আন্দোলন
আন্দোলনের নামে সহিংসতা করবেন না: বিএনপিকে প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন,আন্দোলনের নামে সহিংসতা করলে তার সরকার বিএনপিকে ছাড় দেবে না।
তিনি বলেন,‘আমি তাদের (বিএনপি) বলেছি তারা শান্তিপূর্ণ মিছিল-মিটিং করলে আমরা কিছুই বলব না। কিন্তু তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে শোডাউনে যাচ্ছে। তারা যদি কাউকে আক্রমণ করে তবে আমরা তাদের রেহাই দেব না।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: বিরোধী দল সঙ্কটের মধ্যে রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
হামলার কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আন্দোলন মানেই অগ্নিসংযোগ। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে তারা সারা বাংলাদেশে কি পরিমাণ হামলা করেছিল। তারা প্রমাণ করেছে যে তারা পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর দোসর।
তিনি প্রশ্ন তোলেন যে বিএনপি কীভাবে স্বপ্ন দেখে যে জনগণ তাদের ভোট দেবে? কারণ দলটি যে কোনও দুঃসময়ে জনগণকে নামমাত্রও সাহায্য করেনি।
বিএনপি সীমা অতিক্রম করলে কারাগারে ফিরবেন খালেদা জিয়া
প্রধানমন্ত্রী বলেন,জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। খালেদার বোন,ভাই ও বোনের স্ত্রী তার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে আসেন এবং তাকে মুক্তি দেয়ার আবেদন করেন।
তিনি বলেন,‘মানবিক কারণে আমরা তাকে (খালেদা) তার বাড়িতে থাকার সুযোগ দিয়েছি,তার সাজা স্থগিত করেছি। বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে তাকে আবার জেলে পাঠাব।’
আরও পড়ুন: রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি বসছে বুধবার, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম,অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পারভিন জামান কল্পনা, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি এবং ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মোন্নাফী ও শেখ বজলুর রহমান।
আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, এমপি ও তার সহ-সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।
জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম,তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে স্মরণ করতে দিবসটি পালিত হয়। যারা ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে নিহত হন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যার মাত্র তিন মাস পর এই গণহত্যার ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সরকারি কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
২২ দফা দাবিতে চবির চারুকলার শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন ও আন্দোলন
২২ দফা দাবি আদায়ের জন্য অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন ও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা। চবির আবাসিক হল ও পাঠাগার সংস্কারসহ ২২ দফা দাবিগুলো পূরণের দাবিতে ক্লাস বর্জনের ডাক দেয় তারা।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে চারুকলা অনুষদের সামনে গ্যালারিতে অবস্থান নেয় দেড়শোরও বেশি শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো-শিক্ষার্থীদের নিজস্ব বাস চালু, ডাইনিং ও ক্যান্টিন তৈরি, বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা, বেসিনের সুব্যবস্থা রাখা, পর্যাপ্ত ওয়াশরুম নির্মাণ, আর্ট ম্যাটেরিয়ালসের ব্যবস্থা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পাঠাগার সংস্কার, জেনারেটরের ব্যবস্থা, মেডিকেল ব্যাকআপ, খেলাধুলার পর্যাপ্ত ইন্সট্রুমেন্ট এর ব্যবস্থা, মেয়েদের থাকার হলের ব্যবস্থা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নির্মূল, প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে বৈদ্যুতিক সংকট নিরসন, ছাত্র ও ছাত্রী মিলনায়তনের ব্যবস্থা, সেমিনারের পরিধি বাড়ানো, ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিতকরণ, ওজুখানা ও নামাজ পড়ার সুব্যবস্থা, সন্ধ্যার পর পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য লকার এর ব্যবস্থা নিশ্চিতকরন এবং ছাত্রদের হলের ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন: শনিবার দ্বি-বার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি
এ বিষয়ে আন্দোলনকারী চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম বলেন, এর আগেও অনেকবার এ অভিযোগগুলো আমরা জানিয়েছি। কিন্তু কোনও সমাধান আসেনি। তাই ক্লাস বর্জনের ডাক দিয়েছি।
সায়েদ কবির নামে মাস্টার্সের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের চারুকলা ইন্সটিটিউট বছরের পর বছর ধরে নানান সমস্যায় জর্জরিত। আমরা বিভিন্ন সময় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও, তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমাদের চারুকলা ইন্সটিটিউটটি শহরে অবস্থিত হওয়ায় তেমন কারো নজরেও পড়ছে না। তাই, আমরা আগামীকাল থেকে ক্লাস বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক প্রণব মিত্র চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছিল বিভিন্ন বিষয়ে। আমরা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছি।’
তিনি আরও বলেন, আমরা কাল ছাত্রদের সঙ্গেও কথা বলবো। আশা করি সুন্দর সমাধান বেরিয়ে আসবে।’
আরও পড়ুন: ১৮তম দ্বি-বার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীর উদ্বোধন
মামলা পুনরুজ্জীবিত: সরকারবিরোধী আন্দোলনকে লাইনচ্যুত করার কৌশল হিসেবে দেখছেন বিএনপি নেতারা
বিএনপির সাম্প্রতিক সময়ের সব ধরনের বাধা উপেক্ষা করে সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রস্তুতিকালে দলের নেতারা বলছেন, আন্দোলনকে লাইনচ্যুত করার উদ্দেশ্যে সরকার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কিছু বিচারাধীন মামলা পুনরুজ্জীবিত করছে।
কিছু বিএনপি নেতা ও আইনজীবী বলছেন, সরকার বিরোধী দলকে একটি বার্তা দিতে কিছু দলের নেতাদের কারাগারে পাঠাতে পারে যে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে তাদের ছাড় দেয়া হবে না।
কিন্তু সরকার অতীতে বারবার বিএনপির এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা আদালতকে প্রভাবিত করে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ইউএনবিকে বলেন, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ থাকলেও সরকার সামগ্রিক সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খুব ‘নার্ভাস’ হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে সতর্ক সুসংঘবদ্ধ বাধা সত্ত্বেও সরকার আমাদের সমাবেশে জনগণের অংশগ্রহণ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই, সরকার আমাদের দমন করতে তাদের দমনমূলক কর্মকাণ্ডকে আরও জোরদার করতে মরিয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু আমাদের সাম্প্রতিক সফল সমাবেশ থেকে এটা স্পষ্ট যে এই ধরনের রাজনৈতিক কৌশল কাজ করবে না।’
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে নিম্ন আদালতের বিচার চালিয়ে যাওয়ার পথ পরিষ্কার করে দিয়েছে। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খন্দকার মোশাররফের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়াও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ২০০১-২০০৬ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকাকালে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের অভিযোগে ২০১৪ সালে মামলাটি করে দুদক।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ আরও নয়জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুদক।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বলছেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মামলার বিচার ঢাকাসহ অন্যত্র নিম্ন আদালতে চলছে।
আরও পড়ুন: খুলনার সমাবেশে খারাপ কিছু হলে সরকার দায়ী থাকবে: ফখরুল
বিএনপি বলছে, বর্তমানে প্রায় ৩৬ লাখ বিএনপি নেতাকর্মী এক লাখের বেশি মামলার মুখোমুখি। তারা বলছেন, এই অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার প্রায় ১৪ বছর ধরে হত্যা, গুম, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাসহ বিভিন্ন দমনমূলক কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিয়ে বিএনপিকে নির্মূল করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের নেতাদের মিথ্যা অভিযোগে কারাগারে পাঠানোর চেষ্টা করতে পারে এবং আমাদের কর্মীদের নিরাশ করার জন্য বারবার আমাদের আক্রমণ করতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা পাল্টে যাবে।’
মোশাররফ সতর্ক করে বলেন, ‘এটা হলে আমাদের নেতারা সরকার উৎখাতের আন্দোলন জোরদার করতে আরও উৎসাহিত হবেন। এটি সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করবে এবং দেশে ও বিদেশে শাসনের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে সাহায্য করবে যা এর ক্ষমতাচ্যুতকে ত্বরান্বিত করবে।’
এই নেতা বলেন, আমাদের দলের নেতাকর্মীরা এখন বাঁচা-মরার আন্দোলনে থাকায় জেলে যেতে ভয় পান না।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দলের চেয়ারপার্সন চার বছর আগে জেলে গেলেও আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে অবস্থান করছেন। তা সত্ত্বেও আমাদের দল ঐক্যবদ্ধ এবং আমাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি করে তারা যখন বিএনপির ক্ষতি করতে ব্যর্থ হয়েছে, তখন দলের আরও কয়েকজন নেতাকে কারাগারে রেখে তারা দলকে দুর্বল করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, বিএনপির নেতৃত্বের কাঠামো দুর্বল নয় এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন চালানোর জন্য দলটির অনেক ‘বিকল্প নেতা’ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘তাই সরকারের কৌশল হিসেবে কিছু নেতা বা কর্মীদের জেল দিয়ে কোনো লাভ হবে না।’
আরও পড়ুন: বিএনপির সমাবেশ উপলক্ষে মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছে খুলনা
সরকারবিরোধী আন্দোলন: দ্বিতীয় দফার সংলাপে বিএনপি
আগামী সাধারণ নির্বাচনের তদারকির জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে 'যুগপৎ' আন্দোলনে কল্যাণ পার্টির সঙ্গে ঐক্যমতে পৌঁছেছে বিএনপি।
রবিবার ঐক্যবদ্ধ সরকারবিরোধী আন্দোলনের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে কল্যাণ পার্টির নেতাদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপ শুরু করে দলটি।
আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটি সমঝোতায় পৌঁছেছি যে, আমরা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠন করে আন্দোলন শুরু করব। যে দাবিতে আমরা আন্দোলন শুরু করব সে বিষয়েও আমরা একমত হয়েছি।’
তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া এবং পরবর্তী নির্বাচন পরিচালনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মতো বিষয়ে তারা একমত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: অচিরেই দেশব্যাপী সরকার পতন আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে: মির্জা ফখরুল
বিএনপি নেতা বলেন, খালেদা জিয়াসহ অন্য সব বিরোধী দলের নেতাদের মুক্তি এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহারসহ আরও কিছু বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘একযোগে’ আন্দোলন শুরু করার বিষয়ে তাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ‘তবে আমরা আন্দোলন শুরুর সঠিক তারিখ প্রকাশ না করতে রাজি হয়েছি।’
তিনি বলেন, মূলত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আগামী সরকারবিরোধী আন্দোলনে চমক থাকবে।
মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ইব্রাহিম বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম আরেকটি যুদ্ধ। ‘আমরা একসঙ্গে এই যুদ্ধে লড়ব এবং বিজয়ী হব। এই যুদ্ধে জয়ী হওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।’
দ্বিতীয় দফা সংলাপের কারণ ব্যাখ্যা করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রথম পর্যায়ের সংলাপে তারা জাতীয় ঐক্য গড়তে এবং যুগপৎ আন্দোলন শুরু করতে নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন। ‘দ্বিতীয় দফা সংলাপে আমরা যেসব বিষয় ও দাবি নিয়ে আন্দোলন করব সে বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছি।’
দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ ছাড়া সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ইব্রাহিমের নেতৃত্বে নয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মির্জা ফখরুল ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেন।
কল্যাণ পার্টির প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন দলের মহাসচিব আবদুল আউয়াল মামুন, কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল কবির পিন্টু, আবদুল্লাহ আল হাসান সাকিব, রাশেদ ফেরদৌস, মাহবুবুর রহমান শামীম, জামাল হোসেন, আবু হানিফ ও আবু ইউসুফ।
এর আগে, গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার 'পুনরুদ্ধার' করার জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করার রূপরেখা তৈরি করতে গত ২৪ মে থেকে শুরু হওয়া সংলাপের প্রথম পর্বে বিএনপি ২৩টি দলের সঙ্গে আলোচনা করেছিল।
আরও পড়ুন: সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য হাস্যকর: মির্জা ফখরুল
মির্জা ফখরুলের সঙ্গে জাপানের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা
বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে হবে: কৃষিমন্ত্রী
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে হবে,নাহলে লাঠি দিয়ে আত্মরক্ষা হবে না।শুক্রবার বিকালে টাঙ্গাইলের পৌর উদ্যানে টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে,সমাবেশ,মিছিল-মিটিং সুশৃঙ্খল হতে হবে; শান্তিপূর্ণ হতে হবে। কোনক্রমেই মানুষের জানমালের ওপর হুমকি বা ঝুঁকি সৃষ্টি করা যাবে না। কিন্তু আমরা দেখছি,বিএনপি সমাবেশ করে মানুষের জানমালকে হুমকিতে ফেলছে, সমাবেশ করতে এসেই পুলিশের উপর আক্রমণ করছে। তখন পুলিশ বাধ্য হয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিএনপিকে নিবৃত্ত করার জন্য। আমি অনুরোধ করব আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ, মিছিল- মিটিং করেন, নাহলে লাঠি দিয়ে আত্মরক্ষা করতে পারবেন না।
আরও পড়ুন: ১৩ বছরে একটি মানুষও না খেয়ে কষ্ট করেনি: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রী বলেন, যে কোন মানুষের, সে সরকারি দলের হোক বা বিরোধী দলের হোক, নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব পুলিশের-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। বিএনপি যদি মনে করে তারা লাঠি দিয়ে আত্মরক্ষা করবে, তাহলে তারা ভুলপথে আছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি মিথ্যাচার করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তারা ২০১৩ সালে আবার ফিরে যেতে চাচ্ছে। তারা নির্বাচনে যাবে না, বরং গাড়িতে আগুন দিবে, ট্রেনে আগুন দিবে, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারবে, বিদ্যুতের লাইন তুলে ফেলবে। আমরা কোনক্রমেই এটা করতে দিব না। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার, সরকার তাই করবে। আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন অনেক সুশৃঙ্খল ও সক্ষম।
এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও দায়িত্ব পুলিশকে সহযোগিতা করা।
টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল হক আলমগীরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এমএ রৌফের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদ সদস্য মির্জা আজম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক, সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম এমপি, সংসদ সদস্য ছোটোমনির, সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন এবং জেলা ও শহর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুন: কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে: কৃষিমন্ত্রী
জামানাত ছাড়াই কৃষককে ঋণ দেয়া যায়: কৃষিমন্ত্রী
১০টি বিভাগীয় শহরে জনসভা করবে বিএনপি
চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখার অংশ হিসেবে আগামী ৮ অক্টোবর থেকে ১০টি বিভাগীয় শহরে জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
এছাড়া গত ৩১ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত আন্দোলনে নিহত বিএনপি ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পাঁচ নেতার স্মরণে আগামী ৬ ও ১০ অক্টোবর সব বিভাগীয় শহর ও সব জেলা শহরে দু’টি শোক সমাবেশ করবে দলটি।
বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
রাজধানীতে ১৪টি সমাবেশের পর সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নতুন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ফখরুল বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলনে দলের পাঁচ নেতা- ভোলায় নূর-ই-আলম ও আবদুর রহিম, নারায়ণগঞ্জে শাওন প্রধান, মুন্সিগঞ্জে শহিদুল ইসলাম শাওন ও যশোরে আবদুল আলিম হত্যার নিন্দা জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, বৈঠকে দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা ও মামলার প্রতিবাদে এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবি ফখরুলের
দলটির ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে, ২২ অক্টোবর খুলনায়, ২৯ অক্টোবর রংপুরে, ৫ নভেম্বর বরিশালে, ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে, ১৯ নভেম্বর সিলেটে, কুমিল্লায় ২৬ নভেম্বর, রাজশাহীতে ৩ ডিসেম্বর এবং ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ করবে।
ফখরুল বলেন, কর্মসূচির মাধ্যমে তারা জনমত গড়ে তুলতে চান এবং আন্দোলনের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে চান। ‘আমরা জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে একটি শক্তিশালী গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের ওপর (আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য) চাপ বাড়াতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন নিশ্চিত করতে জনগণ এখন ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় তাদের কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণ বেড়েছে।
এর আগে বিএনপি তার সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে রাজধানীতে ১৬টি সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় এবং দলটি ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪টি সমাবেশের আয়োজন করে। কিন্তু দলটি লালবাগে সমাবেশ স্থগিত করে এবং পল্লবীতে আরেকটি সমাবেশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বানচাল করে দেয়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ২২ আগস্ট থেকে সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছে প্রধান বিরোধী এই রাজনৈতিক দলটি।
আরও পড়ুন: আ’লীগের সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস বিএনপিকে ধোঁকা দেয়ার ফাঁদ: রিজভী
সরকার ক্ষমতা না ছাড়লে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় যাবে না বিএনপি: ফখরুল
সরকার উৎখাতের চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য জনগণ প্রস্তুত: বিএনপি
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ‘চূড়ান্ত’ আন্দোলনের জন্য দেশের মানুষ প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনি আর আপনার রাগ, রাইফেল ও বন্দুক দিয়ে জনগণের শক্তিকে দমাতে পারবেন না। আপনি জানেন না যে এখন রাইফেল ও বন্দুক কোন দিকে ঘুরবে। এখনও সময় আছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের।’
রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ লেবার পার্টির আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে ফখরুল এসব কথা বলেন।
এই বিএনপি নেতা বলেন, জনগণ সরকারের ‘দুঃশাসন’ ও দমন-পীড়নে বিরক্ত হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞায় থেকে যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য মানানসই নয়: বিএনপি
তিনি জানান, সারা দেশের মানুষ উত্তাল হয়ে উঠেছে এবং আপনি কোনও ব্যারিকেড দিয়ে তাদের ঠেকাতে পারবেন না। জেগে ওঠা এসব লোকেরা কেবল চূড়ান্ত একটা ধাক্কার জন্য অপেক্ষা করছে এবং তারা এটি করতে প্রস্তুত।
সরকার যুবদলকর্মী শহিদুল ইসলাম শাওন বিএনপি নেতাকর্মীদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে নিহত হয়েছেন বলে অপপ্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জানান, যারা উল্টাপাল্টা কথা বলছে এবং মানুষ হত্যার পর বিভিন্নভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, তারা জনগণের ক্ষোভ ও ঘৃণা থেকে রেহাই পাবে না।
এই বিএনপি নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে ভাষণ দিয়ে যুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং শান্তির পক্ষে কথা বলছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মানুষ হত্যা করছে।
তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গাদের কথা বলতে গিয়ে তিনি এমন সময় কাঁদছেন, যখন বাংলাদেশে রক্ত বইছে। এই দ্বিচারিতা শেখ হাসিনার সঙ্গে মানায়। তিনি তার দেশের গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতাকে কবর দিয়েছেন এবং গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করেছেন।
আরও পড়ুন: ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকার মানুষকে গুলি করে হত্যা করছে: বিএনপি
বিএনপি ‘লাশ নিয়ে রাজনীতি’ করে ক্ষমতায় যেতে চায় বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, তাদের দল (বিএনপি) শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করলেও পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।
রিজভী আরও জানান, ৩১ জুলাই থেকে বিএনপির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের চার নেতাকর্মী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। ‘এর পরও ওবায়দুল কাদের বলছেন বিএনপি লাশের রাজনীতি করে। তারা মিথ্যাচার করছে এবং শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য অনিয়ন্ত্রিত ও অমানবিক মন্তব্য করছে।’
বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) মূল্যহীন ও পরাধীন আখ্যা দিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, এর দ্বারা (ইসি) সুষ্ঠু নির্বাচন করা সক্ষম নয়। ‘তারা (বর্তমান ইসি) শেখ হাসিনার সেবক। শেখ হাসিনা যদি তাদের একটি দিনকে রাত বলতে বলেন, তাহলে তারা সেটাকে রাত বলবে।’
আরও পড়ুন: আ.লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে শাওন হত্যার জবাব দেয়া হবে: ফখরুল
শিগগিরই সরকারবিরোধী ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের রূপরেখা পেশ করা হবে: ফখরুল
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে শিগগিরই ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের রূপরেখা পেশ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুগপৎ আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপরেখা নিয়ে জাতির সামনে হাজির হব।
বিএনপি চেয়ারর্পাসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা আরও বলেন, তাদের দল দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য গড়তে কাজ করে যাচ্ছে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনার পর গতকাল (সোমবার) আমাদের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রূপরেখার ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করাই হবে মূল ফোকাস। ‘অবশ্যই এই সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং ক্ষমতা একটি নিরপেক্ষ সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। যার অধীনে একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে এবং তারা এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে, যেখানে সমস্ত ভোটার নির্বিঘ্নে তাদের ভোট দিতে পারে।’
আরও পড়ুন: দমনপীড়ন এবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় থাকতে সাহায্য করবে না: ফখরুল
এছাড়া যে দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনে নামতে যাচ্ছে তাদের নিয়ে ওই নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠন করা হবে বলেও জানান ফখরুল।
জাতীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রব্যবস্থার যে ক্ষতি করেছে তা একক দলের পক্ষে মেরামত করা যুক্তিসম্মত হবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ কারণে আমরা এই প্রক্রিয়ায় অন্যান্য দলকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাই, যাতে আমরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান-যেমন বিচার বিভাগ, প্রশাসন, সংসদ ও গণমাধ্যম নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারি।’
তিনি বর্তমান সরকারের পতন এবং দেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে বিএনপির পরিকল্পিত যুগপৎ আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য দেশের সব বিরোধী দলকে আহ্বান জানান।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো একযোগে রাজপথে নামলে আন্দোলন নিজেই তার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, যুগপৎ সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে এখন পর্যন্ত তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি।
তিনি আরও জানান, তবে যে কোনো দল যদি আন্দোলনে যোগ দিতে চায়, তাদের জন্য বিএনপির দরজা খোলা আছে। ‘আমরা স্পষ্টত বলেছি যে বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করতে চায় এমন দল, ব্যক্তি ও সংগঠনের সঙ্গে আমরা একযোগে আন্দোলন করব।’
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির আলোচনা হয়েছে কিনা এবং ২০ দলীয় জোটে না থাকার বিষয়ে তাদের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, জামায়াত ইতোমধ্যে এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে। ‘আমরা এখন যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলছি... সব দলই নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্দোলন করবে। আমরা এই বিষয়ে কথা বলছি।’
আরও পড়ুন:রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে ফখরুলের শোক
সুদিন আসবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে: ফখরুল
আন্দোলন বানচাল করতেই বিরোধীদের ওপর সরকারের দমন-পীড়ন: বিএনপি
বিএনপি অভিযোগ করেছে, দ্রব্যমূল্য, জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিরোধীদলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নির্মম হামলা করছে সরকার।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সারাদেশে আমাদের কর্মসূচি চলছে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী আমাদের কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে নির্দয়ভাবে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করছে।
আরও পড়ুন: ঈদ আসলেই আওয়ামী পরিবহন সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠে: রিজভী
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নবগঠিত কমিটির নেতাদের নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, হামলায় আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন, এমনকি অনেকে চোখ হারিয়েছেন ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে আমাদের তিনজন নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি শত শত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে, গ্রেপ্তার এড়াতে অনেক এলাকার নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে, তারা কি অপরাধ করেছে? সভা সমাবেশ করা একটি চিরস্থায়ী গণতান্ত্রিক অধিকার।’
আরও পড়ুন: দেশের অর্থনীতি নিয়ে জিএম কাদের ও রিজভীর বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা তথ্যমন্ত্রীর
তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী সারাদেশে বিএনপির মিছিলে বর্বর হামলা অব্যাহত রেখেছে। ‘গতকাল নাটোরের লালপুরে আমাদের বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আপনি প্রতিদিন বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও রক্তক্ষরণের ঘটনা দেখবেন।’
রিজভী বলেন, সরকার ক্ষমতায় থাকতে মানুষের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে কেড়ে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের মানুষ যখন দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতিতে তখন তিনি ভারত সফরে গেছেন। ‘কিন্ত আপনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের অভিন্ন নদীর পানির সুষম বন্টন এবং তিস্তা চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
দেশের মানুষের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে আর্শীবাদ নিতে ভারত সফরে গেছেন কিনা তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন রিজভী।
আরও পড়ুন: পুলিশের বিরুদ্ধে রিজভীর মামলার আবেদন খারিজ
জনগণ বিএনপির সহিংসতা রুখে দিবে: কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুক্রবার সতর্ক করে বলেছেন, যদি বিএনপি আন্দোলনের নামে সহিংসতা চালায় তাহলে জনগণ তা রুখে দিবে।
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ‘সবুজ বাংলাদেশ:সমৃদ্ধ দেশ’-শিরোনামে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক কমিটি আয়োজিত তিন দিনব্যাপী সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের আরও বলেন, আওয়ামী লীগ কখনও কাউকে হামলা করে না। যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে প্রতিরোধ করবে।
তিনি বলেন বিএনপি ভালো করেই জানে ব্যালটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরাজিত করা যাবে না। তাই তারা নানাভাবে আগামী নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন।
পড়ুন: নেত্রকোণায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষ, ওসিসহ আহত ১৭
কাদের বলেন, সন্ত্রাসের মামলায় ধরলে পুলিশকে দোষ দেয়া যায় না।
তিনি বলেন, বিএনপি কর্মীরা অপরাধী হলে তাদের আইনের আওতায় আনলে এত আপত্তি কেন?
বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দকার বজলুর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহারিয়ার আলম, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহিবুল ইসলাম নওফেল এবং বন ও পরিবেশ কমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেন।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো ইসিই বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে না: বিএনপি
বিরোধী পক্ষকে দমন ও পীড়নের রাজনীতি আওয়ামী লীগ করে না: ওবায়দুল কাদের