আদুরী
মাকে শেষ বিদায় জানাতে এসে স্বামী-সন্তানকেও বিদায় জানাতে হলো আদুরীকে
মায়ের মৃত্যুর খবরে মাকে শেষ বিদায় জানাতে ঢাকা থেকে স্বামী ও শিশুসন্তান নিয়ে স্পিডবোটে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চরডাঙ্গা গ্রামে আদুরী বেগম তার বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে দুর্ঘটনায় সাথে থাকা স্বামী ও শিশু সন্তানকেও হারাতে হলো তাকে।
সোমবার সকালে শিবচরের বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মাকে শেষ বিদায় জানাতে এসে স্বামী-সন্তানকেও শেষ বিদায় জানাতে হলো আদুরীকে।
আরও পড়ুন: সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৪ জনসহ নিহত ৫
নিজের শরীরে আঘাত, তার ওপর স্বামী-সন্তান হারানোর শোক। সব মিলিয়ে বাকরুদ্ধ আদুরী। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন তাকে নিয়ে যান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বেলা ১১টার দিকে ঘাটে গিয়ে একমাত্র জীবিত যাত্রী হিসেবে তাকেই পাওয়া যায়। এই রিপোর্ট (সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা) লেখা পর্যন্ত স্বামী-সন্তানের মরদেহ নিয়ে বোয়ালমারীর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন আদুরী।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২, আহত ৩
জানা যায়, মাদারীপুরের শিবচরে বালুবোঝাই বাল্কহেড ও স্পিডবোটের সংঘর্ষের ঘটনায় ২৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে আদুরী বেগমের স্বামী আরজু সরদার (৫০) ও ছেলে মো. ইয়ামিন সরদার (০২) রয়েছে। এ ঘটনায় ৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। জীবিত ৫ জনের মধ্যে আদুরী একজন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের পঁচা মাগুরা গ্রামের পান্নু সরদারের ছেলে আরজু সরদারের (৫০) সাথে পার্শ্ববর্তী আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চরডাঙ্গা গ্রামের ইকরাম মোল্লার মেয়ে আদুরী বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে আরজু সরদার স্ত্রী আদুরীকে নিয়ে ঢাকাতেই থাকতেন। ঢাকায় ব্যবসা করতেন আরজু সরদার। রবিবার রাতে শাশুড়ি মনোয়ারা বেগম মারা যাওয়ার খবর শুনে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চরডাঙ্গা গ্রামের শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন আরজু সরদার। কিন্তু বাড়ি পৌঁছানোর আগেই সন্তানকে নিয়ে চলে গেলেন পরপারে।
আরও পড়ুন: এপ্রিলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৬৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি
আলফাডাঙ্গা উপজেলার চরডাঙ্গা গ্রামের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আরিফুল ইসলাম জানান, আরজু সরদারের শাশুড়ি মনোয়ারা বেগম মারা যাওয়ার খবর শুনে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চরডাঙ্গা গ্রামের শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন আরজু সরদার।
তিনি আরও জানান, স্পিডবোটে পদ্মা নদী পার হওয়ার সময় তারা দুর্ঘটনার শিকার হন। ঘটনাস্থলেই আরজু সরদার ও তার শিশু সন্তান ইয়ামিন মারা যায়। গুরুতর আহত হন স্ত্রী আদুরী বেগম। আরজু সরদার ও ছেলে ইয়ামিনের মরদেহ বোয়ালমারীর শেখর ইউনিয়নের পঁচা মাগুরা গ্রামে আনা হচ্ছে।
বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইসরাফিল মোল্যা জানান, একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। আরজু সরদার আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা। সে দুই বিয়ে করলেও প্রথম স্ত্রীর ঘরে একটি মেয়ে ছিল যে আগেই মারা গেছে।
তিনি আরও জানান, দ্বিতীয় স্ত্রী আদুরী বেগমের ঘরে মো. ইয়ামিন সরদার নামে একমাত্র ছেলে সন্তান ছিল। তার সংসারে স্ত্রী আদুরী ছাড়া আর কেউ রইলো না। আরজু সরদার ও ছেলে ইয়ামিনের মরদেহ বাড়িতে আনা হচ্ছে। মরদেহ আসার পর বোয়ালমারী থানা পুলিশের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে পিতা-পুত্রের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো গ্রামে। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ।
বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আশিকুর রহমান বলেন, মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে একটি স্পিডবোট বাংলাবাজার ফেরিঘাটের দিকে যাচ্ছিল। স্পিডবোটটি বাংলাবাজার ফেরিঘাটের পুরোনো কাঁঠালবাড়ি ঘাটের কাছাকাছি আসার পর বালুবোঝাই বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে স্পিডবোটটি উল্টে যায়। এ ঘটনায় ২৬ জনের প্রাণহানি হয়।
এ ঘটনায় মাদারীপুর স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজাহারুল ইসলামকে প্রধান করে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন। এছাড়া নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়।
জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন বলেন, তদন্ত কমিটিকে আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
লকডাউনে স্পিডবোট বন্ধ থাকার পরেও কেন এমন দুর্ঘটনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্পিডবোটটি মুন্সিগঞ্জ থেকে ছেড়ে বাংলাবাজার আসে। তারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্পিডবোট ছাড়ে। এসব বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে এ ঘটনায় আহত অবস্থায় উদ্ধার স্পিডবোটের চালককে আটক করা হয়েছে। তাকে পুলিশের নজরদারিতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন।
৩ বছর আগে