ঘূর্ণিঝড়
বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বেই যেসব খাবার সংরক্ষণ করা জরুরি
বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় বা পরবর্তী অবস্থায় খাবারের চাহিদা পূরণের জন্য দুর্যোগের আগে থেকেই খাবার সংরক্ষণ জরুরি। দুর্যোগ পরবর্তী বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে নিরাপদে থাকাটাই কঠিন। সেখানে খাবারের ব্যবস্থা করার কোন অবকাশ থাকে না। তবে পূর্বপ্রস্তুতি থাকলে এই ধাক্কাটা অনেকাংশে সামলে ওঠা যায়। মুলত এ অবস্থায় সমূহ ক্ষতির কথা বিবেচনা করেই এগোতে হবে। কেননা এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতি মোকাবেলা করা দুরূহ ব্যাপার। এরপরেও নিজের নিরাপদে টিকে থাকাটা সুনিশ্চিত করার জন্য বিকল্প উপায়গুলো অবলম্বন করলে বিপদ কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। এই নিবন্ধে দুর্যোগ পূর্ববর্তী বিভিন্ন ধরনের খাবার সংরক্ষণের উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।
বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের আগে কোন ধরনের খাবার সংরক্ষণ করতে হবে
চিড়া-মুড়ি-খৈ
সহজলভ্য শুকনো খাবার মানেই চিড়া, মুড়ি আর খৈ। দুর্যোগ সহ যে কোন জরুরি অবস্থায় এই শুকনো খাবারগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। যেহেতু দুর্যোগ পরবর্তী সময়ের জন্য যে সব খাবার বানানোর প্রয়োজন হয় না সে ধরনের খাবার সাথে রাখার দিকে গুরুত্ব বেশি দিতে হবে। সে দিক থেকে চিড়া, মুড়ি, খৈ উপযুক্ত খাবার হতে পারে। তাছাড়া এগুলো দীর্ঘ সময় ক্ষুধা লাঘব করতে সক্ষম।
মুড়ির মতো চিড়াও বেশ সহজলভ্য এবং এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখতে সক্ষম।
আরো পড়ুন: প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পশু-পাখির সুরক্ষা: বন্যা, খরা ও শৈত্য প্রবাহে করণীয়
আলু
সবজির মধ্যে দীর্ঘ দিন সঞ্চয় করে রাখার ক্ষেত্রে সর্বাধিক জনপ্রিয় হচ্ছে আলু। যুদ্ধ, বিভিন্ন দুর্ভিক্ষ পীড়িত সময়গুলোতে মানুষ আলু দিয়েই দিন যাপন করতো। শরীরে যথেষ্ট কার্বোহাইড্রেট যোগানের জন্য কোন পূর্ব প্রস্তুতি সহ রান্না করা ছাড়াই শুকনো খাবার হিসেবে আলুর বিকল্প নেই।
নারকেল, খেজুর ও বাদাম
শুকনো ফল হিসেবে সবচেয়ে উপকারি ফল হলো এই নারকেল, খেজুর ও বাদাম। এগুলো অনেক দিন ধরে খাবার যোগ্য থাকে এবং একই সাথে এগুলো খাওয়ার ফলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি হয়। এখানে নারকেল একই সাথে ক্ষুধা ও তৃষ্ণা দুটোই মিটাবে। পুরো এক বেলার ক্ষুধা নিবারণের জন্য একটি খেজুরই যথেষ্ট। আর তাতে যে কোন ধরনের বাদাম যোগ হলে পুরো আহারটিই পরিপূর্ণ হয়ে যায়। তাছাড়া এগুলো শিশুদের জন্যও বেশ পুষ্টিকর খাবার।
বিস্কুট ও গুড়
মুড়ি-চিড়া ও আলুর মত বিস্কুট এবং গুড় দুর্যোগের সময়ে ব্যবহারের জন্য সার্বজনীন খাবার। ক্ষুধা নিবারণের পাশাপাশি খাবারে রুচির ভিন্নতা আনতে সহায়তা করে এই খাবারগুলো। গুড় দিয়ে চটজলদি শরবত বানিয়ে নিয়ে তৃষ্ণা মেটানো যায়। খাবার দুটি একত্রে শরীর সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। তবে বিস্কুট সংরক্ষণের সময় অবশ্যই এর মেয়াদ দেখে নিতে হবে। নতুবা মেয়াদোত্তীর্ণ বিস্কুট খেয়ে হিতে-বিপরীত ঘটতে পারে।
আরো পড়ুন: রাতে হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর সময় প্রয়োজনীয় কিছু সতর্কতা
বিশুদ্ধ খাবার পানি ও ঔষধপত্র
বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের পর অন্যান্য খাবারের সাথে পানিরও সংকট দেখা দেয়। আর কমপক্ষে পানি না হলে এমন ভয়াবহ অবস্থায় টিকে থাকাটাই কঠিন হয়ে যায়। তাই পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে বিশুদ্ধ পানি সংরক্ষণের দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
আরো একটি দরকারি জিনিস হলো খাবার স্যালাইন। বন্যার সময় স্বাভাবিক ভাবেই পেটে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় কমপক্ষে শরীরে পানির ঘাটতি পুরণের ব্যবস্থা রাখা বাঞ্ছনীয়। এর বাইরে সম্ভব হলে প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরঞ্জামগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। স্বাভাবিক ভাবেই দুর্যোগ পীড়িত অবস্থায় ফার্মেসিতে যেয়ে ঔষধ কেনার অবস্থা থাকবে না। তাই যে ঔষধগুলো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অব্যাহত ছিলো, কমপক্ষে সেগুলো সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
চাল-ডাল, লবণ
দুর্যোগের পরে যদি কোন ভাবে পানি গরম করার অবস্থা বিদ্যমান থাকে সে কথা ভেবে চাল-ডাল ও লবণ সংরক্ষণ করে রাখা যেতে পারে। তাহলে নিদেনপক্ষে ডাল-ভাত খাওয়া সম্ভব হবে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশের বাহারি আম এবং তাদের উৎপাদনকারী অঞ্চল
বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের আগে খাবার সংরক্ষণের উপায়
বাষ্পরুদ্ধ কৌটায় চিড়া-মুড়ি-খই ও বাদাম রাখা
সবচেয়ে ভালো কৌটার মুখে কাগজ দিয়ে তারপর মুখ লাগালে। কৌটার ভেতরে পলিথিনের ভেতরে রাখলে আরো নিরাপদ হবে। এভাবে কৌটার ভেতরে বাতাস ঢুকে চিড়া-মুড়ি-খই নরম হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি দূর হবে। এটি দীর্ঘ দিন চিড়া-মুড়ি-খই খাওয়ার যোগ্য রাখার একটা ভালো পদ্ধতি।
কাঠ, পেস্তা ও কাজু বাদাম সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। তবে বাদামের কৌটা অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা জায়গায় রাখা ভালো।
শুকনো ঠান্ডা স্থানে আলু সংরক্ষণ
পানির সংস্পর্শে আলুতে পঁচন ধরে তাই আলু সংরক্ষণের জন্য শুকনো স্থান বাছাই করা উচিত। এ জন্য বাঁশের ঝুড়ি, ডোল ও মাটির যে কোনো পাত্র নির্বাচন করা যেতে পারে। প্রতিটি ক্ষেত্রে পাত্র অবশ্যই ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে। আলুতে পোকার আক্রমণ প্রতিরোধে নিশিন্দা, নিম ও বিষ কাটালি পাতার গুঁড়ো আলুর স্তুপে মিশিয়ে দেয়া যায়। প্রায় সাত থেকে আট মাস আলু সংরক্ষণের জন্য এ পদ্ধতি বেশ কার্যকর।
আরো পড়ুন: এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়
বিস্কুট ও লবণের বয়ামে চালের পুঁটলি রাখা
খোলা জায়গায় বিস্কুটের কুড়মুড়ে ভাবটা নিমেষেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই বায়ুরোধী পাত্রে বিস্কুট রেখে ব্লটিং পেপার দিয়ে মুখ ভাল করে লাগিয়ে রাখতে হবে। এছাড়া অল্প কিছু চাল পুঁটলি বেঁধে বিস্কুটের সাথে রাখলে বিস্কুট সহজে নেতিয়ে যায় না।
লবণের পানি পানি হওয়া রোধ করতেও একই কাজ করা যেতে পারে। এভাবে দীর্ঘ দিন বিস্কুট ও লবণ ভালো রাখা যায়।
কিছু দিন পর পর গুড় রোদে দেয়া
বায়ুরোধী পাত্র ভর্তি পাটালি গুড় খুব গরমেও না আবার খুব ঠান্ডাতেও রাখা যাবে না। পাত্রের ভেতরে কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখা যেতে পারে। দানাগুড় ও ঝোলাগুড়ের ভেতরে ভেজা চামচ ডোবানো যাবে না। সেগুলোর পাত্র কিছু দিয়ে ঢেকে অথবা মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে। পাত্রের ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের বয়াম নির্বাচন করা যাবে না। গুড়ের স্বাদ ও গন্ধ বেশি দিন অটুট রাখার জন্য সিলভার বা কাঁচের পাত্র উত্তম। তবে যেভাবেই রাখা হোক না কেন, ফাঙ্গাসমুক্ত রাখতে কিছুদিন পর পর এই গুড় রোদে দিতে হবে।
আরো পড়ুন: কোন ধরনের আগুন কীভাবে নেভাবেন?
আস্ত নারিকেল সংরক্ষণ উত্তম
নারিকেল আস্ত রেখে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করাই সবচেয়ে সহজ। খোলা অবস্থায় সংরক্ষণ করতে ফ্রিজের প্রয়োজন হয়; তাও বেশিদিন এভাবে নারকেল ভালো রাখা সম্ভব হয় না। নারিকেলের পানি কাচের বয়ামে রাখা যেতে পারে। শুকনো নারিকেল সজ্জা অন্ধকার এবং অপেক্ষাকৃত শীতল জায়গায় বেশ কিছু দিন রাখা যেতে পারে। তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে নারিকেলের নষ্ট হওয়া সম্ভাবনা বাড়ে। আবার তাপমাত্রা যত কম হয়, ফল তত দ্রুত তার স্বাদ হারিয়ে ফেলে।
রুম টেম্পারেচারে বদ্ধ জায়গায় খেজুর রাখা
অন্যান্য শুকনো খাবারগুলো মত খেজুরও মুখবন্ধ বয়ামে সংরক্ষণ করতে হবে। সিল করা যায় এমন প্লাস্টিকের ব্যাগও খেজুর রাখার জন্য ভালো। তবে পাত্রগুলো যেন সরাসরি সূর্যের আলো না পায় বা চুলার আশেপাশে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খেজুর অল্প ভেজা রেখে রুম টেম্পারেচারে সংরক্ষণ করা উত্তম।
চাল-ডালের পোকা নির্মুল
চালের ড্রামের মধ্যে কয়েকটি শুকনো মরিচ বা গোল মরিচ ফেলে রাখলে আর পোকা আসে না। এছাড়া নিমের ডাল-সহ কয়েকটি নিমপাতা চালে ডুবিয়ে রাখলে টানা কয়েক মাস চাল পোকামুক্ত থাকে। একই ভাবে তেজপাতা চালের পাশাপাশি মসুরের ডালের ক্ষেত্রেও বেশ ভালো কাজ করে।
আরো পড়ুন: বন্যার সময় খাবার পানি পরিশোধিত করার উপায়
মুগ ডালে উদ্ভিজ্জ তেল মাখিয়ে একটি মুখবন্ধ মাটির পাত্রে রেখে দেয়া যায়। পাত্রের ভেতর কয়েকটি শুকনো লাল মরিচ ও নিম পাতা ফেলে পাত্রটি সুতি কাপড় দিয়ে আবৃত করে রাখলে অনেক দিন ডাল ভালো থাকে। ইঁদুরের উৎপাত থেকে রক্ষা করতে চারপাশে তারের জালি ঘিরে রাখা যেতে পারে। বুটের ডাল ভালো রাখার জন্য মাঝে মধ্যে রোদে দিতে হয়।
পানির বিশুদ্ধকরণ ও ঔষধপত্র সংরক্ষণ
খাবার পানি আগে থেকে বিশুদ্ধ করে রাখাটাই উত্তম। অন্যথায় দুর্যোগের মুহুর্তে ফিটকিরি, ফিল্টারসহ পানি ফুটানোর অন্য ব্যবস্থাগুলো সংরক্ষিত রাখতে হবে। ঝড়ের পর বৃষ্টির পানি জমিয়ে তা পান করা যায়।
ঔষধপত্রগুলো বিশেষ করে খাবার স্যালাইন ঘরের একটু উচু স্থানে পোকামাকড়ের থেকে দূরে রাখতে হবে। জায়গাটি যেন অবশ্যই চুলা বা ঘরের অত্যধিক গরম জায়গা না হয়ে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা হয়।
আরো পড়ুন: সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কমছে, তবে আটকে পড়া বর্জ্যে দুর্ভোগ
শেষাংশ
যে কোন পরিস্থিতিতে বিকল্প রাস্তাগুলো খোলা রাখলে জটিলতাগুলোর সাথে সংগ্রাম করে টিকে থাকা যায়। আর এই বিকল্প পথ তৈরি করার সবচেয়ে উপযুক্ত উপায় হলো প্রতিরোধ বা পূর্বপ্রস্তুতি। প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোতে তাৎক্ষণিকভাবে খাবারের ব্যবস্থা করার উপায় থাকে না। তাই বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের আগে থেকেই উপরোল্লিখিত খাবারগুলো সংরক্ষণ করে রাখলে দুর্যোগের প্রাক্কালে খাদ্যাভাব দূর করা যাবে। এমন দুর্যোগে নিজেকে নিরাপদে রাখার পরপরই প্রয়োজন পরে টিকে থাকার ব্যাপারটা। কেননা এ ধরনের দুর্যোগের ধাক্কা কয়েক দিন ধরে টেনে নিয়ে বেড়াতে হয়। এ অবস্থায় আগে থেকে সঞ্চিত খাবার এই দিনগুলোতে শরীর ও মন দুটোকে সবল রাখতে সাহায্য করবে।
অশনি: উদ্বেগে সাতক্ষীরা উপকূলীবাসী, মোকাবিলায় প্রস্তুত আশ্রায়কেন্দ্র
ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে সাতক্ষীরায় মঙ্গলবার সকাল থেকে আকাশ কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও দুপুর পর্যন্ত কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি।
এছাড়া উপকূলীয় নদী বেশ উত্তাল হওয়ায় এই এলাকার মানুষজন উদ্বেগের মধ্যে সময় পার করছেন। তবে অশনি মোকাবিলায় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসন জানায়, শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় ২৯৭টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে প্রায় দুই লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এছাড়া খাদ্য, তাবু ও নগদ তিন লাখ টাকা মজুদ রাখা হয়েছে। প্রতিটি এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করে অশনির প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি
স্থানীয়রা জানায়, সুন্দরবন উপকূলবর্তী শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় নদীর জোয়ারের পানি এক থেকে দেড় ফুট বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ৩০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো সংস্কারের কাজ চলছে। আম চাষিরা ঝড়ের ভয়ে অপুষ্ট আম গাছ থেকে পেড়ে ফেলছে। ফলে আম চাষিরা ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক এলাকায় কৃষকেরা এখনও বোরো ধান ঘরে তুলতে পারেনি। তবে কেউ কেউ ঝড়ের আগেই খেতের ধান বাড়ি তোলার জন্য রাত-দিন কাজ করছে।
শ্যামনগর উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম আতাউল হক দোলন বলেন, গত বছর আম্পানের ক্ষতি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি মানুষ। এরই মধ্যে অশনির সংকেত যেন মানুষের মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবীর জানান, ঘূর্ণিঝড় অশনি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঝড়ের আগেই যাতে সাধারণ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেন সেজন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা
উত্তর আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি সোমবার বিকালের মধ্যে আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে এবং তা উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।
এটি সোমবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এক হাজার ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার বন্দর থেকে এক হাজার ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা বন্দর থেকে এক হাজার ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা বন্দর থেকে এক হাজার ১৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছে।
গভীর নিম্নচাপটির কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: সাতক্ষীরার ৪৪ পয়েন্টে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ
গভীর নিম্নচাপের কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল থাকবে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া তাদের গভীর সাগরে না যেতেও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’: সমুদ্রবন্দরে ২ নম্বর সতর্কতা সংকেত
ফ্লোরিডায় ভবন ধস: নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৮
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মায়ামিতে বহুতল ভবন ধসের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
তবে ঘূর্ণিঝড় এলসা ফ্লোরিডা উপকূলের দিকে ধেয়ে আসায় উদ্ধার কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মিয়ামি অগ্নিনির্বাপক দলের সহকারী ফায়ার চিফ রেইড জাদাল্লাহ জানিয়েছেন, নিহতের সংখ্যাবেড়ে ২৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আরও ১১৭ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
আরও পড়ুন: ফ্লোরিডায় ১২ তলা ভবন ধসে বহু হতাহতের আশঙ্কা
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবন ধসের ১২ দিন পরও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে অনুসন্ধান তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে ভবনটির নিখোঁজ বাসিন্দাদের জীবিত উদ্ধারের আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে বরে তারা জানিয়েছেন।
মিয়ামির অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর সদস্য ম্যাগি কাস্ত্রো বলেন, ‘আমরা জানি দিন যত যাচ্ছে মানুষগুলোর বাঁচার সম্ভাবনা কমে আসছে।’
আরও পড়ুন: কানাডার আরেকটি আদিবাসী স্কুলে গণকবরের সন্ধান
২৪ জুন ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মায়ামিতে ১২ তলা বিশিষ্ট ভবনটি ধসে পড়ে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন বলে তখনই আশঙ্কা করা হয়েছিল।
ওই সময় ভবনটির বেশিরভাগ বাসিন্দাই ঘুমিয়ে ছিলেন। ভবনটি ধসে পড়ায় ওই কমপ্লেক্সের ১৩০টি ইউনিটের অর্ধেক তছনছ হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: কারাগারে ‘আত্মহত্যা’ করলেন অ্যান্টিভাইরাস গুরু জন ম্যাকাফি
যুক্তরাষ্ট্রে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ৮ শিশুসহ নিহত ১৩
যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় ৮ শিশুসহ ১৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ঘূর্ণিঝড় ক্লদেত্তের প্রভাবে সৃষ্ট বন্যার ফলে ভেজা রাস্তায় বেশ কয়েকটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: আগামী ১০ বছরে পরিবেশ বিপর্যয় থেকে বাঁচার শেষ সুযোগ: জাতিসংঘ মহাসচিব
বাটলার কাউন্টির করোনের ওয়েন গারলক জানান, শনিবার প্রদেশটিতে চলমান ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বেশ কয়েকটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সংঘর্ষ ঘটে। এসময় একটি ভ্যানে থাকা সেইফ হোমের আট শিশুসহ গাড়িটি কে ধাক্কা দেয় অপর একটি গাড়ি। ওই গাড়ির চালক ও গাড়িতে থাকা তার শিশু সন্তানও ওই দুর্ঘটনায় মারা যায়।
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যকে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর পাশে চায় ঢাকা
দুর্ঘটনার শিকার ওই গাড়িটিতে নিহতদের মধ্যে ৪ বছর থেকে ১৭ বছরের শিশু রয়েছে। এরা সকলেই তালাপোসা কাউন্টি গার্লস র্যাঞ্চে থাকতো। এই র্যাঞ্চটি পরিত্যক্ত ও নিপীড়নের শিকার মেয়েদের পুনর্বাসনের কাজ করে থাকে।
ওই দুর্ঘটনায় শুধুমাত্র ক্যান্ডিস গুলে নামে এক নারী বেঁচে গেলেও, তার দুই ১৬ ও ৪ বছর বয়সী দুই সন্তান মারা যায়।
আরও পড়ুন: তাইওয়ানকে ২৫ লাখ টিকা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
এছাড়া আটলান্টার বিভিন্ন জায়গায় গাছ ভেঙে পড়াসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় বাকিরা মারা যান।
কার্বন প্রশমনে ভূমিকা রাখছে সুন্দরবন: অলক শর্মা
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলন ‘সিওপি২৬’ এর সভাপতি অলক শর্মা সুন্দরবনের গুরত্ব তুলে ধরে বলেছেন, বিশ্বের বৃহতম ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন কার্বন প্রশমনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। সুন্দরবনকে তিনি ‘কার্বন সিংক’ বলে উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশে তার সাম্প্রতিক সফরকালে তিনি সুন্দরবন ভ্রমণ করেন। এসময় তিনি পর্যবেক্ষণ করেন কীভাবে সুন্দরবন আশেপাশের লোকালয়গুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে চলেছে।
অলক শর্মা বলেন, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ কার্বন সিংক ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে স্থানীয় জনপদকে প্রতিনিয়ত রক্ষা করছে। পরিবেশে কার্বনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং টিকে থাকার জন্য সুন্দরবন রক্ষা করা সকলের অগ্রাধিকার হওয়া উচিৎ।’
আরও পড়ুন: সিওপি২৬ সভাপতি অলোক শর্মা ২ দিনের সফরে ঢাকায়
সিওপি২৬ কে সামনে রেখে বাংলাদেশের জলবায়ুগত কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অলোক শর্মা।
সিওপি২৬ সভাপতির সফরকালে বাংলাদেশ জলবায়ু ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা জমা দিয়েছে। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বাংলাদেশের দক্ষ প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন।
অলোক শর্মা আরও বলেন, বর্তমানে বিশ্ব জলবায়ুগত বিষয়ে যেসব সমস্যা মোকাবিলা করছে তার জন্য বৈশ্বিক সমন্বয় প্রয়োজন। এই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা মোকবিলায় একসাথে কাজ করছে।
জলবায়ুগত সমস্যা মোকাবেলা করে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: খুলনা উপকূলে ৬০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
খুলনার উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতে ১০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, ৭ হাজার মৎস্য ঘের ও অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের ঘরবাড়ি এবং ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ৬০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
ইয়াসের প্রভাবে সুন্দরবনে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে ৪টি টিম গঠন
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের জন্য চারটি টিম গঠন করা হয়েছে।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. মইউদ্দিন খান ওই চারটি টিম গঠন করেন।
তিনি জানান, ইয়াসের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের জন্য সুন্দরবনের চারজন রেঞ্জ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনে সরজমিনে ঘুরে দেখে আগামী সপ্তাহের মধ্যে তারা রিপোর্ট দাখিল করবে। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে সুন্দরবনের বন্য প্রাণী এবং বনজ দ্রব্যের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ পর্যন্ত সুন্দরবন থেকে ভেসে যাওয়া চারটি মৃত এবং দুটি জীবিত হরিণ উদ্ধারের তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। তবে সুন্দরবনের বনজদ্রব্যের তেমন ক্ষতির কোন খবর পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে বাগেরহাটে সাড়ে ৬ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে : মৎস্য বিভাগ
তথ্য মতে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব প্রথমে সুন্দরবনে পড়ে। নদ-নদী ও খালে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হয়।
বন বিভাগ জানায়, বুধবার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে সুন্দরনবনের বিভিন্ন অংশ ডুবে যায় এবং প্রায় ৫ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে। বৃহস্পতিবারও জোয়ারের সময় সুন্দরবনে দুই ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়। তবে নদ-নদীতে প্রচন্ড ঢেউ ও পানির চাপ থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপনের কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস : খুলনায় অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা এবং চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষকরা সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপনে কাজ করছে।
শরণখোলা রেঞ্জর সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন জানান, সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের কাজ শুরু করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: সাতক্ষীরার ৪৪ পয়েন্টে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে বাগেরহাটে সাড়ে ৬ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে : মৎস্য বিভাগ
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটে ৪ হাজার ৪৭০টি মৎস্য ঘের ও ৪০০ পুকুর ডুবে গেছে। এসব ঘের ডুবে সাড়ে ৬ কোটি টাকা মূল্যের চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ ভেসে গেছে। পুকুর ডুবে অনেক এলাকায় মিষ্টি পানির উৎস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে জেলা মৎস্য বিভাগ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস : খুলনায় অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত
তথ্য অনুযায়ী, বুধবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বাগেরহাটের বিভিন্ন নদীতে বিপদসীমার ১ ফুট ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রাম এবং মৎস্যঘেরে পানি ঢুকে পড়ে। পানির চাপে একের পর এক মৎস্য ঘের ও পুকুর ডুবে যায়। এসব ঘের থেকে চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ ভেসে গেছে।
মৎস্য চাষিদের তথ্য মতে, তাদের ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: সাতক্ষীরার ৪৪ পয়েন্টে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম রাসেল জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের আট উপজেলায় ৪,৪৭০টি মৎস্য ঘের ও ৪০০ পুকুর ডুবে যায়। এসব মৎস্য ঘের ডুবে সাড়ে ৬ কোটি টাকার চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। বিশেষ করে বাগেরহাটের শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, রামপাল এবং মোংলা উপজেলায় মৎস্যঘের সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে ইয়াসের প্রভাবে ১৬ গ্রাম প্লাবিত
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকার মানুষ দিন কাটাচ্ছে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে
সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব এখনো কাটেনি।
শুক্রবার সকাল থেকে উপকূলীয় এলাকায় মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
এই আবহাওয়ার মধ্যে স্থানীয় লোকজন তাদের জান, সম্পদ রক্ষার্থে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ অব্যাহত রেখেছে। যে ৪৪ টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়েছিল তার অধিকাংশ সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে ইয়াসের প্রভাবে ১৬ গ্রাম প্লাবিত
শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ। আর আশাশুনি উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে লোকসংখ্যা প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজার। এ দুই উপজেলা খোলপেটুয়া, ইছামতি চুনকুড়ি, চুন, মালঞ্চ নদনদী দিয়ে বেষ্টিত। এসব জনপদ নদনদীর পানি থেকে রক্ষা করতে রয়েছে ২০৫ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে ঘেরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে এ দুই উপজেলার মানুষ টিকে আছে। প্রায় প্রতিবছর কোনো না দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয় এসব জনপদের মানুষের।
আরও পড়ুন: 'ইয়াস' মোকাবিলায় জনপ্রতিনিধিদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর
২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে এ দুই উপজেলা লন্ডভন্ড করে দিয়ে যায়। এখন মানুষ সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়িতে পারেনি। ঠিক এক বছর পর আবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর কবলে পরে এসব জনপদ।
সরেজমিনে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও কথা বলে দেখা গেছে, বুধবার জোয়ারে যেসব বাঁধ ভেঙ্গে ও পানি উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকেছিল, তার অধিকংশ এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। শ্যামনগরের দ্বীপ ইউনিয়ন পদ্মপুকুর ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ এখনও সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। ফলশ্রুতিতে ঐ দুটি ইয়নিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ধ্বসে পড়া বেড়িবাঁধ নির্মাণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ঐ এলাকায় শুকনো খাবার ও সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকছে।
আরও পড়ুন: ভোলায় ইয়াসের প্রভাবে চরাঞ্চল প্লাবিত, ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, পদ্মপুকুর ও প্রতাপনগর ইউনিয়নে ধ্বসে পড়া বেড়িবাঁধ এখনো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। অন্য স্থানে সংস্কার কাজ সম্ভব হয়েছে। দূর্গত এলাকায় শুকনো খাবার ও সুপেয় পানি পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি না পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।