জলবায়ু পরিবর্তন
জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে ঢাকা ত্যাগ প্রধানমন্ত্রীর
করোনা মহামারি শুরুর পর এই প্রথম বিদেশ সফরে গেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে দুই সপ্তাহের সরকারি সফরে শুক্রবার ঢাকা ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সফরের শুরুতে তিনি ফিনল্যান্ডে অবস্থান করবেন।
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি বিশেষ ফ্লাইট সকাল ৯টা ১০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
বিমানটি স্থানীয় সময় বিকাল ৪টার সময় হেলসিঙ্কি-ভান্তা বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে।
২০২০ সালের মার্চে কোভিড-১৯ মহামারি প্রাদুর্ভাবের পর এটি প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বিদেশ সফর। তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রধান হিসেবে ১৮তম বারের মতো জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দেবেন এবং ২৪ সেপ্টেম্বর অধিবেশনের সাধারণ বিতর্কে ভাষণ দেবেন।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে শুক্রবার ঢাকা ছাড়ছেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ১৯ সেপ্টেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে বিকাল ৪টায় (হেলসিঙ্কি সময়) হেলসিঙ্কি থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। ফ্লাইটটি নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সন্ধ্যা ৬টায় (স্থানীয় সময়) অবতরণের কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ১৯-২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিউইয়র্কের হোটেল লোটে প্যালেসে অবস্থান করবেন।
২০ সেপ্টেম্বর (সোমবার) নিউইর্য়ক সময় সকাল ৯টায় রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক একটি ছোট দলের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি একটি গাছ লাগাবেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তার সম্মানে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের উত্তর লনে ইউএন গার্ডেনে একটি বেঞ্চ উৎসর্গ করবেন।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় শেখ হাসিনা ইইউ কাউন্সিলের সভাপতি চার্লস মিশেলের সঙ্গে এবং পৌনে ৩টায় বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী মিয়া আমোর মোটলির সঙ্গে পৃথক বৈঠকে যোগ দেবেন। এছাড়া তিনি বিকাল ৪টায় সাসটেইনবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল ইভেন্টে যোগ দেবেন।
২১ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ বিতর্কের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দেবেন। বিকালে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডরিক্সেনের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন এবং বিকাল ৪টায় ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের ব্যবসায়িক গোলটেবিলে অংশ নেবেন।
২২ সেপ্টেম্বর (বুধবার) হাসিনা তিনটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সকাল ৯টায় ডারবান ডিক্লারেশন এবং কর্মসূচী গ্রহণের ২০তম বার্ষিকী, ‘হোয়াইট হাউস গ্লোবাল কোভিড-১ ৯ সামিট এবং রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিকাল ৩টায় উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় জিয়াকে আসামি করতে চেয়েছিলাম: শেখ হাসিনা
১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে: প্রধানমন্ত্রী
২৩ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সুইডিশ মিশন আয়োজিত ‘জাতিসংঘের সাধারণ কর্মসূচী: সমতা ও অন্তর্ভুক্তি অর্জনের পদক্ষেপ’ শীর্ষক নেতাদের নেটওয়ার্কের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দশক কর্মসূচির অংশ হিসাবে খাদ্য ব্যবস্থা শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। দুপুরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে পর্যায়ক্রমে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ্, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস এবং ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট নগুইয়েন জুয়ান ফুকের সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা।
২৪ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) প্রধানমন্ত্রী সকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন। দুপুরে নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন এবং রাতে বাংলাদেশ কমিউনিটি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
২৫ সেপ্টেম্বর (শনিবার) হাসিনা সকাল ৮টায় বিমানের একটি ফ্লাইটে ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে নিউইয়র্ক ত্যাগ করবেন। তিনি ২৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করবেন।
শেখ হাসিনা ৩০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন এবং ফিনল্যান্ডে কিছুক্ষণ বিরতির পর ১ অক্টোবর দেশে ফিরবেন।
জলবায়ু পরিবর্তন: দ. কোরিয়ার সহায়তা চায় বাংলাদেশ
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলাসহ সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউনের কাছে এই সহায়তা চান।
বৃহস্পতিবার সকালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউন। এ সময় তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, পরিবেশ সংরক্ষণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের ছেড়ে যাওয়া স্থানে গাছ লাগানো হবে: পরিবেশ মন্ত্রী
এ সময় মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় প্রতিবছর চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করছে এবং পরিবেশ দূষণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে প্ল্যানেটরি ইমার্জেন্সি ঘোষণা করেছে । সরকার এসকল উচ্চাভিলাসী কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করতে দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তা চায়।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ক্লাইমেট ভালনারাবিলিটি ফোরামের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়াও গ্লোবাল সেন্টার অব অ্যাডাপটেশনের আঞ্চলিক অফিস ঢাকায় স্থাপনের ফলে এ বিষয়ক কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের নিজেদের জাতীয় স্বার্থেই পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করে যেতে হবে।
বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্র উল্লেখ করে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমঝোতার ভিত্তিতে দুই দেশ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে যা ক্রমবর্ধমান গতিতে অব্যাহত থাকবে। কারিগরি শিক্ষা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়া একযোগে কাজ করবে।
আরও পড়ুন: ‘ওয়ান টাইম প্লাস্টিক’ বন্ধে কাজ করছে সরকার: পরিবেশ মন্ত্রী
সৌজন্য সাক্ষাতকালে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত কপ-২৮ আয়োজনে দক্ষিণ কোরিয়াকে বাংলাদেশের সমর্থন দানের বিষয়ে অনুরোধ করেন।
এছাড়াও, তিনি আগামী অক্টোবর মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিবেশমন্ত্রীদের সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য পরিবেশমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল: টিআইবির সতর্ক সাধুবাদ
তহবিল সংগ্রহে সমস্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে সম্প্রতি ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করার সরকারি সিদ্ধান্তকে সতর্ক সাধুবাদ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
একই সাথে, কয়লা বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তেও উদ্বেগ প্রকাশ করছে সংস্থাটি।
শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায় টিআইবি।
আরও পড়ুন: সুশাসনের ঘাটতি করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণকে দীর্ঘায়িত করছে: টিআইবি
২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ খাতে আরও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পরিবেশবাদীদের ক্রমাগত উদ্বেগ এবং স্থানীয় জনগণের তীব্র আপত্তি ও প্রতিবাদ স্বত্ত্বেও পরিবেশগত প্রতিপন্ন এলাকা এবং জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় জেলায় সরকার বড় সংখ্যক কয়লাভিত্তিক প্রকল্প স্থাপনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা থেকে ১০টি কয়লাভিত্তিক প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত সরকারের বোধোদয় হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, প্যারিস চুক্তিসহ ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তাবয়নে সরকার অধিকতর সচেষ্ট হবে এবং সংশোধন হতে যাওয়া বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনায় কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে পুরোপুরি সরে আসার সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেয়া হবে।’
৯ হাজার ৩ শত ৪৭ মোগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই ১০টি প্রকল্প বাতিল করা হলে, আরও প্রায় ১৯টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এখনও সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে। যার মধ্যে রামপাল, মাতারবাড়ি ও মিরসরাইসহ ৮টি কেন্দ্র বাস্তবায়নাধীন।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্য খাত নিয়ে টিআইবি মিথ্যাচার করেছে: মন্ত্রী
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ সরকার ১০ থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এসব কেন্দ্র থেকে পেতে চায়।
এ পরিকল্পনার বিষয়ে প্রশ্ন রেখে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘এটা খুবই উদ্বেগের যে, লক্ষ্যমাত্রার প্রায় চারভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎ সরকার কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকেই পেতে চাইছে। আবার বাতিলকৃত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবর্তে ব্যয়বহুল এলএনজি এবং জ্বালানি তেলনির্ভর কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। যেটি বাংলাদেশকে ২০৩০ সলের মধ্যে এশিয়ার অন্যতম কয়লা ও কার্বন দূষণকারী দেশে রূপান্তরিত করবে, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সরকারের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের সাথে সাংঘর্ষিক বিধায় কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করতে চাই, সরকার শেষ পর্যন্ত শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা দেশের স্বার্থ রক্ষায় কয়লা এবং এলএনজির মতো জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে না।’
লিডার্স সামিট: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ৪ পরামর্শ
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশ্ব নেতাদের কাছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারটি পরামর্শ তুলে ধরেছেন।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে শুরু হওয়া বিশ্ব নেতাদের অংশগ্রহণে জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন ‘লিডার্স সামিটের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই পরামর্শগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি সম্বনিত উদ্যোগ গ্রহণেরও আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: বাইডেনের জলবায়ু সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে থাকছে বাংলাদেশের দাবিদাওয়া: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সারা বিশ্বের ৪০ জন রাষ্ট্রপ্রধানকে জলবায়ু বিষয়ক ভার্চুয়াল সম্মেলন 'লিডারস সামিট'-এ অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান।
প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে অবিলম্বে একটি উচ্চাভিলাষী কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। এছাড়া ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিলের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করতে হবে, যা অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ৫০:৫০ ভারসাম্য বজায় রাখবে।
প্রধানমন্ত্রীর তৃতীয় পরামর্শ হলো, প্রধান অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উদ্ভাবনের পাশাপাশি জলবায়ু অর্থায়নের জন্য বিশেষভাবে ছাড় দিতে হবে। তিনি তার শেষ পরামর্শে, সবুজ অর্থনীতি ও কার্বন প্রশমন প্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব দেয়া এবং এ লক্ষ্যে দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তির বিনিময়ের প্রতি জোর দেন।
পূর্বে ধারণকৃত ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'করোনা মহামারি আমাদের আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, বৈশ্বিক সমস্যা নিরসনে সকল দেশের সমন্বিত উদ্যোগ অত্যন্ত প্রয়োজন।'
প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসায় এবং জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন ও এই আয়োজনে তাকে আমন্ত্রণ করায় শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশংসা ও ধন্যবাদ জানান।
আরও পড়ুন: দেশের উন্নয়নের জন্য আরও জ্বালানি প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে জলবায়ুর সংকট নিরসনে বাংলাদেশের আগ্রহ প্রকাশ করে প্রধানমনত্রী বলেন, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ও সীমিত সম্পদের দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ অভিযোজন ও প্রশমনের ক্ষেত্রে বিশ্ব নেতৃত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ মোট জিডিপির প্রায় ২.৫ শতাংশ বা প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলা এবং টেকসই জলবায়ু সহনশীল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যয় করছে।
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, 'মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। তারা দেশের প্রতিবেশকে অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।'
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) বৃদ্ধিতে এবং জলবায়ুর পরিবর্তন সহনীয় টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে কার্বন হ্রাসের পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনে দেশব্যাপী ৩০ কোটি গাছের চারা রোপণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এছাড়া কম-কার্বনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান’ প্রণয়নের পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাতে জন কেরি ঢাকায়
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এবং ভি২০ (ভালনারেবল টুয়েন্টি) এর সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর স্বার্থ সমুন্নত রাখা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস ‘লিডার্স সামিটের’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উস্থিত ছিলেন।
মিয়ানমারের ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি; বাংলাদেশের অসাধারণ উদারতার প্রশংসা
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এবং মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সহায়তা করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি জানিয়েছেন।
তিনি 'অসামান্য সক্রিয় উদারতা' প্রদর্শনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। একই সাথে, তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের জন্য এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাতে জন কেরি ঢাকায়
শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সাথে বৈঠকের পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কেরি এই মন্তব্য করেন।
এ সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, সাবের হোসেন চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম, ভালনারেবল ফোরামের রাষ্ট্রপতির বিশেষ দূত আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।
কেরি জানান, মিয়ানমারের জনগণ যা প্রত্যক্ষ করছে তা এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের যে অবিশ্বাস্য চেতনা ও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তার জন্য বাইডেন প্রশাসন অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহায়তায় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি কারণ এটি একমাত্র বাংলাদেশের দায়িত্ব নয়।
বাইডেন প্রশাসন মিয়ানমারের জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য অনেক চেষ্টা করে কিন্তু কোন ফল পাননি।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমি জানি যে আমরা খুব কঠোর লড়াই করেছি এবং মিয়ানমারকে অন্য পথে নেয়ার চেষ্টা করেছি। আমাদের উচ্চ প্রত্যাশা ছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে নাইপিডো গিয়েছিলাম এবং জেনারেলদের সাথে দেখা করেছি।'
কেরি বলেন, বাংলাদেশ অন্যতম সহায়তার হাত এবং রোহিঙ্গাদের একটি দ্বীপ দিয়েছে যাতে রোহিঙ্গারা ভবিষ্যত গোছাতে সক্ষম হয়। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদী নয়। 'এতে সমস্যার সমাধান হয় না।'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, 'রোহিঙ্গারা বন ও ভূতাত্ত্বিক ব্যবস্থা ধ্বংস করছে। আমরা আশাবাদী যে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকর উদ্যোগ রোহিঙ্গাদের একটি সাধারণ জীবনযাপনের জন্য মিয়ানমারে নিরাপদে ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য সহায়তা করতে পারে।'
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আঞ্চলিক, বহুপাক্ষিক উদ্যোগ চায় ঢাকা
বর্তমানে, কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
২০১৮ সালে ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার 'ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট' সম্পর্কিত একটি নথিতে স্বাক্ষর করে যা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে সহজ হবে বলে আশা করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ জানায়, রোহিঙ্গারা তাদের সরকারের ওপর আস্থা রাখে না এবং তাদের মধ্যে আস্থা বাড়াতে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেয়।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানের জন্য-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক এবং বিচার ব্যবস্থা- একাধিক উপায়ে চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ মিয়ানমারের বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ জাপান, চীন, রাশিয়া, ভারত ও আসিয়ানভুক্ত দেশসমূহ থেকে বেসামরিক নাগরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের প্রস্তাব করেছিল।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় কেরি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় 'আগ্রাসীভাবে' এগিয়ে যাওয়ার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতিশ্রুতি জানাতে ঢাকায় পৌঁছান।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার তাকে স্বাগত জানান।
আরও পড়ুন: তরুণদের শক্তি ও সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে প্রধানমন্ত্রীর জোর
২২ এপ্রিল শুরু হতে যাওয়া বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে তিনি চার দিনের ভারত সফর শেষে ঢাকায় এসেছেন। ৪০টি দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের অংশগ্রহণে ভার্চুয়ালি এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু প্রভাব বিশেষত দুর্বল জলবায়ু পরিস্থিতে বাংলাদেশের নেতৃত্বের জন্য স্বীকৃতি পাবেন।
ঢাকায় কেরি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি এবং মূল উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বলে জানায় ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম ও ভালনারেবল টুয়েন্টি গ্রুপ অব ফাইন্যান্স মিনিস্টারস-এর সভাপতি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪০ জন বিশ্বনেতাকে 'বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে' যোগ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। জো বাইডেন কর্তৃক আয়োজিত এই ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলন জনগণের জন্য লাইভ স্ট্রিম করা হবে।
আরও পড়ুন: জলবায়ুর কারণে বিশ্বে ২ কোটি মানুষ অভিবাসী হওয়ার আশঙ্কা
'বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন' জোরালো জলবায়ু কর্মকাণ্ডের প্রয়োজনীয়তা এবং অর্থনৈতিক সুবিধাগুলিকে তুলে ধরবে। গ্লাসগোতে এই নভেম্বরে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের (সিওপি ২৬) পথে একটি মূল মাইলফলক হয়ে থাকবে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জকে জোর দিয়ে বলেছেন, 'যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্ব গভীর জলবায়ু সংকটের মুখোমুখি এবং আমাদের বৈদেশিক নীতি, কূটনীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তার কেন্দ্রবিন্দুতে জলবায়ু পরিবর্তন থাকা উচিৎ।
প্যারিস চুক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নিতে বাইডেন তার অফিসের প্রথম দিনই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
পরে ২৭ জানুয়ারি তিনি ঘোষণা দেন, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় প্রধান অর্থনীতির প্রচেষ্টা ঝালাইয়ে তিনি শিগগরই নেতাদের একটি শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করবেন।
পরিবেশের দৃশ্যমান উন্নয়নে বিভিন্নমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে: মন্ত্রী
দেশের পরিবেশের দৃশ্যমান উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রকল্প ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘অবৈধভাবে দখলকৃত সরকারি বনভূমি পুনরুদ্ধার, পাহাড় ও টিলা কর্তন রোধ, অবৈধ ইটভাটা এবং নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করছে সরকার। স্থানীয় প্রশাসন ও সকলের সহযোগিতায় দেশের পরিবেশের উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।’
বৃহস্পতিবার সকালে বিভাগীয় কমিশনারদের সাথে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ভার্চুয়াল সমন্বয় সভায় ঢাকাস্থ সরকারি বাসভবন হতে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, সরকারি নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার কাজে ২০২৫ সালের মধ্যে ১০০ ভাগ ব্লক ইট ব্যবহার অর্জনের বিষয়টি মনিটরিং এবং যানবাহনের সৃষ্ট দূষণ নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারণা জোরদারকরণ এবং প্রয়োজন অনুসারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। প্লাস্টিক-পলিথিন দূষণ নিয়ন্ত্রণে নিষিদ্ধ ঘোষিত অবৈধ পলিথিন-প্লাস্টিক ব্যাগের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, উপকূলীয় এলাকায় এক বছরের মধ্যে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ এবং একই সময়ে সারাদেশের হোটেল, রেস্টুরেন্টে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, জলাধার ও নদী ভরাট এবং নদী দূষণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শিল্প-কারখানা, নৌযান ও মনুষ্য-সৃষ্ট বর্জ্য সরাসরি নদীতে নিঃসরণ প্রতিরোধে নজরদারি জোরদারসহ প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণে নিয়মিত তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পর্যালোচনা ও বিসিসিটি’র বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহ নিয়মিত পরিদর্শনসহ এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
আরও পড়ুন: সরকার দেশের গ্রামগুলোকে শহরে পরিণত করছে: পরিবেশমন্ত্রী
তিনি বলেন, সংরক্ষিত বন ব্যতীত অন্যান্য বনভূমি (রক্ষিত বনভূমি, অর্পিত বনভূমি) এলাকায় খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদানের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন এবং প্রয়োজনে বন বিভাগের সঙ্গে আলোচনাক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পরিবেশমন্ত্রী বনভূমি জবরদখলকারীদের উচ্ছেদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে চলমান ক্র্যাশ প্রোগ্রামে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের জন্য বিভাগীয় কমিশনারদের প্রতি আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: জলবায়ু-সহিষ্ণু উন্নয়ন করেছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
অবৈধভাবে বন্দোবস্তকৃত বনভূমি উদ্ধারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বনভূমি যথাযথভাবে রেকর্ডভুক্তি করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও বিভাগীয় কমিশনারদের প্রতি আহবান জানানো হয়।
সভায় বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের মালিকানাধীন আনুমানিক ২৫-৩০ একর রাবার বাগান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) কর্তৃপক্ষের অবৈধ দখল থেকে উদ্ধারের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপস্থিত চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের প্রতি আহবান জানানো হয়।
বিভাগীয় কমিশনাররা তাদের বক্তব্যে এ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কাজ পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমেই করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। ভবিষ্যতে আরও নিবিড়ভাবে দেশের পরিবেশের উন্নয়নে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন: দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান এনডিসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। সভায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবরা, অধীন দপ্তর-সংস্থা প্রধানরা এবং বিভাগীয় কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।
জলবায়ুর কারণে বিশ্বে ২ কোটি মানুষ অভিবাসী হওয়ার আশঙ্কা
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ২০৩১ সালের মধ্যে ২ কোটির বেশি মানুষ অভিবাসী হবে বলে এক গবেষণায় বলা হয়েছে।
অভিবাসন বর্তমানে একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। অভিবাসনের জন্য মূলত পুশ ফেক্টর ও পুল ফেক্টর দায়ী। তাছাড় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন নতুন সংকট তৈরি করছে যা ভবিষ্যতেও ফোর্সড মাইগ্রেন্ট এর সংখ্যা বাড়াবে। এজন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া দরকার।
মঙ্গলবার অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘অ্যাড্রেসিং ক্লাইমেট চেঞ্জ ইনডিউসড মাইগ্রেশন ইন বাংলাদেশ: টেকিং এ হিউমেন রাইটস বেজেড অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক সেমিনারে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ সালিমুল হক এই গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় মালদ্বীপকে সহায়তা করবে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী
তিনি একশনএইডের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এটি শুধু বাংলাদেশ নয় এটি গ্লোবাল ই্স্যু। সরকারি, বেসরকারি এবং সুশীল সমাজের সবার সাথে আলোচনা করে গবেষণাধর্মী তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে ঐক্যমত হয়ে আমরা কপ সম্মেলনসহ সকল আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে এ বিষয়টি তুলে ধরতে পারি যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিষয়টির সমাধানের পথ প্রশস্ত হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেন কারো অভিবাসন না ঘটে সেজন্য তিনি স্থানীয় পর্যায়ে বেশি কাজ করার তাগিদ দেন। এ সময় তিনি দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত একশনএইড বাংলাদেশ এর সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন।
সেমিনারে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন নিয়ে খুলনা, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, নওগাঁ ও ঢাকা জেলায় পরিচালিত গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল তুলে ধরা হয়। ফলাফলের আলোকে সেমিনারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত বক্তারা ওই অঞ্চলের বিদ্যমান সমস্যা ও সুপারিশ তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন: বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান
একশনএইডের এ গবেষণায় উঠে আসে মানুষের জীবিকাই অভিবাসনের মূল কারণ। দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ ই্যসু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া জীবিকা ও অর্থনীতি এর একটি বড় কারণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কোন বর্ডার নেই। মানুষ বাস্তুচ্যূত হওয়ার পর অভিবাসী হওয়ার মাঝে অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করে। তারপর ধীরে ধীরে একটি বড় অংশ অভিবাসনের দিকে ধাবিত হতে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি জীবিকা, ঋণগ্রস্থতা, দক্ষতাহীনতা, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, উচ্ছেদ ইত্যাদি ফ্যাক্টরও বড় কারণ বলে তুলে ধরা হয় এ গবেষণায়।
এ অভিবাসন ঠেকাতে গবেষণায় মৌলিক অধিকার ও সেবা নিশ্চিত করা, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বহুমুখী তথ্য সেবা কেন্দ্র চালু করা, দক্ষতা উন্নয়ন, এ খাতে সচ্ছতার সাথে কার্যকর বিনিয়োগ এবং জাতীয় অভিবাসন নীতিমালা করার কথা বলা হয়।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন: কথার চেয়ে কাজ বেশি চান শেখ হাসিনা
সেমিনারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন অনুবিভাগ) মো. মিজানুল হক চৌধুরী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কি ধরণের অভিবাসন হচ্ছে তা নিয়ে সরকার সচেতন রয়েছে। আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত রয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসনের সাথে নিয়মিত এনজিও প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক হয়। সরকার থেকে বাস্তুচ্যুতদের ঋণ দেয়া হয় তবে অনেকে ঋণ নিয়ে ঢাকায় চলে আসে। আমাদেরকে যৌথ প্রয়াসে সাধারন মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে।’
একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘আমাদের গবেষণা ও আজকের আলোচনায় অভিযোজন, প্রশমন, জীবিকা, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি ইত্যাদি বিষয়গুলো উঠে এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি ব্যক্তি ও সামষ্টিক পর্যায়ে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জীবন জীবিকার উন্নয়ন ঘটাতে। একটা সমন্নিত উদ্যোগ ও রোডম্যাপ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। আমাদের উন্নয়ন যেন পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্য হুমকির কারণ না হয়ে উঠে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন কাউকে বিশেষ সুবিধা দেবে না বরং সবার উপর প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় সেমিনারে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভান্স স্টাডিসের নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান, একশনএইড ইন্টারন্যাশনারের প্রকল্প সমন্বয়ক জেসিকা ফেলারিও, ক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ডের কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী, ন্যাচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান, ইউএন উইম্যানের জেন্ডার সমন্বয়ক দিলরুবা হায়দার প্রমুখ।
জলবায়ু পরিবর্তন: বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান
শ্রম, মানবাধিকার ও স্বাস্থ্য খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
জলবায়ু পরিবর্তন: কথার চেয়ে কাজ বেশি চান শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়ের সাথে তাল মিলিয়ে বৈশ্বিক অভিযোজন কার্যক্রমের পাল্লা দেয়া আর্থিক ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় নতুন বৈশ্বিক জোটের সূচনা
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশকে নিয়ে নতুন আন্তর্জাতিক জোটের ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।