারা আশাবাদী যে মিয়ানমারের বর্তমান ঘটনার বিষয়ে আমেরিকা বৃহত্তর ভূমিকা গ্রহণ করবে এবং এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গা ইস্যুটির সমাধান করবে।
ড. ইফতেখার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ মহামারি সম্পর্কিত বিষয়গুলো জড়িত থাকার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরও ছোট আন্তর্জাতিক বিষয়ের সাথেও জড়িত হওয়া দরকার।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের লক্ষ্য উন্নয়ন এবং বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সমর্থন প্রত্যাশা করে। আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রবেশাধিকার প্রয়োজন হবে এবং আমরা বিশ্বাস করি ইতিবাচক ফলাফল আসবে।’
অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, আমেরিকা ভারতের সাথে কীভাবে আচরণ করে তা বাংলাদেশ-আমেরিকা সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে।
ড. নীনা আহমেদ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্থানের পিছনে মানুষের আত্মত্যাগ এবং কীভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন তা স্মরণ করেন।
তিনি দরিদ্রদের মাঝে বিনিয়োগের উপর জোর দেন। এছাড়া বাংলাদেশকে আরও শক্তিশালী করতে নারীদের কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখতে এবং শ্রম বাজারে সহায়তা অব্যাহত রাখার কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘কিছুই নেই থেকে শুরু করে বাংলাদেশ এখন ৫০ বছরে এসে পৌঁছেছে।’
ঢাকায় আসছেন জন কেরি
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি আগামী ৯ এপ্রিল ঢাকায় আসবেন।
বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন ইউএনবিকে কেরির ঢাকা সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আগামী ২২ ও ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য ‘জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে’ অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাবেন তিনি, বলেন মোমেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৪০ জন বিশ্ব নেতাকে এ সম্মেলনে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
ভার্চুয়াল এই সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন: বাংলাদেশ-মার্কিন সহযোগিতা নিয়ে কেরি-মোমেনের ফোনালাপ
মে’র মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক সবার জন্য টিকা সরবরাহের ঘোষণা বাইডেনের
পূর্ব ঘোষিত সময়ের দুই মাস আগেই আগামী মে মাসের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিককে করোনার টিকা দেয়ার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক: মোমেন- ব্লিংকেন বৈঠক ২৪ ফেব্রুয়ারি
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘বিস্তৃত’ আলোচনা করতে সোমবার রাতে ওয়াশিংটনের উদ্দেশে রওনা হবেন।