রাশিয়া
কিয়েভের উপকণ্ঠে রুশ হামলা, মারিউপোল অবরুদ্ধ
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠসহ দেশটির অনেক শহরে বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে রুশ বাহিনী। এদিকে কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ দেশটির দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় বন্দর নগরী মারিউপোল অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এর ফলে সহিংসতা থেকে রক্ষা পেতে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে।
রাশিয়ার আগ্রাসনে সবচেয়ে বেশি দুর্দশায় পড়েছে মারিউপোল শহর। ব্যাপক আক্রমণের মধ্যে ৪ লাখ ৩০ হাজার জনসংখ্যার শহরটিতে খাদ্য, পানি সংকট দেখা দিয়েছে। মেয়রের কার্যালয় অনুসারে, আগ্রাসনের পর শহরটিতে এক হাজার ৫০০ এর বেশি লোক মারা গেছে।
এদিকে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইউক্রেনকে অস্ত্রের জন্য আরও ২০০ মিলিয়ন ডলার দেয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ পরিস্থিতিকে দেশটিতে বিদেশি অস্ত্র সরবরাহের বহরকে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানানো হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন একজন সিনিয়র রুশ কূটনীতিক।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশটির পশ্চিমের একটি শহর থেকে একজন মেয়রকে আটকের জন্য রাশিয়াকে অভিযুক্ত করেছেন। এটিকে তিনি তার ভাষায় ‘সন্ত্রাসের একটি নতুন পর্যায়’ বলে মন্তব্য করেছেন।
শনিবার রাতে এক ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেন এই পরীক্ষা দেবে। আমাদের ভূমিতে যে যুদ্ধ এসেছে তা ভাঙতে আমাদের সময় এবং শক্তি দরকার।’
পড়ুন: আরেক রুশ জেনারেল নিহতের দাবি ইউক্রেনের
কিয়েভের উপকণ্ঠে রুশ-ইউক্রেন সেনাদের লড়াই চলছে: যুক্তরাজ্য
আরেক রুশ জেনারেল নিহতের দাবি ইউক্রেনের
ইউক্রেনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, যুদ্ধে আরেক রুশ জেনারেল নিহত হয়েছেন। শনিবার ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আন্তন গেরাশচেঙ্কো বলেছেন, রাশিয়ান মেজর জেনারেল আন্দ্রেই কোলেসনিকভ মারিউপোল নিয়ে লড়াইয়ের সময় সংঘাতে নিহত হয়েছেন।
ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের মতে, তিনি যুদ্ধে মারা যাওয়া তৃতীয় রুশ জেনারেল।
আরও পড়ুন: কিয়েভের উপকণ্ঠে রুশ-ইউক্রেন সেনাদের লড়াই চলছে: যুক্তরাজ্য
যদিও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে কোলেসনিকভের মৃত্যুর খবর এখনও নিশ্চিত করা হয়নি।
তবে, অনানুষ্ঠানিক রাশিয়ান সূত্রে এর আগে নিহত আরেক জেনারেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
রাশিয়ান ৭ম এয়ারবর্ন ডিভিশনের কমান্ডিং জেনারেল মেজর জেনারেল আন্দ্রেই সুখোভেটস্কির মৃত্যুর খবর তার সহকর্মী এবং দক্ষিণ রাশিয়ার অফিসারদের অ্যাসোসিয়েশন এর দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে। আরেক নিহত মেজর জেনারেল ভিটালি গেরাসিমভের মৃত্যুর খবর কোনো রাশিয়ান সূত্র দ্বারা নিশ্চিত করা হয়নি।
আরও পড়ুন: অবরুদ্ধ মারিউপোলে মসজিদে রুশ বাহিনীর গোলা বর্ষণ: ইউক্রেন
ইউক্রেনের শিল্প কেন্দ্রে রুশ যুদ্ধবিমান ও আর্টিলারির হামলা
মূল্যবৃদ্ধির পেছনে আ’লীগ জড়িত: ফখরুল
ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির জন্য আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যারা আওয়ামী লীগ করে তারা দ্রুত টাকা কামানোর জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়াচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারা (সরকার) লুটপাট, চুরি-ডাকাতিতে লিপ্ত হওয়ায় চাল, তেল ও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। যারা দাম বাড়াচ্ছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোক, আওয়ামী লীগের সদস্য।’
শুক্রবার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী কৃষকদল আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে।
পড়ুন: দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সরকার: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘এই সরকার কোনো কিছুরই পরোয়া করে না। তাদের মন্ত্রীরা সুন্দর সুন্দর কাপড় গায়ে দিয়ে চমৎকার চমৎকার জায়গায় ফুল নিয়ে বসে বিবৃতি দিচ্ছেন যে সারা বিশ্বে দাম বাড়ছে, আমাদের ক্রয়ক্ষমতাও বাড়ছে।’
বিএনপি নেতা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক দাম সামলাতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। যারা সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, টরন্টো এবং নিউইয়র্কে কেনাকাটা করেন তাদের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, তবে আমাদের অসহায় মানুষ, কৃষক, শ্রমিক এবং মেহনতি জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বাড়েনি।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বক্তব্যের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘এটা কি আরেকটা মিথ্যা কথা নয়? কারণ যুদ্ধের আগে থেকেই দাম বাড়ছে।
পড়ুন: দ্রুত সময়ের মধ্যে ভোজ্যতেলের দাম কমে আসবে: আইনমন্ত্রী
‘তাকে রেখেই আমাদের দেশে ফিরতে হলো’: ইউক্রেন ফেরত মনসুরুল
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে পড়া ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের ২৮ নাবিক নিরাপদে বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। তবে দেশে ফিরতে পারলেও সহকর্মী হারানো ও যুদ্ধের মানসিক আঘাত তাদের দীর্ঘদিন ভুগাবে।
ইউক্রেন ফেরত ২৮ নাবিকের একজন হলেন মনসুরুল আমিন খান গিনি। বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় তিনি বাড়ি ফেরেন। তার ফিরে আসায় সাতক্ষীরা শহরের ‘এখানেই নোঙর’ বাড়িটি যেন আলো ঝলমল হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে দূর হয়েছে পরিবারের সব উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও হতাশা।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের মধ্যে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র ২৯ জন নাবিকসহ ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটির অলভিয়া বন্দরে আটকা পড়ে এবং ২ মার্চ জাহাজে বোমার আঘাতে প্রাণ হারান বাংলাদেশি নাবিক হাদিসুর রহমান।
আরও পড়ুন: দেশে ফিরলেন ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র ২৮ নাবিক
মনসুরুল আমিন বলেন, ‘২ মার্চ স্থানীয় সময় বিকাল ৫টার দিকে হঠাৎ বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে উঠি আমরা। উপরে গিয়ে দেখি বিস্ফোরণ হয়েছে। ধোঁয়া উড়ছে, আগুন জ্বলছে। আমরা দ্রুত আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করলেও হারিয়েছি আমাদের সহকর্মীকে। তাকে রেখেই আমাদের দেশে ফিরতে হলো।’
ইউক্রেনে অলিভিয়া বন্দরে নোঙর করা ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র নাবিকরা এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। স্থানীয়ভাবে একটি নৌকা এসে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। নিরাপদ স্থানে রাখার পর অধিকতর নিরাপত্তার জন্য তাদের রাখা হয় বাংকারে।
‘আমরা আগুন দেখেছি, জাহাজ বিধ্বস্ত হতে দেখেছি, আমরা মৃত্যু দেখেছি’ এমন মন্তব্য করে মনসুরুল আমিন বলেন, ‘সে দৃশ্য ভয়াবহ। চারদিকে বিকট শব্দ। আকাশজুড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। বাড়িতে মাঝেমধ্যে ম্যাসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু আতঙ্ক আর হতাশা কিছুতেই পিছু ছাড়েনি। তবু ভরসা ছিল একদিন বাড়ি ফিরবোই।’
তিনি জানান, এ সময় তারা শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটিয়েছেন। সরকার, শিপিং কর্পোরেশন ও রোমানিয়ায় বাংলাদেশি দূতাবাসের আন্তরিক চেষ্টায় তারা সুস্থভাবে দেশে ফিরে আসতে পারায় তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন এই নাবিক।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে বাংলাদেশি জাহাজে রকেট হামলা, নিহত এক নাবিক
রাশিয়ার অনুরোধে বৈঠকে বসছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ
যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় ইউক্রেন রাসয়নিক ও জীবাণু অস্ত্রের গবেষণাগার পরিচালনা করছে রাশিয়ার এমন অভিযোগের বিষয়ে আলোচনা করতে শুক্রবার বৈঠকে বসছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
পরিষদের কূটনীতিকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ইস্টার্ন স্ট্যান্ডার্ড টাইম অনুযায়ী সকাল ১০টায় এ বৈঠক হবে।
জাতিসংঘে রুশ প্রথম ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বৃহস্পতিবার বিকালে এক টুইট বার্তায় এই বৈঠকের জন্য অনুরোধ জানান।
আরও পড়ুন: কোনো অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হলো ইউক্রেন-রাশিয়া বৈঠক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন রাশিয়ার এমন দাবি প্রত্যাখ্যানের পরপরই এই বৈঠকের আহ্বান জানানো হলো।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি রাশিয়ার দাবিকে ‘ভ্রান্ত’ বলে অভিহিত করেছেন এবং সতর্ক করেছেন রাশিয়া তার প্রতিবেশী ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাসায়নিক বা জীবাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
তবে বুধবার আরেক রুশ ডেপুটি ইউএন অ্যাম্বাসেডর দিমিত্রি চুমাকভ এই অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে পশ্চিমা গণমাধ্যমকে ‘ইউক্রেনের গোপন জীবাণু (অস্ত্রের) গবেষণাগারের’ খবর প্রচারের আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের হাসপাতালে বিমান হামলায় শিশুসহ নিহত ৩
ইউক্রেনের প্রসূতি হাসপাতালে বিমান হামলা, আহত ১৭
পশ্চিমা বিশ্বের ক্রমবর্ধমান নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ইউক্রেনে হামলা জোরদার অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। দেশটির দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অবরুদ্ধ মারিউপোল শহরে বুধবার একটি প্রসূতি হাসপাতালে রুশ বিমান হামলায় অন্তত ১৭ আহত হয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে থাকা আঞ্চলিক পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা ভলোদিমির নিকুলিন বলেন, ‘আজ রাশিয়া একটি বিশাল অপরাধ করেছে। কোন যুক্তি ছাড়াই এটি একটি যুদ্ধাপরাধ।’
কিয়েভের পশ্চিমে ২ লাখ ৬০ হাজার জনসংখ্যার জাইটোমিরের মেয়র সেরহি সুখোমলিন ফেসবুকে বলেছেন, দুটি হাসপাতালে বোমা পড়েছে, যার মধ্যে একটি শিশু হাসপাতাল।
তবে কেউ হতাহত হয়নি বলে জানান তিনি।
পড়ুন: ইউক্রেনে জীবন ও বন্ধু ফেলে গেছে ১০ লাখ শিশু
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, মারিউপোল হামলায় শিশু এবং অন্যরা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে।
রাতে এক ভিডিওতে জেলেনস্কি বলেন, ‘একটি শিশু হাসপাতাল। একটি প্রসূতি হাসপাতাল। তারা কীভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনকে হুমকি দিয়েছে? তারা কেমন দেশ, যারা হাসপাতালকে ভয় পায়, প্রসূতি হাসপাতালগুলোকে ভয় পায় এবং তাদের ধ্বংস করে।
এদিকে, তুরস্কের আনতালিয়া শহরে বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) ইউক্রেন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে বসবেন বলে জানা গেছে।
পড়ুন: রাশিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততার সন্দেহে যুক্তরাজ্যে প্রাইভেট জেট আটক
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: গোলাবর্ষণ এবং নাগরিকদের দেশত্যাগ অব্যাহত
ইউক্রেনে জীবন ও বন্ধু ফেলে গেছে ১০ লাখ শিশু
নিজের শহর খারকিভে বোমা পড়তে শুরু করার পর, আন্নামারিয়া মাসলোভস্কা তার বন্ধু, তার খেলনা ও তার জীবন ইউক্রেনে রেখে নিরাপত্তার আশায় পশ্চিমে তার মায়ের সঙ্গে এক দিনের যাত্রা শুরু করে।
অবশেষে অন্যান্য শত শত ইউক্রেনীয় উদ্বাস্তুদের সঙ্গে ট্রেনে করে হাঙ্গেরিয়ান সীমান্ত অতিক্রম করার পর ১০ বছর বয়সী আন্নামারিয়া বলে, ভাইবারে পাঠানো বার্তাগুলোর উত্তর না পেয়ে খারকিভে রেখে আসা তার বন্ধুদের নিয়ে সে খুব উদ্বিগ্ন।
সীমান্ত শহর জাহনির ট্রেন স্টেশনের ভেতর থেকে স্পষ্ট ইংরেজিতে আন্নামারিয়া বলে, ‘আমি সত্যিই তাদের মিস করি। কারণ আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি না। আমি সত্যিই উদ্বিগ্ন, কারণ আমি জানি না তারা কোথায় আছে।’
আন্নামারিয়া, যে শুধু তার মায়ের কাছে বেড়ে উঠেছে, সে দশ লাখেরও বেশি শিশুর মধ্যে একজন, যারা রাশিয়া প্রথম আক্রমণ করার পর থেকে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে গেছে, যাকে ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার বলেছেন ‘একটি ঐতিহাসিক প্রথম অন্ধকার ।’
এর মানে হল যে শিশুরা ২০ লাখেরও বেশি লোকের প্রায় অর্ধেককে প্রতিনিধিত্ব করে যারা যুদ্ধ থেকে পালিয়ে গেছে। এটি এমন একটি প্রস্থান, যাকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে দ্রুততম ক্রমবর্ধমান শরণার্থী সংকট বলে অভিহিত করেছে।
যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা বেশিরভাগই ইউক্রেনের পশ্চিম সীমান্তের দেশগুলোতে প্রবেশ করেছে। যেমন হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, রোমানিয়া এবং মলদোভা। বেশিরভাগই পোল্যান্ডে চলে গেছে। পোলিশ বর্ডার গার্ড এজেন্সি অনুসারে, পোল্যান্ডে ১৩ লাখ ৩০ হাজার শরণার্থী পাড়ি দিয়েছে।
মোলদোভার প্রধানমন্ত্রী নাটালিয়া গ্যাভ্রিলিয়া রবিবার সিএনএনকে বলেছেন, তার দেশে প্রতি আট শিশুর মধ্যে একজন শরণার্থী।
যেহেতু ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী ইউক্রেনীয় পুরুষদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি নেই৷ তাই উদ্বাস্তুদের বেশিরভাগই শিশু, নারী, শিশুদের মা এবং শিশুদের দাদি নানীরা, যারা নিরাপত্তার সন্ধানে দেশত্যাগ করেছেন।
এই নীতির উদ্দেশ্য হল ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশকারী রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পুরুষদের প্রয়োজন।
আন্নামারিয়ার নিজ শহর খারকিভ, ১৫ লাখ বাসিন্দা নিয়ে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এই শহরে রুশ বাহিনী ভারি বোমাবর্ষণ করেছে। গত সপ্তাহে শহরের সেন্ট্রাল ফ্রিডম স্কোয়ারে একটি সরকারি ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ছয়জন নিহত হওয়ার আগে রুশ সীমান্তের কাছে শহরের আবাসিক এলাকায় কয়েকদিন ধরে গোলাবর্ষণ করা হয়।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই হামলাকে ‘অকপট, ছদ্মবেশী সন্ত্রাসী হামলা’ বলে অভিহিত করেছেন।
আন্নামারিয়া, যদিও তার বয়স মাত্র ১০, সে এখন উদ্বাস্তু, তবে সে হলিউডের অভিনেত্রী হতে চায় এবং স্পষ্ট ইংরেজি বলতে পেরে সে গর্বিত৷
আন্নামারিয়া বলে, ‘আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন অভিনেত্রী হতে চাই এবং ইংরেজি আমার খুব প্রিয় ভাষা। বিশ্বের মানুষের একটি বড় অংশ এটি জানে এবং অন্য দেশে এটি বলাও খুব সহজ।’
আন্নামারিয়া ও তার মা ভিক্টোরিয়া, হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু এরপর তারা কোথায় যাবে তা জানে না। আন্নামারিয়া বলে, সে প্যারিসের ডিজনিল্যান্ড দেখতে চেয়েছিল।
যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে সে খারকিভে ফিরে যেতে চায় এবং রাশিয়ার সহিংস হামলায় বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়া তার বন্ধুদের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করতে চায়।
আন্নামারিয়া বলে, ‘যদি যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যায়, আমি সত্যিই বাড়ি যেতে চাই। কারণ সেখানে আমার বন্ধুরা আছে, আমার বাড়ির পিছনে সুন্দর পার্ক, সুপারমার্কেট, সেন্টার এবং খেলার মাঠ আছে। খারকিভ, এটা আমার হৃদয়ের টুকরার মত।’
আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: গোলাবর্ষণ এবং নাগরিকদের দেশত্যাগ অব্যাহত
রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা বাইডেনের
দেশে ফিরলেন ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র ২৮ নাবিক
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র ২৮ নাবিক বুধবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন।
একজন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রোমানিয়া থেকে ২৮ জন নাবিককে নিয়ে তার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
রোমানিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী জানান, নাবিকরা ইউক্রেন থেকে মলদোভা হয়ে গত ৬ মার্চ রোমানিয়ায় পৌঁছেন।
পড়ুন: আগামীকাল দেশে ফিরছেন আটকে পড়া ২৮ নাবিক
রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা বাইডেনের
রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইউক্রেনে ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রাসনের প্রতিশোধ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের এটি সর্বশেষ পদক্ষেপ।
তেল আমদানি বন্ধের ফলে মার্কিনিরাও সমস্যায় পড়বে বলে বাইডেন স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা রক্ষার জন্য মূল্য দিতে হচ্ছে আমাদের।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘পুতিন যে যুদ্ধে জড়িয়েছেন আমরা সেই যুদ্ধে ভর্তুকি দেয়ার অংশ হব না।’
নতুন পদক্ষেপকে ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান আগ্রাসনে অর্থায়নের বিরুদ্ধে একটি ‘শক্তিশালী ধাক্কা’ বলে অভিহিত করেছেন বাইডেন।
ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিন কখনই জয়ী হবে না বলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করেন।
এদিকে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীর সংখ্যা ২০ লাখে পৌঁছেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় গণঅভিবাসন শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি এক টুইটে বলেছেন, ‘আজ ইউক্রেন থেকে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীর সংখ্যা ২০ লাখে পৌঁছেছে।’
পড়ুন: ২০ লাখ শরণার্থী ইউক্রেন থেকে পালিয়েছে: জাতিসংঘ
নিরাপদ করিডোর দিয়ে ইউক্রেন ছাড়ছেন বেসামরিক নাগরিকেরা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: যেমন আছে নারী ও শিশুরা
যেকোন যুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়ে নারী ও শিশুরা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। রুশ বাহিনীর হামলার পর ইউক্রেনীয় নারী ও শিশুরা চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। এপি’র আলোকচিত্রীদের তোলা ছবিতে তা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।