অর্থনীতি
আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি অর্থনীতিতে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে: অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি বাংলাদেশের আমদানিনির্ভর অর্থনীতির ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সার, জ্বালানি ও গ্যাসের দাম অত্যধিক বৃদ্ধির কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনার জন্য বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশে উন্নীত করতে হয়েছিল।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করার সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, সংশোধিত বাজেটে এই বরাদ্দ জিডিপির ২ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে, যেখানে যুদ্ধপূর্ব বছরগুলোতে ভর্তুকি ও প্রণোদনার জন্য বরাদ্দ গড়ে জিডিপির ১ শতাংশে সীমাবদ্ধ ছিল।
তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি মুদ্রাস্ফীতি, সরকারি ব্যয়, পরিশোধের ভারসাম্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং বিনিময় হারে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে।
যুদ্ধ এবং যুদ্ধকেন্দ্রিক নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইন ব্যাহত হয়েছিল। সে সময় বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্য, সার ও জ্বালানির দাম অনেক বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলো; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, নজিরবিহীন মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রয়াসে ধীরে ধীরে পলিসি ইন্টারেস্ট রেট বাড়িয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিবেশের এই পরিবর্তনগুলো আমাদের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করছে। এটা লক্ষণীয় যে, যুদ্ধপূর্ব দশকে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ৫-৬ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।’
তিনি বলেন, যুদ্ধোত্তর বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির কারণে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার হারের অবমূল্যায়নের ফলে ২০২২ সালের আগস্টে গড় মুদ্রাস্ফীতি ৯ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হয়।
আরও পড়ুন: বাজেট অবাস্তব, এভাবে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয়: সিপিডি
ফলে চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা সম্ভব হবে না বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের জুনে ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২২ সালের জুনে ৪১ দমমিক ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে আসে এবং ধীরে ধীরে বর্তমানে এটি ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে।
একই সময়ে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে। ২০২২ সালের জুনে, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ছিল প্রতি ডলার ৯৩ টাকা ৫ পয়সা।
২০২৩ সালের ২৪ মে বিনিময় হার মার্কিন ডলার প্রতি ১০৮ টাকা ১ পয়সা ছিল। বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রার হার স্থিতিশীল করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাথমিক প্রচেষ্টার ফলে বাজারে সাময়িক তারল্য সংকট দেখা দেয়।
আরও পড়ুন: 'স্মার্ট বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ১২,৫০০ ডলার, দারিদ্র্যসীমার ৩ শতাংশের কম হবে'
বাংলাদেশের অর্থনীতি সংস্কারে ভূমিকা রাখবে আইএমএফের ঋণ
গত ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ‘রেসিলিয়েন্ট সাসটেইনেবল ফান্ড’ এর আওতায় ঋণ সহায়তার প্রথম কিস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। ডলারের হিসেবে যার পরিমাণ ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
আইএমএফ থেকে সাড়ে তিন বছর ধরে সাত কিস্তিতে যে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ পাচ্ছে, তার মূল্যও কম নয়।
কারণ, এ ঋণের বিপরীতে মোটা দাগে ৩৮টি শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। আর এই অর্থনীতি সংস্কারের শর্ত পূরণের মূল্য দিতে হতে পারে দেশের খেটে খাওয়া মানুষদের।
আইএমএফের মূল শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- আন্তর্জাতিক নিয়মের সঙ্গে মিল রেখে এদেশের রিজার্ভ ব্যবস্থা পুনর্গঠন করা, ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া, ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে একটি নির্দিষ্ট দাম ঠিক করা, সব সময় জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিলিয়ে সমন্বয় করা, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহের হার বৃদ্ধি ইত্যাদি।
এছাড়াও বিভিন্ন খাত থেকে উল্লেখযোগ্য হারে ভর্তুকি কমানো, ব্যাংকঋণের সুদের হার বৃদ্ধি, ডলারের একদর করাসহ আইএমএফ যে সকল সুপারিশ বাংলাদেশ সরকারকে বাস্তবায়ন করতে বলেছে; সেগুলার একটি সরাসরি প্রভাব দেশের সাধারণ জনগণের ওপর পড়ছে।
বাংলাদেশ মূলত জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি দিয়ে থাকে; যার পরিমাণ জিডিপির ০.৪ শতাংশ।
বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশ সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ প্রতিবছর প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার এবং গ্যাসে প্রায় ০.৪ বিলিয়ন ডলার।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ব্যাংকের আশা আইএমএফ ঋণের প্রথম কিস্তি আগামী মাসের মধ্যে আসবে: মুখপাত্র
বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোতে কয়েক দফায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। কারণ আইএম এফ এর শর্ত হলো অলাভজনক খাতগুলো থেকে ভর্তুকি তুলে নেওয়া।
মূলত গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি, বরং এসব পণ্যের মূল্যের বড় একটি অংশ আগে সরকার পরিশোধ করত, কিন্ত এখন সেটি ভোক্তা পর্যায়ে পরিশোধ করতে হচ্ছে।
ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিলে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ বাড়িয়ে দেবে। এতে পণ্য ও সেবা উৎপাদনের খরচ বেড়েছে, ফলে বেড়েছে পণ্যের দামও। যার ভুক্তভোগী হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ।
যদি ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে রাতারাতি এদেশে ডলারের দাম বেড়ে যাবে এবং ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হতে পারে।
তখন পণ্য আমদানিতে খরচ আরও বেড়ে যেতে পারে, যা মূল্যস্ফীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
এদিকে, ঋণপ্রাপ্তির প্রথম দুই বছরে কর-জিডিপি দশমিক ৫০ শতাংশ এবং তিন বছরে দশমিক ৭০ শতাংশ হারে বৃদ্ধির কথা বলেছে আইএমএফ।
দেশের রাজস্ব প্রশাসনের প্রবণতা হচ্ছে, যারা কর দেন তাদের ওপরই বাড়তি করের বোঝা চাপানো।
অর্থাৎ এদেশের কর-রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রটি বিস্তৃত হলেও আমাদের কর সংগ্রহ ব্যবস্থায় যথেষ্ট ফাঁক-ফোকর রয়েছে। এদেশের চাকরিজীবীরাই একমাত্র নিয়মিত কর দেয়।
যদি কর-রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য মাথাপিছু কর বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তবে সেটি হবে কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের ওপর একটি বাড়তি বোঝা।
সরকার ইতোমধ্যে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে; যার প্রভাব জিনিসপত্রের দামের ওপর পড়েছে। এগুলোতে সরকার আর ভর্তুকি দিতে রাজি নয়। জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে বর্তমানে যে জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক বাজারদরের কাছাকাছিই আছে।
আরও পড়ুন: সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি চূড়ান্ত করতে ঢাকায় আসছেন আইএমএফ’র ডিএমডি
২০২৬ সালের মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের মধ্যে ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে বলেছে আইএমএফ।
এদিকে আইএমএফকে বাংলাদেশ জানিয়েছে, ব্যাংকের পুনঃতফসিল করা ঋণকেও খেলাপি ঋণের হিসাবে আনা হচ্ছে, যা আগামী জুনের মধ্যে কার্যকর হবে।
এর বাইরে দ্রুততম সময়ে আয়কর আইন ও শুল্ক আইন প্রণয়ন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন, ফাইন্যান্স কোম্পানি আইনের সংশোধন এবং দেউলিয়া আইন প্রণয়নের শর্তও রয়েছে আইএমএফের।
শুধু ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩৪৩.৯৬ বিলিয়ন টাকা এবং এই খেলাপী ঋণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছে।
আইএমেফের এই শর্তটি বাস্তবায়ন করা গেলে দেশে ঋণ খেলাপির পরিমাণ অনেকটা কমে যাবে বলে আশা করা যায়।
এছাড়াও, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে তিন মাস পরপর জিডিপির তথ্য প্রকাশ, প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের হিসাবায়ন পদ্ধতি এবং আন্তর্জাতিক নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপ পদ্ধতির প্রণয়ন আগামী জুনের মধ্যেই বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
আইএমএফের ঋণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির যে সংস্কার হবে বলে মনে করা হচ্ছে, সেই সংস্কারের ঢেউয়ের প্রভাব শুধু নির্দিষ্ট কোনো একটি শ্রেণির মানুষের ওপরে না পড়ে, দেশের সকল মানুষের ওপর ন্যায়সঙ্গতভাবে পড়ুক; তবেই দেশের উন্নয়ন টেকসই হবে।
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
আরও পড়ুন: আইএমএফ’র ঋণ একটি চারিত্রিক সনদের মতো: প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মশিউর
বাংলাদেশ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি: আইএমএফ দল
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সফরকারী দল বলেছে, অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বর্ধনশীল।
রবিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য আইএমএফ মিশন প্রধান রাহুল আনন্দ বলেছেন:‘একটি চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক পটভূমিতে, বাংলাদেশ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি। তবে ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতির চাপ, বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতা এবং প্রধান বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর ধীরগতি বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং টাকার মানের ওপর প্রভাব ফেলবে।’
সাম্প্রতিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক খাতের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করতে আনন্দের নেতৃত্বে দলটি ২৫ এপ্রিল ঢাকায় পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জনে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ: আইএমএফ
প্রতিনিধি দলটি আইএমএফ-সমর্থিত কর্মসূচির অধীনে মূল প্রতিশ্রুতি পূরণের ব্যাপারেও অগ্রগতি দেখেছে।
আনন্দের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এটি আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ধিত ক্রেডিট সুবিধা (ইসিএফ) /বর্ধিত তহবিল সুবিধা (ইএফএফ) / স্থিতিস্থাপকতা এবং টেকসই সুবিধা (আরএসএফ) ব্যবস্থার প্রথম পর্যালোচনাতে মূল্যায়ন করা হবে, যা এই বছরের শেষের দিকে করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
সফরকালে আইএমএফ দল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং অন্যান্য সরকারি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
প্রতিনিধি দলটি বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি, দ্বিপক্ষীয় দাতা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছে।
আরও পড়ুন: বিবিএসের জিডিপি ও মুদ্রাস্ফীতির তথ্য নতুন পদ্ধতিতে হালনাগাদে সন্তুষ্ট আইএমএফ
আইএমএফ-বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক: সমন্বিত এক্সচেঞ্জ রেট ও প্রতিযোগিতামূলক ঋণের হারকে অগ্রাধিকার
শক্তিশালী কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ অর্থনীতির অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের অর্থনীতিতে স্বাবলম্বনের ভিত্তি কৃষি। এদেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ কৃষিনির্ভর। অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রসরতার জন্য আমাদের শক্তিশালী কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ জরুরি, কারণ কৃষির উন্নতি হলে তা শহর ও গ্রামীণ জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।
শুক্রবার বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি আয়োজিত 'বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রুপান্তর ও গ্রামীণ উন্নয়ন: প্রাক বাজেট বিশ্লেষণ ২০২৩-২৪’- শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, সভাপতিত্ব করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান।
মন্ত্রী বলেন, কৃষিতে সরকারের বিভিন্ন সহায়তা ও সুফলকে কাজে লাগিয়ে দেশের অনেক শিক্ষিত বেকার আজ স্বাবলম্বী, প্রতিষ্ঠিত ও সফল।
আরও পড়ুন: চট্রগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ভুল থাকলে সংশোধন: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
এসময় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বেকারত্ব দূর করতে চাকরির পিছনে না ছুটে কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনে তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি কৃষিতে ভুর্তকি বিষয়ে বলেন, কৃষিতে ভুর্তকি বিনিয়োগও বটে, তবে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে আহরিত টাকাই ভুর্তকি দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে প্রকৃত কৃষকই যেন সে ভুর্তকির সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
এসময় মন্ত্রী কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ ও কৃষি পণ্য বহুমুখীকরণে গুরুত্বারোপ করে বলেন, কৃষি শুধু আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সাহায্য করছে তাই নয়, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় আমাদের অপেক্ষাকৃত ক্ষতি কম হয়েছে।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ কৃষি উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন।
বর্তমান সরকারের আধুনিক ও লাগসই কৃষি ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়ছে, শস্য নিবিড়তা বাড়ছে বলেও জানান মন্ত্রী।
আরও পড়ুন: নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর চেয়েও বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সরকার: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে পার্বত্য চট্টগ্রাম: কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, পাহাড়ে একসময় শুধু জুম চাষ হতো। এখন সমতলের মতো অনেক ফসল চাষ করা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, পাহাড়ের বৃহৎ এলাকাজুড়ে কফি, কাজুবাদাম, গোলমরিচ, পেঁপে, আনারস, আম, ড্রাগন, মাল্টাসহ আট থেকে ১০টি অর্থকরী ফসলের চাষ অনেক সম্ভাবনাময়।
বিশেষ করে দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে কাজুবাদাম ও কফির বিশাল চাহিদা রয়েছে, দামও অনেক বেশি। সেজন্য এসব ফসলের চাষাবাদ ও প্রক্রিয়াজাত বাড়াতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি: পূর্ণ বাস্তবায়ন এখনও ‘অধরা’
বুধবার সকালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় কাজুবাদাম ও কফি বাগান পরিদর্শন এবং চাষিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এসব ফসলের চাষ আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারলে পাহাড়ের অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টে যাবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে ও বিশাল ভূমিকা রাখবে। পাহাড়ি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানের দর্শনীয় উন্নয়ন হবে। একইসঙ্গে, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, কফি ও কাজুবাদামের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রক্রিয়াজাতে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। এসব ফসলের চাষ জনপ্রিয় করতে কৃষক ও উদ্যোক্তাদেরকে আমরা বিনামূল্যে উন্নত জাতের চারা, প্রযুক্তি ও পরামর্শসেবা প্রদান করে যাচ্ছি।
এছাড়া এখন পর্যন্ত কফি ও কাজুবাদামের ১২ লাখ চারা বিনামূল্যে কৃষকদেরকে দেওয়া হয়েছে, আর এ বছর আরও ২০ লাখ চারা দেওয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, সারসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের ফলে দেশে ধানসহ সকল ফসলের উৎপাদন বেড়েছে। এর ফলে বিশ্ব মন্দা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও বর্তমানে দেশে খাদ্যের কোনো রকম সংকট নেই।
আরও পড়ুন: রাশিয়ায় আগামী বছর দেড় থেকে ২ লাখ টন আলু রপ্তানি হবে: কৃষিমন্ত্রী
আগামী বছরগুলোতে দেশে সারের দাম বাড়বে না: কৃষিমন্ত্রী
অর্থনীতি নিয়ে আত্মতুষ্টির কোনো অবকাশ নেই: পরিকল্পনামন্ত্রী
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বেশ স্থিতিশীল। কিন্তু, বৈশ্বিক ভূ-অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে আত্মতুষ্টির কোনো অবকাশ নেই।
রবিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) আয়োজিত প্রাক-বাজেট (২০২৩-২৪) আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি বক্তব্যে এসব কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং মার্কিন ফেডারেল ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধি আমাদের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছে। এসব কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি ও এলসি খোলার ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে এবং এ কারণেই আমাদের রিজার্ভ এখনও বেশ স্থিতিশীল রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত সন্তোষজনক নয় এবং আমাদের রাজস্ব আদায়ও কম, তাই কর নেট বাড়ানোর বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন: সহিংসতায় দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে না: পরিকল্পনামন্ত্রী
ট্যাক্স অটোমেশন, কর ব্যবস্থার সরলীকরণ এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, কৃষি, চামড়া, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে আরএমজি সেক্টরের মতো সুবিধা পাওয়া উচিত।
এম এ মান্নান তার বক্তব্যে এলডিসি উন্নীতকরণের পর প্রতিযোগিতামূলক হতে আমাদের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের বৈচিত্র্যের ওপর জোর দেন।
তাছাড়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও অস্থিতিশীলতা বিবেচনায় আগামী বাজেট অতি উচ্চাভিলাষী হবে না বলেও জানান তিনি।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সহ-সভাপতি এম এ মোমেন, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ব্যারিস্টার সমীর সাত্তার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি)-এর সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ)সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান এবং সেকো ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ প্রমুখ।
সেশনের বক্তারা কর ব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ এবং ডিজিটাইজেশন বা অটোমেশনের ওপর জোর দেন।
মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম প্রাক-বাজেট আলোচনায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: দেশের সংবিধান মানলে বিএনপি'র অবশ্যই নির্বাচনে আসা উচিত: পরিকল্পনামন্ত্রী
আ.লীগ দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ফেলেছে: বিএনপি মহাসচিব
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বার্থে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ফেলেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ধ্বংস করেছে, শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে এদেশের মানুষ যে সংবিধান রচনা করেছিলেন সেটাকে বারবার কাটাছেঁড়া করে অকার্যকর একটা সংবিধান করেছে। বাহাত্তরের সংবিধানের মূল ভিত্তি নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তারা যখনই সুযোগ পেয়েছে সংবিধানকে ধ্বংস করেছে।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি মহাসচিবের ত্রাণ বিতরণ
শুক্রবার (১০ মার্চ) দুপুরে সিলেট মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, এই সরকারের অপকীর্তি বলে শেষ করা যাবে না। তাদের একটাও ভালো কাজ নেই, তারা এই দেশের সমাজকে পুরোপুরি বিভক্ত করে ফেলেছে এবং একটা দূষিত সমাজে পরিণত করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে আজ ভয়াবহ নির্যাতন নিপীড়ন চলছে। আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে গত আগস্ট থেকে। এ পর্যন্ত ১৭ জন নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছেন। জীবিত সকল নেতাকর্মী মামলার আসামি।
সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকির সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখরুল আরও বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে লুট হচ্ছে। আদানির সঙ্গে চুক্তিতে দেড় লাখ কোটি টাকা লোকসান হবে। চুক্তির ফলে বিদ্যুতের দাম দ্বিগুণ হবে।
তিনি বলেন, ৭০ টাকা মোটা চাল, মিহি চাল ১৭০ টাকা, ডিমের দাম ৩/৪ গুন বেড়েছে। জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। অথচ সরকার মুখে বাগাড়ম্বর করছে। তারা নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে দিয়েছে।
সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম এ জাহিদ, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, এনামুল হক চৌধুরী, সিসিক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরীসহ অন্যান্য নেতারা।
আরও পড়ুন: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল হাসপাতালে ভর্তি
হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নয়: কর্মীদের প্রতি বিএনপি মহাসচিব
স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে অর্থনীতির প্রধান হাতিয়ার হতে পারে মেরিটাইম সেক্টর: নৌপ্রতিমন্ত্রী
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে অর্থনীতির প্রধান হাতিয়ার হতে পারে মেরিটাইম সেক্টর। এছাড়া মেরিটাইম সেক্টরকে পুরোপরি কাজে লাগাতে পারলে আমাদের রিজার্ভ দাঁড়াতো ২০০ বিলিয়ন ডলারে।
তিনি বলেন, মেরিটাইম সেক্টর অপার সম্ভাবনার এক বিরাট ক্ষেত্র। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার অনেকটা আসে মেরিটাইম সেক্টর থেকে। আমাদের মেরিন ক্যাডেট ও রেটিংসরা দেশি-বিদেশি জাহাজে চাকরি করে বিপুল সংখ্যাক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে এনএমআই স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে: নৌপ্রতিমন্ত্রী
শনিবার গাজীপুরের ছোটজয়নগরে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম একাডেমি পরিদর্শনকালে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেরিটাইম ভিশনকে অনুসরণ করেই আমরা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নে কাজ করে চলেছি। বঙ্গবন্ধুই টেরিটোরিয়াল জোন ও মেরিটাইম বাউন্ডরি অ্যাক্ট প্রণয়ন করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মেরিন ক্যাডেট তৈরির জন্য চট্টগ্রামে আমাদের মাত্র একটি মেরিন একাডমি ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নির্দেশনার ফলে রংপুর, পাবনা, সিলেট এবং বরিশালে আরও চারটি নতুন মেরিন একাডেমি নির্মিত হয়েছে। সেখান থেকে অধিক সংখ্যক ক্যাডেট প্রতিবছর আমাদের মেরিন বহরকে সমৃদ্ধ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে, যা আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
মন্ত্রী বলেন, জাহাজের রেটিং তৈরির জন্য চট্টগ্রামে আমাদের একটি মাত্র মেরিটাইম ইন্সটিটিউট ছিল। ইতোমধ্যে মাদারীপুরে একটি মেরিটাইম ইন্সটিটিউট নির্মাণ করা হয়েছে। কুড়িগ্রামে আরও একটি মেরিটাইম ইন্সটিটিউট নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এতে করে দেশি-বিদেশি জাহাজে রেটিংদের চাকরির ক্ষেত্র আরও বৃদ্ধি পাবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে আরও সহায়ক হবে।
খালিদ মাহমুদ বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির চলমান টালমাটাল অবস্থার মধ্যেও আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। কোভিড সময়কাল ও বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যেও আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে, যা বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ভিশন অনুযায়ী ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে প্রবেশ করবে।
২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
প্রতিমন্ত্রী একাডেমিতে ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকী, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম একাডেমির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমদাদুল হক চৌধুরী, একাডেমির কমান্ডেন্ট জাকী আহাদসহ, ফ্যাকাল্টি মেম্বার্স ও ক্যাডেটরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: সীমান্তে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে: নৌপ্রতিমন্ত্রী
মৃতপ্রায় বিএসসি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে: নৌপ্রতিমন্ত্রী
সমু্দ্র অর্থনীতি ও নিরাপত্তা জোরদারে কোস্টগার্ড আরও শক্তিশালী হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রূপকল্প ২০৩০ ও রূপকল্প ২০৪১-এর আধুনিকীকরণ পরিকল্পনা অনুযায়ী সমুদ্রে নীল অর্থনীতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোস্টগার্ডের জন্য জাহাজ, সরঞ্জাম ও জনবল বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার।
সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘গভীর সমুদ্রে টহল দেয়ার জন্য আরও চারটি ওপিভি, ৯টি প্রতিস্থাপনকারী জাহাজ, দুটি মেরিটাইম সংস্করণ হেলিকপ্টার সংগ্রহের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে আধুনিক ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুব শিগগিরই এই বাহিনীতে উন্নত প্রযুক্তির জাহাজ, মেরিটাইম সার্ভিলেন্স সিস্টেম, হোভারক্রাফট এবং হাইস্পিড বোট যুক্ত হতে যাচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, গভীর সাগরে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সঙ্গে ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কোস্টগার্ডকে দক্ষ ও শক্তিশালী করতে দেশের উপকূলীয় ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোস্টগার্ড স্টেশন ও ফাঁড়িতে কোস্টাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন আকারের জাহাজ তৈরি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কোস্টগার্ড এলাকায় আবাসন, ব্যারাক ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
বিসিজি বেস অগ্রযাত্রা' নামে পটুয়াখালীতে নিজস্ব প্রশিক্ষণ ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে কোস্টগার্ডের জনবলের প্রশিক্ষণ সক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য অভ্যন্তরীণ টহল জাহাজ, ভাসমান ক্রেন, টাগ বোট এবং বিভিন্ন ধরনের হাইস্পিড বোট তৈরি করা হয়েছে।
‘সম্প্রতি বাহিনীটির জন্য যুদ্ধের ইউনিফর্ম চালু করা হয়েছে, যা আমার বিশ্বাস সকল সদস্যদের মনোবল বাড়াতে সাহায্য করবে।’
আরও পড়ুন: গ্রামের মানুষকে চাষাবাদের কাজে সাহায্য করুন: আনসার ও ভিডিপি’র সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, এই বাহিনীর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের সক্ষমতা বাড়াতে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়ায় একটি ডকইয়ার্ড নির্মাণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জলসীমায় সামুদ্রিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কোস্টগার্ড বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এই বাহিনীর মূলমন্ত্র হলো ‘গার্ডিয়ানস অ্যাট দ্য সি’। এর অর্থ সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় জনগণের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ইতোমধ্যে দেশের উপকূলীয় এলাকার নিরীহ-নিপীড়িত মানুষের কাছে অন্যায় ও অপকর্ম প্রতিরোধ করে নিজেদেরকে প্রকৃত বন্ধু হিসেবে দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্য এখন দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলিষ্ঠ।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ঝুঁকির মধ্যেই কোস্টগার্ড সদস্যরা দেশের স্বার্থে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, এই বাহিনী সমুদ্র বন্দরের নিরাপত্তা, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, মানব পাচার, অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরা, সমুদ্র ও নদী দূষণ ও জলদস্যুতা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী কোস্টগার্ড সদস্যদের সাহসিকতা ও বিশেষ কৃতিত্বের জন্য পদক তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে কোস্টগার্ডের কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
তিনি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন এবং একটি গাছের চারা রোপণ করেন।
আরও পড়ুন: আরও বেশি সংখ্যক নারীকে বিজ্ঞানে উৎকর্ষতা লাভের সুযোগ দিন: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
অনির্বাচিত সরকারের দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসুন: প্রধানমন্ত্রী
লিঙ্গ সমতা শিক্ষায় তরুণীদের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে শিক্ষায় তরুণীদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা লিঙ্গ সমতার কেন্দ্রবিন্দু। নারী ও মেয়েদের বিশ্ব অর্থনীতিতে শেখার, উদ্ভাবন, প্রতিযোগিতা এবং সফল হওয়ার অধিকার রয়েছে।