উপকূল
শৈবাল: সুন্দরবন উপকূলে স্বপ্ন দেখাচ্ছে কৃষকদের
সামুদ্রিক শৈবাল বাণিজ্যিক চাষের সম্ভাব্যতা যাছাই চলছে। সফলতাও পেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। এতে নতুন আয়ের পথ সৃষ্টি হয়েছে সুন্দরবন উপকূলে। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ সংলগ্ন খুলনার কয়রায় ও সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সামুদ্রিক শৈবাল চাষের সম্ভাব্যতা যাচাই করে সফলতা পায় সরকারের কৃষির উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা সংস্থাটি।
বর্তমানে সামুদ্রিক শৈবালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারেও। ফলে সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় চাষ সম্প্রসারণ করার পাশাপাশি বাজারজাতের ব্যবস্থা করতে পারলে নতুন আয়ের দুয়ার খুলবে।
শ্যামনগর উপজেলার দাতিনাখালীর মো. শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রায় দু’বছর আগে প্রশিক্ষণ দেয়ার পরে বীজ দিয়েছিল। এখানে আমরা ৩০ জন চাষ করি। তেমন কোন কষ্ট নেই। মাঝেমধ্যে রশিতে আবর্জনা বাধলে ছাড়িয়ে দিতে হয়। দুই রকম বীজ দিয়েছিল। এর মধ্যে বারি ১ খুব ভালো হয়।
তিনি আরও বলেন, শৈবাল কাঁচা অবস্থায় আমাদের কাছ থেকে স্যারেরা প্রতি কেজি ১২০ টাকা দরে কিনে নেয়। আমি এ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকার শৈবাল বিক্রি করেছি। বড় আকারে চাষ করতে পারলে তেমন কোনো পরিশ্রম ছাড়াই বেশ আয় যোগ করা যাবে।
আরও পড়ুন: শাবি অধ্যাপকের উদ্ভাবন: স্থলজ পরিবেশে হবে সামুদ্রিক শৈবাল
খুলনার কয়রা উপজেলার টেপাখালী গ্রামের বাসন্তী মুন্ডার বলেন, নোনা পানির মাছের ঘেরের মধ্যে রশি টানিয়ে শৈবালের বীজ বেঁধে রেখে দেই। এই শৈবাল পানি থেকে সরাসরি পুষ্টি নিয়ে বাড়ে। এদের কোনো মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল বা ফল হয় না। এটা দেখতে সেমাইয়ের মত।
তিনি বলেন, সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি বীজসহ যাবতীয় উপকরণের ব্যবস্থা করেছে।
একই উপজেলার ছয় নং কয়রা গ্রামের গোলাম মোস্তফাও মৎস্য ঘেরের মধ্যেও একইভাবে শৈবাল চাষ করছেন।
তিনি বলেন, পানির এক ফুট নিচ দিয়ে শক্ত রশি টানটান করে টানানো হয়েছে, বাঁশের সঙ্গে রশি বাঁধা রয়েছে। সেই রশিতে ১৫ সেন্টিমিটার পরপর শৈবালের বীজ বেঁধে দেয়া হয়। কোনো পরিচর্যা ছাড়াই বড় হয়। পরে আমাদের কাছ থেকে স্যারেরা নিয়ে যাচ্ছে। শুনেছি এগুলো অনেক কাজে লাগে, মানুষেও খায়।
পরীক্ষামূলক সামুদ্রিক শৈবাল চাষ চলছে সুন্দরবন উপকূলীয় শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জের পালবাড়িওতে। সুন্দরবন উপকূলের প্রায় শতাধিক চাষির ঘেরের নোনাপানির নিচে রশিতে দুলছে নতুন স্বপ্ন।
সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, কয়রার (এমএলটি সাইট) সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জাহিদ হাসান বলেন, কৃষকদের উৎপাদন ভালো হচ্ছে। যা উৎপাদন হচ্ছে সেটা শুকিয়ে রেখে দেয়া হচ্ছে। বাজারজাতের ব্যবস্থা করতে পারলে কৃষকরা আরও আগ্রহী হবে এবং লাভবান হবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক ড. দেবেষ দাস (উবনবংয উধং) বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের ল্যাবরেটরির আওতায় স্বল্প পরিসরে একটি গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এখনও ফলাফল পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, সামুদ্রিক শৈবাল মানুষের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি গুড়া করে হারবাল পণ্য হিসেবে মানুষ ব্যবহার করতে পারে। প্রসাধনী তৈরিতেও এটির গুরুত্ব রয়েছে। এছাড়া কৃষিক্ষেত্রে এটির ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। শুকিয়ে পাউডার হিসেবে মাটিতে ব্যবহার করলে মাটির পুষ্টি ধারণ ও পানি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, লবণাক্ততার প্রভাব কমাবে।
এছাড়া ক্ষতিকর ব্যাকটোরিয়া যেগুলো ফসলে রোগ সৃষ্টি করে সেটা নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে।
আরও পড়ুন: রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান
‘মানদৌস’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলেও বাংলাদেশে আঘাত হানবে না: আবহাওয়া অধিদপ্তর
দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মানদৌস’ পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে একই এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক ইউএনবিকে বলেন, ‘বাংলাদেশের উপকূলে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই এবং এটি ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ ও তামিলনাড়ু উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। যা দুর্বল হয়ে আছড়ে পড়ার সময় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তের বুলেটিনে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৬৯০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৬৪০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৫৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৫৬০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বেশ উত্তাল রয়েছে।
বুলেটিনে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে দুই (০২) নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরের সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে চলাচল না করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে: আবহাওয়া অফিস
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ গভীর নিম্নচাপে পরিণত
ঘূর্ণিঝড় ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি) জানিয়েছে, উত্তর আন্দামান সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি দক্ষিণ আন্দামান সাগর এবং দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের সংলগ্ন এলাকাগুলোতে একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে এবং ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশের উপকূল ও পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
আইএমডি বুলেটিনে বলা হয়েছে, উত্তর আন্দামান সাগর এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ওপর একটি ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাওয়ার প্রভাবে বুধবার উত্তর আন্দামান সাগর এবং দক্ষিণ আন্দামান সাগর এবং দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের সংলগ্ন এলাকায় একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছিল এবং এটি একইভাবে অব্যাহত ছিল।
আরও পড়ুন: বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’
এটি পশ্চিম থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ২২ অক্টোবরের দিকে পূর্ব-মধ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন এলাকায় একটি নিম্নচাপ হবে এবং ২৩ অক্টোবর গভীর নিম্নচাপে ঘনীভূত হওয়ার বেশ সম্ভাবনা রয়েছে।
পরবর্তীকালে এটি ২৪ অক্টোবরের মধ্যে পশ্চিম-মধ্য এবং তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। যা উত্তর দিকে ফিরে আসতে পারে।
বুলেটিনে আরও বলা হয়েছে, এটি ধীরে ধীরে উত্তর থেকে উত্তর-পূর্ব অংশগুলোতে অগ্রসর হতে পারে এবং ২৫ অক্টোবরের মধ্যে ওডিশা উপকূল ঘেঁষে বাংলাদেশের উপকূল পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
আইএমডি উপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ২৩ অক্টোবর থেকে গভীর সমুদ্রে জেলেদের না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
এছাড়াও যারা বর্তমানে গভীর সাগরে রয়েছেন তাদের ২২ অক্টোবর রাতের মধ্যে উপকূলে ফিরে আসার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: দেশে আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস আবহাওয়া অধিদপ্তরের
দেশের অধিকাংশ স্থানে আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে
ঘূর্ণিঝড় ইয়ান: ফ্লোরিডায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৭
পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলিনা উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় ইয়ান। প্রলয়ঙ্কর এই ঝড়ের তাণ্ডবে অন্তত ২৭ জন নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছেন।
ইয়ানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানা সবচেয়ে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে একটি বলে অনুমান করা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের বেশির ভাগ সময় ধরে মানুষকে আতঙ্কে রাখা এই আটলান্টিক মহাসাগরের উষ্ণস্রোতে শক্তি সংগ্রহ করে দক্ষিণ ক্যারোলিনায় আঘাত হানার আগে পশ্চিত কিউবায়েআঘাত হানে এবং ফ্লোরিডায় তাণ্ডব চালায়।
সপ্তাহের শুরুতে ফ্লোরিডার উপসাগরীয় উপকূল অতিক্রম করার তুলনায় শুক্রবার অনেক দুর্বল বাতাসসহ ইয়ানের কেন্দ্রস্থল দক্ষিণ ক্যারোলিনার জর্জটাউনের কাছে উপকূলে এসে আঘাত হানে।এর ফলে চার্লসটনের ডাউনটাউন উপদ্বীপের অনেক এলাকা ডুবে গেছে। এতে উপকূল বরাবর মাইর্টল সমুদ্র সৈকতের দুটি সহ মোট চারটি জেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অনলাইনে ক্যামেরাগুলোতে দেখা গেছে যে গার্ডেন সিটির আশেপাশের অঞ্চলে সমুদ্রের পানি প্রায় হাঁটু পর্যন্ত উঠেছে।
আরও পড়ুন: আটলান্টিক কানাডা উপকূলে আঘাত হানতে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ফিওনা
ইয়ান শুক্রবার সন্ধ্যায় উত্তর ক্যারোলিনা যাওয়ার পথে দক্ষিণ ক্যারোলিনা পার হওয়ার সময় ঘূর্ণিঝড় থেকে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।
এর আগে ইয়ান ফ্লোরিডায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় এবং এর উভয় উপকূল প্লাবিত করে। এতে বেশকিছু বাড়ি ধসে যায় এবং সমুদ্র সৈকতের পাড়ে থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতির মুখে পড়ে। পাশাপাশি অন্তত ২০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে।
দুর্যোগ মডেলিং ফার্ম কারেন ক্লার্ক অ্যান্ড কোম্পানির মতে, হারিকেন ইয়ান সম্ভবত ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি ক্ষতি করেছে। যার মধ্যে ছয় হাজার ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ সম্পদের ব্যক্তিগত বীমা করা আছে। সঠিক সংখ্যাটি উঠে আসলে ইয়ান হবে মার্কিন ইতিহাসে চতুর্থ ব্যয়বহুল ঘূর্ণিঝড়।
আরও পড়ুন: বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বেই যেসব খাবার সংরক্ষণ করা জরুরি
প্রিয়জনকে শনাক্ত ও উদ্ধার করতে মরিয়া হয়ে সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহারকারীরা তাদের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের ফোন নম্বর, ঠিকানা ও ছবি অনলাইনে শেয়ার করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ওয়াশিংটনে দেয়া ভাষণে কবলেন, তিনি জীবন বাঁচাতে ও বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সহায়তা পাঠাতে সম্ভাব্য সমস্ত পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এর পুনর্নির্মাণ কাজ করতে কয়েক মাস থেকে বছর লাগবে। আমি শুধু ফ্লোরিডার জনগণকে জানাতে চাই, আপনারা যে কষ্টের মধ্যদিয়ে যাচ্ছেন তা আমরা দেখছি এবং আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ৮ শিশুসহ নিহত ১৩
আটলান্টিক কানাডা উপকূলে আঘাত হানতে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ফিওনা
প্রবল বৃষ্টি ও তীব্র বাতাস নিয়ে আটলান্টিক কানাডা উপকূলে আঘাত হানতে যাচ্ছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফিওনা। শনিবার সকালে দেশটির পূর্বাভাসকারীরা সতর্ক করে বলেছেন, এটি দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় হতে পারে।
শুক্রবার রাতে ফিওনা হারিকেন থেকে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়েছে।
যদিও আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হলেও ফিওনার প্রভাবে এখনও হারিকেনের মত তীব্র বাতাস প্রবাহিত হতে, প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হতে ও সমুদ্রে বড় আকারের ঢেউ তৈরি হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় দুই লাখ সাত হাজার নোভা স্কোটিয়ার পাওয়ার গ্রাহক মধ্যরাতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শিকার হয়েছেন।
দ্রুত ধাবমান ফিওনা শনিবার ভোরের আগে নোভা স্কটিয়ার মাটিতে আঘাত করবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। শুক্রবার ভোরে বারমুডা উপকূল পার হওয়ার সময় ঘূর্ণিঝড়টি আগের চেয়ে অনেক দুর্বল হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: দেশে ২৪ ঘণ্টায় আরও বৃষ্টি হতে পারে
কানাডিয়ান হারিকেন সেন্টার নোভা স্কটিয়া, প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড ও নিউফাউন্ডল্যান্ডের উপকূলীয় বিস্তৃতির জন্য একটি হারিকেন সতর্কতা জারি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার বলেছে, প্রবল বাতাসসহ শক্তিশালী ক্রান্তীয় সাইক্লোন হিসেবে ফিওনা এই অঞ্চলে আঘাত হানবে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, ‘এটি মারত্মক হতে যাচ্ছে।’
ট্রুডো নাগরিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশাবলী শুনুন এবং পরবর্তী ২৪ ঘন্টা নিরাপদ স্থানে অবস্থান করুন।’
যুক্তরাষ্ট্রের হারিকেন সেন্টার জানিয়েছে, শুক্রবার দিনশেষের দিকে ফিওনা ক্যাটাগরি ২ শক্তিতে ছিল। সেসময় এটি সর্বোচ্চ ১০৫ মাইল (১৬৫ কিমি) বেগে বাতাস বয়েছিল। এটি হ্যালিফ্যাক্স, নোভা স্কটিয়ার প্রায় ১৪০ মাইল (২২০ কিলোমিটার) দক্ষিণ-পূর্বে কেন্দ্রীভূত ছিল। যা ৪৬ মাইল (৭৪ কিলোমিটার) বেগে উত্তর-পূর্ব দিকে যাচ্ছিল। হারিকেন সৃষ্ট বাতাস কেন্দ্র থেকে ১৮৫ মাইল (২৯৫ কিলোমিটার) পর্যন্ত বাইরের দিকে প্রসারিত হয়েছিল এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় সৃষ্ট বায়ু ৩৪৫ মাইল (৫৫৫ কিলোমিটার) পর্যন্ত বাইরের দিকে প্রসারিত হয়েছিল।
নোভা স্কটিয়ার ডার্টমাউথের কানাডিয়ান হারিকেন সেন্টারের আবহাওয়াবিদ ইয়ান হাবার্ড বলেন, ‘এটি অবশ্যই আমাদের দেশের উপকূলে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে একটি হতে চলেছে।’
হাবার্ড বলেছেন, ঝড়টি শীতল জলের ওপর দিয়ে যাওয়ার কারণে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং হারিকেনের শক্তি নিয়ে এটি স্থলভাগে আঘাত হানার সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই, নামল সতর্ক সংকেত
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ: সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত
উপকূলীয় ১৫ জেলার নিম্নাঞ্চল বন্যার ঝুঁকিতে
দেশের উপকূলীয় ১৫টি জেলার নিম্নাঞ্চল, উপকূলীয় দ্বীপ ও চরাঞ্চল জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুক্রবার আবহাওয়া অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।
প্লাবনের আশঙ্কা থাকা জেলাগুলো হলো- সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার।
এছাড়া ঝড়ো আবহাওয়া সামুদ্রিক বন্দর, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশের তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এছাড়াও, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সারাদেশে শুক্রবার বৃষ্টি হতে পারে
দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা
অশনি: উদ্বেগে সাতক্ষীরা উপকূলীবাসী, মোকাবিলায় প্রস্তুত আশ্রায়কেন্দ্র
ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে সাতক্ষীরায় মঙ্গলবার সকাল থেকে আকাশ কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও দুপুর পর্যন্ত কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি।
এছাড়া উপকূলীয় নদী বেশ উত্তাল হওয়ায় এই এলাকার মানুষজন উদ্বেগের মধ্যে সময় পার করছেন। তবে অশনি মোকাবিলায় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসন জানায়, শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় ২৯৭টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে প্রায় দুই লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এছাড়া খাদ্য, তাবু ও নগদ তিন লাখ টাকা মজুদ রাখা হয়েছে। প্রতিটি এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করে অশনির প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি
স্থানীয়রা জানায়, সুন্দরবন উপকূলবর্তী শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় নদীর জোয়ারের পানি এক থেকে দেড় ফুট বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ৩০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো সংস্কারের কাজ চলছে। আম চাষিরা ঝড়ের ভয়ে অপুষ্ট আম গাছ থেকে পেড়ে ফেলছে। ফলে আম চাষিরা ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক এলাকায় কৃষকেরা এখনও বোরো ধান ঘরে তুলতে পারেনি। তবে কেউ কেউ ঝড়ের আগেই খেতের ধান বাড়ি তোলার জন্য রাত-দিন কাজ করছে।
শ্যামনগর উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম আতাউল হক দোলন বলেন, গত বছর আম্পানের ক্ষতি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি মানুষ। এরই মধ্যে অশনির সংকেত যেন মানুষের মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবীর জানান, ঘূর্ণিঝড় অশনি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঝড়ের আগেই যাতে সাধারণ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেন সেজন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
‘অশনি’র প্রভাবে উপকূলজুড়ে বৃষ্টিপাত
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে রবিবার সকাল থেকে পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিস সোমবার সকাল ৯টার দিকে ৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।
সোমবার দুপুরে এটিকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এক হাজার ১০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা বন্দর থেকে এক হাজার ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা বন্দর থেকে এক হাজার কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল বলে আবহাওয়া অফিসের বুলেটিনে বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘অশনি' মোকাবিলায় বরিশালে প্রস্তুত প্রায় ৫ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, জেলেদেরকে ঘূর্ণিঝড় সর্ম্পকে অবহিত করা হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় অশনি সম্পর্কে কোনো নির্দেশনা পাইনি। পরবর্তী নির্দেশনা পেলে জেলেদেরকে জানিয়ে দেয়া হবে।
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন বলেন, আমাদের লোক মাঠে আছেন; তারা কৃষকদেরকে পরামর্শ দিচ্ছেন এবং সতর্ক বার্তা দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে কৃষকরা ৫০ শতাংশ মুগডাল ঘরে তুলেছেন। বাকি ডাল দ্রুত ঘরে তোলার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৮০ শতাংশ ধান পেকেছে এমন বোরো খেতের ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এলাকায় এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন- চার নম্বর সতর্কতা সংকেত পাওয়ার পরে আমাদের প্রস্তুতি সভা হবে। তারপরও আমরা ঘূর্ণিঝড় 'অশনি' সম্পর্কে অবজারভেশনে আছি।
এদিকে বৃষ্টির কারণে রবিশস্য নিয়ে বিপদে পড়েছে এ অঞ্চলের হাজারো কৃষক পরিবার।
গলাচিপা উপজেলার বাউরিয়া এলাকায় কৃষক ইউনুস হাওলাদার বলেন,লোকমুখে অশনির কথা শুনেছি। প্রায় এক-দেড় একর জমিতে ঘরে তোলার উপযোগী পাকা মুগডাল রয়েছে। কিন্তু মজুর সঙ্কটে সেই ডাল ঘরে তুলতে পারিনি। ঘূর্ণিঝড়ে যদি জল ওঠে, তা হলে সব ডাল ভেসে যাবে।
আরও পড়ুন: ‘অশনি’: তিন বিভাগে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস
ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’: আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে
বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’
বাংলাদেশের উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ আঘাত হানবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় পূর্ব প্রস্তুতি বিষয়ে সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গতকাল জানতে পেরেছি ভারত মহাসাগরের আন্ধামান দ্বীপপুঞ্জের নিকট একটি সাইক্লোনিক সিস্টেম ডেভলপ করেছে। যেটা ৯ তারিখের মধ্যে হয়ত লঘুচাপে রুপান্তরিত হবে, যেটাকে আমরা লো প্রেসার বলি। এরপর ধীরে ধীরে এটা সুস্পষ্ট লঘুচাপ বা লো প্রেসারের রুপ ধারণ করবে। এরপর ১১ তারিখের দিকে নিম্নচাপে রুপান্তরিত হয়ে নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণিঝড়ে রুপান্তর হওয়ার আশঙ্কা করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’: চাঁদপুরে ৪৪২ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি
তিনি বলেন, যদি ঘূর্ণিঝড় হয় তাহলে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হবে ‘অশনি’। এটার ল্যান্ডফলটা এখন পর্যন্ত ক্যালকুলেশন হয়নি। নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পর জানাতে পারব কবে এটা বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানবে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ উত্তর-পূর্ব দিকে ভারতের উড়িষ্যা, পশ্চিম বাংলা হয়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায় আঘাত হানতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিপিপি ভলান্টিয়ারদের অবহিত করা, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবহিত করা এবং গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করতে হবে। আমাদের প্রায় সাত হাজার আশ্রয় কেন্দ্র আছে। প্রয়োজনে স্কুল কলেজ এবং অন্যান্য ভবন কাজে লাগাবো। আম্ফানের সময় ১৪ হাজারের বেশি সেল্টার সেন্টার প্রস্তুত করেছিলাম। সেখানে প্রায় ২৪ লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয় দিতে পেরেছিলাম। আমাদের সেই সক্ষমতা ও প্রস্তুতি আছে। আশা করি আমরা সুন্দরভাবে এটি মোকাবিলা করতে পারব।
আরও পড়ুন: ওমানে ঘূর্ণিঝড়ে নিহত ৩ প্রবাসীর গ্রামের বাড়িতে শোক
উপকূলে পানির জন্য হাহাকার, মিলছে না প্রকল্পের সুফল
খুলনার কয়রায় গ্রীষ্মের শুরুতেই পানির জন্য রীতিমতো হাহাকার চলছে। চারদিকে পানি আর পানি, কিন্তু সবটাই লবণাক্ত। নারী-পুরুষ এমনকি শিশুরাও পরিবারের জন্য সুপেয় পানি সংগ্রহে পাড়ি দিচ্ছে মাইলের পর মাইল। অনেকে বাধ্য হয়ে পান করছেন পুকুরের কাঁদামিশ্রিত ও লবণযুক্ত পানি।
চৈত্রের খরায় প্রাকৃতিক উৎসগুলো শুকিয়ে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, লবণাক্ততা বেড়ে সুপেয় পানির আধার নষ্ট হওয়া, গভীর নলকূপের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে মিলছে না সুপেয় পানি। দীর্ঘদিনের এ সমস্যায় উপকূলে জনপদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলেছে।
উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর বটতলা সরকারি পুকুরপাড়ে মহেশ্বরীপুর গ্রাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পানি নিতে এসেছেন ষাটোর্ধ্ব জোরিনা খাতুন। বয়সের ভারে অনেক পথ হেঁটে আসায় হাঁপিয়ে উঠেছেন তিনি। ক্লান্তি দূর করতে কলসি রেখে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘পানির অনেক কষ্ট আমাদের। প্রতিদিন চার কলস পানি লাগে আমার। একবারে চার কলস পানি নিতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে দুইবার আসতে হয় এখানে। পানি নিতে আমি আর আমার মেয়ে আসি। দুজন দু’কলস করে পানি নিয়ে যাই।’
তিনি আরও বলেন, বয়স হয়ে গেছে এখন আর হাঁটতে পারিনা। দুই বার পানি আনতে দিনের আধা বেলা লেগে যায়। আমাদের আশেপাশে আর কোথাও মিষ্টি পানি না থাকায় এই পানি দিয়ে খাওয়া ও রান্নার কাজ করতে হয়।
সাতহালিয়া গ্রামের নাসির মোড়ল বলেন, আমার বয়স ৭৭ বছর।এই ৭৭ বছর পার করলাম পুকুরের পানি খেয়ে। কারণ আমাদের এখানে টিউবওয়েলের পানি ভাল হয় না। আমরা সবাই মিলে একবার একটা টিউবওয়েল বসানোর ব্যবস্থা করেছিলাম, কিন্তু তিন হাজার ফুট নিচেও মিষ্টি পানি পাইনি।
আরও পড়ুন: পানির অপচয় রোধে রিসাইক্লিং করার উদ্যোগ নিতে হবে: স্থানীয় সরকার মন্ত্রী