রাশিয়া
কিয়েভ যাচ্ছেন মার্কিন পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন রবিবার কিয়েভ সফরে যাবেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে এখনও এটি নিশ্চিত করা হয়নি কিন্তু আশা করা হচ্ছে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে এটাই হবে কিয়েভে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঊধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রথম সফর।
বিবিসি রবিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইউক্রেনের নেতাদের জানিয়েছেন যে আরও সামরিক উপকরণ দেশটিতে পাঠানো হবে।
অপরদিকে, মারিউপোল শহরের আযভস্টাল নামের যে বিশাল ইস্পাত কারখানাটি ইউক্রেনীয় সৈন্যদের প্রতিরোধের শেষ কেন্দ্র-সেখানে রাশিয়ানরা কোন সৈন্যকে হত্যা করলে শান্তি আলোচনা বাতিল করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
তিনি বলেন, খেরসন শহরে স্বাধীনতার জন্য কোন গণভোটের আয়োজন করা হলেও তিনি একই পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন অর্থাৎ শান্তি আলোচনা থেকে সরে যাবেন।
কিয়েভ মেট্রোতে প্রায় তিন ঘণ্টার দীর্ঘ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, শান্তি আলোচনার স্বার্থে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সাক্ষাত করতে আগ্রহী।
এছাড়া ওডেসায় আবাসিক ভবনে রাশিয়ার হামলার বিষয়েও কথা বলেন তিনি। ওই হামলায় তিন মাসের একটি শিশুসহ আট জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
পড়ুন: পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করবেন জাতিসংঘের মহাসচিব
গণতন্ত্র রক্ষায় অবদানের জন্য পুরস্কার পেলেন জেলেনস্কি
ডনবাসে হামলা শুরু করেছে রাশিয়া: জেলেনস্কি
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায় বড় ধরনের হামলা শুরু করেছে রাশিয়ান বাহিনী। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এক ভিডিও ভাষণে তিনি বলেন, ‘রাশিয়ান সেনারা ডনবাস অঞ্চল দখলের জন্য যুদ্ধ শুরু করেছে। পুরো রাশিয়ান সেনাবাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখন এই আক্রমণে মনোনিবেশ করেছে।’
ডনবাস পূর্ব ইউক্রেনের বেশিরভাগ রাশিয়ান-ভাষী শিল্প কেন্দ্রভূমি অঞ্চল, যেখানে মস্কো-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা গত আট বছর ধরে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সাথে লড়াই করছে এবং সম্প্রতি রাশিয়া সেখানে দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছে।
পড়ুন: লাভিভে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৭ জন নিহত: ইউক্রেন
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কিয়েভ দখলের চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পর ক্রেমলিন ডনবাস অঞ্চল দখলকে যুদ্ধের মূল লক্ষ্য ঘোষণা করে। রাজধানী থেকে প্রত্যাহার করার পর রাশিয়া সর্বাত্মক আক্রমণের জন্য পূর্বে তার স্থল সেনাদের পুনরায় সংগঠিত এবং শক্তিশালী করতে শুরু করে।
জেলেনস্কি বলেন,‘সেখানে যত রাশিয়ান সেনাই আক্রমণ করুক না কেন, আমরা লড়াই করব, আমরা নিজেদের রক্ষা করব। আমরা প্রতিদিন এটি করব।’
রাশিয়া পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লাভিভ এবং ইউক্রেন জুড়ে অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা জোরদার করার পর ডনবাসে আক্রমণটি শুরু করে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর জেনারেল স্টাফ বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনী লুহানস্ক এবং দোনেৎস্ক অঞ্চলে আক্রমণ জোরদার করছে- এই দুই অঞ্চলই ডনবাসের অংশ।
পড়ুন: মারিউপোলে আত্মসমর্পণের আল্টিমেটাম প্রত্যাখান ইউক্রেনীয় সেনাদের
লাভিভে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৭ জন নিহত: ইউক্রেন
ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লাভিভে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এ শহরটি প্রায় দুই মাসের যুদ্ধে তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে পালিয়ে আসা ইউক্রেনীয় নাগরিকদের জন্য তুলনামূলক আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।
লাভিভে অঞ্চলের গভর্নর ম্যাকসিম কোজিটস্কি বলেছেন, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা তিনটি সামরিক অবকাঠামো ও একটি অটো মেকানিকের দোকানে আঘাত করেছে।
আরও পড়ুন: মারিউপোলে আত্মসমর্পণের আল্টিমেটাম প্রত্যাখান ইউক্রেনীয় সেনাদের
এ হামলায় আহতদের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে বলেও জানান তিনি।
লাভিভের মেয়র আন্দ্রি সাদোভিই বলেছেন, এ হামলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে একটি হোটেল রয়েছে যেখানে দেশের অন্যান্য এলাকার যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা ইউক্রেনীয় নাগরিকরা আশ্রয় নিয়েছিলেন।
৪৭ বছর বয়সী লিউডমিলা তুরচাক ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভ থেকে দুই শিশুসহ পালিয়ে লাভিভে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের দুঃস্বপ্ন আমাদের এখানেও ধরে ফেলেছে। এমনকি লাভিভেও। ইউক্রেনে এমন কোনো জায়গা আর নেই যেখানে আমরা নিরাপদ বোধ করতে পারি।’
আরও পড়ুন: মারিউপোলে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের আত্মসমর্পণের আহ্বান রুশ সেনাবাহিনীর
মারিউপোলে আত্মসমর্পণের আল্টিমেটাম প্রত্যাখান ইউক্রেনীয় সেনাদের
ইউক্রেনের অবরুদ্ধ শহর মারিউপোলে আত্মসমর্পণের যে সময় সীমা বেধে দিয়েছিল রুশ বাহিনী তাতে ইউক্রেনীয় যোদ্ধারা সাড়া দেয়নি। এ পরিস্থিতিতে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহরটিতে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা।
শহরটির টহল পুলিশের প্রধান মিখাইল ভার্শিনিন রবিবার মারিউপোল টেলিভিশনকে বলেছেন, শিশুসহ অনেক মারিউপোল বেসামরিক নাগরিকও আজভস্টাল প্ল্যান্টে আশ্রয় নিচ্ছেন। তারা রাশিয়ান গোলাগুলি থেকে এবং যে কোনও দখলদার রাশিয়ান সৈন্যদের কাছ থেকে লুকিয়ে আছে।
এর আগে জীবন রক্ষার সুযোগ হিসেবে ইউক্রেনের সৈন্যদের রবিবারের মধ্যে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছিল রাশিয়া।
ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহাল এই সপ্তাহে এবিসিকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, আমরা এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য লড়াই করব।
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন সম্ভব হলে কূটনীতির মাধ্যমে যুদ্ধের লাগাম টানতে প্রস্তুত, তবে আমাদের আত্মসমর্পণের ইচ্ছা নেই।’
ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে যুদ্ধ শুরু পর মারিউপোলে রাশিয়ার হামলা চলছে এবং এতে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক মারা গেছে । ইউক্রেনের এই বড় বন্দর নগরীটির পতন আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদি মারিউপোলের পতন ঘটে, এটি হবে গত দুমাসের যুদ্ধে রাশিয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজয়।
পড়ুন: মারিউপোলে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের আত্মসমর্পণের আহ্বান রুশ সেনাবাহিনীর
কিয়েভ ও অন্যান্য শহরে নতুন করে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া
মারিউপোলে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের আত্মসমর্পণের আহ্বান রুশ সেনাবাহিনীর
মারিউপোলে জীবন রক্ষার সুযোগ হিসেবে ইউক্রেনের সৈন্যদের আজ রবিবারের মধ্যে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। তারা বলেছে, যারা অস্ত্র সমর্পণ করবে তাদের জীবনের নিশ্চয়তা দেয়া হবে।
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আগেই বলেছেন, মারিউপোলে ইউক্রেনের যোদ্ধাদের নিশ্চিহ্ন করার অর্থ হলো আলোচনার সমাপ্তি টেনে দেয়া।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার থেকে মারিউপোলে আরও কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে রাশিয়া।
রবিবার এক প্রতিবেদনে বিবিসি এসব তথ্য জানিয়েছে।
রাশিয়া জানিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অস্ত্র সমর্পণ করলেই কেবল তাদের জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়া হবে। এ জন্য তারা কিয়েভের দিকে না তাকিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেদের নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইউক্রেনের সৈন্যদের।
তারা বলছে, ইউক্রেনের যেসব সৈন্য ও বিদেশি ভাড়াটে যোদ্ধারা মারিউপোলে এখনো লড়াই করছে, তারা স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে বেলা একটার মধ্যে তাদের অস্ত্র সমর্পণ করলে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
যারা এটা করবে তাদের বন্দী হিসেবে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী আচরণ করা হবে।
তবে যারা আত্মসমর্পণ করবে না তাদের বিষয়ে কী হবে সে সম্পর্কে দেশটি তাদের বিবৃতিতে কিছু উল্লেখ করেনি।
রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনের সৈন্যদের শহরটির একটি ছোট এলাকায় ঘিরে রাখা হয়েছে।
পড়ুন: কিয়েভ ও অন্যান্য শহরে নতুন করে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া
মারিউপোলে কী হয়েছে
ইউক্রেনের এই বড় বন্দর নগরীটির পতন আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ছয় সপ্তাহ ধরে সেখানে রাশিয়ার হামলা চলছে এবং এতে মারা গেছে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক।
যারা বেঁচে গেছে তারাও কনকনে ঠাণ্ডায় ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
বোমায় শহরটি তছনছ করে দিয়েছে রুশরা। ফলে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, পানি ও ঔষধের চরম সংকট তৈরি হয়েছে।
হাজার হাজার মানুষ শহরটির আরও উত্তরে সরে গেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টও স্বীকার করেছেন যে শহরটির অল্প অংশই তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
কিয়েভ ও অন্যান্য শহরে নতুন করে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া
রুশ বাহিনী কিয়েভ ও এর আশেপাশের বেশ কয়েকটি শহরে তাদের আক্রমণ জোরদার করেছে। শনিবার যুদ্ধের ৫২তম দিন নতুন করে তাদের আক্রমণাত্মক হামলার পরিমাণ অনেকটা বেড়েছে।
কৃষ্ণ সাগরের যুদ্ধজাহাজ হারানোর কারণে এবং রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের ‘আগ্রাসনের’ কারণে ক্ষুব্ধ রাশিয়ার সামরিক কমান্ড ইউক্রেনের রাজধানীতে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে।
মস্কোর কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা শুধু ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা করছে।
প্রকৃত অবস্থা যদিও ভিন্ন। প্রতিদিন হামলায় অসংখ্য বেসামরিক নাগরিক মারা যাচ্ছে। শনিবারও উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের শহর খারকিভের একটি আবাসিক এলাকায় রকেট হামলায় এক শিশুসহ অন্তত ৯ জন মারা গেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: কিয়েভ অঞ্চলে ৯ শতাধিক মানুষের লাশ উদ্ধার: পুলিশ
কিয়েভের ঠিক পাশের শহর ও গ্রাম থেকে রুশ সেনা পিছু হটার পর ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ ৯০০টিরও বেশি বেসামরিক মানুষের লাশ খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
শনিবার রাজধানীতে হামলা বৃদ্ধি পাওয়ায় শহরটির মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো যুদ্ধের আগে শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া বাসিন্দাদের ফিরে না আসার পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা রাজধানীতে হামলা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছি না। যদি আপনার যেখানে আছেন সেটা নিরাপদ স্থান হয় এবং সেখানে আরেকটু বেশি সময় থাকার সুযোগ থাকে, তবে সেখানেই থাকুন।’
কিয়েভের দারনিটস্কি জেলায় হামলায় কী ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার জানা যায়নি। রাজধানীর দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে বিস্তৃত এই এলাকায় সোভিয়েত-শৈলীর অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক, নতুন শপিং সেন্টার এবং বড়-বক্স খুচরা দোকান, শিল্প এলাকা এবং রেলইয়ার্ড রয়েছে।
তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ বলেছেন, দারনিটস্কিতে একটি সাঁজোয়া যানকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা শান্তির প্রধান পদক্ষেপ: জেলেনস্কি
রুশ সামরিক বাহিনী এই সপ্তাহে রাজধানীতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর এটি ছিল কিয়েভ এলাকায় দ্বিতীয় হামলা। শুক্রবার আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্রে আঘাত হানে।
রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নতুন করে এমন সময় শহরটিতে আঘাত হানে যখন বাসিন্দারা নতুন করে নিজেদের বাড়িতে ফিরে আসছিল, বিদেশি দূতাবাসগুলো পুনরায় খোলার পরিকল্পনা চলছে এবং কিয়েভ থেকে রুশ সেনাদের প্রত্যাহারের পরে শহরের যুদ্ধপূর্ব অবস্থা ফিরে আসতে শুরু করে।
শনিবার কিয়েভে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়সহ দেশজুড়ে আটটি অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া যায়।
পশ্চিম ইউক্রেনের এলভিভের গভর্নর বেলারুশ থেকে উড্ডয়নকারী রাশিয়ান এসইউ-৩৫ দ্বারা এই অঞ্চলে বিমান হামলার কথা জানিয়েছেন।
রুশ সামরিক বাহিনী সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে গোলাবর্ষণ বাড়িয়েছে। শুক্রবারের হামলায় এ শহরের অনেক বেসামরিক মানুষ নিহত এবং ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছে বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে।
খারকিভের মেয়র ইহোর তেরেখভ বলেছেন, শনিবারও এখানে হামলা হয়েছে। এদিনের হামলায় তিনজন নিহত ও ৩৪ জন আহত হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউক্রেনের সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বন্দর নগরী মারিউপোল অবরুদ্ধতা অব্যাহত রয়েছে। ক্রমে যা যা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
আরও পড়ুন: প্রতিদিন ইউক্রেনে ফিরছেন ৩০ হাজার মানুষ: জাতিসংঘ
ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ একটি 'গণহত্যা': বাইডেন
ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ ‘গণহত্যার’ সমান বলে মন্তব্য করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘এমনকি একজন ইউক্রেনীয় হওয়ার ধারণাটি মুছে ফেলার’ চেষ্টা করার অভিযোগ করেছেন।
ওয়াশিংটনে ফেরার জন্য এয়ার ফোর্স ওয়ানে উঠার কিছুক্ষণ আগে আইওয়াতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি এটাকে গণহত্যা বলেছি।’
বাইডেন বলেন, ‘এটি আরও পরিষ্কার ও স্পষ্ট হয়ে গেছে যে পুতিন কেবল ইউক্রেনীয় হওয়ার ধারণাটি মুছে ফেলার চেষ্টা করছেন।’
মেনলো, আইওয়াতে একটি পূর্ববর্তী ইভেন্টে যুদ্ধের ফলে ক্রমবর্ধমান জ্বালানির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বাইডেন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তিনি ভেবেছিলেন পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছেন, তবে কোনও বিস্তারিত বিবরণ দেননি।
বাইডেনের মন্তব্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রশংসা অর্জন করেছে, যিনি পশ্চিমা নেতাদের তার দেশে রাশিয়ার হামলা বর্ণনা করতে এই শব্দটি ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাইডেন বলেন, রাশিয়ার আচরণ গণহত্যার জন্য আন্তর্জাতিক মান পূরণ করেছে কি না তা সিদ্ধান্ত নেয়ার আইনজীবীদের উপর নির্ভর করে, যেমনটি ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। তবে তিনি বলেছেন ‘এটি আমার কাছে নিশ্চিত মনে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ানরা যে ভয়ঙ্কর কাজগুলো করেছে তার আরও প্রমাণ আক্ষরিক অর্থে বেরিয়ে আসছে এবং আমরা কেবল ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে আরও বেশি কিছু শিখতে যাচ্ছি এবং আইনজীবীদের আন্তর্জাতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে দিব যে এটি যোগ্য কি না।
গত সপ্তাহে বাইডেন বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেননি যে রাশিয়ার কর্মকাণ্ড গণহত্যার সমান, কেবলমাত্র তারা ‘যুদ্ধাপরাধ’ করেছে।
পড়ুন: মারিউপোলে ১০ হাজারের বেশি বেসামরিক লোক নিহত: মেয়র
নিউইয়র্কে রেলস্টেশনে ৫ জন গুলিবিদ্ধ
মারিউপোলে ১০ হাজারের বেশি বেসামরিক লোক নিহত: মেয়র
ইউক্রেনের বন্দর নগরী মারিউপোলের মেয়র সোমবার বলেছেন, তার শহরের রুশ অবরোধে ১০ হাজারের বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে এবং এই সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সোমবার দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) সাথে ফোনে আলাপকালে মেয়র ভাদিম বয়চেঙ্কো রাশিয়ান বাহিনীকে বহির্বিশ্বের কাছ থেকে সেখানে হত্যাকাণ্ড লুকানোর প্রয়াসে শহরে আটক মানবিক কনভয়কে কয়েক সপ্তাহ অবরুদ্ধ করারও অভিযোগ করেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ইউক্রেনে আগ্রাসনের নির্দেশ দেয়ার পরপরই শুরু হওয়া রুশ হামলার কারণে মারিউপোল অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং যুদ্ধের সবচেয়ে নৃশংস হামলার শিকার হয়েছে।
পড়ুন: পরবর্তী কয়েক দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: জেলেনস্কি
বয়চেঙ্কো ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক অভিযোগের নতুন বিবরণ দিয়েছেন যে, রুশ বাহিনী মারিউপোলে অবরোধের শিকারদের মৃতদেহ নিষ্পত্তি করার জন্য মোবাইল শ্মশান সরঞ্জাম এনেছিল।
বয়চেঙ্কো বলেন, রুশ বাহিনী অনেক লাশ একটি বিশাল শপিং সেন্টারে নিয়ে গেছে যেখানে স্টোরেজ সুবিধা এবং রেফ্রিজারেটর রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মোবাইল শ্মশানগুলো ট্রাকের আকারে এসেছে: আপনি সেগুলো খুলুন এবং ভিতরে একটি পাইপ আছে এবং এই মৃতদেহগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
বয়চেঙ্কো ইউক্রেনীয় নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের একটি স্থান থেকে কথা বলেছেন, তবে এটি মারিউপোলের বাইরে।
মেয়র বলেন, শহরে রাশিয়ান বাহিনী কর্তৃক কথিত শ্মশানের মৃতদেহ পোড়ানোর পদ্ধতি সম্পর্কে তার কাছে বেশ কয়েকটি উৎস রয়েছে, তবে তার তথ্যের উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানান নি।
পড়ুন: শাহবাজ শরিফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত
বাইডেন-মোদি ভার্চুয়াল বৈঠক আজ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে ভার্চুয়ালি বৈঠকে বসবেন। এমন সময়ে দুই নেতার বেঠক হতে চলেছে যখন বাইডেন রাশিয়ায় ইউক্রেন আক্রমণের বিরুদ্ধে বিশ্ব নেতাদের কঠোর অবস্থান নিতে আহ্বান জানাচ্ছেন।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ভারতের নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে ওয়াশিংটন উদ্বেগ জানিয়েছে। অপরদিকে, রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ চলতি মাসের শুরুতে ভারত সফরে গিয়ে শুধুমাত্র একতরফাভাবে নয়, সম্পূর্ণভাবে পরিস্থিতি বিবেচনা করার জন্য ভারতের প্রশংসা করেছেন।
অতি সম্প্রতি ইউক্রেনে রাশিয়ান সেনাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে মানবাধিকার পরিষদে রাশিয়ার সদস্যপদ স্থগিত চেয়ে সাধারণ পরিষদে খসড়া প্রস্তাব তুলে যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাবের পক্ষে ভারত ভোটদানে বিরত ছিল।
প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ৯৩টি দেশ, বিপক্ষে ভোট পড়ে ২৪টি। ৫৮টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব জেন সাকি রবিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভার্চুয়াল বৈঠকে বাইডেন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের পরিণতি এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহ ও পণ্যের বাজারের অস্থিতিশীল প্রভাব হ্রাস করার বিষয়ে কথা বলবেন।
তিনি বলেন, তারা ‘বৈশ্বিক অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং সমৃদ্ধি জোরদার করার জন্য একটি মুক্ত, উন্মুক্ত, নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক আদেশ বজায় রাখার বিষয়ে আলোচনা করবেন।
রাশিয়ার তেল ও গ্যাস কেনা এড়াতে পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ সত্ত্বেও ভারত রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহ ক্রয় অব্যাহত রেখেছে। রাশিয়ান বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার জন্য ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বিবেচনা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে গত মার্চে বাইডেন ও মোদি সর্বশেষ আলোচনা করেছেন।
পড়ুন: পরবর্তী কয়েক দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: জেলেনস্কি
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ইমরান খানের
পরবর্তী কয়েক দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: জেলেনস্কি
আগামী সপ্তাহ যুদ্ধের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে ইউক্রেনীয়দের সতর্ক করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনেস্কি।
রবিবার রাতের ভিডিও ভাষণে তিনি বলেন, আমাদের দেশের পূর্বাঞ্চলে আরও বড় অভিযানে যাবে রাশিয়ান সেনারা।
এসময় রাশিয়া যুদ্ধাপরাধের দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন জেলেনেস্কি।
তিনি বলেন, ‘মানুষ যখন তাদের ভুল স্বীকার করার, ক্ষমা চাওয়ার, বাস্তবতার সাথে মানিয়ে নেয়ার এবং শেখার সাহসের অভাব বোধ করে, তখন তারা দানব হয়ে যায়। এবং যখন বিশ্ব এটিকে উপেক্ষা করে, তখন দানবরা সিদ্ধান্ত নেয় যে এই বিশ্বকে তাদের সাথে মানিয়ে নিতে হবে। ইউক্রেন এই সব বন্ধ করবে।’
ইউক্রেনীয় নেতা বলেন, ‘সেদিন আসবে যখন তাদের সবকিছু স্বীকার করতে হবে। সত্যকে স্বীকার করুন।’
এদিকে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজের সাথে বৈঠক করেছেনে প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কি। এসময় তিনি জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে ইউক্রেনে আরও সহায়তা দেয়ার আহ্বান জানান।
জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি এটা জেনে আনন্দিত যে সম্প্রতি জার্মান অবস্থান ইউক্রেনের পক্ষে পরিবর্তিত হয়েছে। এটিকে যৌক্তিক বলে মনে করি।’
পড়ুন: রেলস্টেশনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: কড়া জবাব চায় ইউক্রেন
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ইমরান খানের