শ্রমিক
শ্রমিক সংকটে কৃষকদের পাশে ৩১৫ শিক্ষার্থী
কারো মাথায় টোপা, কারো মাথায় গামছা বাঁধা, কারো হাতে আবার কাস্তে। উপলক্ষ বিদ্যালয় মাঠ পেরিয়ে সোনালি ধান কর্তন। বোরো ধানের ভরা মৌসুমে অসহায় কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে এমন ব্যতিক্রমী ও মানবিক উদ্যোগ নিয়েছেন নড়াইলের গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
রবিবার দুপুরে তিনদিনব্যাপী ধানকাটা উৎসব শেষ হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার (১৩ মে) সকাল ৮টা থেকে মাঠে নেমে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শুধু ধানকাটাই নয়, বাড়িতেও পৌঁছে দিয়েছেন সোনালি ফসল। ধানকাটা উৎসবের তিনদিনে সবমিলে প্রায় ১৫ বিঘা জমির ধান খেত থেকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন তারা। এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগে দারুণ খুশি এলাকার কৃষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।
গুয়াখোলা গ্রামের প্রতাপ কুমার পাল জানান, বর্তমানে ধানকাটা শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তিনবেলা খাবারসহ জনপ্রতি শ্রমিকের মূল্য গুণতে হচ্ছে এক হাজার টাকা। তাও ঠিকমত পাওয়া যাচ্ছে না। গুয়াখোলা স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা মিলে আমার ৬০ শতক জমি ধান প্রায় ১০ মিনিটে কেটে দিয়েছেন। এই দুর্যোগের সময় তাদের পাশে পেয়ে আমি ভীষণ খুশি।
অপূর্ব সরকার, হাসিদা রানী, মহাদেব সরকারসহ এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ বলেন, স্কুলের ছেলে-মেয়েরা যে উদ্যোগ নিয়ে আমাদের ধান কেটে দিচ্ছে, তাতে আমরা মহাখুশি। অনেক উপকার হচ্ছে।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৌমিত্র গোস্বামী বলে, শ্রমিক সংকটকালে আমাদের বিদ্যালয়ের ৩১৫ জন ছাত্রছাত্রী মাঠে নেমে ধান কেটে দিচ্ছি। আমাদের প্রত্যাশা দেশের অন্যান্য এলাকাতেও সবাই কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে ধান কেটে দিবেন। সোমা ও স্বর্ণালি বিশ্বাসসহ বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, ঘূর্ণিঝড় অশনির কারণে কৃষকদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ফসল দ্রুত ঘরে তুলতে আমরা কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছি।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তিন দিনের বৃষ্টিতে জলমগ্ন পাকা ধান বিনষ্টের আশঙ্কা
শিক্ষক তাপস পাঠক ও স্বপন কুমার সেন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ জমিতে পানি জমে গেছে। ধানে অঙ্কুরোদগম হয়ে যাচ্ছে। এ সংকটময় মুহূর্তে আমরা এলাকার কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছি। জেলা শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে বিদ্যালয়টির অবস্থান হলেও আমরা সবসময় সৃজনশীল কাজে থাকতে চাই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, বোরো ধানের ভরা মৌসুমে বর্তমানে শ্রমিক সংকট চলছে। পাশাপাশি ‘অশনি’ ঝড়ের প্রভাবে গত তিন থেকে চারদিন ধরে মাঝে-মধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে পানি জমে অনেক ধানখেত নষ্ট হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, এলাকার গরিব কৃষকদের ধান কেটে দিবো। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ তিনদিন ধানকাটার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে শনিবার সংরক্ষিত ছুটি ও রবিবার বৌদ্ধপূর্ণিমার ছুটি মিলে তিনদিন ধানকাটা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। এই তিন দিনে অন্তত ২০জন কৃষকের প্রায় ১৫ বিঘা জমির ধান বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ রেখে ১১টি সেক্টরে ভাগ হয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ধান কেটে দিচ্ছেন। পড়ালেখার পাশাপাশি আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সবসময় ভালো ও মানবিক কাজের সঙ্গে থাকতে চান। এই ধারাবাহিকতায় আমরা ধান কাটছি। ভবিষ্যতেও ভালো কাজ করতে চাই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইলের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, খাদ্যশষ্যে উদ্বৃত্ত নড়াইল জেলায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৪৮ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৪৯ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে। সময় মতো বীজ, সারসহ অন্যান্য উপকরণ ঠিক মতো পাওয়ায় ধান চাষে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি। এছাড়া প্রণোদনার আওতায় নয় হাজার কৃষককে হাইব্রিড এবং ছয় হাজার কৃষককে উফশী জাতের বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। মানভেদে বর্তমানে প্রতিমণ বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১২০০ টাকায়। ধানের দাম সন্তোষজনক হওয়ায় খুশি কৃষকেরা।
আরও পড়ুন: ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না কিশোরগঞ্জের হাওরের ধানচাষিরা
তলিয়ে যাওয়া ফসল নিয়ে হাওরের কৃষকের হাহাকার
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে সমঝোতা, কাজে যোগ দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে শ্রমিকেরা
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতিতে চলমান আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেছে শ্রমিকেরা। পর্যায়ক্রমে কাজে যোগদানের সুযোগ পাবে তারা। শ্রমিকদের কাজে যোগ দেয়ার অংশ হিসেবে শনিবার ২১২ জন শ্রমিকের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
জানা গেছে, খনিতে কয়লা উত্তোলনে নিয়োজিত তিনটি চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি এবং জেএসএমসি কনসোর্টিয়াম। এই তিন প্রতিষ্ঠানের অধীনে খনিতে কয়লা তোলার কাজ করছে স্হানীয় প্রায় ১১শ’ দেশি শ্রমিক। অতিমারি করোনার কারণে টানা দু’বছর ধরে চারশ’ শ্রমিককে খনিতে আটক রেখে কয়লা তোলা হলেও কাজ বঞ্চিত রাখা হয়েছিল সাতশ’ শ্রমিককে। এসময় ছুটিতে থাকা শ্রমিকদের সাড়ে চার হাজার করে কয়েক দফায় ভাতা পরিশোধ করা হলেও আট মাস ধরে ভাতা না পেয়ে মার্চ মাস থেকে আন্দোলনে নামে সুবিধা বঞ্চিতরা।
বড় পুকুরিয়া শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম জানান, গেল শুক্রবার রাতে খনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের মধ্যে ফলপ্রসু আলোচনা সাপেক্ষে ধাপে ধাপে শ্রমিকদের কাজে যোগদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শর্ত অনুযায়ী শনিবার সকালে প্রথম দফায় ২১২ জন শ্রমিকের করোনা নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে যেসব শ্রমিকের নেগেটিভ আসবে তারাই শুধু খনিতে প্রবেশ করে এক সপ্তাহের কোয়ারেন্টিন শেষে কাজে যোগদানের সুযোগ পাবে।
আরও পড়ুন: বকেয়া বেতনের দাবিতে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির শ্রমিকদের বিক্ষোভ অব্যাহত
ধাপে ধাপে সপ্তাহে ২০০ জন করে মোট ৮৫০ জন শ্রমিককে পর্যায়ক্রমে খনিতে প্রবেশের অনুমতি দেবেন কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে করোনাকালিনে আট মাসের বকেয়া বেতন ভাতার দাবির বিষয়টি ঢাকায় পেট্রোবাংলায় শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান জানান, শুক্রবার রাতের বৈঠকে আংশিক দাবি মেনে নিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এদিকে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী কামরুজ্জামান খান বলেন, ‘শুক্রবার রাতে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে শনিবার ২১২ জন শ্রমিকের করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। নেগেটিভ ফলাফলের ভিত্তিতে খনির অভ্যন্তরে প্রবেশ করে সাত থেকে ১০ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার পর কাজে যোগদান করানো হবে।
অন্যদিকে পুরাতন ফেজের কয়লা ফুরিয়ে যাওয়ায় ‘বর্তমানে খনিতে কয়লা উত্তোলন বন্ধ করে নতুন ফেজের উন্নয়ন কাজ চলছে।’
উল্লেখ্য, খনির প্রবেশ পথ উন্মুক্ত করে সকল শ্রমিককে কাজে যোগদান এবং আট মাসের বকেয়া বেতন ভাতার দাবিতে গত দুমাস ধরে খনি এলকায় বিক্ষোভ সমাবেশ এবং খনির প্রবেশপথে অবস্থান গ্রহণসহ ধারাবাহিকভাবে নানান কর্মসূচি পালন করে আসছিল তারা।
আরও পড়ুন: বড়পুকুরিয়ায় কয়লা চুরি: ৬ সাবেক এমডিসহ ২২ জন জামিনে মুক্ত
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে বিদ্যুতের সাবস্টেশনের ছাদ ধসে ২ শ্রমিকের মৃত্যু
এক মণ ধানের দামেও মিলছে না শ্রমিক
বৈরী আবহাওয়ার শঙ্কায় আগেভাগেই বোরো ধান ঘরে তোলা তোড়জোড় চলছে উপকূলীয় নদী বেষ্টিত ফেনীর সোনাগাজীর কৃষকদের মাঝে। তবে এখনও কাটার উপযোগী ৭০ শতাংশ বোরো ধান জমিতে রয়েছে। বর্তমানে এই অঞ্চলের কৃষকরা ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এর মধ্যেই বৃষ্টি সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চরম শ্রমিক সংকট।
শ্রমিক সংকটের কারণে সময় মতো ধান কাটতে পারছেন না অনেক কৃষক। শুধু তাই নয়, এক মণ ধানের দামে মিলছে না একজন শ্রমিকও। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় কয়েক হাজার কৃষককে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফেনীতে গত এক সপ্তাহ ধরে এক মণ ধান ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু তার বিপরীতে একজন শ্রমিক ১ হাজার থেকে ১২’শ টাকা চাওয়ায় কৃষকেরা চরম লোকসানের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
আরও পড়ুন: লাল বাঁধাকপি চাষ: বদলে দিয়েছে কৃষক বেলালের ভাগ্য
পরশুরাম উপজেলার পৌর এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায়। কিন্তু শ্রমিকদের জনপ্রতি এক হাজার থেকে ১২’শ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। সঙ্গে দুই বেলা খাবার। অন্যান্য খরচ যেমন জমি চাষ, সেচ, চারা, সার, কীটনাশক ও শ্রমিক খরচতো আছেই। এতে আমার ৪০ শতক জমিতে প্রায় ২-৩ হাজার টাকা করে লোকসান হচ্ছে।
সোনাগাজী উপজেলার উপকূলীয় চর চান্দিয়া এলাকার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, এক সময় মঙ্গা প্রবল রংপুর অঞ্চলের ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া গেলেও এখন আর নেই। ফলে এলাকার শ্রমিকরা কৃষকদের কাছে অতিরিক্ত মুজুরি হাকাচ্ছে।
ধান কাটা শ্রমিক কবির আহাম্মদ বলেন, ‘আমি আবুল খায়েরের সঙ্গে (মালিক) ধান কাটার জন্য দৈনিক ১ হাজার টাকা করে পাঁচ দিনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। দুপুরে-রাতে ভাত খাওয়া ও সকালের নাশতাও মালিক বহন করবেন।
পরশুরাম ডাকবাংলা মোড় এলাকার ধান ব্যবসায়ী আবদুল কাইয়ুম জানান, তিনি প্রতিমণ ধান ৬৮০ টাকা করে কিনছেন। ধানের চাহিদা না থাকায় দাম হঠাৎ কমে গেছে। এ ছাড়া শ্রমিক খরচও ওই টাকা থেকে বাদ যাবে।
আরও পড়ুন: হলুদে ছেয়ে গেছে মাঠ, সরিষার বাম্পার ফলনের আশায় কৃষক
পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সত্যনগর গ্রামে দেখা গেছে, কৃষক আবুল কাশেম ছয় জন শ্রমিক নিয়ে বোরো ধান কাটছেন। তিনি বলেন, ধান কাটা শ্রমিক পাওয়া খুব কষ্টের। পেলেও তাদের মজুরি উচ্চমূল্যের। তাই আগামী মৌসুমে আর বোরো চাষাবাদ করবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
পরশুরাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, পরশুরাম উপজেলায় চলতি বছর ৩ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এবার বাম্পার ফলনও হয়েছে।
উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেব রঞ্জন বণিক বলেন, বোরো আবাদের জন্য সবকিছুই অনুকূলে ছিল। বিদ্যুৎ, পানি, সার, বীজ কোনো কিছুরই সমস্যা ছিল না। চলতি মৌসুমে ধানের ফলনও ভালো হয়েছে।
আরও পড়ুন: দেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সচল গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের পাম্প
ফেনীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তারেক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর ৩০ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। বোরো ধানের দাম কম থাকায় আমরা কৃষকদের ধান ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিচ্ছি। যাতে করে তারা সংরক্ষিত ধান পরে বিক্রি করে দামটা ভালো পান। একই সঙ্গে শ্রমিক সংকট থাকায় কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিনে কৃষকদের সহজভাবে ধান কাটা, মাড়াই, বস্তা প্যাকেটজাতকরণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, শ্রমিক সংকট ও বৈরী আবহাওয়ার শঙ্কায় কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিনে সমতল ভূমিতে ৫০ শতাংশ ও উপকূলীয় এলাকায় ৭০ শতাংশ সরকারিভাবে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানোর কোনো অগ্রগতি নেই
বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণে মালয়েশিয়া শ্রমবাজার চালু বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই (এমওইউ) হয়েছে চার মাসেরও বেশি সময় ধরে। তারপরও বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনও থমকে আছে।
বাংলাদেশি ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার কারণেই গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত চুক্তির কার্যক্রম স্থগিত ও বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আটকে আছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশের জনশক্তি ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশি শ্রর্মীকদের জন্য অন্যতম গন্তব্য মালয়েশিয়া। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাত লাখ প্রবাসী সেখানে কর্মরত আছেন বলে ব্যবসায়ীক সূত্রে জানা গেছে।
২০১৮ সালে মাহাথির মোহাম্মদের তৎকালীন মালয়েশিয়ার সরকার উভয় দেশে সংস্থার নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য দেশটির শ্রমবাজারের দরজা বন্ধ করে দেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ নিয়ে আশাবাদী মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত
সর্বশেষ বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মালয়েশিয়া সরকার ২৫ বাংলাদেশি এজেন্সির একটি নির্বাচিত গ্রুপের মাধ্যমে নিয়োগ দিতে চায়। ঢাকা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে কারণ এটি বাস্তবায়িত হলে ১৫০০ এরও বেশি সংস্থা এই ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়বে।
মালয়েশিয়া কেন বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ করল?
২০০৯ সালে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
তবে ২৬ নভেম্বর, ২০১২ এ দুই দেশ জিটুজি মডেলের মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার পর এটি পরিবর্তিত হয়। ফলে হাজার হাজার শ্রমিক আনুষ্ঠানিকভাবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে যোগ দেয়ায় সুযোগ পায়।
কিন্তু শিগগিরই সরকারের মধ্যকার সমঝোতা ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসন বেড়ে যায়।
২০১৬ সালে এসে সরকার আবার জিটুজি প্লাস মডেল চালু করে যার অধীনে শুধুমাত্র ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি বেসরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারে। এর মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় ২ লাখ ৪৫ হাজার শ্রমিক চাকরি পেয়েছেন।
তবে অভিযোগ ওঠে এই সংস্থাগুলো চাকরিপ্রার্থীদের শোষণ শুরু করে তাদের কাছ থেকে অন্যায্যভাবে উচ্চ ফি আদায় করে নিচ্ছে।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে আরও জনবল নেবে
তারা প্রথমে ইমিগ্রেশন খরচ ৩৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করে পরে তা বাড়িয়ে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা করে নেয়। একপর্যায়ে এসব বেসরকারি সংস্থা অভিবাসন খরচ বাবদ মাথাপিছু সাড়ে তিন লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা দাবি করতে থাকে।
যেটা মালয়েশিয়া সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাংলাদেশি চাকরিপ্রার্থীদের জন্য একটি বড় ধাক্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং এর ভিত্তিতে জিটুজি চুক্তি বাতিল হয়।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ বিষয়কমন্ত্রী এম. সারাভান মাত্র ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের জন্য ঢাকায় একটি চিঠি পাঠানোর পর সর্বশেষ এমওইউ দ্বারা উত্থাপিত আশা দ্রুত ভেঙ্গে যায়।
জবাবে, বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ তার মালয়েশিয়ার মন্ত্রীকে একটি চিঠি পাঠিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন ঢাকা এই শর্ত মেনে নিতে পারবে না।
তিনি ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) সার্টিফিকেট এবং বাংলাদেশ কম্পিটিশন অ্যাক্ট, ২০১২-এর উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকার সীমিত সংখ্যক এজেন্সিকে কাজ দিতে পারে না। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বৈধ লাইসেন্সধারী সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে সমান সুযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশ মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের স্বচ্ছ, অনিয়মমুক্ত ও নিরাপদ অভিবাসন চায়।
আরও পড়ুন: বিদেশি কর্মী নিয়োগে তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা চায় না মালয়েশিয়া সরকার
বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর পদ্ধতি নির্ধারণে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের প্রস্তাবও করেন ইমরান। কিন্তু চিঠি পাঠানোর তিন মাস পরও কুয়ালামপুর এখনও সাড়া দেয়নি।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুস সালেহীন ইউএনবিকে বলেন, বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে এখনও আলোচনা চলছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি মালয়েশিয়া আমাদের অনলাইনে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের জন্য একটি তারিখ পাঠিয়েছিল কিন্তু আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি কারণ আমাদের অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিষয়টি সমন্বয় করতে হয়েছিল। পরে আমরা অনলাইন সভার জন্য একটি তারিখ পাঠিয়েছিলাম কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা অনুষ্ঠিত হয়নি।
তবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব বলেন, ২৫ মে অনুষ্ঠিতব্য কমিটির সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
কেন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিরোধিতা?
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনার রিক্রুটি এজেন্সিজ’র (বায়রা) সিন্ডিকেট বিরোধী মহাজোটের নেতারা সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মলেন করে দাবি করেছেন, আগের ন্যায় নতুন করে আবার এই সিন্ডিকেটের হোতা বাংলাদেশ বায়রা সাবেক মহাসচিব ও ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী রুহুল আমিন স্বপন।স্বপনসহ ২৫ টি সিন্ডিকেটে নাম আসা সকল রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স বাতিলসহ মালিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে বিচারের দাবি জানায়।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ইস্যুতে মালয়েশিয়ার ভূমিকার প্রশংসা বক্তাদের
রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম টিপু সুলতান বলেন, ‘এক-দুটি বাদে আগের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির প্রায় সবকটি নতুন ২৫ এজেন্সি সিন্ডিকেটে তালিকাভুক্ত ছিল এবং তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রুহুল আমিন স্বপন। আমরা এবার মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেটমুক্ত শ্রমবাজারের প্রবেশাধিকার চাই।’
সিন্ডিকেট বিরোধী জোটের সংগঠক ও বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাশার বলেছেন, ১০ এজেন্সি সিন্ডিকেট অভিবাসন ব্যয় বহুগুণ বাড়িয়েছে। মূলত এই সিন্ডিকেটের বিদ্বেষপূর্ণ প্রচেষ্টার কারণে বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলতে বিলম্ব হচ্ছে।
সিন্ডিকেট বিরোধী জোটের সংগঠক ও বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন,‘বাংলাদেশে এক হাজার ৫৩০টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিক্রুটিং এজেন্সি আছে এবং তাদের বৈধভাবে শ্রমবাজারে শ্রমিক পাঠানোর অধিকার রয়েছে। সিন্ডিকেট গঠনের অর্থ হবে তারা কাজ করতে পারবে না এবং দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হবে।’
বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস (বিসিএসএম), অভিবাসন নিয়ে কাজ করা ২০ সংস্থার একটি প্ল্যাটফর্ম উভয় সরকারকে সিন্ডিকেট সিস্টেমের মতো বিষয়গুলো পুনরাবৃত্তি না করার অনুরোধ করেছে।
এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, শ্রমিকদের একটি উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ ব্যবস্থার মাধ্যমে পাঠানো উচিত যাতে অভিবাসী শ্রমিকরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
সমস্ত নিবন্ধিত সংস্থাগুলোকে সমান নিয়োগের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানান তারা।
অভিযুক্ত সিন্ডিকেট নেতা বিদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মালিক রুহুল আমিন স্বপন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে সরকারি আলোচনায় আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অন্যান্য সংস্থার মালিকদের মতো আমিও একজন সাধারণ ব্যবসায়ী।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্ত যে তারা সীমিত সংখ্যক সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ দিতে চায়। সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।’
অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে রুহুল আমিন বলেন, সীমিত সংখ্যক এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগে খরচ বাড়লে আমি কথা দিচ্ছি এই ব্যবসা ছেড়ে দেব।
বিদেশিদের কাছে অভিযোগ না করতে শ্রমিক নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
দেশের বিরুদ্ধে বিদেশিদের কাছে অভিযোগ না করতে শ্রমিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শ্রমিক নেতাদের একটি অংশের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যতদিন আওয়ামী লীগ বা আমি ক্ষমতায় আছি, আমরা আশ্বস্ত করতে পারি সমস্যা থাকলে তা আমরা সমাধান করব।’
রবিবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঐতিহাসিক মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে এ কথা বলেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আরও পড়ুন: পেছনের দরজায় নয়, আ’লীগ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে: প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার শ্রমিকদের কল্যাণে অনেক কিছু করেছে। তারপরও কিছু শ্রমিক নেতা আছেন যারা বিদেশি দেখলেই অভিযোগ করতে পছন্দ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন ঘটনার পেছনে মানসিক দারিদ্র্যতা নাকি কারো স্বার্থ জড়িত তিনি তা জানেন না।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সমস্যা দেশেই সমাধান করতে সক্ষম হব। আমি শ্রমিক নেতাদের বলতে চাই বিদেশিদের সামনে কাঁদবেন না, কোনো সমস্যা হলে আমার কাছে আসুন। যদি এমন কিছু (সুবিধা) থাকে যা মালিকদের কাছ থেকে পাওয়া দরকার,তবে আমিই তা করতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যকার আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না: প্রধানমন্ত্রী
‘দীর্ঘতম ঈদের ছুটি’ কাটিয়ে কারখানায় ফিরেছে পোশাক শ্রমিকেরা
ঈদের ছুটি শেষে শনিবার থেকে দেশের অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানা ও অন্যান্য শিল্প কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়েছে।
আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানার মালিক রুবায়েত আহমেদ জানান, পোশাক শ্রমিক ও টেকনিশিয়ানরা নিজেদের কাজে যোগ দিয়েছেন। বাকি শ্রমিকেরাও আগামী কয়েকদিনের মধ্যে যোগ দেবেন।
শনিবার ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমরা ২৭ এপ্রিল ঈদের ছুটি ঘোষণা করেছি এবং শনিবার কাজে যোগ দেয়ার সময় নির্ধারণ করেছি। যাতে শ্রমিক ও অন্যান্য কর্মচারীরা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে।’
তিনি বলেন, অনেক গার্মেন্টস মালিক ১০ থেকে ১৫ দিনের মতো ঈদের ছুটি ঘোষণা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, শনিবার ছুটি শেষ হওয়ায় প্রায় সব কারখানার উৎপাদন শুরু হয়েছে, আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে বাকি সব কারখানায় কাজ শুরু হবে।
আরও পড়ুন: গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল শিল্পে বৈচিত্র্য আনার আহ্বান এফবিসিসিআই সভাপতির
নিটওয়্যার কারখানা মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ঈদের ছুটির পর শনিবার থেকে বেশিরভাগ পোশাক কারখানায় কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কিছু কারখানা শ্রমিকদের প্রয়োজনে একটু বেশি ছুটি দিয়েছে। তারা আগামীকাল বা পরশু থেকে কারখানা খুলতে শুরু করবে।’
তিনি বলেন, দেশে পোশাক শিল্পের সূচনার পর থেকে এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশি ছুটি পেয়েছেন শ্রমিকরা।
তিনি বলেন, যেসব কারখানার শিপমেন্ট নিয়ে চাপে ছিল, সেগুলো আবার চালু হয়েছে। আর যেগুলোতে কম চাপ আছে, সেগুলো আরও দুই-তিন দিন পর খুলবে।
ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের কর্মী আনোয়ার হোসেন জানান, বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদের ছুটি ভালোই কেটেছে তার।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আজ (শনিবার) কাজ শুরু করেছি। এবার মহাসড়কে ছুটি বা ঈদ যাত্রায় কোনো সমস্যা হয়নি।’
এদিকে ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাস, লঞ্চ ও ট্রেনের পাশাপাশি ট্রাকে ঢাকা, গাজীপুর, আশুলিয়া, সাভার ও নারায়ণগঞ্জে ফিরছেন পোশাক শ্রমিকেরা।
আরও পড়ুন: পোশাকপণ্য নিয়ে ইতালির উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়েছে ‘এমভি সোঙ্গা চিতা’
শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ‘ঘোষণা’ দেয়া হয়নি: বিজিএমইএ
হারানো অধিকার ফিরে পেতে সোচ্চার হউন: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় রাজপথে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে, তারা শ্রমিক শ্রেণিসহ সকল মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখন আপনারা চাইলে সমাবেশ করতে পারবেন না, ইউনিয়ন গঠন করতে পারবেন না। শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’
রবিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে কর্মীদের প্রতি সংগঠনকে শক্তিশালী করে সব শ্রমজীবী মানুষকে সংগঠিত করার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: ঐতিহাসিক মে দিবস আজ
বিএনপি নেতা বলেন, শ্রমিকরা সব সময় দেশে পরিবর্তন এনেছে। অতীতে আমাদের সকল গৌরবময় আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন শ্রমিকরা। সুতরাং হারানো অধিকার পুনরুদ্ধার করতে এবং ফ্যাসিবাদী শাসনকে পরাস্ত করতে রাজপথে আওয়াজ তুলতে হবে।
তিনি বলেন, চাল-তেলসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া দামের কারণে শ্রমিকরা প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু সরকার এটা নিয়ে কম চিন্তিত। তারা শ্রমিকদের ন্যায্য মূল্যে চাল, ডাল ও তেল দিতে পারে না।
বিএনপি নেতা বলেন, শ্রমিকরা বিনামূল্যে চিকিৎসা নিতে পারছেন না এমনকি তাদের সন্তানরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এদেশের শ্রমজীবী মানুষ সব কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকার বড় বড় প্রকল্প ও মেগা উন্নয়নের কথা বললেও শ্রমিকদের জন্য কিছুই করেনি।
তিনি বলেন, শ্রমিক শ্রেণির সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই।
আরও পড়ুন: ইলিয়াস আলীর পরিবার অনেক বিপদে আছে: ফখরুল
ঐতিহাসিক মে দিবস আজ
শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও রবিবার পালিত হচ্ছে ঐতিহাসিক মে দিবস।
শ্রমঘণ্টা কমিয়ে দৈনিক আট ঘণ্টা করার দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে রাস্তায় নেমে আসা শ্রমিকদের ঐতিহাসিক আন্দোলনের স্মরণে প্রতি বছর মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস পালন করা হয়।
দিনটি সরকারি ছুটির দিন।
আরও পড়ুন: কাল পালিত হবে ঐতিহাসিক মে দিবস
এ বছর মে দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘শ্রমিক-মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা’।
দিনটির গুরুত্ব তুলে ধরে টেলিভিশন ও রেডিও স্টেশনগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং পত্রিকাগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়।
১৮৮৬ সালের ১ মে দৈনিক ১২ ঘণ্টার পরিবর্তে আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে শ্রমিকরা ফুঁসে উঠেন। হে মার্কেটের কাছে তাদের বিক্ষোভে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে ১০ শ্রমিক নিহত হন। উত্তাল সেই আন্দোলনের মুখে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে দিতে বাধ্য হন এবং বিশ্বব্যাপী দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের সময় চালু করা হয়।
কাল পালিত হবে ঐতিহাসিক মে দিবস
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও রবিবার যথাযোগ্য মর্যাদায় ঐতিহাসিক মে দিবস পালিত হবে।
শ্রমঘণ্টা কমিয়ে দৈনিক আট ঘণ্টা করার দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে রাস্তায় নেমে আসা শ্রমিকদের ঐতিহাসিক আন্দোলনের স্মরণে প্রতি বছর মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস পালন করা হয়।
দিনটি বাংলাদেশে সরকারি ছুটির দিন।
এ বছর মে দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘শ্রমিক-মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা’।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি
রাষ্ট্রপতি হামিদ দেশের শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আজকের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার জন্য, উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকারের সঙ্গে শ্রমিক ও নিয়োগকর্তাদের ভাল সম্পর্ক বজায় রাখতে আরও নিবেদিত হতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণ ও দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ ও সোনার বাংলা গড়তে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
দিনটির গুরুত্ব তুলে ধরে টেলিভিশন ও রেডিও স্টেশনগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং পত্রিকাগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য ১৮৮৬ সালের ১ মে দৈনিক ১২ ঘণ্টার পরিবর্তে আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে ১০ শ্রমিক নিহত হন। উত্তাল সেই আন্দোলনের মুখে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে দিতে বাধ্য হয় এবং বিশ্বব্যাপী কর্মঘণ্টা দৈনিক আট ঘণ্টা চালু করা হয়।
১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সমাবেশে ১ মে’কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরের বছর থেকে বিশ্বব্যাপী এ দিনটি পালিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বকেয়া বেতনের দাবিতে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির শ্রমিকদের অবস্থান কর্মসূচি
বকেয়া বেতনের দাবিতে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির শ্রমিকদের বিক্ষোভ অব্যাহত
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো শ্রমিকদের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।
আট মাসের বকেয়া বেতন ভাতা এবং অবিলম্বে কাজে যোগদানের দাবিতে বুধবার থেকে সপরিবারে খনির প্রবেশ পথে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকেরা। এই দাবিতে গত মার্চ থেকে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা।
করোনাকাল থেকে দুই বছর ধরে খনির (কম্পাউন্ডে) অভ্যন্তরে বিশেষ ব্যবস্থায় আটক রেখে কয়লা তোলানোর প্রতিবাদে (খনির বাউন্ডারির ভেতরে) বিক্ষোভ করছে আরও চারশ’ শ্রমিক। বাড়ি থেকে যাতায়াত করে কাজ করার দাবি জানাচ্ছেন তারা।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি জানান, তিনটি চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসি, এক্সএমসি, ও জেএক্সএমসির অধীনে আউটসোর্সিংয়ে খনিতে কয়লা তোলার কাজ করে থাকে প্রায় ১১শ’ দেশি শ্রমিক। এর মধ্যে সাতশ’ শ্রমিককে করোনালীন ছুটিতে পাঠানোর সময় মাসে সাড়ে চার হাজার করে টাকা ভাতা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত আট মাস ধরে ওই ভাতার টাকা পাচ্ছেন না তারা। ঈদের আগে ওই বকেয়া বেতন-ভাতা প্রদান এবং কাজে যোগদানের দাবিতে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা।
আরও পড়ুন: বকেয়া বেতনের দাবিতে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির শ্রমিকদের অবস্থান কর্মসূচি
অন্যদিকে, চারশ’ শ্রমিককে করোনার সময় থেকে দুই বছর ধরে ইচ্ছার বিরুদ্ধে খনি এলাকায় আটকে রেখে কয়লা তুলতে বাধ্য করছে চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। খনির বাইরে বের হওয়া এবং পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছেন ওই শ্রমিকেরা।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান বলেন, এক দিকে কাজ বঞ্চিত শ্রমিকেরা খনিতে প্রবেশসহ কাজে যোগদানের দাবিতে খনির প্রবেশ পথে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে। অন্যদিকে খনিতে আটকে রাখার প্রতিবাদে আটক শ্রমিকেরা নেটের বেড়ায় বন্দী অবস্থায়ই বিক্ষোভ করছে।
সংকট সমাধানে প্রশাসন ও খনি কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: বকেয়া বেতনের দাবিতে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির শ্রমিকদের ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
মুজিববর্ষ: ঠাকুরগাঁওয়ে জমি-নতুন ঘর পাচ্ছেন ২৬১২ ভূমিহীন