হেফাজত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা কওমী ছাত্র ঐক্য পরিষদের সাবেক সেক্রেটারিসহ গ্রেপ্তার ৬
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় জেলা কওমী ছাত্র ঐক্য পরিষদের সাবেক সেক্রেটারি ও জামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা বেলাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের একটি বিশেষ টিম তাকে গ্রেপ্তার করে বলে জেলা পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে দেশীয় অস্ত্রসহ ৪ ডাকাত গ্রেপ্তার
গ্রেপ্তার মাওলানা বেলাল হোসেন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে যে, গত ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসাসহ আশপাশের বিভিন্ন মাদরাসার ছাত্রশিক্ষককে নিয়ে ব্যাপক তাণ্ডবলীলা চালায়। এ সময় তিনি ও তার সিনিয়র মুরুব্বিদের প্রত্যক্ষ নির্দেশে হেফাজতের ছাত্রশিক্ষকরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক তাণ্ডব চালায়।
আরও পড়ুন: হাতিয়ায় অস্ত্র-গুলিসহ ২ ডাকাত গ্রেপ্তার
এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরও পাঁচজন হেফাজত নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় মোট ৫৫টি মামলায় ৪১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৩ জুয়াড়ি আটক
কক্সবাজারে সাদা পোশাকে ছিনতাইয়ের সময় পুলিশের ৩ সদস্য আটক
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় হেফাজতের হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা মুহিব্বুল্লাহ নিহতের ঘটনায় বিএনপি নেতা ইউনুস মনিকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার উপজেলার শিলক নটরের টিলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মিল্কি বলেন, মুহিব্বুল্লাহ হত্যা মামলার প্রধান আসামি ইউনুস। তাকে চট্টগ্রাম আদালতে নেয়া হচ্ছে। সেখানে পাঁচ দিনের রিমান্ডে আবেদন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ইউনুসকে আজ সকালে রাঙ্গুনিয়ার শিলক নামের একটি পাহাড়ি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আওয়ামী লীগ নেতা মুহিব্বুল্লাহ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ৩৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা মো. মুহিব্বুল্লাহ হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো. ইউনুছ মনিকে গ্রেপ্তার করতে দুর্গম পাহাড়ে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করতে হয়েছে। অবশেষে সকালে পাহাড়ে পলায়নরত অবস্থায় তাকে গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হন তারা। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি ও বিস্ফোরক আইনে বিভিন্ন থানায় ৫টি মামলা রয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে ৩ এপ্রিল রাতে হেফাজত নেতা মামুনুল হককে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে একটি রিসোর্টে অবরুদ্ধ রাখার খবর ছড়িয়ে পড়লে রাঙ্গুনিয়ার কোদালায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে হেফাজত ও বিএনপি নেতা কর্মীরা।
মিছিল থেকে হামলা চালানো হয় কোদালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মুহিব্বুল্লাহ, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আবদুল জব্বার ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিলদার আজম লিটনের ওপর।
হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় মুহিব্বুল্লাকে চট্টগ্রাম শহরের পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেই ৬ এপ্রিল রাতে তিনি মারা যান।
পরদিন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জব্বার ও রাঙ্গুনিয়া থানার উপপরিদর্শক খোরশেদ আলম বাদী হয়ে বিএনপি নেতা ইউনুস মনিকে প্রধান আসামি করে রাঙ্গুনিয়া থানায় দুইটি মামলা করেন। দুই মামলায় ৬৪ জনের নাম ও অজ্ঞাত পরিচয়ে আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরও ৬ হেফাজত কর্মী গ্রেপ্তার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজত তাণ্ডবে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ছয় হেফাজত কর্মী ও সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জেলা পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সহিংস ঘটনাসমূহের প্রাপ্ত স্থির চিত্র ও ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হেফাজতের তাণ্ডব: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৪ ঘণ্টায় আরও গ্রেপ্তার ১১
এর মধ্যে গত ২৭ মার্চ হরতাল সমর্থনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানাধীন রাধিকা বাজারে মিছিল ও রাস্তায় গাছের গুড়ি ও টায়ারে জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ঘটনায় জড়িত ইসলামী আন্দোলন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার মহিলা ও পরিবার কল্যাণ সম্পাদক, জাতীয় শিক্ষক ফোরামের মাদরাসা বিষয়ক সম্পাদক কেন্দ্রীয় কমিটির মাওলানা নিয়াজুল করিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হেফাজতের তাণ্ডবে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ৪৯, আশুগঞ্জ থানায় চার ও সরাইল থানায় দুটিসহ মোট ৫৫টি মামলা রুজু হয়েছে। এসকল মামলায় ৪১৪ জন এজাহারনামীয় আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ৩০-৩৫ হাজার লোকের নামে মামলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের জেলা সহকারী প্রচার সম্পাদকসহ গ্রেপ্তার ১০
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ এসকল মামলায় সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সর্বমোট ৩৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হেফাজত নেতা মামুনুল হক গ্রেপ্তার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের আরও ৬ জন গ্রেপ্তার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৪ ঘণ্টায় ইউনিয়ন ছাত্র ওলামা ঐক্য পরিষদের সেক্রেটারি ও ইমাম পরিষদ সেক্রেটারিসহ আরও ছয় জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জেলা পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সহিংস ঘটনাসমূহের প্রাপ্ত স্থির চিত্র ও ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৮ মার্চ হেফাজতের ডাকা হরতাল চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানাধীন টিএ রোড এলাকায় তাণ্ডবে জড়িত সাদেকপুর ইউনিয়ন ছাত্র ওলামা ঐক্য পরিষদের সেক্রেটারি ক্বারী মো. মোজাম্মেল হক এবং আশুগঞ্জ থানাধীন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ ও আগুন দিয়ে পিকেটিংয়ে জড়িত আশুগঞ্জ উপজেলার হেফাজত ইসলাম ও ইমাম পরিষদ সেক্রেটারি মাওলানা মুফতি ওবায়দুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের জেলা সহকারী প্রচার সম্পাদকসহ গ্রেপ্তার ১০
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, হেফাজতের তাণ্ডেবে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ৪৯টি, আশুগঞ্জ থানায় চারটি ও সরাইল থানায় দুটিসহ মোট ৫৫টি মামলা রুজু হয়েছে। এ সকল মামলায় ৪১৪ জন এজাহারনামীয় আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ৩০-৩৫ হাজার লোকের নামে মামলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হেফাজতের তাণ্ডব: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৪ ঘণ্টায় ১২ জনসহ গ্রেপ্তার ৩১০
মামলায় সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সর্বমোট ৩৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হেফাজত নেতা মামুনুল হক গ্রেপ্তার
এক পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে বায়তুল মোকাররমে গিয়েছিলাম: আদালতকে মামুনুল
পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার একজনের কথা রাখতে গিয়ে ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে গিয়েছিলেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন হেফাজত ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক।
সোমবার রিমান্ড শুনানি চলাকালে আদালতের অনুমতি নিয়ে মাওলানা মামুনুল হক বিচারককে এ কথা বলেন।
আদালতকে তিনি বলেন, 'গত ২৬ মার্চ আমি বাংলাবাজার জুমা মসজিদে পুলিশ প্রটেকশনে নামাজ পড়িয়েছি। নামাজ শেষে জানতে পারি বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিরা জড়ো হয়েছে। এরপর একজন ডিআইজির অনুরোধে বায়তুল মোকাররম মসজিদে যাই, সেখানে আমাকে বক্তব্য রাখতে বলা হয়। তারপর ওইখানে আমি বক্তব্য রাখি। আমিতো কোনো অন্যায় করিনি। ভতিষ্যতে পুলিশ অনুরোধ করলে আমরা তো কোথাও যেতে পারব না।'
এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মামুনুলের বক্তব্যের বিষয়ে কোর্টকে বলেন, ‘তিনি এভাবে বক্তব্য দিতে পারেন না।’
তবে আদালত মামুনুলকে বলতে বলেন। মামুনুল আবার বলেন, ‘বিচারক চাইলে আমার ওইদিনের কল রেকর্ড চেক করতে পারেন।’ পরে তার জামিন ও রিমান্ড বিষয়ে শুনানি হয়।
রাজধানীর মতিঝিল ও পল্টন থানার নাশকতার পৃথক দুই মামলায় পরে মামুনুলের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। এর মধ্যে পল্টন থানার মামলায় ৪ ও মতিঝিল থানার মামলায় ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী শুনানি শেষে রিমান্ডের এ আদেশ দেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ বলেন, ‘পল্টন থানার দায়ের করা মামলায় বাদী পক্ষের কোনো তথ্য ঠিক নেই। তিনি কোন হাসপাতালে ছিলেন তার কোনো তথ্য দেননি।’
২০১৩ সালের মতিঝিল থানার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান হেফাজত নেতা মামুনুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনসহ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে হাজির করেন। অপরদিকে, চলতি বছরের ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমের ঘটনায় পল্টন থানার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক কামরুল ইসলাম আসামি মামুনুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনসহ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ডের এ আদেশ দেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এদিন মোহাম্মপুর থানার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা হেফাজত নেতা মামুনুলকে সাত দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করেন। একই সঙ্গে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। এ মামলায় তাকে বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।'
মোহাম্মদপুর থানায় করা চুরি ও মারধরের মামলায় মামুনুল হকের ১৯ এপ্রিল সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। সাতদিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আজ আদালতে হাজির করা হয়। এর আগে ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২৬ মার্চ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সহিংসতার ঘটনায় গত ৫ এপ্রিল হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলায় ২ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামিও করা হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক খন্দকার আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে পল্টন থানায় মামলাটি করেন।
একই সঙ্গে ২০১৩ সালের মতিঝিল থানার নাশকতা মামলায় মাওলানা মামুনুল হকের ১০ দিনের রিামান্ড চায় পুলিশ।
মামুনুল ব্যক্তিগত জীবন আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করে হেফাজতের আন্দোলনসহ নানা কারণে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন মাওলানা মামুনুল হক। নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত সহিংসতায় দেশে ১৭ জনের মৃত্যু হয়। এসব সহিংসতার ঘটনায় সারাদেশে প্রায় অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে। মামুনুলকে এসব ঘটনার মূল ইন্ধনদাতা হিসেবে মনে করছে পুলিশ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের জেলা সহকারী প্রচার সম্পাদকসহ গ্রেপ্তার ১০
হেফাজতে ইসলাম কর্তৃক বিক্ষোভ ও হরতাল চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক ভাঙচুর ও সহিংসতা চালানোর অভিযোগে হেফাজতের জেলার সহকারী প্রচার সম্পাদকসহ ১০ জনকে রবিবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার মুফতি জাকারিয়া খান (৪৩) ব্রাহ্মনবাড়িয়া জামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার শিক্ষক।
আরও পড়ুন: হেফাজতের তাণ্ডব: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৪ ঘণ্টায় ১২ জনসহ গ্রেপ্তার ৩১০
জেলা পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হেফাজতের জেলার সহকারী প্রচার সম্পাদক মুফতি জাকারিয়া খান গ্রেপ্তার করেছে ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা পুলিশের একটি বিশেষ টিম। গ্রেপ্তারকৃত জাকারিয়া খান প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে যে গত ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে সরকার উৎখাতের সূদুরপ্রসারি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসাসহ আশেপাশের বিভিন্ন মাদরাসার ছাত্র শিক্ষককে নিয়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। এ সময় তিনি এবং তার সিনিয়র মুরুব্বিদের প্রত্যক্ষ নির্দেশে হেফাজতের ছাত্র শিক্ষকরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক তাণ্ডব চালায়।
হেফাজতে ইসলাম কর্তৃক বিক্ষোভ ও হরতাল চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক ভাঙচুর ও সহিংসতা চালানোর অভিযোগে হেফাজতের জেলার সহকারী প্রচার সম্পাদকসহ ১০ জনকে রবিবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: হেফাজত নেতা মামুনুল হক গ্রেপ্তার
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরও ৯ জন হেফাজত নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় মোট ৫৫টি মামলায় ৩৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হেফাজত নেতা ইসলামাবাদী গ্রেপ্তার, ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
মামুনুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রীর বাবা ডিবি হেফাজতে
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’ জান্নাত আরা ঝর্ণার বাবা ওলিয়ার রহমানকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবির একটি দল ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানা থেকে তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়।
আরও পড়ুন: সোনারগাঁয়ে মামুনুল হকসহ ৬০০ জনের বিরুদ্ধে ৩ মামলা
ওলিয়ার রহমান আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি ছিলেন। গত ২১ এপ্রিল বিকালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় তাকে বহিষ্কার করা হয়।
আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ওলিয়ার রহমানকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। হয়তো ডিএমপির ডিবি পুলিশ তাদের মামলার তদন্তের স্বার্থে তার (ওলিয়ার) সঙ্গে কথা বলবে।
আরও পড়ুন: মামুনুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী নিখোঁজ; পল্টন থানায় জিডি
তিনি বলেন, এর আগে শুক্রবার রাতে আমরা তাকে থানায় নিয়ে আসি। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিবির একটি দল তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে। যতটুকু জানি মামলার তদন্তের স্বার্থে তাকে ঢাকায় নিয়ে গেছে।
ওলিয়ার রহমানের স্ত্রী শিরিনা বেগম জানান, রাতে ওসি সাহেব ও থানার লোকজন এসে উনাকে (ওলিয়ার রহমান) নিয়ে গেছেন। কি কারণে নিয়ে গেছেন জানিনা।
এর আগে ১২ এপ্রিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ থেকে ওলিয়ার রহমানকে কেন বহিষ্কার করা হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠান। ওই নোটিশে সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। ১৯ এপ্রিল ওই সাত দিন পার হয়। এই প্রেক্ষাপটে ২১ এপ্রিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নির্বাহী সভায় ওলিয়ারকে দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকার একটি রিসোর্টে গত ৩ এপ্রিল হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে এক নারীসহ ঘেরাও করা হয়। ওই নারীর নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা। তখন হেফাজত নেতা মামুনুল হক তাকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করেন।
আরও পড়ুন: হেফাজত নেতা মামুনুল হক গ্রেপ্তার
উল্লেখ্য, গত রবিবার হেফাজতের এই নেতাকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।
হেফাজতের আরেক শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার
ডিএমপির গোয়েন্দা বাহিনীর (ডিবি) সদস্যরা রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁও এলাকা থেকে শনিবার সন্ধ্যায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আরও এক শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তার আহমাদ আবদুল কাদের হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির।
ডিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) ইফতেখারুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি (তেজগাঁও বিভাগ) পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৭টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
আবদুল কাদের ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি। সম্প্রতি পল্টন থানায় দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় তার নাম থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হেফাজতের তাণ্ডব: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরও ৭ জন গ্রেপ্তার
হেফাজত ইসলাম তাণ্ডবে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও সাতজন হেফাজত কর্মী ও সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উক্ত সহিংস ঘটনাসমূহের প্রাপ্ত স্থির চিত্র ও ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হেফাজত কর্মীদের হামলায় বাগেরহাটে ওসিসহ ৫ পুলিশ আহত
হেফাজতের তাণ্ডবে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ৪৯টি, আশুগঞ্জ থানায় চারটি ও সরাইল থানায় দুটিসহ মোট ৫৫টি মামলা রুজু হয়েছে। এসকল মামলায় ৪১৪ জন এজাহারনামীয় আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ৩০/৩৫ হাজার লোকের নামে মামলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হেফাজত নেতা ইসলামাবাদী গ্রেপ্তার, ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
এসকল মামলায় সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সর্বমোট ৩৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন: হেফাজতের তাণ্ডব: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৪ ঘণ্টায় ১২ জনসহ গ্রেপ্তার ৩১০
হেফাজতের তাণ্ডব: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরও ৮ জন গ্রেপ্তার
হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ কর্মসূচি ও হরতাল চলাকালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮ জন হেফাজত কর্মী ও সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সহিংস ঘটনাসমূহের প্রাপ্ত স্থির চিত্র ও ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়।
আরও পড়ুন: হেফাজতের তাণ্ডব: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭ জন গ্রেপ্তার
হেফাজতের তাণ্ডবে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ৪৯টি, আশুগঞ্জ থানায় ৪টি ও সরাইল থানায় দুটিসহ সর্বমোট ৫৫টি মামলা রুজু করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হেফাজতের তাণ্ডব: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৪ ঘণ্টায় আরও গ্রেপ্তার ১১
এসব মামলায় ৪১৪ জন এজাহারনামীয় আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ৩০-৩৫ হাজার লোকের নামে মামলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হেফাজতের তাণ্ডব: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৪ ঘণ্টায় ১২ জনসহ গ্রেপ্তার ৩১০
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সর্বমোট ৩৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জেলা পুলিশের প্রেস রিলিজে জানানো হয়েছে।