চাল
আ’লীগের লুটেরাদের কারসাজিতে চালের দাম বাড়ছে: বিএনপি
ক্ষমতাসীন দলের ‘লুটেরাদের কারসাজির’ কারণে ফের চালের দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘চালের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। বোরো ধানের ভরা মৌসুমে চালের দাম কমে আসার কথা। কিন্তু আবারও দাম বাড়ছে। তারা কারসাজি করছে।’
বুধবার এক সেমিনারে ফখরুল বলেন, আওয়ামী চোর-লুটেরাদের ষড়যন্ত্রে দাম বাড়ছে। তাদের লক্ষ্য সাধারণ মানুষের পকেট কেটে টাকা নিয়ে যাওয়া।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশের কৃষি বিপ্লব: শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার নীতি ও কর্মসূচি’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল।
সেমিনারে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি কৃষির উন্নয়নে জিয়ার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
দেশের ইতিহাস থেকে জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলার জন্য ক্ষমতাসীন দলের নেতারা প্রায়ই জিয়াউর রহমানকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী গতকাল (মঙ্গলবার) বলেছেন, জিয়া একজন বিশ্বাসঘাতক ও খুনি। আমি জানি না তিনি (মন্ত্রী) সেই সময়ে জন্মেছিলেন কি না।’
বিএনপি নেতা আরও বলেন, তথ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে তার সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়। আমরা কখনই তাদের নেতাদের অবমূল্যায়ন করি না। জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া আমাদের এই সংস্কৃতি শিখিয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করেন বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সব সময় বিএনপি ও জাতীয় নেতাদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। ওবায়দুল কাদের (আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক) গতকাল (মঙ্গলবার) যেভাবে হুমকি দিয়েছেন, এটা রাজনীতির ভাষা নয় এবং এটা গণতন্ত্রের ভাষা নয়।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সারাদেশের কৃষকদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামতে কৃষকদল নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।
পড়ুন: জনকল্যাণকর রাজনীতির পথে ফিরে আসুন: বিএনপিকে কাদের
গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ
চাল প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা যাবে না: খাদ্যমন্ত্রী
খোলা বাজার থেকে চাল কিনে তা প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা যাবে না বলে জানিয়েছন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
বুধবার (০১ জুন) সচিবালয়ে চালের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় দেশের বাজারে চালের আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য ৬টি বৃহৎ শিল্পগ্রুপ স্কয়ার, প্রাণ, সিটি, আকিজ, বসুন্ধরা ও এসিআইকে দায়ী করেন তিনি।
এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা চিন্তা করছি যে এই সার্কুলার জারি করা যায় কি না যারা প্যাকেট করে চাল বিক্রি করবে তারা দেশের বাজার থেকে কিনতে পারবে না। তারা ৬৭ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে আমদানি করে প্যাকেট করবে। এটা আলোচনা চলছে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটা এখনও ফাইনাল হয়নি। তাদের যদি নিজস্ব মিল থাকে তারা সেখানে প্যাকেট করতে পারবে। কিন্তু বাজার থেকে চাল সংগ্রহ করে প্যাকেট করতে দেব না। এটা বিভিন্ন জায়গায় আমাদের ম্যাসেজটা, যেখানে তারা প্যাকেট করে সেখানে দেয়া হয়েছে। এরা ছাড়া তো কেউ প্যাকেট করে না। খুচরা কিনে তারা প্যাকেট করতে পারবে না। মিল মালিকরা নিজস্ব প্রডাকশন বিক্রি করতে পারবে।’
তিনি বলেন, নিজস্ব মিল থাকলেও সে তার লাইসেন্সে যে মজুদের বিধান আছে তার বাহিরে মজুদ করতে পারবে না। মিলের যে পাক্ষিক ছাটাই ক্ষমতা তার তিনগুন সে মজুদ করতে পারবে। এটা হলো রোলিং। এর বাহিরে থাকলে সেটা অবৈধ মজুদ। এটাই আমরা স্কয়ারে পেয়েছি, ৫ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত। এর বাজার মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা।’
সরকারকে করপোরেট ফাঁদে ফেলার চেষ্টা হয়েছিলো বলেও অভিযোগ করেন খাদ্যমন্ত্রী। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সরকার কোনো ফাঁদে পড়েনি। ফাঁদে ফেলতে চেষ্টা করছিল আমরা রিকভার করছি।’
এর আগে চালের দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা এবং সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সোমবার চাল মজুতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেউ অবৈধভাবে চাল মজুত করলে ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
অভিযোগ আছে, মিলাররা ধান-চাল মজুত রাখছেন। একইভাবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও মেমোরেন্ডাম অ্যাসোসিয়েশনের নীতি অনুমোদনের বাইরে গিয়ে ধান-চালের ব্যবসায় নেমেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে খাদ্য অধিদপ্তর।
পড়ুন: ধান মজুতের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমেছে ব্যবসায়ীরা: খাদ্যমন্ত্রী
অভিযান চালিয়ে দেশের দুই স্থানে স্কয়ার ও আকিজগ্রুপের অবৈধ চাল মজুদের তথ্য পাওয়ার কথাও জানান খাদ্যমন্ত্রী।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র বলেন, ‘বিভিন্ন জেলায় আমরা অভিযান চালাচ্ছি। দিনাজপুরে স্কয়ারের একটি গোডাউনে একটি মিলও আছে, সেই মিলের যে পাক্ষিক ক্ষমতা দেয়া আছে তার তিনগুন সর্বোচ্চ তারা মজুদ করতে পারবে। একটি বাজারে যাবে একটি উৎপাদনে যাবে আরেকটি মজুদ থাকবে। সেটার পরেও প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন প্রায় উদ্বৃত্ত ছিল। এটাকে সিলগালা করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
ধারাবাহিকভাবে চালের অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার কথা জানান খাদ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক চালের বাজারে, আড়তে এবং মিলে এমনটি গ্রামাঞ্চলেও কৃষক ছাড়া কেউ যদি ধান কিনে মজুদ রাখে সেখানেও অভিযান চালানো হচ্ছে। এটা ধারাবাহিকভাবে চলবে।
পড়ুন: চাল মজুদকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
চাল মজুদকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
ফসল কাটার মৌসুমে চালের দামের ঊর্ধ্বগতি রোধে সোমবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে এই নির্দেশনা দেয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, বৈঠকে দেশের ভোজ্যতেল মজুদকারীদের বিরুদ্ধে চালানো সাম্প্রতিক অভিযানের মতো অবৈধ চাল মজুদকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘যদি কেউ অননুমোদিতভাবে ব্যবসা এবং চাল মজুদ করে থাকে তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আনোয়ারুল বলেন, ভরা মৌসুমে কেন চালের দাম বেড়েছে এবং চাল মজুদ করা হচ্ছে কি না এবং কেউ অবৈধভাবে চালের ব্যবসায় জড়িত কি না তা জানতে বাজার সার্ভে করার পর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এমন তথ্য রয়েছে যে কিছু (ব্যবসায়ী বা কোম্পানি) সমিতির স্মারকলিপি ভেঙে চালের ব্যবসায় জড়িত হতে পারে। তাই, বৈঠকে চালের বাজার জোরালোভাবে পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করতে বলা হয়েছে।
চালের দাম বাড়ার পেছনে কারণ জানতে বাণিজ্যমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, বাণিজ্য সচিব, খাদ্য সচিব এবং কৃষি সচিবকে শিগগিরিই মার্কেট সার্ভে পরিচালনার জন্য বৈঠকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: উন্নয়ন প্রকল্পে পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
রেলওয়ে এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠান: প্রধানমন্ত্রী
সিলেটে বন্যার্তদের জন্য ১৯৯ আশ্রয়কেন্দ্র
সিলেটে বন্যা কবলিতদের জন্য ১৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান।
তিনি বলেন, বন্যায় জেলায় ১৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে কোম্পানীগঞ্জের পাঁচটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। আর কেউ এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে আসেনি।
তিনি বলেন, এসব আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এছাড়া ইউএনওদের সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখার নির্দেশনা দেয়া আছে।
জেলা প্রশাসক জানান, বন্যা কবলিতদের জন্য আরেক দফায় ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ৩০০০ প্যাকেট শুকানো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর আগে ১২৯ মেট্রিক টন চাল ও ১০০০ শুকানো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে নদনদীর পানি বিপদসীমার ওপরে
এছাড়া সিলেট সদর উপজেলার সাত ইউনিয়নে পাহাড়ী ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দুঃস্থ ও অসহায় পরিবারের মাঝে বিতরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৩ হাজার ব্যাগ শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সিলেট জেলায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ও তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণের জন্য সিলেট জেলা প্রশাসকের অনুকূলে ১শ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
এদিকে, বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে বুধবার সিলেট-১ আসনের সাংসদ ড. একে আব্দুল মোমেনের সিলেট যাওয়ার কথা রয়েছে। এসময় তিনি বিভিন্ন এলাকা পরির্দশন করবেন ও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: বরিশালে ৫ নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতেও সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে।
পাউবো বলছে, ২০০৪ সালের পর নদীর পানি কখনও এতোটা বাড়েনি। ১৮ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বড় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। উজানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন পাউবো কর্মকর্তারা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছেন, ২৩ জুন পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। তবে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে।
আরও পড়ুন: টানা বর্ষণে সিলেট-সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি
নতুন ফসল উঠলেও ভুল নীতির কারণে চালের দাম বাড়ছে: বিএনপি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, সরকারের ভুল নীতি ও ক্ষমতাসীন দলের নোংরা খেলায় ভরা বোরো ধান কাটার মৌসুমেও ধানের দাম বাড়ছে।
বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবার বিএনপির নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার দেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন ও কৃষকদের উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
ফখরুল বলেন, ‘এই ভরা মৌসুমে ধানের দাম বাড়ার কথা নয়। বোরো কাটা শুরু হওয়ায় দাম কমার সময় এসেছে। তবে বেড়েছে প্রতিটি জাতের চালের দাম। তার মানে পুরো পরিকল্পনায় কিছু সমস্যা আছে।’
তিনি আরও বলেন, এই ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত এমন ব্যক্তিদের কাছে সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছে। ‘খাদ্য বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ফলস্বরূপ, মানুষের সেবা করার চেয়ে ব্যবসা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।’
আরও পড়ুন: বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী হবেন খালেদা জিয়া: মোশাররফ
এই বিএনপি নেতা বলেন, বড় কৃষক ও ধান ব্যবসায়ীরা ধান মজুদ করে কয়েকদিন পর বেশি দামে বিক্রি করে। কারণ আগামী দিনে ধানের দাম বাড়বে এবং তাদের লাভও বাড়বে। এটা তাদের (ক্ষমতাসীন দলের) কৌশল।’
বিএনপি সরকারের কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা ফখরুল বলেন, আ.লীগ সরকারের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে সুচিন্তিত পরিকল্পনা নেই।
তিনি বলেন,‘প্রান্তিক কৃষকেরা এখন রিকশা ও ভ্যান চালায়, অনেক মধ্যম চাষি কৃষিকাজ ছেড়ে দিচ্ছে; কারণ কৃষি এখন একটি অলাভজনক পেশা। তাই খাদ্যশস্যের চাষ কমছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, বর্তমান সরকার শুধু সেসব কাজ করে যেখানে তাদের নিজস্ব মুনাফা ও কোটি কোটি টাকা কমিশন থাকে। তাই তারা হাওর এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে না।
হাওর অঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, উজান থেকে আসা পানির কারণে বন্যা হওয়া অনেক পুরনো সমস্যা। ‘বাঁধ নির্মাণ বা জলাধার নির্মাণ করে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। এটি কৃষকদের বছরে দুই-তিনবার ফসল ফলাতেও সাহায্য করবে। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো কর্মসূচি বা পরিকল্পনা নেয়া হয়নি।’
হাওরাঞ্চলে বাঁধ নির্মাণের নামে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ব্যাপক দুর্নীতি করেছে বলেও অভিযোগ করেন এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, হাওর এলাকায় কিছু বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু সেগুলো এতই নাজুক ও দুর্বল যে ২৪ ঘণ্টার পানির চাপ ধরে রাখতে পারে না।
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পর্যবেক্ষণের বরাত দিয়ে ফখরুল বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জের বিশাল এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ বছর প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে।
কৃষকদলের পক্ষ থেকে তিনি হাওরে সিমেন্ট ব্লক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সুদমুক্ত ঋণ প্রদান, ঋণের সুদ প্রত্যাহার এবং স্বাভাবিক অবস্থা না আসা পর্যন্ত ঋণের কিস্তি স্থগিত করাসহ আট দফা দাবি জানান। হাওর এলাকায় বীমা এবং বাঁধ নির্মাণ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা।
আরও পড়ুন: তীব্র সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশ: বিএনপি
এরকম কতজন পি কে হালদার আছে, জানতে চাই: ফখরুল
বাজারে মোটা চালের দাম বাড়েনি: খাদ্যমন্ত্রী
বাজারে মোটা চালের দাম বাড়েনি বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
তিনি বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দাম কমতির দিকে। মোটা চালের অধিকাংশ নন হিউম্যান কনজামশনে চলে যাওয়ায় এবং মানুষের খাদ্যাভাস পরিবর্তনের কারণে সরু চালের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। এই কারণে সরু চালের দাম কিছুটা বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির ভার্চুয়াল সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: কোনভাবেই চালের বাজার অস্থিতিশীল করতে দেয়া হবে না: খাদ্যমন্ত্রী
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আসন্ন বোরো সংগ্রহ ২০২২ মৌসুমে ছয় দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন ধান, ১১ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, শূন্য দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংগ্রহ মৌসুম ২৮ এপ্রিল থেকে শুরু ৩১ আগস্ট ২০২২ পর্যন্ত চলবে। প্রতি কেজি বোরো ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ধান ২৭ টাকা, সিদ্ধ চাল ৪০ টাকা এবং আতপ চাল ৩৯ টাকা।
এছাড়া ২০২১ সালে ধান চালের দাম একই ছিল বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন: পরনির্ভরতা কমাতে কৃষি প্রণোদনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে: খাদ্যমন্ত্রী
এ সময় তিনি সরু ধানের উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে সভায় উপস্থিত কৃষিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সভায় কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, খাদ্য সচিব ও মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিব মতামত তুলে ধরেন।
রমজান উপলক্ষ্যে চালের দাম বাড়বে না: খাদ্যসচিব
খাদ্যসচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেছে, রমজান উপলক্ষ্যে নিশ্চয়তা দিতে পারি, চালের দাম বাড়বে না। কারণ খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি মার্চ মাস থেকে শুরু হয়ে যাবে। মার্চ মাস থেকে ৫০ লাখ পরিবার ৩০ কেজি করে চাল পাবে।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে খাদ্য সচিবের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, এরপরও যদি আমরা দাম বৃদ্ধির অবস্থা দেখি তাহলে আমরা ওএমএস আরও বাড়িয়ে দেবো। খাদ্যের বিষয়ে সরকারের কার্পণ্য নেই৷ খোলা বাজারে বিক্রয়টা আরও বাড়িয়ে দেবো আমরা। আমরা কৃষকদের ন্যায্য মূল্য দিতে চাই। আপনারা জানেন যদি প্রয়োজন হয় জনস্বার্থে বা ভোক্তাদের স্বার্থে খুশি করতে সরকার সরু চাল আমদানি করবে।
আরও পড়ুন: আবারও বাড়ল সয়াবিন তেলের দাম
খাদ্য সচিব বলেন, আমাদের অনেক রাইসমিল হয়ে গেছে। আমাদের উৎপাদনও বেশি, রাইসমিল বেশি। এখন একজন দরিদ্র ভোক্তার ঘরেও পাঁচ কেজি চাল থাকে। এছাড়া কৃষক ও মিলারদের কাছেও ধান চাল রয়েছে। আমাদের গুদামেও পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। উৎপাদনও ব্রেকইভেন পর্যায়ে। আমাদের উদ্বৃত উৎপাদন হয়েছে। এগুলো যদি কৃষকের ঘরে ও মিলারদের কাছে থাকে তাহলে বাজারে কোথা থেকে আসবে। এজন্য ধানের দাম বেশি। ধানের দাম বেশি বিধায় চালের দাম বেশি।
চালের দাম বাড়বে না বলতে মোটা চালকে বোঝাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোক্তার সাচ্ছন্দ্যের জন্য সরু চাল আমদানি করা হবে। তবে এখনই আমদানিতে যাচ্ছি না। কারণ কে বা কারা প্রমাণ করতে চাচ্ছে যে, দেশে এতো খাদ্য উদ্বৃত্তের কথা বলা হচ্ছে তারপরও আমদানি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক খাদ্য সংস্থা ( ইউএসডি) বলেছে, আমাদের উৎপাদন ভালো, তারপরও আমদানি করতে হবে।
তিনি বলেন, আমদানি না করে যদি আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারি তাহলে এটা প্রমাণ করতে পারলাম যে আমরা খাদ্যে স্বয়সম্পূর্ণ। আমাদের বর্তমানে ২০ লাখ টনের বেশি খাদ্য মজুদ রয়েছে। মিলাররা আমাদের কাছে চাল বিক্রি করতে চাচ্ছে। তারমানে মোটা চালের দাম আর বাড়বে না। আগামী এপ্রিলের মাঝামাঝি বোরো চাল বাজারে চলে আসবে। ফলে চালের দাম বাড়ার কোন আশঙ্কা নেই।
আরও পড়ুন: কোনভাবেই চালের বাজার অস্থিতিশীল করতে দেয়া হবে না: খাদ্যমন্ত্রী
এছাড়া ত্রাণ মন্ত্রণালয় রোজার মাসে ও এর আগে থেকে একটি প্রোগ্রাম শুরু করবে। গত বছর সরকার ৩৫ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে দিয়েছিল সেটা এ বছর এক কোটি পরিবার কে খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। সরকার চাচ্ছে নিম্ন আয় বা দরিদ্রদের কোনভাবে যাতে সমস্যা না হয়।
উল্লেখ্য, বর্তমানে মোট ১৯ লাখ ৬৩ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে ১৭ লাখ ১৫ হাজার টনের বেশি চাল ও গম দুই লাখ ৪৮ হাজার টন।
কোনভাবেই চালের বাজার অস্থিতিশীল করতে দেয়া হবে না: খাদ্যমন্ত্রী
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। ক্ষুধা মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি মন্তব্য করে তিনি বলেন, কোনভাবেই চালের বাজার অস্থিতিশীল করতে দেয়া হবে না। যারা ভাবছেন চাল ধরে রেখে বেশি মুনাফা করবেন তা হতে দেয়া হবে না। প্রয়োজন হলে চাল আমদানি করা হবে। আমাদের ফাইল রেডি আছে।
মঙ্গলবার বিকালে রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে 'অবৈধ মজুতদারি রোধে করণীয় ও বাজার তদারকি সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায়' ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন ।
মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, গত বছর আম্ফানে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তখন চালের দাম বাড়েনি। অথচ ভালো ফলন এবং আমনের ভরা মৌসুমে দাম বাড়ছে। আজ থেকে চালের দাম যেন না বাড়ে তা নিশ্চিত করতে আপনাদের ভূমিকা দেখতে চাই। শুধু মুনাফার উদ্দেশ্যে ব্যবসা না করে ভোক্তাদের স্বস্তি দিন।
খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ফুড গ্রেইন লাইসেন্স নিয়ে কেউ ধান চাল মজুদ করে রাখছেন কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। মিল মালিকরা কি পরিমাণ ধান কিনছেন, স্টক করছেন এবং ক্রাসিং করছেন তার হিসাব রাখতে হবে। মন্ত্রণালয়কে তা অবহিত করতে হবে। গাফিলতি প্রতীয়মান হলে কঠোর ব্যবস্থা নেব।
কৃষক ধান মজুত করেন না। মিল মালিকরা জানেন কারা ধান মজুত করেন। কারণ মজুত করা ধান মিল মালিকরাই কিনেন। মিল মালিকরা আমাদের প্রতিপক্ষ নয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তাদের দোষ দিতে চাইনা। তবে তারা যদি বেশি লাভের চিন্তা করেন তাহলে দেশের মানুষকে বাঁচানো যাবে না।
আরও পড়ুন: চালের উৎপাদন বাড়াতে রোডম্যাপ প্রণয়ন করছে সরকার
এ সময় তিনি চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা চান।
মিল মালিকদের পক্ষে আব্দুল হান্নান বলেন, দেশে চিকন চালের চাহিদা বেশি। এ চালের দাম কমানো যাবে না। কারণ পার্শ্ববর্তী দেশেও চিকন চালের দাম বেশি। এসময় বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরবরাহ বাড়াতে চাল আমদানির অনুরোধ জানান।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল ওয়াহব ভূঞার সভাপতিত্বে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোসাম্মৎ নাজমানারা খানুম, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, রংপুরের জেলা প্রশাসক মো. আসিব আহসান, পুলিশ সুপার মো. ফেরদৌস আলী চৌধুরী এবং আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রংপুর আব্দুস সালাম বক্তব্য দেন।
মতবিনিময় সভায় রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক, খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা, মিল মালিক, ব্যবসায়ী ও গণমাধ্যম প্রতিনিধি অংশ নেন।
আরও পড়ুন: দ্রুত চালের উৎপাদন বাড়াতে রোডম্যাপ হচ্ছে: কৃষিমন্ত্রী
চালের উৎপাদন বাড়াতে রোডম্যাপ প্রণয়ন করছে সরকার
চালের বৃদ্ধি পাওয়া চাহিদা পূরণে দুই বছরে এর উৎপাদন বাড়াতে সরকার রোডম্যাপ প্রণয়ন করছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ‘এ বছর আউশ, আমন ও বোরো ধানের রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। সরকারি মজুদও সর্বোচ্চ। এরপরও চালের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে।’
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ধানের উৎপাদন বাড়াতে অতি উচ্চফলনশীল ইনব্রিড ও সুপার হাইব্রিড জাতের আবাদ বৃদ্ধি সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: বিশ্বমানের প্যাকিং হাউজ ও ল্যাব স্থাপনে কাজ চলছে: কৃষিমন্ত্রী
তিনি বলেন, চালের মূল্য নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে দ্রুত উচ্চ ফলনশীল ইনব্রিড ও সুপার হাইব্রিড জাতের চাষ করে উৎপাদন ত্বরান্বিত করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে। উৎপাদন বাড়াতে নতুন উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতগুলোকে অবিলম্বে মাঠে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার আগামী মৌসুমে আউশ, আমন ও বোরো ধানের উৎপাদন বাড়াতে এবং পাহাড়, হাওর ও প্রতিকূল এলাকায় উৎপাদন সম্প্রসারণের জন্য সময়-নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুন: কৃষিতে আজীবন সম্মাননা পেলেন কৃষিমন্ত্রী
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে চালের চাহিদা, উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতার বিষয়ে আরও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান তৈরি করার আহ্বান জানান কৃষিমন্ত্রী।
আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে সম্প্রতি চালের দাম কিছুটা অস্থিতিশীল ও ঊর্ধ্বমুখী বলেও জানান তিনি।
দ্রুত চালের উৎপাদন বাড়াতে রোডম্যাপ হচ্ছে: কৃষিমন্ত্রী
চালের চাহিদার অনুপাতে দ্রুত উৎপাদন বাড়াতে রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।তিনি বলেন, দেশে এই আমনের মৌসুমে নবান্নের সময়ও চালের দাম বাড়ছে। এবছর আউশ, বোরো ও আমনে রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। সরকারি মজুদও সর্বকালের সর্বোচ্চ, তারপরও চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায়, চালের মূল্য নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হলে দ্রুত চালের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এটি করতে হলে অতি উচ্চফলনশীল ইনব্রিড ও সুপার হাইব্রিড জাতের আবাদ বাড়াতে হবে। সেলক্ষ্যে রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হচ্ছে যাতে করে ১-২ বছরের মধ্যে উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি করা যায়।
আরও পড়ুন: বিশ্বমানের প্যাকিং হাউজ ও ল্যাব স্থাপনে কাজ চলছে: কৃষিমন্ত্রীবৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ধানের উৎপাদন বাড়াতে অতি উচ্চফলনশীল ইনব্রিড ও সুপার হাইব্রিড জাতের আবাদ বৃদ্ধি সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।মন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষি জমি ক্রমশ কমছে। চালের উৎপাদন বাড়াতে গেলে নতুন উদ্ভাবিত উচ্চ উৎপাদনশীল জাতগুলোকে দ্রুত মাঠে নিয়ে যেতে হবে এবং সুপার হাইব্রিডের চাষ বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া, পাহাড়, হাওর, উপকূলসহ প্রতিকূল এলাকায় ধানের চাষ সম্প্রসারণ করতে হবে। সেজন্য, আগামী বোরো, আউশ, আমন মৌসুমে ধানের উৎপাদন বাড়াতে সময়াবদ্ধ সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। নতুন উদ্ভাবিত অতি উচ্চ ফলনশীল ব্রি ৮৯ ও ব্রি ৯২ বোরো জাতের ধানের উৎপাদন প্রতি শতাংশে প্রায় এক মণ। এটিকে দ্রুত মাঠে নিতে এবার বোরোতে ব্রিধান ৮৯ ও ৯২ যেসব কৃষকেরা চাষ করবে, তাদের লিস্ট করে উৎপাদিত ধানের সবটুকু বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বীজ হিসেবে কিনে নেয়া হবে। যাতে বীজ সংকট না হয়। চাষিদের নিকট জনপ্রিয় করতে বিনামূল্যে বীজ দেয়া হবে, সারের দাম আরও কমিয়ে দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: যে কোনো মূল্যে আমাদেরকে চালের উৎপাদন বাড়াতে হবে: কৃষিমন্ত্রীচালের চাহিদার সঠিক পরিসংখ্যানের উপর গুরু্ত্বারোপ করে মন্ত্রী বলেন, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দেশে চালের চাহিদা, উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা নিয়ে পরিসংখ্যানগত অসঙ্গতি দূর করতে হবে। তিনি বিবিএস ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে এ বিষয়ে আরও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যানের আহ্বান জানান।চালের দাম বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি দেশে চালের দাম কিছুটা অস্থিতিশীল ও ঊর্ধ্বমুখী। আন্তর্জাতিক বাজারেও খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যে গমের দাম টনপ্রতি ২৩০-২৮০ ডলারের মধ্যে ছিল, তা বেড়ে এখন ৪৫০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে গম আমদানি হয়েছিল ৪৮ লাখ টন, আর এ অর্থবছরে জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানি হয়েছে মাত্র ১৬ লাখ টন। দাম বাড়ার কারণে গম আমদানি কম হচ্ছে। ফলে আটা,ময়দার দাম চালের চেয়ে বেশি, অথচ সবসময়ই আটার দাম চালের চেয়ে কম থাকে। এছাড়া, দেশে ১০ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। প্রতিবছর ২২-২৪ লাখ নতুন মুখ যোগ হচ্ছে। প্রাণি-মৎস্যের খাদ্য হিসেবেও চালের কিছু ব্যবহার হচ্ছে। মানুষের আয় এবং জীবনযাত্রার মানও বেড়েছে। এসব মিলে চালের চাহিদা ও ভোগ দিন দিন বাড়ছে। ফলে, চালের দাম কিছুটা বেশি, তবে এই মুহুর্তে দেশে খাদ্যের কোন সংকট নেই।সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সংস্থাপ্রধান ও বেসরকারি সীড এসোসিয়েশনের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বেসরকারি সীড এসোসিয়েশনের প্রতিনিধিবৃন্দ হাইব্রিড বীজের ক্ষেত্রে তাদের মজুদ ও সক্ষমতা তুলে ধরেন।