কুড়িগ্রাম
স্বামীর লাথিতে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর মৃত্যু!
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে স্বামীর লাথিতে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার মৃত্যু হয়।মঙ্গলবার ময়না তদন্তের জন্য তার লাশ কুড়িগ্রাম মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
নিহত গোলাপি বেগম (২৬)উপজেলার উত্তর ধলডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল গফুর আলীর মেয়ে এবং উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের শালঝোড়া গ্রামের কফিল উদ্দিনের (২৯)স্ত্রী।
আরও পড়ুন: রুটি বানাতে দেরি, থাপ্পড়ে গৃহবধূর মৃত্যু
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ধলডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল গফুরের মেয়ে গোলাপী বেগমের সাথে প্রায় সাত বছর আগে একই ইউনিয়নের আব্দুস ছামাদের ছেলে কফিল উদ্দিন (২৮) এর সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পরপর দুটি সন্তান হলেও শৈশবেই মারা যায়। এ কারণে দুজনের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো।
গত সোমবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে ঝগড়ার এক পর্যায়ে কফিল উদ্দিন অন্তঃসত্ত্বা গোলাপীর তল পেটে লাথি মারলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্বপন নামের স্থানীয় এক গ্রাম্য চিকিৎসককে দিয়ে তার প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে গোলাপীকে সোমবার সন্ধ্যায় ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে স্বামীর দেয়া আগুনে দগ্ধ গৃহবধূর মৃত্যু
ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাঈমা হক রিফাত জানান, গোলাপীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।
ভূরুঙ্গামারী থানার পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, বিষয়টি জানার পর লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ কুড়িগ্রাম মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে মামলা করা হবে।
কুড়িগ্রামের চরে টিকাদান শুরু
এবার কুড়িগ্রামের দুর্গম চরাঞ্চলে করোনার টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। চরে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা করোনার টিকা দিচ্ছেন। এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের ফলে টিকা নিতে পেরে খুশি চরবাসী।
সোমবার ইউনিসেফ ও জেলা তথ্য অফিসের সহায়তায় সদর উপজেলার চর সারডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এক হাজারেও বেশি মানুষ এই টিকা নেন।
আরও পড়ুন: ২ লাখ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উপহার দিবে রোমানিয়া
টিকাদান কর্মসূচিতে জেলা তথ্য অফিসের উপ পরিচালক নুরুন্নবী খন্দকার, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা অফিসের সহকারী সার্জন ডা. আতিকুর রহমান, স্বাস্থ্যকর্মী, রেড ক্রিসেন্ট সদস্য ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সারডোবের আলোর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ আগে জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে সদর ও রাজারহাট উপজেলার সারডোব, আলোর চর, শিতাইঝাড় ও জয়কুমরসহ কয়েকটি চরের প্রায় তিন হাজারেও বেশি মানুষকে নিবন্ধন করা হয়। রাজারহাটের অনার্স ক্লাব, দিশারী পাঠাগার ও সারডোবের আলোসহ স্থানীয় সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা এই কার্যক্রমে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন: ফাইজারের আরও ২৫ লাখ টিকা আসছে
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য ও জেলা তথ্য অফিসের উপ পরিচালক নুরুন্নবী খন্দকার জানান, চরাঞ্চলের অনেকেই টিকা নিতে আগ্রহী থাকলেও দুর্গম এলাকা থেকে যাতায়াতে সময় ও অর্থ ব্যয় হওয়ায় টিকা কার্যক্রমের বাইরে থেকে যাচ্ছিলেন তারা। তাদেরকে সরকারের চলমান টিকা কার্যক্রমের আওতায় আনার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার পর স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে টিকা দেয়া হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম জানান, পযার্য়ক্রমে আরও কয়েকটি চরে এই টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে।
আরও পড়ুন: অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রায় ৮ লাখ টিকা আসছে শনিবার
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, কুড়িগ্রামের বিপুল সংখ্যক মানুষ চরে বাস করে। তারা যেন টিকার বাইরে না থাকেন, সেজন্য চরে চরে গিয়ে টিকাদানের বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রামে ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু ১
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক ট্রাকচালকের সহযোগীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে ঢাকা-রৌমারী মহাসড়কের ঝগড়ারচর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত মতিয়ার রহমান (৪০) উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ঝগড়ারচর এলাকার আছিম উদ্দিনের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার সকাল ৯টার দিকে ট্রাক্টরে করে দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের আমবাড়ি এলাকার হলহলিয়া নদী থেকে বালু আনার উদ্দেশ্যে যান টেকানি গ্রামের জব্বার আলীর ছেলে চালক আ. রহিম ও তার সহযোগী মতিয়ার রহমান। এ সময় ঝগড়ারচর এলাকায় ট্রাক্টর থেকে পড়ে চাকায় পিষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন মতিয়ার রহমান। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: ধামরাইয়ে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় পোশাক শ্রমিকসহ নিহত ৩
এ ব্যাপারে রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মুহা. আরিফ হোসেন জানান, মতিয়ার রহমানকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করা হলে অন্যত্র নেয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়।
রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) আবু সাঈদ বলেন, এ ঘটনায় নিহতের বাবা মামলা করবেন না বলে থানায় লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সড়ক দুর্ঘটনায় সংবাদকর্মীর বাবা নিহত
ঠাকুরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় এনজিও কর্মীসহ নিহত ২
প্রেমিকের ধাক্কায় অটোরিকশা থেকে পড়ে প্রেমিকার মৃত্যু!
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে প্রেমিকের ধাক্কায় অটোরিকশা থেকে পড়ে গুরুতর আহত তুলি (১৮) দীর্ঘ আট দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে মারা গেলেন। বৃহস্পতিবার বিকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে তিনি মারা যান। গত ৩০ সেপ্টেম্বর উপজেলার টগরাই হাট এলাকায় ঘুরতে গিয়ে প্রেমিক সোহাগ (২২) তাকে অটোরিকশা থেকে ধাক্কা দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
মৃত তুলি কুড়িগ্রাম পৌর শহরের পাঠান পাড়া গ্রামের মো. তৈয়ব আলীর মেয়ে। আর সোহাগ একই এলাকার আব্দুল হাকিমের ছেলে।
স্থানীয় ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাজারহাট থেকে কুড়িগ্রাম শহরে ফেরার পথে টগরাই হাট এলাকায় একটি সেতুর ওপর তুলিকে অটোরিকশা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে পালিয়ে যান সোহাগ।
পরে স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে বৃহস্পতিবার বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
রাজারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু সরকার এ ঘটনায় একটি অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে তরুণীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন: প্রেমিকাকে বাড়িতে ডেকে হত্যার পর প্রেমিকের ‘আত্মহত্যা’
প্রেমিকের সাথে ঝগড়া: বরিশালে তরুণীর অবাক কাণ্ড
মায়ের সাথে পরকীয়া, প্রেমিককে হত্যা করে ছেলে
ফুলবাড়ী সীমান্তে বাংলাদেশিদের বাড়িতে বিএসএফ’র হামলার অভিযোগ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বাংলাদেশিদের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলা সদর ইউনিয়নের উত্তর কুটিচন্দ্রখানা নাখারজান গ্রামে হামলার এই ঘটনা ঘটে।
এ সময় বিএসএফ সদস্যরা টানা হেচড়া করে বাড়ির মালিকসহ আরও তিন জনকে লাঞ্ছিত করেছে। এ নিয়ে বিজিবি বিএসএফের সাথে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে চোরাকারবারীদের ধাওয়া করতে গিয়ে ভুলবশত বাংলাদেশে রাতের অন্ধকারে প্রবেশ করেছেন বলে বিজিবিকে তারা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
স্থানীয় জায়দুল হক জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সীমান্তে আন্তর্জাতিক ৯৪১ নং মেইন পিলারের সন্নিকটে দু’দেশের মাদক চোরাকারবারীরা মালামাল পার করার সময় ভারতীয় ১৯২ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অধীন সেউটি-২ ছাবরী ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফের সদস্যরা তাদেরকে ধাওয়া করে। মাদক চোরাকারবারীরা তাদের ধাওয়া খেয়ে বাংলাদেশের নাখারজান গ্রামে ঢুকে পড়ে। এ সময় বিএসএফের সদস্যরা তাদের পিছু নেন। পরে ওই গ্রামের নিরহ রফিকুল ইসলাম বাড়িতে সন্দেহ করে গেট খোলার জন্য চাপ দেয় বিএসএফের সদস্যরা।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাট সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত
হামলার শিকার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি বিএসএফকে বলেছি মাদক চোরাকারবারীরা আমার বাড়িতে প্রবেশ করেনি। তারপর আমার ঘরের বেড়ার টিন গেট ভাঙচুর করেছে। পরিবারের সদস্যকে লাঞ্ছিত করে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেছে। পরে এলাকার লোকজন জড়ো হলে তারা দ্রুত ভারতে প্রবেশ করে।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে বাংলাদেশি ২ যুবককে বিএসএফ’র মারধর
এ প্রসঙ্গে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবির ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএম তৌহিদুল আলম জানান, ভুলবশত বিএসএফ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আমরা প্রতিবাদ জানানোর কারণে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ওই সীমান্তে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা ভুল স্বীকার করেছেন। আর এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না বলে তারা জানিয়েছে। তবে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
রৌমারীতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে চলতি বছরের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ছাটকড়াইবাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শিরিনা আক্তার (১৮) ছাটকড়াইবাড়ী গ্রামের সিরাজুল ইসলামের মেয়ে ও দাঁতভাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
আরও পড়ুন: শিশু সন্তানকে গলা কেটে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যার চেষ্টা, আটক মা
স্থানীয়রা জানায়, এইচএসসি পরীক্ষার্থী শিরিনা আক্তারের সাথে একই গ্রামের রৌমারী সরকারি কলেজের দপ্তরি শাজাহান আলীর ছেলে নাহিদ হাসানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের এই সম্পর্কের কথা জানতে পেয়ে শিরিনার বাবা তাকে বকাবকি করেন। এতে অভিমান করে তিনি গলায় ওড়না পেঁচিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে আত্মহত্যা করে। ঘটনার পর থেকে তার প্রেমিক নাহিদ ও পরিবারের সদস্যরা পলাতক রয়েছে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ শুক্রবার সকালে তার লাশ উদ্ধার করে রৌমারী থানায় নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: পাবিপ্রবি শিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’
রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোন্তাছের বিল্লাহ্ জানান, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কোন অভিযোগ করেননি।
ওসি জানান, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: চিকিৎসার খরচ জোগাতে না পেরে ‘আত্মহত্যা’!
কুড়িগ্রামে এক বিদ্যালয়ে ৮৫ শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে!
করোনায় দেশে প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাল্যবিয়ে বেড়েছে। দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ৮৫ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ে হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কম হওয়ায় শিক্ষকদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
সচেতন মহল মনে করছেন, দারিদ্রতা, যোগাযোগ বিচ্ছন্নতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার জন্য এই উপজেলায় বাল্যবিয়ের হার বেড়েই চলেছে। কোনভাবেই বাল্যবিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না।
তবে, জরিপ করে প্রকৃত বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রমে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা নির্ণয় করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ মতিউর রহমান খন্দকার জানান, বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ৩৪৫ জনের মধ্যে ৮৫ জনের বাল্যবিয়ে হওয়ার বিষয়টি জানা গেছে। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
বাল্যবিয়ের শিকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬ষ্ঠ শ্রেণির দু’জন, সপ্তম শ্রেণির ১১, অষ্টম শ্রেণির ১৭, নবম শ্রেণির ২৮, দশম শ্রেণির ১৪ ও চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী ১৩ জন রয়েছে। করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার আগে এই বিদ্যালয়ে প্রতিদিন গড়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ হলেও এখন উপস্থিতির হার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ।
ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুপুর, আশামনিসহ অনেকেই জানায়, ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় খোলার প্রথম দিনেই তাদের ১৭ জন বান্ধবীর বিয়ে হওয়ার খবর শুনে তাদের সবার মন খারাপ হয়ে গেছে।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমী আক্তার বলেন, ‘অনেকদিন পর স্কুল খুললো সব বান্ধবী এক সাথে মজা করবো, আনন্দ করবো। কিন্তু সেটা আর হলো না। স্কুল এসে দেখলাম আমার ২৮ জন বান্ধবী স্কুলেই আসে নাই। পরে জানতে পারি আমার ২৮ জন বান্ধবীসহ স্কুলের ৮৫ থেকে ৯০ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। জানি না আমার ভাগ্যে কি হবে।’
বাল্যবিয়ের শিকার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিথী খাতুনের বাবা ভ্যানচালক বাদশা মিয়া বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। ভ্যান চালিয়ে জীবন-জীবিকা চালাই। জানেন তো গরীব মানুষের দোষ বেশি। ভালো একনা (একটা) আলাপ আসছে তাই মোর মেয়েটা বিয়ে দিছং (দিয়েছি) ।’
বাল্যবিয়ের শিকার নিলুফা ইয়াসমিনের বাবা সাইকেল মেকার বাবলু মিয়া বলেন, ‘দেখতেছেন তো কোন রকম মানুষের সাইকেল ঠিক করেই যা পাই তাই দিয়ে কোন রকমে সংসার চলে। দেশে করোনা আসিয়া আমরা খুব কষ্টে ছিলাম। কোন সহযোগিতা পাইনি। দেখতে দেখতে মেয়েটাও বড় হয়ে গেল দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই। তা একনা (একটা) ভালো সমন্ধ (ভালো ছেলে) পাওয়ায় আর দেরি করি নাই। সাথে সাথে মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছি। বাল্যবিয়ে দেয়াটা আমরা ভুল ছিল।’
আরও পড়ুন: করোনা: কুড়িগ্রামে ঝরে পড়েছে ৫০ হাজার শিশু, বাল্যবিয়ের শিকার বালিকারা
বন্যায় কুড়িগ্রামে ২৭ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি
করোনা: কুড়িগ্রামে ঝরে পড়েছে ৫০ হাজার শিশু, বাল্যবিয়ের শিকার বালিকারা
করোনাভাইরাসের কারণে ১৮ মাস মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও কলেজগুলো বন্ধ থাকায় কুড়িগ্রামে শিশুশ্রম, দারিদ্রতা, নদীভাঙন ও স্থানান্তরিত হওয়ার কারণে প্রায় ৫০ হাজার শিশু ঝরে পড়েছে। ঝরে পড়া শিশুদের একটি বড় অংশ বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। রবিবার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও কন্যাশিশুর অনুপস্থিতির কারণ খুঁজতে গিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান।
রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, শতকারা ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ শিশু স্কুলে এসেছে। ২০ থেকে ২৫ ভাগ শিশু প্রতিষ্ঠানে আসেনি। এদের মধ্যে অর্থনৈতিক কারণে ঝরে পড়ার সংখ্যা বেশি। এছাড়াও বাল্যবিয়ের বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০ শিক্ষার্থী, ঘোগাদহ মালেকা বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৬ জন, কাঁঠালবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৪ জন এবং বারউল্লাহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ জনসহ পাঁচটি বিদ্যালয়ে মোট ৯১ জন কন্যা শিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। কুড়িগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শুধু দশম শ্রেণিতে ১২ জনসহ প্রায় ৩০ জনের বাল্যবিয়ে হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যারয়ে গিয়ে দেখা যায়, এই বিদ্যালয়ে লকডাউনের আগে সপ্তম শ্রেণিতে উপস্থিতি ছিল ৫০ জন, রবিবার উপস্থিত হয়েছে ৪৩ জন, নবম শ্রেণিতে আগে ছিল ৩১ জন আজ ২২ জন, দশম শ্রেণিতে আগে ২৫ জন আজ ১৭ জন, এসএসসিতে আগে ২৪ জন আজ ১৯ জন।
এসএসসি পরীক্ষার্থী জান্নাতুন জানান, তার ক্লাসের পাঁচজন বন্ধু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।
দশম শ্রেণির সোহানা জানান, তার দুজন বান্ধবী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।
এসএসসি পরীক্ষার্থী আইরিন জানান, লকডাউনে আমরা পরিবারের কাছে যেন বোঝা হয়ে ছিলাম। কোথাও বাইরে যেতে দেয়া হতো না। প্রাইভেট পড়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনেক বান্ধবীকে তাদের বাবা-মা বোঝা মনে করে বিয়ে দিয়েছে। তারা পড়াশুনা করতে চেয়েছিল কিন্তু পরিস্থিতির শিকার হয়েছে তারা।
এই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমরা এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করলে জানতে পারব কতজন শিশু ঝরে পড়েছে। এর কারণগুলোও আমরা খুঁজে বের করব। যাতে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা কোন সমস্যায় পড়ে না যায়।’
আরও পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনিয়ম দেখলে কঠোর ব্যবস্থা: শিক্ষামন্ত্রী
বন্যায় কুড়িগ্রামে ২৭ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি
এ বছর দীর্ঘ মেয়াদি বন্যায় কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলায় প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা অববাহিকার কৃষকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর বন্যায় জেলায় ২৬ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমির রোপা আমন, ২৮৫ হেক্টর জমির বিভিন্ন সবজি খেত ও ১৫৫ হেক্টর বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত। তবে কৃষি বিভাগ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি।
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
বৃহস্পতিবার স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের মিল পাড়া গ্রামের কোরবান আলী বলেন, 'তিন বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছি, দীর্ঘ মেয়াদি বন্যায় সব পচে গেছে। কীভাবে কী করবো বুঝতে পারছি না, এখন তো সময় নাই, বীজতলাও নাই। কীভাবে আবাদ করবো?'
একই ইউনিয়নের কৃষক দেলোয়ার মিয়া বলেন, আমার পাঁচ বিঘা জমির আমন খেত এখনো তলিয়ে আছে। তবে দুদিনের মধ্যে পানি নেমে গেলেও আর আবাদ হবে না।
আরও পড়ুন:বন্যায় কুড়িগ্রামে ভোগান্তি চরমে
এবার যে ক্ষতি হলো তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। পানি নেমে গেলে না হয়, আবার ধান রোপণ করতাম, কিন্তু বীজতলা তো নাই। সবমিলিয়ে খুবই সমস্যায় আছি, আগামীতে কীভাবে চলবো।
পাঁচগাছী ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, নদ-নদীর পানি তো কমতেছে কিন্তু এখনো আমার ইউনিয়নে আমন খেত পানিতে তলিয়ে আছে। সব মিলে প্রায় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে আমন আবাদ ১ হাজার হেক্টর ও অন্যান্য ফসল ৫০০ হেক্টর হবে।
আরও পড়ুন:মাগুরায় বন্যার পানিতে রাস্তা ডুবে জনদুর্ভোগ চরমে
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক জানান, কুড়িগ্রামে এবার বন্যায় রোপা আমন, সবজি ও বীজতলা মিলে প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর বিভিন্ন ফসল ১৬-১৭ দিন পানিতে নিমজ্জিত ছিল। জেলায় কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে এ তথ্য পাঠিয়েছি। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রামে ২ শতাধিক পুকুর ভেসে ৫৫ লাখ টাকার ক্ষতি!
এ বছর বন্যায় কুড়িগ্রামের সদর উপজেলা, উলিপুর, নাগেশ্বরী, রৌমারী ও রাজিবপুরসহ নয় উপজেলায় ছোটবড় মিলে প্রায় ২১৯টি পুকুর ভেসে ২০২ জন মৎস্য চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, জেলার নয় উপজেলায় ২১৯ পুকুর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। যার আয়তন প্রায় ৩৩ হেক্টর। এতে করে প্রায় ৫৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: বাঁধ ভেঙে ফেনীতে ৭ গ্রাম প্লাবিত
কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছি ইউনিয়নের গারুহারা গ্রামের খুটু মিয়া বলেন, ‘আমার এলাকায় দু’টি পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেছি আমি। মাছ বিক্রি করার সময় এসেছে। এমন সময়ে বন্যার পানিতে ওই দুই পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। শীতকাল তো চলেই আসছে, মাছ ছাড়বো কখন, আবার মাছ বড় করব কখন, সময় তো নাই।’