মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চলবে: জেল থেকে বেরিয়ে ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিজয় না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকারের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
কারাগার থেকে বের হওয়ার পরপরই তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'জনগণের বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
আরও পড়ুন: প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুরের মামলায় ফখরুল-খসরুর জামিন
বিএনপির এই নেতা দাবি করেন, ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিএনপির কোনো ক্ষতি হয়নি, আন্দোলনেরও ক্ষতি হয়নি। ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সব সময় গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে, সংগ্রাম করেছে। ‘ইনশাল্লাহ এই লড়াইয়ে তারা (জনগণ) জয়ী হবেই।’
এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রায় গ্রেপ্তার হয়ে সাড়ে তিন মাস আটক থাকার পর জামিনে মুক্তি পান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, জামিনের আদেশ কেরাণীগঞ্জের কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানোর পর বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিটে তারা কেরাণীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান।
জেলগেটে তাদের স্বাগত জানান দলের নেতাকর্মী ও দলের শীর্ষ দুই নেতার স্বজনরা।
ফখরুল ও খসরু কারা গেটে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
আমীর খসরু বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করেছে, কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। ‘নির্বাচনে তারা জনগণের কাছে নৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ‘গণতন্ত্র ও জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত এটা অব্যাহত থাকবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্রের পক্ষে রায় দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ফখরুল-খসরু জামিনে মুক্ত
নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলন পরিচালনার জন্য বিএনপিসহ সব গণতন্ত্রপন্থী দলের মনোবল যথেষ্ট শক্তিশালী।
এর আগে বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি আদালত গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ চলার সময় প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুরের মামলায় মির্জা ফখরুল ও খসরুকে জামিন দেন আদালত।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সাল আতিক বিন কাদের আবেদনের শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন।
গত ২৯ অক্টোবর ফখরুল, খসরুসহ বিএনপির ৫৯ নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।
সমাবেশে সহিংসতার ঘটনায় ফখরুলের বিরুদ্ধে ১১টি ও খসরুর বিরুদ্ধে ১০টি মামলা হয়। গত ২৯ অক্টোবর ফখরুল ও ৩ নভেম্বর গুলশানের বাসা থেকে খসরুকে আটক করে পুলিশ। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলায় আদালত থেকে জামিন পেয়ে তাদের মুক্তির পথ সুগম হয়।
আরও পড়ুন: আজ মুক্তি পেতে পারেন ফখরুল-খসরু
বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলগুলোর ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু হচ্ছে রবিবার
বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলগুলো রবিবার সকাল থেকে সারাদেশে ফের ৪৮ ঘণ্টার সড়ক-রেল-নৌপথ অবরোধ শুরু করতে যাচ্ছে।
এই কর্মসূচির উদ্দেশ্যও ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
রবিবার সকাল ৬টায় অবরোধ শুরু হয়ে মঙ্গলবার সকাল ৬টায় শেষ হবে। ৩১ অক্টোবর থেকে এটি হবে বিরোধী দলগুলোর নবম দফা অবরোধ কর্মসূচি।
শনিবার (২ ডিসেম্বর) রাতে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দেশবাসী এবং বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের সমর্থকদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান।
সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্স এবং অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ওষুধ পরিবহনকারী যানবাহন অবরোধের আওতার বাইরে থাকবে।
আরও পড়ুন: সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির আন্দোলনের বিজয় নিশ্চিত: নজরুল ইসলাম খান
এর আগে বৃহস্পতিবারও বিরোধী দলের দিনব্যাপী হরতাল শেষ হওয়ার প্রায় তিন ঘণ্টা আগে নতুন করে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন রিজভী।
তিনি বলেন, অন্যান্য বিরোধী দল যারা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করে আসছে, তারাও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করবে।
ক্ষমতা ছাড়তে এবং নির্দলীয় প্রশাসনের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বিরোধী দলগুলো আট দফায় অবরোধ পালন করেছে।
নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে হামলার প্রতিবাদে তারা ২৯শে অক্টোবর দেশব্যাপী ভোর-সন্ধ্যা হরতালও পালন করে। যা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হওয়ার পর শেষ হয়।
২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির বহুল আলোচিত মহাসমাবেশ শুরুর আধা ঘণ্টা পর কাকরাইলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিএনপি নেতা-কর্মীরা।
শিগগিরই সহিংস সংঘর্ষ নয়াপল্টনের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং মাঝপথে সমাবেশ বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: ৭ জানুয়ারি নির্বাচন: তফসিল ঘোষণার পর থেকে ১৫ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি
৭ জানুয়ারির তফসিল বাতিলের দাবি বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের
প্রধান বিচারপতির বাড়ি ভাঙচুরের মামলায় ফখরুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে
আটকের প্রায় ১০ ঘণ্টা পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে শনিবার দলের মহাসমাবেশে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের বাসভবন ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
রবিবার (২৯ অক্টোবর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেছেন, প্রধান বিচারপতির বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় বিএনপি মহাসচিবকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
পরে তিনি জানান, রাত ৮টার দিকে ফখরুলকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়।
রবিবার সকালে গুলশানের বাসা থেকে ফখরুলকে আটক করে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বিএনপির হরতালের মধ্যেই ডিবি ফখরুলের গুলশান-২ এর বাসায় অভিযান চালিয়ে সকাল ৯টা ২০ মিনিটের দিকে তাকে আটক করে।
পরে তাকে ডিবির মিন্টু রোড কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
ফখরুলের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম জানান, সকালে ডিবি পুলিশের একটি দল তাদের বাড়িতে এসে ফখরুলসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলে।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রথমে তাদের বাড়ির ভবন থেকে সব সিসিটিভি ক্যামেরা ডিভাইস ও ফুটেজ নিয়ে যায়।
রাহাত আরা বলেন, ‘১০ মিনিট পর তারা আবার ফিরে এসে তাকে (ফখরুল) তুলে নিয়ে যায়।’
আরও পড়ুন: ফখরুলকে আটকের নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি
তিনি বলেন, ‘ফখরুল খুবই অসুস্থ এবং তার চিকিৎসা চলছে।’
রাহাত আরা বলেন, ‘আমি মেনে নিতে পারছি না যে ৭৫ বছর বয়সী একজনকে এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। আশা করি জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেবে।’
শনিবার নয়াপল্টনে দলের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার প্রতিবাদে রবিবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেওয়ার পর এ আটক করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষে এক পুলিশ কনস্টেবলসহ অন্তত দুইজন নিহত এবং কয়েক শতাধিক আহত হওয়ার পর হঠাৎ করে সমাবেশ স্থগিত করে ফখরুল হরতাল ঘোষণা করেন।
নয়াপল্টনে বিএনপির বহুল আলোচিত মহাসমাবেশ শুরুর আধা ঘণ্টা পর কাকরাইলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন দলটির নেতা-কর্মীরা।
সংঘর্ষের সময় প্রধান বিচারপতির বাড়িতেও হামলা চালায় বিএনপি কর্মীরা।
নয়াপল্টনের চারপাশে সহিংস সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে বিএনপি হঠাৎ করে সমাবেশ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।
আরও পড়ুন: মির্জা আব্বাসসহ বিএনপির ১৩০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে শাহজাহানপুর থানায় ৬ মামলা
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘেরাও করেছে পুলিশ
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে: ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সবসময় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে বিজয়ী হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশের জনগণ এবারও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে বিএনপি আয়োজিত ‘এ ডেমোক্রেটিক ফিউচার ফর বাংলাদেশ অ্যান্ড দ্য ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’- শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সাহস নিয়ে রাজপথে থাকুন: ফখরুল
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
এসময় ফখরুল বলেন, আমরা এ দেশের সব রাজনৈতিক দল এক দফা দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। কারণ আমরা এই সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন চাই।
বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের উপর দমন-পীড়নের জন্য সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, জাতি এখন সবচেয়ে সংকটময় সময় পার করছে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ক্ষমতাসীন দলের চরম প্রতিহিংসার কারণে সুচিকিৎসার অভাবে এখন গুরুতর অসুস্থ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের তিন সাবেক সংসদ সদস্যসহ প্রায় ৭০০ জনকে গুম করা হয়েছে। আমাদের ৪৫ লাখ মানুষকে মিথ্যা মামলার মুখোমুখি করা হয়েছে। আমাদের অনেককে নির্বাচনের আগে সাজা দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে।’
তিনি বলেন, সরকার দেশে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যেখানে একমাত্র আওয়ামী লীগই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে এবং বিরোধী দলগুলোকে ভোটদান থেকে দূরে রেখে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে।
আরও পড়ুন: বর্তমান সংসদ অধিবেশনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান চালু করতে আ. লীগের প্রতি ফখরুলের আহ্বান
বিএনপির একমাত্র পরিকল্পনা ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, রাজপথ দখল নয়: ফখরুল
সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সাহস নিয়ে রাজপথে থাকুন: ফখরুল
সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে দুর্গাপূজার পর দলের নেতা-কর্মীদের সাহস নিয়ে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (২০ অক্টোবর) কৃষিবিষয়ক এক সেমিনারে বক্তৃতাকালে তিনি বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিন্দা করেন এবং বলেন, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসের গডফাদার।
দেড় দশক ধরে একই রকম দমন-পীড়নের শিকার হওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের হুমকি ও হামলায় উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য তিনি দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ১৫ বছরে আমাদের কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, বহু লোক গুম করা হয়েছে, ৫০ লাখ মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বিএনপির ৭৭ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে সরকার।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারকে অপসারণ করতে না পারলে জাতি, দেশ ও স্বাধীনতার অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে, তাই আমাদের এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে।
বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না বলে সর্বস্তরের জনগণ এবং বাম-ডানে সব বিরোধী দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবস্থান নেওয়ায় আন্দোলনের সাফল্যের আশাবাদ ব্যক্ত করেন ফখরুল।
আরও পড়ুন: আ. লীগ নেতারা দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করেছেন: রিজভী
তিনি বলেন, ‘শেষবারের মতো আমি সরকারকে বলতে চাই, আপনারা দয়া করে সম্মানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে পদত্যাগ করুন এবং একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।’
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন ‘সোনালি দল’ এ সেমিনারের আয়োজন করে।
ফখরুল অভিযোগ করেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে জনগণ চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘পণ্যের দাম বৃদ্ধি নজিরবিহীন। সব দেশেই দাম কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই বৃদ্ধি অবিশ্বাস্য ও নজিরবিহীন। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। কিন্তু এর প্রধান কারণ সরকারের জবাবদিহির অভাব।’
তিনি বলেন, সরকার ডিসি ও ইউএনওদের জন্য নতুন গাড়ি কিনছে। অথচ মানুষ প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ও শাকসবজি কিনতে পারছে না।
এই বিএনপি নেতা বলেন, সরকার সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করায় দেশের মানুষ ভোট ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার হারিয়েছে।
ফখরুল বলেন, ‘তিনি (হাসিনা) গতকাল (বৃহস্পতিবার) বলেছেন, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। বিএনপি সন্ত্রাসী দল হলে আপনি কী? আপনি সন্ত্রাসের গডফাদার ফাদার। আপনারা দেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। আপনি ক্ষমতায় থাকার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ক্ষমতায় থাকতে চান।’
আরও পড়ুন: সহজ জয়ের জন্য বিএনপিকে নির্বাচনে বাধা দিচ্ছে আ. লীগ: ফখরুল
নিরাপদ প্রস্থান চান নাকি ক্ষমতাচ্যুতি চান, সিদ্ধান্ত নিন: ফখরুল
চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হোন, পেছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার (১৬ অক্টোবর) বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে শিগগিরই চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি।
তরুণদের সমাবেশে তিনি রাজপথে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে আন্দোলন সফল করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বিএনপির নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে: ফখরুল
তিনি বলেন, ‘আমাদের একমাত্র লক্ষ্য বর্তমান সরকারের পতন নিশ্চিত করা এবং অপ্রতিরোধ্য আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর জন্য মুক্ত করা।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, বিএনপির যুব শাখার বিশাল সমাবেশ দুর্গাপূজার কয়েক দিনের মধ্যে শুরু হওয়া বিরোধী দলের চূড়ান্ত আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করছি, কারণ আমাদের অনেক ভাই তাদের জীবন ও রক্ত উৎসর্গ করেছে, আমাদের অনেক মা-বোন নির্যাতিত হয়েছে, আমাদের অনেক শিশু তাদের বাবাকে হারিয়েছে এবং আমাদের অনেক মা তাদের সন্তানদের হারিয়েছে। সুতরাং, আমাদের পিছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই।’
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এবং সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনসহ বিএনপির এক দফা দাবিতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী যুবদল।
বিজয়নগর থেকে ফকিরাপুল ক্রসিং পর্যন্ত চলা এই র্যালিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাল-সবুজ টুপি পরিহিত হাজার হাজার যুবক-যুবতী অংশ নেন। তাদের অনেককে মাথায় সাদা কাফন পড়ে সমাবেশে বসে থাকতে দেখা গেছে।
তরুণদের বিশাল সমাবেশকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যায়িত করে ফখরুল বলেন, এই সমাবেশ অবশ্যই দেশের জনগণকে নতুন উদ্যম ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনে অংশ নিতে অনুপ্রাণিত করবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা এই ভয়ানক ফ্যাসিবাদী সরকারকে পরাজিত করতে সক্ষম হব, যারা আমাদের বুকের ওপর বড় পাথরের মতো বসে আছে।’
শর্ত প্রত্যাহার করলে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার সাংবিধানিকভাবে বৈধ কিনা, আপনাদের (আওয়ামী লীগ) এটা প্রমাণ করতে হবে। আমি বলছি আপনারা সাংবিধানিকভাবে বৈধ নন।’
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অসাংবিধানিকভাবে এনে সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বিএনপি নেতা বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক প্রথমে দেশ ও জনগণের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আরও দুটি জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে একটি সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিলেন।
এই আওয়ামী লীগ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই জনগণকে সম্পূর্ণ প্রতারিত করে সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করেছে। আপনারা যেমন বলছেন, নির্বাচন সংবিধানের ভিত্তিতে হওয়া উচিত; তাই আপনাদেরকে (সরকারকে) প্রথমে পদত্যাগ করতে হবে, কারণ আপনারা অবৈধ।
সংবিধান লঙ্ঘন এবং জনগণকে ধোঁকা দিয়ে ক্ষমতায় থাকার জন্য জনগণ বর্তমান সরকারকে ক্ষমা করবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে ক্ষমতা ছাড়তে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
আরও পড়ুন: সঠিক পথে আন্দোলন, এবার ভোটার ছাড়া নির্বাচন হবে না: ফখরুল
পর্দার আড়ালে আসলে কিছুই হয়নি: ফখরুল
আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেওয়ার মতো: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেওয়ার মতো।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবচেয়ে প্রতারক দল, তারা যা বলে তার উল্টোটা করে। তারা মার্কিন প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশনকে বলেছিল যে তারা গত দুটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করেছে এবং আমরা পরবর্তী নির্বাচনে আবারও একই কাজ করব।’
ছাত্রদের এক কনভেনশনে বক্তৃতায় বিএনপি নেতা বলেন, আওয়ামী শাসনামলে ২০১৪ সালে একটি সুন্দর নির্বাচন হয়েছিল, যেখানে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগের রাতে ভোট হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘তারা এখন বলছে তাদের ওপর আস্থা রাখতে, কারণ তারা আবার সুষ্ঠু নির্বাচন করবে। এটি একটি মুরগিকে শেয়ালের কাছে বর্গা দেওয়ার মতো। আপনাদের আর সুযোগ দেওয়া যাবে না। যথেষ্ট হয়েছে।’
সরকার অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে আক্ষেপ করেন ফখরুল।
ছাত্রদলের নেতৃত্বে ছাত্র ঐক্য (ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের ১৫টি ছাত্র সংগঠনের একটি মঞ্চ) রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ-এ এই ছাত্র সম্মেলনের আয়োজন করে।
রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে যোগ দেন।
ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় বসতে এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিদেশি চাপ মোকাবিলার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই আপনার সময় শেষ হয়ে গেছে এবং মানুষ আপনার দুঃশাসনে বিরক্ত হওয়ায় কোনো কৌশল কাজে আসবে না। তারা (জনগণ) দমন, চুরি ও দুর্নীতি থেকে মুক্তি চায়। তাই এখনও সময় আছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি মেনে নেন।’
আরও পড়ুন: সরকার দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে: ফখরুল
সরকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য জনগণের কাছে জনপ্রিয়তা দাবি করে, তাহলে কেন তারা সুষ্ঠু নির্বাচনকে ভয় পায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এই বিএনপি নেতা।
ফখরুল বলেন, অতীতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্ররা সমাজ পরিবর্তন করেছে এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। ‘আমরা এখন আমাদের আন্দোলনের সাফল্য সম্পর্কে আশাবাদী, কারণ ছাত্ররা এখন আবার ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।’
তিনি বলেন, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করে বাংলাদেশকে নরকে পরিণত করা ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাতের জন্য তারা কঠোর সংগ্রামে নেমেছে।
ফখরুল বলেন, বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে গভীর রাতে তার বাড়ির দরজা ভেঙে আটক করে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়। ‘একজন প্রাক্তন সাংসদ এবং প্রাক্তন ছাত্রনেতা এ্যানিকে যেভাবে সরকারের কুশীলবেরা বেআইনিভাবে আক্রমণ ও নির্যাতন করেছে, আমরা তা কল্পনাও করতে পারি না।’
তিনি সাবেক এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেআইনি পুলিশি পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানান। ‘এটি আমাদের ও শিক্ষার্থীদের জন্য লজ্জাজনক।’
ফখরুল বলেন, দমনমূলক কর্মকাণ্ড ও চলমান ফ্যাসিবাদী সরকারের থেকে মুক্তি পেতে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, ‘শুধু স্লোগান দিলে চলবে না। আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এবং সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আমাদের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি কর্মকর্তাদের খুশি করতে সরকার ডিসি ও ইউএনওদের জন্য আধুনিক যানবাহন কিনতে যাচ্ছে।
তিনি আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে সরকারের পতন নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের রাজপথে নামার আহ্বান জানান। ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমাদের বিজয়ী হতে হবে।’
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, সরকার রাজনৈতিকভাবে বিরোধীদের মোকাবিলা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে বলে বিরোধী নেতাদের জেলে পাঠাচ্ছে ও দমন-পীড়ন করছে।
তিনি অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে সরকার বিএনপি চেয়ারপার্সনন খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সাইফুল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের খারাপ কিছু ঘটনা ঘটলে সরকার দায়ী থাকবে।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার জীবন ঝুঁকির মুখে পড়লে সরকারকে ভয়াবহ পরিণামের হুঁশিয়ারি ফখরুলের
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত প্রধানমন্ত্রী : ফখরুল
খালেদা জিয়ার জীবন ঝুঁকির মুখে পড়লে সরকারকে ভয়াবহ পরিণামের হুঁশিয়ারি ফখরুলের
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদের দলের অসুস্থ চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জীবন বিদেশে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে ঝুঁকির মুখে পড়লে সরকারকে ভয়াবহ পরিণামের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবনের কোনো হুমকি থাকলে এ দেশের জনগণ এই ঘৃণ্য লুটেরা সরকারকে কখনো ক্ষমা করবে না।
সোমবার (৯ অক্টোবর) এক সমাবেশে বক্তৃতায় এই বিএনপি নেতা বলেন, জনগণ এতটা বোকা নয় যে তারা বুঝতে পারবে না যে সরকার তার প্রধান প্রতিপক্ষ খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরাতে এবং ক্ষমতা নিশ্চিত করতে কারাগারে পাঠিয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, কারাগারে থাকা অবস্থায় তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বসবাসের অযোগ্য কক্ষে আটকে রেখে সরকার তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।
দলের দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার দাবিতে বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর মহানগর শাখা নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করে।
খালেদাকে বিদেশে যেতে দিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকাসহ সারাদেশে টোকেন অনশন কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
আগের দিন, খালেদার চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড তাকে অবিলম্বে বিদেশে একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানোর সুপারিশ করেছিল। কারণ বাংলাদেশে এখন তার জন্য কোনো চিকিৎসার বিকল্প নেই।
বোর্ড আরও বলেছে, ৭৮ বছর বয়সী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ তার পেট ও বুকে পানি বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ এবং তার লিভার সিরোসিস সমস্যার কারণে সংক্রমণ বন্ধ করার জন্য যথাযথ চিকিৎসার ব্যভস্থা নেই।
আরও পড়ুন: বর্তমান সরকারের অধীনে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়: মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলকে বিএনপি
ফখরুল বলেন, মেডিকেল বোর্ড যখন খালেদাকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বলে জানায়, তখন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সরকার বলছে, তাকে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
বিএনপি নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ এখন একটি ফ্যাসিবাদী সংগঠনে পরিণত হয়েছে, যারা দমন-পীড়নে লিপ্ত আমলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করে এবং কিছু ব্যবসায়ী যারা লুণ্ঠনে লিপ্ত।
তিনি বলেন, মিথ্যা অভিযোগে খালেদাকে দোষী সাব্যস্ত করে আওয়ামী লীগ সন্তুষ্ট নয়, কারণ তারা এখন রাজপথে আন্দোলনকারী বিএনপি নেতাদের জেলে ও গ্রেপ্তার করছে।
প্রায় আট বছর আগে ঢাকায় দায়ের করা ‘মিথ্যা’ নাশকতার মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহজাহান এবং চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবসহ ১৫ জন নেতা-কর্মীকে সাজা দিয়ে নিম্ন আদালতের রায়ের তীব্র প্রতিবাদ করেন ফখরুল।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জেলে ও দমন-পীড়ন করে প্রতিহত করা সম্ভব হবে না।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘তারা ভেবেছিল আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখার পর বিএনপি আর থাকবে না। তবে বিএনপি আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন নিশ্চিত করতে জেগে উঠেছে।’
তিনি অভিযোগ করেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতি থেকে সরানোর জন্য সরকার ইতোমধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ঢাকা উত্তর মহানগর দলের আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমানসহ বিএনপির অনেক নেতাকে সাজা দিয়েছে।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে না সরিয়ে থামব না এবং আমরা অবশ্যই এই সরকারকে পরাজিত করব।’
তিনি বলেন, ডলারের সংকটের মধ্যে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকার গুরুতর অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ফখরুল বলেন, ‘মজুদ যেভাবে কমছে, কয়েকদিন পর পণ্য আমদানির আর টাকা থাকবে না… সরকার এখনও বুঝতে পারছে না কী পরিণতি অপেক্ষা করছে। ইতিহাস ভুলে যাবেন না। এভাবে কেউ দেশ চালাতে পারবে না।’
আরও পড়ুন: আমাদের সর্বোচ্চটা করেছি, প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা পাচ্ছেন না খালেদা জিয়া: মেডিকেল বোর্ড
সরকারের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছেন সিইসি: খসরু
সাংবাদিকতা এখন সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পেশা: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতি সংকটময় সময় পার করায় সাংবাদিকতা এখন সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পেশা।
তিনি বলেন, ‘জাতির দুঃসময়ে সাংবাদিকতা যখন সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পেশা, তখন ব্যক্তিগত সততার সঙ্গে পেশাগত কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া জরুরি। আমরা সবাই যদি এটা করতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমরা দেশের বর্তমান (রাজনৈতিক) সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব।’
শনিবার (৭ অক্টোবর) চলতি বছরের ২২ আগস্ট ৪২ বছর বয়সে মারা যাওয়া দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার হাবিবুর রহমান খানের স্মরণে এক শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি নেতা এসব কথা বলেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) প্রয়াত হাবিবুর রহমান খানের বন্ধু ও সহকর্মীরা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় ফখরুল বলেন, এত অল্প বয়সে হাবিবের মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তার মতো একজন স্পষ্টভাষী সাংবাদিকের খুব প্রয়োজন ছিল।
আরও পড়ুন: ‘ওয়াকওভার’ করে আওয়ামী লীগকে আর সরকার গঠন করতে দেওয়া হবে না: ফখরুল
হাবিবকে একজন 'সাহসী, দেশপ্রেমিক, সৎ ও পেশাদার রিপোর্টার' হিসেবে আখ্যায়িত করে বিএনপির এই নেতা সাংবাদিকের অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।
এছাড়াও তিনি পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
এ সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, দলের চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, দলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, দলটির নেতা নাসির উদ্দিন অসীম, বজলুল চৌধুরী আবেদ, তাবিথ আউয়াল, যুবদল নেতা মাহবুব হোসেন ভূঁইয়া, বিএফইউজে সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, ডিইউজে সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, ডিআরইউ সভাপতি মোরসালিন নোমানী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন হাবিবের স্ত্রী ফারজানা মাহমুদ সনি।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডিআরইউর সাবেক যুগ্ম সচিব মঈন উদ্দিন খান ও মঈনুল আহসান।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য বিদেশে ষড়যন্ত্র করছে: রিজভী
আ. লীগ ছাড়া বাকি সবাই এ সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে: ফখরুল
আ. লীগ ছাড়া বাকি সবাই এ সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে: ফখরুল
আ. লীগ ছাড়া বাকি সবাই এ সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ সরকারের অধীনে কেউ নির্বাচন করবে না। তাই সময় থাকতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দ্রুত পদত্যাগ করুন।’
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিকাল ৫টায় কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে বিএনপির রোডমার্চ নিয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পৌছে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, জনগণ বর্তমান সরকারকে ভোট না দেওয়ার শপথ নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি, অহিংস আন্দোলন করছি। তবে এখনো সময় আছে আমাদের দাবি মেনে নেন, পদত্যাগ করেন।’
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে ঘিরে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের নেত্রী খুব অসুস্থ, তাকে সুচিকিৎসা করতে দিচ্ছে না। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম জিয়াকে মুক্ত করে তার ঋণ শোধ করব।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে সরকার আটকে রেখেছে। তাকে মিথ্যা মামলা থেকে মুক্ত করে বাঁচাতে হবে।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র থেকে খালি হাতে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী: ফখরুল
তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করা ভিত্তিহীন অভিযোগ প্রত্যাহার এবং দেশে ফেরার সুবিধার্থে একটি শক্তিশালী আন্দোলনের আহ্বান জানান।
বক্তৃতায় ফখরুল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জনগণের অধিকার হরণ করার অভিযোগ তোলেন।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের জনগণের অধিকার হরণ করেছে। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমরা দু’টি নির্বাচন দেখেছি। এবারের নির্বাচন আগের মতো করতে দেওয়া হবে না।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘আজ কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যুবসমাজের মিছিলে মানুষ রাজপথে মিছিল করেছে। বর্তমানে সরকারের কোনো বন্ধু বিদেশে নেই, দেশেও নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা অপরিহার্য। যারা এদেশে নির্বাচনে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত তাদের সহ্য করা হবে না।’
আগের দিন সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নোয়াখালী থেকে কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রামের মিরসরাই পর্যন্ত রোডমার্চ শুরু করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
রোডমার্চটি সন্ধ্যায় বন্দর নগরীতে এসে পৌঁছায়। প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী মিছিলে যোগ দেন।
রোডমার্চ চলাকালে ফেনী ও মিরসরাইয়ে দুটি সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতারা।
মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপত্বে ও সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিনের সঞ্চালনায় সভায় আরও ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহাজাহান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক বেলাল আহম্মদ, কেন্দ্রীয় সাইফ মাহমুদ জুয়েল, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন, নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্নেল (অব:) আজিম উল্লাহ বাহার, উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য আব্দুল আউয়াল চৌধুরী, বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির আহ্বায়ক দিদারুল আলম মিয়াজী, মিরসরাই পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন, সদস্য সচিব জাহিদ হুসাইনসহ জেলা, উপজেলা ও পৌর বিএনপি নেতারা।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘গোপন’ সম্পর্ক নিয়ে কাদেরের দাবি উড়িয়ে দিল বিএনপি
নির্বাচনে জিততে ভোট চুরিই শেখ হাসিনার একমাত্র ভরসা: আমির খসরু