মাছ
‘একযুগে দেশীয় মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৪ গুণ’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, গত একযুগে চাষের মাধ্যমে দেশীয় মাছের উৎপাদন চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ন: নিরাপদ ও টেকসই পোল্ট্রি উৎপাদনে সবধরনের সহায়তা দেবে সরকার -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
তিনি বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণার মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৩৭ প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় মাছের প্রজনন কৌশল ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। যার মধ্যে গত এক বছরে ১১ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দেশীয় মাছ সংরক্ষণে লাইভ জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মাছ উৎপাদন গবেষণা কার্যক্রম অতীতের তুলনায় জোরদার করা হয়েছে। গত ১২ বছরে চাষের মাধ্যমে দেশীয় মাছের উৎপাদন চার গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৬৭ হাজার মেট্রিক টন থেকে দুই দশমিক ছয় লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।
বুধবার সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বোর্ড অব গভর্নরসের ৪১তম সভায় মন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
মন্ত্রী বলেন, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও সরকারের বাস্তবমুখী কার্যক্রম গ্রহণে কারণে দেশে ইলিশের বিস্তৃতি ও উৎপাদন বেড়েছে। গত ১২ বছরে ৮৫ শতাংশ ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। পাশাপাশি বড় আকারের ইলিশের প্রাপ্যতা আগের তুলনায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইলিশ সংরক্ষণ ও সহনশীল আহরণ নিয়েও গবেষণা চলমান রয়েছে।
আরও পড়ুন: চিংড়ি উৎপাদন ও রপ্তানি সমস্যা সমাধানে সরকার বদ্ধপরিকর: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
তিনি বলেন, দেশ অনেক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ খাত হচ্ছে মৎস্য খাত। এ খাতে সরকারের বিভিন্ন রকম অনুদান ও বরাদ্দ রয়েছে।
৭ অক্টোবর থেকে ২২ দিন ইলিশ আহরণ বন্ধ
প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় আগামী ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ বন্ধ থাকবে। এ সময় ইলিশ আহরণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মৎস্য ভবনে মৎস্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ বন্ধের সময় নির্ধারণ এবং মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২২ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এ সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সভাপতির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, নিষিদ্ধ সময়ে যারা মাছ ধরতে নামে তারা সবাই মৎস্যজীবী নয়। তাদের নেপথ্যে অনেক ধনী ব্যক্তি থাকে, ক্ষমতাবান ব্যক্তি থাকে। ইলিশ সম্পদ রক্ষায় অতীতের মত এবারও এসব অসাধু ব্যক্তিদের ছাড় দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, ইলিশ সম্পদ ধ্বংসকারী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। দিনে অভিযানের পাশাপাশি এবার রাতেও অভিযান জোরদার করা হবে। সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলায় বরফ কল বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। গত বছরের ন্যায় এবারও অবৈধ জাল উৎপাদনস্থলে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অবৈধ পথে ইলিশ পাচার রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইলিশ সম্পৃক্ত জেলা উপজেলায় নদীতে ড্রেজিং বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। ইলিশের নিরাপদ প্রজননের মাধ্যমে ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে যা যা করা দরকার তা করতে হবে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, মাছ ধরা বন্ধকালে যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধিত জেলেদের নানাভাবে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। জেলদের জন্য নানাভাবে রাষ্ট্র সহায়তা করছে।
অতীতে এত ইলিশ উৎপাদন হয়নি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সরকারের নানাবিধ উদ্যোগে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে গ্রাম-গঞ্জে এখন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। দেশের মানুষ ইলিশ খেতে পারছে। ইলিশ রপ্তানিও করা যাচ্ছে।
রেজাউল করিম বলেন, প্রজননস্থলে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের করা হলে ইলিশের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে ধরণের পরিবেশ ইলিশ ডিম দেয়ার জন্য উপযুক্ত অনেক সময় ভারী যানবাহন চলাচল, যানবাহনের পোড়া মবিল নির্গত হওয়া, ময়লা-আবর্জনা নির্গত হওয়ায় কারনে ইলিশের প্রজনন পরিবেশ নষ্ট হয়। ফলে ইলিশ ওই অঞ্চলে থাকে না। অন্যত্র চলে যায়।
আরও পড়ুন: ভরা মৌসুমেও খুলনায় ইলিশের দাম চড়া
প্রথম চালানে ভারতে গেল ৮ মেট্রিক টন ইলিশ
বাগেরহাটে ধরা পড়ছে না ইলিশ, হতাশ জেলেরা
মাছ ধরা শুরু, ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পেয়ে খুশি বরগুনার জেলেরা
কাঙ্খিত মাছ পেয়ে খুশি সুন্দরবনের জেলে ও ব্যবসায়ীরা
নিষেধাজ্ঞা শেষে নৌকা-জাল নিয়ে ফের নদীতে মাছ শিকারে নেমেছে সুন্দরবনের জেলেরা।
দীর্ঘ দিনের নিরবতা কাটিয়ে এবং চরম অর্থ কষ্টে দিনাতিপাত করে পর্যাপ্ত জ্বালানি আর খাবার নিয়ে নৌকায় সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে মাছ ধরে গিয়ে কাঙ্খিত মাছ পাওয়ায় খুশি জেলে, ট্রলার মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন: মাছ ধরা শুরু, ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পেয়ে খুশি বরগুনার জেলেরা
বর্তমানে খুলনার বাজারগুলোতে মাছ সরবরাহ বেড়েছে। দামও কিছুটা কমেছে, এতে ক্রেতারাও বেশ খুশি।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন এবং টেকসই মৎস্য আহরণের লক্ষ্যে ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা বেধে দেয় সরকার। নিষেধাজ্ঞা শেষে ১ সেপ্টেম্বর থেকে জেলেদের সুন্দরবনের অভ্যন্তরের বিভিন্ন খাল ও নদীতে পুনরায় মাছ শিকারের অনুমতি দেয় কৃর্তপক্ষ।
তবে এই মাছ ধরা নিয়ে অভিযোগ করেছে জেলেরা।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে ২ মাসের নিষেধাজ্ঞার পর মাছ ধরা শুরু
তাদের অভিযোগ, একজনের নামের বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট (বিএলসি) মহাজনরা অন্য জনের নামে পাশ কেটে ভাড়া দিচ্ছেন। ফলে অনেক প্রকৃত জেলে সুন্দরবনে মাছ ধরতে যেতে পারছেন না।
এদিকে, মাছ ধরে অনেক জেলে উপকূলে ফিরে এসেছেন। তারা জানান, গহীন বনে একেকটা জালে কয়েক মণ চিংড়ি পেয়েছেন।
কয়রার মহারাজপুর এলাকার জেলে জামাল উদ্দিন বলেন, আশা করেছিলাম বেশি মাছ পাব, আশা পূরণও হয়েছে। সুন্দরবন খুলে দেয়ার প্রথম দিনেই প্রচুর মাছ পেয়েছি। পরের কয়েক দিনও ভালো মাছ পেয়েছি।
মহারাজপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের (ইউপি) সদস্য মো. আবু সাঈদ বলেন, পাশ নিয়ে বেশ জটিলতার সৃষ্টি হলেও অধিকাংশই সমাধান হয়েছে। তবে এর জন্য ফরেস্ট অফিস দায়ী নয়, স্থানীয় অসাধু মহাজনদের কারণে জটিলতার সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: তিন মাস বন্ধের পর কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা শুরু
তবে স্থানীয় জেলেদের অভিমত, মহাজনেরা এক সঙ্গে অনেকের বিএলসি নিয়ে ফরেস্ট অফিস থেকে অন্যের নামে পাশ করায় কীভাবে? যার বিএলসি তাকেই পাশ দেয়ার নিয়ম।
কয়রার দেওলিয়া মৎস্য আড়তের মেসার্স হোগলা ফিসের স্বত্বাধিকারী মো. ইনসান আলী বলেন, মাছের সাইজ প্রকার অনুযায়ী বিভিন্ন দামে আমরা কিনছি। ছোট-বড় সব সাইজের মাছ পাচ্ছি। তবে মাঝারি সাইজের বেশি। চিংড়ি ৩৩০ থেকে ৩৮০ টাকার সাইজ বেশি পাচ্ছি। দাঁতনি মাছ ১৮০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের চেয়ে দাম একটু কমেছে।
কয়রা কাসিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, তার আওতায় ৭০০ বিএলসির পাশ দেয়া হয়েছে। সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার কারণে সুন্দরবনে মাছের ঘনত্ব বেড়েছে।
আরও পড়ুন:
প্রসঙ্গত, চরপাটা জাল ও ভেপদি জাল দিয়ে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে নৌকা ও ট্রলারে মাছ ধরছেন জেলেরা। সুন্দরবনে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫০টি নদী-খাল রয়েছে। অভয়ারণ্য ঘোষিত ৩০টি খাল এবং ২৫ ফুটের কম প্রশস্ত খালে সারাবছরই মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। আর বাকি অংশের নদী-খাল ও জলাভূমিতে পারমিটধারী জেলেরা মৎস্য আহরণ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। মৎস্য আহরণের উপর সুন্দরবন উপকূলের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক জেলে পরিবারের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে।
কুড়িগ্রামে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে জেলের মৃত্যু
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে বিলে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে জিয়াউর রহমান (৩৬) নামের এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার কচাকাটা থানার বালাবাড়ি বিলে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত জিয়াউর কেদার ইউনিয়নের বালাবাড়ি গ্রামের মৃত নাদু শেখের ছেলে। তিনি দুই সন্তানের জনক।
স্থানীয়রা জানান, বিকালের দিকে জিয়াউর রহমান কেদার ইউনিয়নের বালাবাড়ি এলাকার সংকোষ নদীর শাখা নদীতে মাছ ধরতে যান। এসময় মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। হঠাৎ বজ্রপাতে তিনি গুরুতর আহত হন।
পরে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে নাগেশ্বরী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
কচাকাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মর্তুজা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করছেন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বজ্রপাতে নারীর মৃত্যু
নাটোরে বজ্রপাতে নানা-নাতির মৃত্যু
নাটোরে পৃথক বজ্রপাতে নিহত ২, আহত ৭
আজ মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ শুরু
দীর্ঘ তিন মাস ১৭ দিন বন্ধ রাখার পর বুধবার (১৭ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে শুরু হচ্ছে বৃহত্তর কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ। কার্প জাতীয় মাছের বংশবিস্তারের লক্ষ্যে প্রতিবছর তিন মাসের জন্য পহেলা মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার বন্ধ থাকে। তবে এবছর কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানির অভাবে মাছের বংশবিস্তার সুষ্ঠুভাবে না হওয়ায় মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ১৫ দিন বৃদ্ধি করে জেলা প্রশাসন।
এদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার ও পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর বুধবার মধ্যরাত থেকে জেলেরা মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। রাতেই জেলেরা হ্রদে মাছ শিকার করে বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) জেলার সবচেয়ে বড় মৎস্য অবতরণ ঘাটে মাছ নিয়ে যেতে শুরু করবে। এই নিয়ে জেলেদের কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে বিএফডিসি ঘাটে।
ব্যবসায়ীদের আশা করছে, এবছর আশানুরূপ মাছ শিকার করা সম্ভব হবে। নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়ার খবরে জেলেদের মাঝে ফিরেছে স্বস্তি। তাই জেলে পলল্লীগুলোতে চলছে মাছ ধরার সব ধরনের প্রস্তুতি।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন রাঙ্গামাটির ব্যবস্থাপক লে.কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম জানান, কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রজনন ও কার্প জাতীয় মাছের বংশ বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস মাছ শিকার ও বাজারজাত বন্ধ থাকে। কিন্তু এ বছর পাহাড়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় হ্রদের পানি বাড়েনি। তাই মাছের ডিম ছাড়ার সুবিধার্থে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা আরও ১৫ দিন বাড়ানো হয়। তবে বর্তমানে হ্রদে পানির পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ছে। এতে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে ১৭ আগস্ট বুধবার থেকে আহরণ শুরু হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, গত বছর কাপ্তাই হ্রদ থেকে ১৭ হাজার ৮৭০ মেট্রিক টন মৎস্য আহরিত হয়, সেখান থেকে রাজস্ব আদায় হয় ১১ কোটি ৬৮ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা। ২০২২ সালে পোনা অবমুক্ত করা হয় ৬৪ মেট্রিক টন। প্রত্যাশিত পরিমাণে মাছ আহরণের মাধ্যমে গতবারের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা জানান তিনি।
আরও পড়ুন: মাছ ধরা শুরু, ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পেয়ে খুশি বরগুনার জেলেরা
বন্যায় ভেসে গেছে ৮ কোটি টাকার মাছ-চিংড়ি-কাঁকড়া
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি: বিপাকে ভোলার লক্ষাধিক জেলে
মেঘনা ও তেঁতুলিয়ায় ইলিশ সংকট, তার ওপর হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার লক্ষাধিক জেলে।
শুক্রবার রাতে তেলের দাম বৃদ্ধি ঘোষণার পর শনিবার থেকেই অনেক জেলেই মাছ ধরতে যায়নি।
সদরের তুলাতুলি মাছঘাট এলাকায় দেখা গেছে, অনেক জেলে নদী থেকে নৌকা, ট্রলার ও জাল তুলে নিয়েছে। অনেকে আবার ঘাটে অলস সময় পার করছেন। এতে করে মাছের আড়ৎগুলোতে অনেকটা জেলে শূন্য ছিল।
আরও পড়ুন: জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি: চট্টগ্রামে বাস চলাচল বন্ধ
জেলেরা জানান, এমনিতেই নদীতে দিন রাত জাল ফেলেও তেমন একটা ইলিশ পাওয়া যায় না। দুই-চারটি পাওয়া গেলে তা দিয়ে খরচের টাকাও উঠে না। তার ওপর এখন তেলের দাম বৃদ্ধিতে তাদের খরচ আরও বেড়ে গেল। তাই তারা নদীতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
জেলে আমিনুল জানান, শুক্রবার বিকালে ৮৫০ টাকার ১০ লিটার ডিজেল কিনে নদীতে গেছেন। ফিরে এসে মাত্র ৫০০ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। পরদিন সকালে তেলের জন্য গেলে প্রতি লিটার তেল ১১৫ টাকা চাচ্ছে দেখে কন্টেইনার নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। এই পরিস্থিতি কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।
জেলেরা জানান, তেল ও খাবারসহ কয়েক হাজার টাকার মালামাল নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে যেতে হয়। গুটি কয়েক ইলিশ পাওয়া গেলেও তা দিয়ে খরচের টাকাও ওঠে না।
আড়তদার মো. ইউনুছ জানান, তার আড়তে ১২টি জেলে ট্রলার মাছ বিক্রি করে। নদীতে মাছ কম থাকায় আগে থেকেই অর্ধেক ট্রলার নদীতে যায় না। এর মধ্যে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় শনিবার সকাল থেকে একটি ট্রলারও নদীতে যায়নি।
আরও পড়ুন: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি: গণপরিবহন বন্ধে দেশজুড়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ
ভোলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভোলা জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা এক লাখ ৪৪ হাজার। এর মধ্যে সাগরে মাছ শিকারে যায় ৬৪ হাজার জেলে। তবে নিবন্ধিন ছাড়াও আরও প্রায় কয়েক হাজার জেলে রয়েছে।
ভোলার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ জানান, তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে জেলেদের ওপর প্রভাব পড়বেই। কারণ তেলের ওপর নির্ভর করেই জেলেদের নদীতে যেতে হয়। তবে তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে মাছের মূল্যও বৃদ্ধি পাবে।
মাছ ধরা শুরু, ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পেয়ে খুশি বরগুনার জেলেরা
সরকারের নিষেধাজ্ঞা পর দীর্ঘদিন ৬৫ দিন পর সমুদ্রে মাছ শিকারে নেমেছে বরগুনার পাথরঘাটা উপকূলের জেলেরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রবিবার দিবাগত রাত ১২টার পর ট্রলার নিয়ে মাছ শিকারে নেমে প্রথম দিনেই জেলেদের জালে প্রচুর পরিমানে মাছ ধরা পড়েছে। জাল ভর্তি ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পেয়ে হাসি মুখে ফিরেছেন জেলেরা।
এদিকে, দীর্ঘদিন পর ট্রলারভর্তি মাছ নিয়ে বিএফডিসি ঘাটে পৌঁছানোর ট্রলার মালিক, আড়তদার ও জেলেদের উল্লাস দেখা যায়।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে ২ মাসের নিষেধাজ্ঞার পর মাছ ধরা শুরু
জেলে জব্বার মিয়া বলেন, একটা খেও দিছি যা পাইছি তাড়াতাড়ি করে ভালো দামের জন্য তাই নিয়াই প্রথম বাজার ধরলাম।
সরেজমিনে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দেখা গেছে, মৎস্য ঘাটে প্রায় ২৫টি মাছ ধরার ট্রলার নোঙর করে আছে। ওই ট্রলার থেকে ঘাট শ্রমিকরা মাছ উঠাচ্ছেন। অপরদিকে টল সেটে হাঁক ডাকে মাছ বিক্রি হচ্ছে।
জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, প্রথম দিনে অন্তত ২৫টি মাছ ধরা ট্রলার ঘাটে এসেছে। জেলেরা বলছে ভালোই মাছ পাচ্ছে। দামও ভালো মিলছে।
আরও পড়ুন: তিন মাস বন্ধের পর কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা শুরু
বিএফডিসির মার্কেটিং অফিসার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, প্রথম দিনে বিএফডিসি মৎস্য বাজারে মোট ১১ হাজার ৮৬৯ কেজি মাছ বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে সাত হাজার ৭৮০ কেজি ইলিশই বিক্রি হয়েছে। আর অন্যান্য চার হাজার ৮৯ কেজি মাছ বিক্রি হয়েছে। সব মিলিয়ে ৬৭ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৮৪ হাজার ৪৬০ টাকা।
বন্যায় ভেসে গেছে ৮ কোটি টাকার মাছ-চিংড়ি-কাঁকড়া
সাতক্ষীরায় খোলপেটুয়া নদীর উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে পানির স্রোতে ভেসে গেছে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের মাছের ঘের ও কাঁকড়া খামার। বাঁধ ভাঙার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও বাঁধ মেরামত করা যায়নি। এ কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বাঁধ ভেঙে পানিতে ভেসে গেছে এক হাজার ৬৫৫ হেক্টর চিংড়ি ও কাঁকড়া খামার। এর মধ্যে পুকুর রয়েছে ১০০টি। চিংড়ি, কাঁকড়া, সাদা মাছ, মাছের পোনাসহ আনুষঙ্গিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আট কোটি ২৮ লাখ টাকার।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা প্রস্তুত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তালিকা প্রস্তুত সম্পন্ন হলে সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রণোদনার চেষ্টা করবেন।
আরও পড়ুন: বন্যা: সিলেট নগরীর সড়কে ক্ষতি ২০০ কোটি টাকা
মহানন্দায় ধরা পড়লো ৩২ কেজির বাঘাইড় মাছ
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় মহানন্দা নদীতে সম্প্রতি একদল যুবকের জালে ৩২ কেজি ওজনের একটি বাঘাইড় মাছ ধরা পড়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদরত ই খুদা মিলন জানান, তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ গ্রামের সোহাগ, আনিছুর, মনছুর, বকুলসহ কয়েকজন যুবক মহানন্দা নদীতে মাছ ধরতে যায়। নদীর পানিতে বড় মাছের অবস্থান টের পেয়ে তারা জাল ফেলেন। এক পর্যায়ে জাল দিয়ে মাছটি ধরে নদীর পাড়ে নিয়ে আসেন। মাছটি বাসায় নিয়ে আসলে উৎসুক জনতা মাছটি এক নজর দেখতে ভিড় জমান।
আরও পড়ুন: সিলেটের বাজারে ২০০ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ!
মাছ ধরা দলের সদস্য বকুল, আনিছুর ও মনছুর জানান, শখের বসে বন্ধুরা মিলে প্রতিবছর মহানন্দায় মাছ ধরতে যাই। এর আগেও বাঘাইড় মাছ ধরেছি। তবে এবারের বাঘাইড় মাছটি বড়। কিছু মাছ নিজেদের জন্যে রেখে অবশিষ্ট মাছ প্রতি কেজি ১৫০০ টাকা দরে বাজারে বিক্রি করা হয়েছে। নদী থেকে বড় মাছ ধরতে পারাটা সত্যিই আনন্দের।
সুন্দরবনে ৩ মাস মাছ ধরা নিষেধ
সুন্দরবনে ১ জুন থেকে মাছ আহরণ ও দর্শণার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বন বিভাগ।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্লানেলের (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী এই তিন মাস বেশিরভাগ প্রজাতির মাছের প্রজনন সময়। তাই সুন্দরবনে সব ধরনের প্রবেশাধিকার বন্ধ রাখা হয়।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে বাঘের পাশাপাশি গণনা করা হবে হরিণ ও শূকর
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রবেশের অনুমতি দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে বন বিভাগ এবং সুন্দরবনেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
ডিএফও বলেন, সাধারণ ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ থাকে। এই বছর মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এই নিষেধাজ্ঞা এক মাস বৃদ্ধি করে ১ জুন থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় মাছের প্রজনন আরও বেশি বৃদ্ধি পাবে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে পর্যটন: সেবা কার্যক্রম উন্নত করতে অটোমেশনের দিকে নজর
সুন্দরবনের ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে ২১০ প্রজাতির সাদামাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মালাস্কা ও এক প্রজাতির লবস্টার রয়েছে।