রাশিয়া
‘এখন যুদ্ধের সময় নয়’:এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে পুতিনকে মোদি
প্রায় সাতমাস ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধের এই সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বললেন, এখন ‘যুদ্ধের সময় নয়’।
শুক্রবার উজবেকিস্তানের সমরখন্দে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও)শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে নরেন্দ্র মোদি পুতিনকে একথা বলেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেতদনে জানিয়েছে,রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এই দুই নেতা প্রথমবার সমরখন্দে মুখোমুখি হলেন।
এসময় মোদি পুতিনকে বলেন, ‘আমি জানি আজকের যুগ যুদ্ধের যুগ নয়।’
রাশিয়ার প্রধান মিত্র চীনের ইউক্রেনের সংকট নিয়ে ‘উদ্বেগ’ রয়েছে বলে পুতিনের স্বীকারোক্তির পর প্রধানমন্ত্রী মোদি এই মন্তব্য করেন।
এসময় পুতিন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে সবিস্তারে বলেন যে তিনি গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করতে চান এবং তিনি ভারতের উদ্বেগকে স্বীকার করেছেন।
পড়ুন: পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করবেন জাতিসংঘের মহাসচিব
এনডিটিভির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পুতিন মোদিকে বলেন ‘আমি ইউক্রেনের সংঘাতের বিষয়ে আপনার অবস্থান ও আপনার উদ্বেগ সম্পর্কে জানি... আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি শেষ করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’
সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে, মোদি ও পুতিন দ্বিপক্ষীয় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে আরোচনা করেছেন।
ইউক্রেন আক্রমণের জন্য ভারত রাশিয়ার প্রতি নিন্দা জানায়নি। সমস্যার কূটনৈতিক সমাধানের জন্য জোর দিয়েছে নয়াদিল্লি।
স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকে নয়াদিল্লি ও মস্কোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং রাশিয়া-ভারতের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে অস্ত্র দিয়ে যাচ্ছে।
ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে বেইজিংয়ের ‘উদ্বেগ’ রয়েছে বলে পুতিনের স্বীকার করা সত্ত্বেও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বৃহস্পতিবার বলেছেন যে বেইজিং ‘একে অপরের মৌলিক স্বার্থ’ এগিয়ে নিতে রাশিয়াকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।
আরও পড়ুন: গাড়ি বোমা হামলায় ‘পুতিনের মস্তিষ্ক’ খ্যাত দুগিনের মেয়ের মৃত্যু
ঢাকা-মস্কো গঠনমূলক দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করবে: পুতিন
রাশিয়ার ৩টি তেল শোধনাগারের নিয়ন্ত্রণ নিল জার্মানি
জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে দেশটিতে থাকা রাশিয়ার মালিকানাধীন তিনটি তেল শোধনাগারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে জার্মানি। শুক্রবার দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছে, আগামী বছর রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগেই এই নিয়ন্ত্রণ নেয়া হলো।
দেশটির অর্থমন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, রোজনেফট ডাচল্যান্ড জিএমবিএইচ ও আরএন রিফাইনিং অ্যান্ড মার্কেটিং জিএমবিএইচ-কে জার্মানির ফেডারেল নেটওয়ার্ক এনার্জি’র প্রশাসনের অধীনে রাখা হবে।
আরও পড়ুন: তৃতীয় দেশের মাধ্যমে রাশিয়ার তেল কিনতে পারে বাংলাদেশ
ফলে এই সংস্থাটি দেশের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত তিনটি রুশ তেল শোধনাগার যথা পিসিকে সেডেট, মিরো ও বেরিনঅয়েল- কোম্পানির শেয়ার নিয়ন্ত্রণ করবে।
মন্ত্রণালয় জানায়, রোজনেফট রাশিয়া থেকে প্রতিমাসে কয়েকশ’ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের অপরিশোধিত তেল আমদানি করে। যার জার্মানির চাহিদার ১২ শতাংশ তেল পরিশোধনের ক্ষমতা রয়েছে।
এতে বলা হয়, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে আগামী ছয় মাসের জন্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত হবে।
রোজনেফট আগেই বলেছে যে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। যদিও আগামী ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে তাদের ওপর ইউ’র দেয়া নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, পিসিকে সেডেট এর জন্য ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ঘোষণা করা হবে। যেখানে ১২ হাজার মানুষ কর্মরত এবং এটি বার্লিনসহ জার্মানির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পেট্রোলিয়াম সরবরাহ করে থাকে।
আরও পড়ুন: খালি হাতে ফিরিনি, তেল-গ্যাসের নিশ্চয়তা বড় অর্জন: প্রধানমন্ত্রী
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, কম দামে রাশিয়ার তেল কেনার কথা ভাবছে ইন্দোনেশিয়া
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, কম দামে রাশিয়ার তেল কেনার কথা ভাবছে ইন্দোনেশিয়া
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির বোঝা কমাতে রাশিয়া থেকে তেল কেনার কথা ভাবছেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের সাথে এক সাক্ষাৎকারে উইদোদো বলেছেন, ‘আমরা সর্বদা সমস্ত বিকল্পগুলো পর্যবেক্ষণ করি। যদি কোনো দেশ আমাদের ভালো দামে দেয় আমরা অবশ্যই তা বিবেচনা করবো।’
আরও পড়ুন:দশ বছর মেয়াদী ভিসা দিচ্ছে থাইল্যান্ড: কারা যোগ্য?
মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসাবে আর্থিক উদ্বেগ উল্লেখ করে উইদোদো চলতি মাসের শুরুতে ভর্তুকিযুক্ত জ্বালানির দাম ৩০ শতাংশ বাড়িয়েছেন।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত সপ্তাহে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী দেশটির রাজধানী জাকার্তা এবং অন্যান্য বড় শহরগুলোতে বিক্ষোভ করেছে।
জি-৭ ভুক্ত দেশের বেঁধে দেয়া মূল্যের চেয়ে বেশি দামে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল কেনার যেকোনো সিদ্ধান্ত ইন্দোনেশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।
ইন্দোনেশিয়ার পর্যটনমন্ত্রী স্যান্ডিয়াগা উনো আগস্টে দাবি করেছেন যে, ইন্দোনেশিয়া রাশিয়ান পেট্রোলিয়ামে ৩০ শতাংশ ছাড় পেয়েছে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কর্পোরেশন পেরটামিনা তখন জানিয়েছিল, তারা রাশিয়ান তেল কেনার বিষয়ে সম্ভাব্য সব ঝুঁকি পরীক্ষা করে দেখছে।
ক্রমবর্ধমান খাদ্য খরচের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ইন্দোনেশিয়ায় আগস্টে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি ৪ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন:শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের আমন্ত্রণ না পেয়ে মোদি সরকারের সমালোচনায় মমতা
পশ্চিমবঙ্গের আইনমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কয়লা পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে তদন্ত
রাশিয়া অধিকৃত ডনবাসে শ্রমিক পাঠাতে পারে উ. কোরিয়া
উত্তর কোরিয়া যুদ্ধরত ইউক্রেনের রাশিয়া অধিকৃত ডনবাস অঞ্চলে পুনর্নির্মাণ কাজে সাহায্য করতে নির্মাণ শ্রমিক পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
আগ্রহের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন রুশ কর্মকর্তা ও কূটনীতিকরা প্রকাশ্যে সমর্থন করছে।
তারা একটি সস্তা ও কঠোর পরিশ্রমী শ্রমিকবাহিনী নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। এটিকে বলা যেতে পারে ‘সবচেয়ে কঠিন শর্ত’। উত্তর কোরিয়ায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে টার্মটি ব্যবহার করেন।
মস্কোতে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে দুটি রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলের দূতদের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং তার দেশের সংকটাপন্ন সীমানা নিয়ন্ত্রণ সহজীকরণের বিষয় টেনে তিনি শ্রম অভিবাসনের ক্ষেত্রে সহযোগিতার আশা ব্যক্ত করেন।
ওই আলাপকালে জুলাই মাসে রাশিয়া ও সিরিয়ার পর উত্তর কোরিয়া দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়।
ডনবাসে উত্তর কোরিয়ার কর্মীদের কর্মসংস্থান স্পষ্টতই দেশটির পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর আরোপিত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা এবং এর পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক চাপকে আরও জটিল করে তুলবে।
আরও পড়ুন: ডনবাসে হামলা শুরু করেছে রাশিয়া: জেলেনস্কি
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, উত্তর কোরিয়া রাশিয়ায় এমন এক সময় কর্মী পাঠাবে যখন যুদ্ধ চলমান থাকবে। ঠিক সেসময় যখন পশ্চিমাদের অস্ত্র সহায়তায় ইউক্রেন বড় আকারের রুশ সেনাদের প্রতিহত করবে।
তারা আরও মনে করছেন, ডসবাসে উত্তর কোরিয়ার শ্রমিক পাঠানোর ফলে দেশটির অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করবে এই যুদ্ধ। যে অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞা, সীমান্ত বন্ধ এবং কয়েক দশকের অব্যবস্থাপনার কারণে ভেঙে পড়েছে।
শ্রম রপ্তানি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে রাশিয়া ও চীনের সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে। এই জোট মূলত এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমানোর লক্ষ্যে কাজ করছে।
রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী মারাত খুসনুলিন বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার নির্মাণ সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই ডনবাসে যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকা পুনর্গঠনে সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছে এবং উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকরা এলে স্বাগত জানানো হবে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে শপিং মলে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা,নিহত ১৩
পারমাণবিক চুক্তি সম্মেলনে চূড়ান্ত নথিতে রাশিয়ার বাধা
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার জ্বালানি আমদানিতে বাধা হবে না: জ্বালানি উপদেষ্টা
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহি চৌধুরী মনে করেন, রাশিয়ার পেট্রোলিয়াম জ্বালানি আমদানিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাধা হবে না।
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে ইউএস আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে করা বৈঠকের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে রাশিয়ার ওপর দেয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে তিনি খাদ্য, জ্বালানি এবং সার আমদানির বিষয়ে কথা বলেছেন।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে কথোপকথনের উপলব্ধি হলো রাশিয়া থেকে জ্বালানি
আমদানিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাধা দাড়াবে না।’
পড়ুন:রাশিয়া থেকে গম, ভারত ও ভিয়েতনাম থেকে চাল আমদানি করবে সরকার
তৌফিক-ই- ইলাহি বলেন, খাদ্য, সার, জ্বালানি আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোন বাধা নেই, বাংলাদেশ যদি রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি করে তাহলে তারা কোন আপত্তি করবে না।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে কিছু কূটনৈতিক শিষ্টাচার আছে। কিন্তু সহজ ‘আমি এটি বুঝতে পারি কখন তা মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বলতে হবে, এর একটা গুরুত্ব আছে।’
এই উপদেষ্টা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছেন। সেসময়ই রাশিয়া থেকে বাংলাদেশের তেল আমদানির সুযোগ আছে কিনা তা জানতে চান।
গত সপ্তাহে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা সম্ভব নয়।
জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেইন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশে মাত্র ৪৫ দিনের জ্বালানি মজুদ আছে।
তিনি বলেন, ‘এটিকে আমরা বৃদ্ধি করে ৬০ দিনে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।’ এই পরিকল্পনার আওতায় আমাদের বর্তমান রিজার্ভের ধারণক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন থেকে ৩০ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইউক্রেনসহ কোন দেশ থেকে খাদ্য আমদানিতে বাধা নেই: বাণিজ্যমন্ত্রী
রাশিয়া থেকে গম, ভারত ও ভিয়েতনাম থেকে চাল আমদানি করবে সরকার
সরকার রাশিয়া থেকে পাঁচ লাখ মেট্রিকটন গম এবং ভারত ও ভিয়েতনাম থেকে তিন লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি করবে।
বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্তিপরিষদের কমিটি এই প্রস্তাবনাসহ আরও কয়েকটিতে অনুমোদন দেয়।
খাদ্যমন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, রাশিয়া থেকে মোট দুই হাজার ৪২ দশমিক ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাশিয়া থেকে এই গম আমদানি করা হবে।
রাশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী পুরো আমদানি প্রক্রিয়ায় খরচ হবে ২১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে রাশিয়া থেকে আমদানি ব্যয় মেটাতে ডলারের বিকল্প মুদ্রা রুবল ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা করেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল বারিক সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রিপরিষদের গৃহীত সিদ্ধান্ত হলো ডলারে এই আমদানি ব্যয় মেটানো হবে। বিকল্প কোন মুদ্রা নেই যা এই ক্রয়ে ব্যবহার করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, ক্রয় প্রস্তাবনায় রাশিয়ার কোন বন্দর ব্যবহার করে আমদানি করা হবে তা উল্লেখ করা হয়নি।
প্রতি মেট্রিক টন রাশিয়ার গমের মূল্য পড়বে ৪৩০ মার্কিন ডলার (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা হারে) যা বাংলাদেশি টাকায় প্রতি কেজি ৪০ দশমিক ৮৫ পয়সা।
খাদ্যমন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ৪১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভারত থেকে এক লাখ মেট্রিক টন অবাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানি করা হবে।
এই আমদানিটি দুটি ভাগে সম্পন্ন হবে। এরমধ্যে ৭০ হাজার মেট্রিকটন চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এবং বাকী ৩০ হাজার মেট্রিকটন স্থলপথে আমদানি করা হবে।
বন্দর দিয়ে আমদানিতে প্রতিকেজি চালের মূল্য পড়বে ৪২ দশমিক ১৩ টাকা আর স্থলপথে পড়বে ৪০ দশমিক ৭০ টাকা। প্রতি মেট্রিকটন চালের মূল্য পড়বে ৪৩৩ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার।
পড়ুন: চাল-গমের দাম নির্ধারণ করে দেবে সরকার: বাণিজ্যমন্ত্রী
আরেকটি আমদানি প্রস্তাবনার আওতায় ভিয়েতনাম থেকে দুই লাখ ৩০ হাজার মেট্রিকটন অবাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানি করবে খাদ্যমন্ত্রণালয়। এরমধ্যে দুই লাখ মেট্রিকটন অবাসমতি চাল ও ৩০ হাজার মেট্রিকটন আতপ চাল।
এতে প্রতিকেজি সিদ্ধ চালের মূল্য পড়বে ৪৯ দশমিক ৪৯ টাকা আর আতপ চাল ৪৬ দশমিক ৯৩ টাকা।
একটি ভারতীয় কোম্পানি ভিয়েতনাম থেকে প্রতি মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ৫২১ মার্কিন ডলার ও আতপ চাল ৪৯৪ মার্কিন ডলার মূল্যে সরবরাহ করবে।
একই সঙ্গে এমওপি এবং ইউরিয়া সার আমদানির অনমোদন দেয় ক্রয় কমিটি।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে ৯৩১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনার আওতায় বাংলাদেশি এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন(বিএডিসি) দুবাই ফ্যালকো জেনারেল ট্রেডিং থেকে এক লাখ মেট্রিকটন এমওপি সার আমদানি করবে।
এতে প্রতি মেট্রিকটন এমওপি’র মূল্য পড়বে ৯৮০ মার্কিন ডলার যা আগের আমদানিতে পড়েছিলে এক হাজার ১০০ মার্কিন ডলার।
এছাড়া সৌদি ভিত্তিক সাবিক এগ্রি নিউট্রিয়েন্ট কোম্পানি থেকে ৬০ হাজার মেট্রিকটন ইউরিয়া সার দুটি লটে আমদানি করা হবে।
এই প্রস্তাবনার আওতায় বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন(বিসিআইসি) ৩০ হাজার মেট্রিকটনের প্রতি লট ১১৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে আমদানি করবে।
প্রতি মেট্রিকটন ইউরিয়া আমদানিতে খরচ হবে ৬২৪ দশমিক ১৭ মার্কিন ডলার যা আগে একই পরিমাণ আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৫৩৪ দশমিক ৩৩ মার্কিন ডলার।
আরও পড়ুন: চালের সরবরাহ বাড়াতে আমদানি শুল্ক আরও কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত: খাদ্যমন্ত্রী
সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ নেতা মিখাইল গর্বাচেভ মারা গেছেন
সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ নেতা মিখাইল গর্বাচেভ মঙ্গলবার মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
মস্কোর সেন্ট্রাল ক্লিনিক্যাল হাসপাতাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর গর্বাচেভ মারা গেছেন।’ এ বিষয়ে আর বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং মস্কোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফাউল টুইটারে বলেছেন, ‘ইতিহাসের গতিপথকে ইতিবাচক দিক দিয়ে পরিবর্তন করেছেন এমন একজন ব্যক্তির কথা ভাবা কঠিন। গর্বাচেভ একজন আদর্শবাদী ছিলেন যিনি ধারণা এবং ব্যক্তিদের শক্তিতে বিশ্বাস করতেন। তার থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত।’
গর্বাচেভ ৫৪ বছর বয়সে ১৯৮৫ সালে ক্ষমতায় আসেন এবং দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান নেতা নিযুক্ত হন।
১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিজমের পতন হলে গর্ভাচেভ দেশটির প্রথম এবং একমাত্র প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন। ১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বার সোভিয়েতের ইউনিয়নের আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তির দিন তিনি পদত্যাগ করেন। গর্বাচভের পদত্যাগের মধ্য দিয়েই বিশ্বে চার দশক ধরে চলা স্নায়ুদ্ধের সমাপ্তি হয়।
তিনি ‘পেরেস্ত্রোইকা’ ও ‘গ্লাসনস্ত’ নীতির প্রবর্তক ছিলেন।
সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর গর্বাচেভ অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন, ইউএসএসআরকে একত্রে রাখার চেষ্টা করার জন্য ব্যাপক শক্তি ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করেননি। কারণ এতে তিনি পারমাণবিক দেশে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘দেশ অস্ত্রে ভারাক্রান্ত ছিল এবং এটি অবিলম্বে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিত।’
পড়ুন: বিশ্বের নিঃসঙ্গতম ‘গর্তের মানুষ’ এর মৃত্যু
শিয়া নেতার রাজনীতি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা, বাগদাদে সংঘর্ষে নিহত ১৫
পাকিস্তানে বন্যা: ৩ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
পারমাণবিক চুক্তি সম্মেলনে চূড়ান্ত নথিতে রাশিয়ার বাধা
পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ সংক্রান্ত চুক্তি বা অ-প্রফ্লফ্রেশন চুক্তি (এনপিটি) রিভিউ’ নিয়ে জাতিসংঘের চার সপ্তাহব্যাপী পর্যালোচনার চূড়ান্ত নথিতে বাধা দেয় রাশিয়া। কেননা এই নথিতে রুশ সেনাদের ইউক্রেন আক্রমণ করার পর ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক কেন্দ্রের সামরিক দখলের বিষয়ে সমালোচনা করা হয়। যার কারণে বড় ধরনের পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটনার আশঙ্কা ছিল।
শুক্রবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপসারণ ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপপরিচালক আইগর ভিশনেভেৎস্কি ৫০ বছরের এনপিটি চুক্তির পর্যালোচনামূলক চূড়ান্ত বৈঠকে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত এই নথির ক্ষেত্রে কোনো ঐকমত্য নেই।’
এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি দেশের কাছে তিনি জোর দাবি করেছিলেন যে, নানা অসংগতিতে জর্জরিত ৩৬ পৃষ্ঠার ওই চূড়ান্ত খসড়া নথিতে যেন সম্মতি না দেয়া হয়।
নথিটিতে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ ও সেসব অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার জন্য ১৯১টি রাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: যুদ্ধ: ইউক্রেনে রেকর্ড মানবিক সহায়তা সংকটের মুখে জাতিসংঘ
আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত ও সম্মেলনের সভাপতি গুস্তাভো জ্লাউভিনেন বলেন, চূড়ান্ত নথিটিতে বিভিন্ন মতামতের সমন্বয় করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে এবং এতে অংশ নেয়া দেশগুলো এর মাধ্যমে একটি ‘ইতিবাচক ফলাফল’ প্রত্যাশা করছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব এমন এক মুহূর্তে আছে যেখানে আমাদের পৃথিবী ক্রমবর্ধমান সংঘাতে জর্জরিত এবং সবচেয়ে উদ্বেগজনক হচ্ছে অকল্পনীয় পারমাণবিক যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনা।
কিন্তু ভিশনেভেৎস্কির বক্তব্য পেশ করার পর জ্লাউভিনেন সম্মেলনের প্রতিনিধিদের বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি যা দেখছি, তাতে সম্মেলনটি চুক্তি বাস্তবায়নের অবস্থায় নেই।’
এনপিটি চুক্তির পর্যালোচনা সম্মেলন প্রতি পাঁচ বছর পর পর হওয়ার কথা থাকলেও এবার কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এ সভা দেরিতে শুরু হয়েছে। নথির ক্ষেত্রে ঐকমত্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে দেশগুলোর দ্বিতীয় ব্যর্থ চেষ্টা এটি।
এর আগে ২০১৫ সালের পর্যালোচনা সম্মেলনটিও ব্যর্থ হয়েছিল। গণবিধ্বংসী অস্ত্রমুক্ত মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠা নিয়ে গুরুতর মতপার্থক্যের কারণে সেসময়ের চুক্তি হয়নি।
সে মতপার্থক্যগুলো এখনও দূর হয়নি, তবে আলোচনা চলমান।
আরও পড়ুন: শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারে সহযোগিতায় বাংলাদেশ ও দ. কোরিয়ার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর
অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) সংগৃহীত খসড়া নথি অনুযায়ী একটি পারমাণবিক অস্ত্র মুক্ত মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়টি পুনরায় নিশ্চিত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সুতরাং,বলা যায় এ বছর এটি নিয়ে বড় কোনো মতপার্থক্য হয়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ ইস্যুটি সম্মেলনের গতিপথ বদলে দিয়েছে। কেননা এই আলোচনায় রুশ প্রেসিডেন্টের সতর্কবার্তার কথা উল্লেখ করা হয়। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেসময়জোর দিয়ে বলেন, রাশিয়া একটি ‘পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধ’ দেশ এবং তাদের কার্যক্রমে যেকোনো হস্তক্ষেপের ফলে ‘এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বিশ্ব যা আগে কখনও দেখেনি।’
যদিও পরবর্তীতে পুতিন তার বক্তব্য থেকে সরে এস বলেন, ‘পারমাণবিক যুদ্ধ জয় করা সম্ভব না এবং এই যুদ্ধ করা উচিত নয়।’
২ আগস্ট সম্মেলনে একজন জ্যৈষ্ঠ রুশ কর্মকর্তা পুতিনের এই বক্তব্যটি পুনরায় ব্যক্ত করেন।
কিন্তু পুতিনের প্রাথমিক হুমকি ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্র দখলের পাশাপাশি চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্র দখল নতুন করে বিশ্বব্যাপী আরেকটি পারমাণবিক জরুরি অবস্থার আশঙ্কা সৃষ্টি করে।
এ সপ্তাহের শুরুর দিকে জাতিসংঘের মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছেন, বাইডেন প্রশাসন একটি সর্বসম্মত চূড়ান্ত নথি চাইছিল যা পারমাণবিক চুক্তিকে শক্তিশালী করবে এবং স্বীকার করবে যে রাশিয়ার যুদ্ধ ও তাদের ইউক্রেনে দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড গুরুতরভাবে চুক্তিটির অবমূল্যায়ন করেছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া ওই কাউন্সিলের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, চূড়ান্ত নথির কাজে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক নিরাপত্তা জোরদার করার বদলে রাশিয়াকে শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিল করাই এর মূল উদ্দেশ্য।
জাপোরিঝিয়া প্ল্যান্টের খসড়া চূড়ান্ত নথিতে চারটি রেফারেন্স রয়েছে, যেখানে রাশিয়া ও ইউক্রেনকে একে অপরকে গোলাগুলির জন্য অভিযুক্ত করা হয়।
এ কথা বলে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা পারমাণবিক কেন্দ্রের কাছে সামরিক অভিযানের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে।
খসড়াটি ইউক্রেনের পারমাণবিক স্থাপনা, বিশেষ করে জাপোরিঝিয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনজুড়ে সামরিক স্থাপনায় রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ভয় ও শঙ্কার মধ্যেই ইউক্রেনে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
রুশ হামলার আশঙ্কায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেই ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ দেশটির স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেছেন।
বুধবার (২৪ আগস্ট) একই সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে দেশটির স্বাধীন হওয়ার ৩১ বছর পূর্ণ করেছে এবং ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুরও ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে।
ফলে নতুন করে স্বাধীনতার শপথ নেন ইউক্রেনের নাগরিকরা।
কিয়েভের স্বাধীনতা দিবসে সাধারণত নগরের কেন্দ্রে একটি বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ দেখা যায়।
কিন্তু এবছর রাজধানীতে সাধারণ মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ যে কোনো সময় হামলার শিকার হতে পারে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর জন্য রাশিয়া তার প্রচেষ্টা বাড়াতে পারে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে দেয়া তার বক্তব্যে ‘কোন ছাড় দেয়া বা আপস ছাড়াই’ রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের সমস্ত অঞ্চল ‘মুক্ত’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তবে সম্প্রতি রাশিয়া-অধিকৃত ক্রিমিয়ায় বিস্ফোরণ এবং রাশিয়ার রাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব আলেক্সান্দ্র দুগিনের মেয়ে দারিয়া দুগিনার মৃত্যুর পর আবারও উত্তেজনা বেড়েছে।
রাশিয়া যত বেশি ইউক্রেনকে তার স্বাধীনতার পথ থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা করবে, ইউক্রেনের জনগণের জাতীয়তাবোধ ততই শক্তিশালী হবে।
নাটালিয়ার নামের ইউক্রেনের এক নারী জানান, কিয়েভের ডিনিপার নদীর বাম তীরের একটি ছোট কারখানায় তিনি বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম তৈরি করতেন, কিন্তু এখন তিনি ইউক্রেনের পতাকা তৈরি করেন।
তিনি জানান, হামলার প্রথম দিকে সামরিক চেকপয়েন্টগুলো থেকে তাকে পতাকা তৈরির অনুরোধ করা হতো। এখন তিনি কেবল সেনাবাহিনী থেকেই নয়, অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকেও মাসে ২৫০০টিরও বেশি পতাকা তেরির অর্ডার পান।
নাটালিয়ার আরও বলে, ‘এগুলো (পতাকার রং) আমাদের কাছে খুব প্রিয় রং। প্রত্যেক ইউক্রেনীয় এই রঙগুলো অনুভব করেন এবং আমরা এই রংগুলোর মধ্যে আমাদের দেশের মুক্ত আকাশ ও গম খেত দেখতে পাই। এগুলো আমাদের মধ্যে খুশি, আনন্দ ও ইতিবাচক আবেগ সঞ্চার করে।’
এদিকে ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বিশ্ব নেতারা ইউক্রেনের সঙ্গে তাদের সংহতি প্রকাশ করছেন এবং তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ‘যতদিনই লাগুক (যুদ্ধ শেষ হতে) তার দেশ ও জাতি ইউক্রেনের পাশে থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেনের নাগরিকদের জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের মানবিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দেয়া হবে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন বলেন, ইউরোপ ‘আজ এবং সবসময়ই’ ইউক্রেনের সঙ্গে রয়েছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট রবার্টা মেটসোলা বলেছেন, ‘ইইউ ইউক্রেনের স্বাধীনতা ও অবৈধ রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তার সাহসী লড়াইকে সমর্থন করা কখনই বন্ধ করবে না’।
আরও পড়ুন: রুশ হামলায় এ পর্যন্ত মারা গেছে ৯ হাজার ইউক্রেনীয় সৈন্য
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ বলেছেন, তার দেশের মানুষের ভালোবাসা ইউক্রেনের সঙ্গে রয়েছে। কারণ দেশটি আজ এক ‘ভয়াবহ পরিস্থিতি’র মধ্য দিয়ে তার স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ বলেছেন, ইউক্রেনের প্রতি তার সমর্থন ‘অবিসংবাদী ও অবিচল’। এবং তিনি বিশ্বাস করেন যে সমস্ত দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক আইন অবশ্যই প্রাধান্য পাবে।
এছাড়াও ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে ফিনল্যান্ড, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মলদোভা, পোল্যান্ড ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাসহ সারা ইউরোপের নেতারা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
পড়ুন: ইউক্রেন হামলার পর দ্বিতীয় রুশ জাহাজ মোংলায় পৌঁছেছে
যুদ্ধ: ইউক্রেনে রেকর্ড মানবিক সহায়তা সংকটের মুখে জাতিসংঘ
তৃতীয় দেশের মাধ্যমে রাশিয়ার তেল কিনতে পারে বাংলাদেশ
সম্ভাব্য বাণিজ্য ঝুঁকি এড়াতে বাংলাদেশ তৃতীয় কোনো দেশের সহায়তায় রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করতে পারে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রাশিয়ার তেল আমদানিতে প্রতিবেশি ভারত এক্ষেত্রে বাংলাদেশের তৃতীয় পছন্দের দেশ হতে পারে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘বর্তমানে ভারত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাশিয়ার তেল আমদানি করছে। ভারতের আসাম রাজ্যের নুমালিগড় তেল শোধনাগার থেকে পরিশোধিত তেল কেনার বিষয়ে ভারতের সঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি আছে বাংলাদেশের।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যদি দুই দেশের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থাকে, তাহলে এই ধরনের ব্যবসা করা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, কম খরচে রাশিয়ার তেল আমদানির ঝুঁকি এড়ানোর ভালো উপায় হতে পারে এটি।
একটি রুশ কোম্পানি বাংলাদেশের কাছে সস্তায় পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম; বিশেষ করে ডিজেল বিক্রির প্রস্তাব দেয়ায়, রাশিয়া থেকে পেট্রোলিয়াম আমদানির সম্ভাবনার বিষয়টি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আলোচনায় আসে।
মস্কোভিত্তিক রুশ তেল কোম্পানি রুশনেফট সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) প্রতি ব্যারেল পেট্রোলিয়াম ৫৯ ডলারে বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে, বর্তমানে যার বৈশ্বিক বাজার মূল্য ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলারের বেশি।
এছাড়া, রুশ কোম্পানিটি পরিবহন খরচসহ পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম এই মূল্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
তবে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ কোম্পানির এই প্রস্তাব সম্পর্কে কিছু জানায়নি।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বৃহস্পতিবার তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত (এ বিষয়ে) কোনো আপডেট নেই।’
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, রাশিয়া কাছ থেকে তেল আমদানি করার বিষয়টি, অন্য দেশ থেকে জ্বালানি আমদানির মতো না।
তারা জানায়, বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে পেট্রোলিয়াম আমদানির সম্ভাব্য ঝুঁকি মূল্যায়ন করছে। কারণ এই ধরনের আমদানির ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা ক্ষুব্ধ হতে পারে।
আরও পড়ুন:সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২০ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব
ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর পর থেকে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের আরোপিত বিশাল অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, যদি কোন দেশ সরাসরি রাশিয়ান তেল আমদানি করে তবে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে। তাই এ বিষয়ের যেকোনও পদক্ষেপ শুধুমাত্র বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে না।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ‘রাশিয়ার কাছ থেকে পেট্রোলিয়াম আমদানির প্রস্তাব পাওয়ার পর বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্ভাব্য ঝুঁকি ও বিভিন্ন বিষয় মূল্যায়ন করছে।’
গত ১৬ আগস্ট একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, সরকার রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল, সার ও গম কিনতে চায়।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, তিনি তার মূখ্য সচিবকে রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দায়িত্ব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারে, আমরা তাদের (রাশিয়া) কাছ থেকে আমাদের নিজস্ব মুদ্রা দিয়ে জ্বালানি তেল সংগ্রহ করব। কারণ সুইফট বন্ধ এবং ডলারের দাম অনেক বেশি।’
এদিকে পাওয়ার সেলের পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সরকার যদি কম দামে ডিজেল আমদানির ব্যবস্থা করতে পারে তাহলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আবার চালু করা হবে।
উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সরকার গত ১৯ জুলাই থেকে দেশের ডিজেল-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করে এবং ডিজেল আমদানি কমাতে ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং চালু করে।
এক ঘণ্টা এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করার কথা থাকলেও সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় একাধারে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং থাকার অভিযোগ করে ভোক্তারা। তাদের দাবি গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে আরও বেশি সময় ধরে লোডশেডিং চলে।
সরকার ৭ জুলাই থেকে মার্কেট ও শপিংমল রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়।
এছাড়া, কমিউনিটি সেন্টার, শপিংমল, দোকান, অফিস ও বাড়িতে বিভিন্ন সামাজিক জমায়েতে আলোকসজ্জা নিষিদ্ধ করা হয়।
সবশেষে বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাস সংরক্ষণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ১১ আগস্ট থেকে শিল্পাঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন ছুটির দিন ঘোষণা করে সরকার।
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি: বিপাকে ভোলার লক্ষাধিক জেলে