কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি
কুড়িগ্রাম জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও কমেনি মানুষের দুর্ভোগ। তবে চর ও নদ-নদীর অববাহিকার নিচু এলাকাগুলোতে এখনও পানি জমে আছে। পানিবন্দি রয়েছে হাজার হাজার মানুষ। অনেকের ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও সেগুলো বসবাসের উপযোগী হয়নি। দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। গ্রামীণ ও চরের রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াতে ভোগান্তি বেড়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার নিচে নেমে যাওয়ায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতের চিহ্ন দৃশ্যমান হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, বন্যায় জেলায় প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সাত হাজার কৃষক। পুরো পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব নিরূপণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, চলতি বন্যায় প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত ৫৩৮ মেট্রিক টন চাল, ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ত্রাণ কার্যক্রম চলমান আছে।
তবে সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগ বানভাসিদের দুর্ভোগ কমাতে পারেনি। অনেক চরাঞ্চলে এখন পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছেনি। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, শৌচাগার ও গো খাদ্যের তীব্র সংকট রয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া ৩২৫টি স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি।
আরও পড়ুন: আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস, তবে রবিবার ১১টি জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ
কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নদ-নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তা, ধরলাসহ অন্যান্য নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পানিবন্দি থাকার কারণে চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও শৌচাগারের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে অনেক এলাকার বন্যার্তরা। একই সঙ্গে গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যার্তদের সহায়তায় শাবি শিক্ষক সমিতির কার্যক্রম অব্যাহত
রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের নামা জয়কুমর গ্রামের এনছাফুল হক জানান, গো খাদ্যের অনেক দাম। তাই বৃষ্টির কারণে নষ্ট হওয়া খড় বাধ্য হয়ে গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো গোখাদ্য বিতরণ করা হয়নি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ৩২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ১৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত থাকায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এদিকে দুর্গম এলাকার অনেকেই ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছে। চাহিদার তুলনায় এখনও প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ।
সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন জানান, তার ইউনিয়নে অন্তত পাঁচ হাজার দরিদ্র পরিবার পানিবন্দী হলেও এই পর্যন্ত ৯ মেট্রিক টন চাল পাওয়া গেছে। যা দিয়ে ৯০০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল সহায়তা দেয়া যাবে।
আরও পড়ুন: বন্যার্তদের সহায়তায় শাবি শিক্ষক সমিতির কার্যক্রম অব্যাহত
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে, ত্রাণের কোনো সমস্যা নেই। পর্যায়ক্রমে সবাই ত্রাণ পাবেন। জেলার বন্যার্তদের জন্য আরও ২০০ মেট্রিক টন চাল ও ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
তিনি জানান, এই নিয়ে জেলায় ৫৩৮ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য বাবদ ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ও পশু খাদ্য বাবদ ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ করা হয়েছে। যা বিতরণ করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রামে বন্যা: ত্রাণের জন্য পানিবন্দি মানুষের হাহাকার
কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকার দুই লাখের বেশি পানিবন্দি মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন।
ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপরে এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, জেলার ২৯৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ৬৫ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে।
এছাড়া বন্যার কারণে ২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সাতটি মাদরাসা ও একটি কলেজ বন্ধ রয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বানভাসিদের দুর্ভোগ বেড়েছে, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
এদিকে খাদ্য, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের অভাবে বন্যার্তদের দুর্ভোগ তীব্র হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ জানান, বন্যা কবলিত এলাকায় টিউবওয়েল স্থাপন ও পুরাতনগুলো মেরামতের পাশাপাশি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ ও অস্থায়ী টয়লেট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রামে বানভাসিদের দুর্ভোগ বেড়েছে, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
কুড়িগ্রামে বন্যা যত স্থায়ী হচ্ছে বানভাসিদের ততই দুর্ভোগ বাড়ছে। বেশিরভাগ পরিবার বাড়ির ভিতর চৌকি উঁচু করে সেখানে অবস্থান করছে। কেউ কেউ নৌকায় গবাদিপশু নিয়ে দিনরাত পার করছে, কখন পানি নেমে যাবে। এই পরিস্থিতিতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছেন তারা। সমস্যায় পড়েছেন গবাদিপশুর খাবার নিয়ে।
সদর উপজেলার চর পার্বতীপুর গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, ‘নিজেরা না হয় কোন রকমে চলবের নাগছি কিন্তু গরু-ছাগল নিয়া খুব বিপদে আছি। খড়ের গাদা পানিতে ভিজি গেইছে। এখন কি দেই আর কি খাওয়াই। খুব দুশ্চিন্তায় আছি।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ১ লাখ ৪১ হাজার ৬১২জন মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। নাগেশ্বরী উপজেলায় ৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৬০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। বন্যায় ৩২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হওয়ায় পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। বানভাসি মানুষের কথা চিন্তা করে ৩৬১টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যা: কিশোরগঞ্জে পানিবন্দি লাখো মানুষের দুর্ভোগ চরমে
এদিকে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানা গেছে। অনেক পানিবন্দি এলাকায় সরকারি বা বেসরকারিভাবে কেউ খোঁজ নিতেও আসেনি বলে বানভাসিরা অভিযোগ তুলেছে।
সদর উপজেলার ভগবতীপুর চরের জোহরা খাতুন জানান, চুলা জ্বালাতে পারছি না। ঘরেও সবকিছু তলিয়ে গেছে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি।
উলিপুর উপজেলার বেগমগন্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা আমির হোসেন জানান, বন্যার পানিতে ঘর-বাড়ি তলিয়ে থাকায় নিজেরা তো কষ্টে আছি। এ অবস্থায় গরু ছাগলের খাবারও জোগাড় করতে পারছি না।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, আমার ইউনিয়নে ১৪শ’ পরিবার প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে আরও ৩ হাজার ৫শ’ পরিবার।
আরও পড়ুন: বন্যা দুর্গতদের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ত্রাণ সহায়তা হস্তান্তর
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র-ধরলা নদীর পানি বাড়ছে, নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। হু-হু করে বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫৫ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার এবং ধরলায় সেতু পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেতে পারে। বন্যায় এখন পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। বন্যা কবলিতদের মাঝে শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি আর সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও বানভাসিদের মধ্যে পানিবাহিত চর্ম, ডায়রিয়া, জ্বর দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করলেন প্রধানমন্ত্রী
তবে বন্যা কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব প্রাপ্ত জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, জেলার ২৮৪টি গ্রামের নিম্নাঞ্চলের ২৭ হাজার ১৯৭টি পরিবারের ১ লাখ ৮ হাজার ৭৮৮ জন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার রাজিবপুর-৭টি, রৌমারী-৪৪টি চিলমারী-২৬টি, উলিপুর-২০টি, কুড়িগ্রাম সদর-১১টি, নাগেশ্বরী এবং রাজারহাটে একটি করে মোট ১১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং জেলার ২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭টি মাদরাসা এবং একটি কলেজে সাময়িক পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
খামারবাড়ীর উপপরিচালক মো. আব্দুর রশীদ জানান, বন্যায় ১৩ হাজার ৭১১ হেক্টর ফসল নিমজ্জিত হয়েছে।
জেলা মৎস্য অফিসার কালিপদ রায় জানান, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সর্বশেষ এক হাজার ১৬৩ জন চাষির এক হাজার ২৫৭টি পুকুর/দীঘি/খামার ভেসে গিয়ে ১৭৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় দুর্ভোগ কমাতে সব ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি
নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সোমবার সকালে সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে ৪৯টি ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক চরের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রৌমারী উপজেলা। সেখানে প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে বেশ কয়েকটি পাকা সড়ক। প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা থাকায় জেলা প্রশাসন থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, বন্যার প্রস্তুতি হিসেবে জেলা প্রশাসক দপ্তরে ও প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও আইনশৃঙ্খলা সঙ্গে জড়িত কর্মকতা কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ৩৬১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মুড়িয়ারহাট এলাকায় দুধকুমার নদের একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে আরও ৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার সকালে এই বাঁধটি ভেঙে যায়। ঝুঁকিতে রয়েছে সারডোব, বাংটুরঘাট ও গুরুত্বপূর্ণ যাত্রাপুর বাজার সংলগ্ন ক্রস বাঁধটি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলায় আরও পানি বাড়বে এবং পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। সে কারণে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো মেরামতের কাজ চলছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রবিবার পর্যন্ত জেলায় ১০ হাজার ৮৯৪ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এরমধ্যে ৬ হাজার ৮০৬ হেক্টর জমির পাট ক্ষেত রয়েছে।
এদিকে বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য ও জ্বালানির তীব্র সংকট। কাজ বন্ধ হওয়ায় দিনমজুর পরিবারগুলোর ঘরে খাদ্য সংকট প্রকট হয়েছে। চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় গবাদী পশুর খাদ্য মিলছে না। চরাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে হাট বাজার যাতায়াতসহ যোগাযোগের চরম ভোগান্তিতে পড়েছে বানভাসি মানুষ।
পড়ুন: পানিবন্দি ২ লাখ মানুষ, কুড়িগ্রামে বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি
স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামী আটক
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় পারিবারিক কলহের জের ধরে শুক্রবার রাতে ২২ বছর বয়সী এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। এঘটনায় স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত আফরোজা উপজেলার পূর্ব ফুলমতি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী।
আরও পড়ুন: চাকরি না পেয়ে হতাশায় যুবকের ‘আত্মহত্যা’, গ্রেপ্তার ১
পরিবার সূত্র জানায়, বিয়ের পর থেকেই আফরোজাকে মারধর করতো দেলোয়ার। কিছুদিন আগে আফরোজা জানতে পারেন তার সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে দেলোয়ারের সম্পর্ক রয়েছে। এ নিয়ে শুক্রবার রাতে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দেলোয়ার তাকে বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করে।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৩ মামলার পলাতক আসামি গ্রেপ্তার, আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ
ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুর রহমান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেলোয়ারকে আটক করে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
পানিবন্দি ২ লাখ মানুষ, কুড়িগ্রামে বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি
কুড়িগ্রামে গত তিনদিনে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। রবিবার সকালে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। সেই সঙ্গে বানভাসী এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের তীব্র সংকট।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,গত তিনদিনে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ৯ উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের প্রায় ১৫০টি গ্রামের প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরেছে।
আরও পড়ুন: ভয়াবহ বন্যায় বন্দি সিলেটবাসী
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে রৌমারী, উলিপুর ও সদর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির বেশি অবনতি ঘটেছে। বন্যায় জেলায় প্রায় ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ফসলাদি নিমজ্জিত হয়েছে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর। নদীভাঙন ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরায় বানভাসী মানুষ রয়েছে চরম দুর্ভোগের মধ্যে।
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, এক লাখ মানুষ পানিবন্দি
উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে প্রধান প্রধান নদীর পানির বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এতে জেলার এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৬টায় সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপরে এবং চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া টানা বর্ষণে তিস্তা নদীর পানিও অনেক জায়গায় বেড়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যার্তদের জন্য ২৬ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেটসহ নগদ অর্থ বরাদ্দ
কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, ফুলবাড়ী, নাগেরশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও চিলমারী উপজেলার নিচু এলাকা ও চরাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে এবং বন্যায় প্রায় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
জেলার ৩০টি পয়েন্টে নদীভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে এবং ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বহু ঘরবাড়ি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় ছয় হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে এবং ১৫০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা
এছাড়া জেলার ৯টি উপজেলার অনেক সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বন্যার পানি বসতবাড়িতে ঢুকে পড়ায় অনেকেই রাস্তা ও বাঁধসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
গত কয়েকদিন ধরে বন্যা কবলিত এলাকার হাজারো মানুষ খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকটে ভুগছেন।
কুড়িগ্রামে আগাম বন্যা, পানিবন্দি ৫০ হাজার মানুষ
কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জিঞ্জিরাম, কালো ও ধরণী নদীর পানির কারণে আট দিন ধরে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই তিন নদীতে অস্বাভাবিক পানিবৃদ্ধি হওয়ায় কুড়িগ্রামের রৌমারী ও চর রাজীবপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে আগাম বন্যা।
জানা গেছে, রৌমারী থেকে ঢাকা সড়কের পূর্ব অংশে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করলেও পশ্চিম অংশে ব্রহ্মপুত্র, হলহলিয়া ও সোনাভরি নদী বন্যা সীমার অনেক নিচে রয়েছে। ফলে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বিচ্ছিন্ন এই দুই উপজেলার একটি অংশের মানুষের দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
নিজের অক্ষমতার কথা জানিয়ে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের খেয়ারচর গ্রামের দিনমজুর নজির হোসেন বলেন, ‘পানিত বেরবের পাই না। বেরালেই খরচ। কাজ কাম নাই। আয় উন্নতি বন্ধ। খুব সমস্যাত আছি।’
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে সুনামগঞ্জ
সরেজমিনে দেখা গেছে, পানি ভেঙে বাতেন মিয়া ডিম নিয়ে গিয়েছিলেন খেয়ারচর হাটে বিক্রি করতে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে হাটে লোকজন নাই। বিকাল ৪টার মধ্যে হাট বন্ধ হয়ে গেছে। তাই অবিক্রিত ডিম নিয়ে বাড়ি ফিরছেন তিনি।